আটরশি দরবার শরীফ কোথায়
- আপডেট সময় : ১১:১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪
- / ২৫২০ বার পড়া হয়েছে
ফরিদপুর আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বিশালত্ব ভাববার বিষয়। সমগ্র বাংলাদেশে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের তুলনা হয় এ রকম অন্য কোন ধর্মীয় কমপ্লেক্স অন্য কোথাও দৃষ্টিগোচর হয়নি। ফলে উক্ত জাকের মঞ্জিলে যেমনি কোটির অধিক ভক্ত মুরীদ রয়েছে, তেমনি সমালোচকের সংখ্যাও কম নয়। এমনিতে আমাদের দেশে ধর্মীয় কর্মকান্ড নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি বেশি। ধর্মীয় কর্মকান্ডের মধ্যে পীরি-মুরীদি নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি আরও বেশি। তেমনিভাবে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল বিশালত্ব লাভ করায় উক্ত তরিক্বত জংশন নিয়ে অপরাপর অনেকের হিংসা-বিদ্বেষ থাকাটা স্বাভাবিক। তথায় গমন করে মরহুম হযরত পীর সাহেব কেবলার জীবনীগ্রন্থের সন্ধান করি। এতে তথাকার দায়িত্বরত লাইব্রেরিয়ান থেকে জানতে পারি মরহুম পীর সাহেব কেবলা জীবদ্দশায় তাঁরই আত্মজীবনী তিনি রচনাও প্রকাশ করে গেছেন।
মরহুম পীর সাহেব (রহ.)’র আত্মজীবনী পড়ে হতচকিত হই। তিনি তাঁরই পীর সাহেব কেবলার দরবারে কঠোর রেয়াজত তথা সাধনার নির্দয় ইতিহাস তুলে ধরেছেন, তা উপলদ্ধি করে অবাক হয়ে যাই। আমার ধারণা ছিল সমগ্র বাংলায় পান্ডুয়ায় হযরত শেখ আলাওল (রহ.) তাঁর সুযোগ্য পুত্রকে নবাবী/জমিদারী থেকে সরিয়ে তরিক্বতের রেয়াজতে তথা কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করিয়ে দেন। এবং তিনিই অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন কঠোর রেয়াজতের অধিকারী হিসেবে। কিন্তু বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মরহুম পীর সাহবের আত্মজীবনী পাট করে বাংলার এতদাঞ্চলে আরও একজন কঠোর রেয়াজতের অধিকারী রয়েছেন তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মরহুম পীর সাহেবের নাম হযরত শাহ হাশমত উল্লাহ (রহ.)। তিনি শেরপুর জেলার অধিবাসী ছিলেন। শিশু বয়সে মাতৃহারা হন। পারিবারিক পরিমন্ডলে আরবি, ফার্সি শিক্ষা লাভ করেন। হযরত খাজা ইউনুচ আলী এনায়েতপুরী (রহ.) শেরপুরে তশরীফ আনলে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মরহুম পীর সাহেব হযরত ফরিদপুরী শৈশবকালে তথা মাত্র ৮/১০ বছর বয়সে তারই নেক নজরে পড়েন। হযরত এনায়েতপুরী (রহ.) এর আহ্বানে হযরত ফরিদপুরী (রহ.) ও তাঁর অপর ভাইকে তাদেরই পিতা পীরের দরবারে সোপর্দ করেন। তিনি শৈশব কাল থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে তারই পীরের কাছে আত্মনিয়োজিত ছিলেন। স্বীয় পীরের চরণে অনাহার-অনিদ্রাসহ অমানুষিক শ্রম ও অপরিসীম ত্যাগের মুখোমুখি হন। তাঁকে স্বল্প পরিমাণ খাবার দেয়া হত। অধিকাংশ সময় দৈনিক ১ বার কিংবা ২ বার খাবার দিতেন। অন্য সকলে দু’বেলা পেট ভরে খাবার পেতেন। কিন্তু পরিশ্রমের দিক থেকে তাঁর বিপরীত। তাঁকে ক্ষুধার্ত দুর্বল শরীরে মাটিকাটাসহ ৯/১০ কিলোমিটার দূর থেকে বোঝা বহন করে আনতে হত। নিকটস্থ যমুনা নদীর ঘাট থেকে গরুর গাড়ি বোঝাই করে ধান-চাল-ডাল ইত্যাদি মালামাল নিয়মিত আনতে হত।
হযরত ফরিদপুরী (রহ.) তারই পীর হযরত এনায়েতপুরী (রহ.)’র নিদের্শে তাঁর পৈতিৃক বাড়ী ভিটা জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে সমুদয় টাকা-পয়সা পীরের দরবারে সোপর্দ করে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যান।
পীরের দরবারে মাহফিলের খেদমত করতে গিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে বোঝা বহন করে মাহফিলের যাবতীয় সরঞ্জাম আনতে হত তাকে। তিনি প্রথমদিকে এক রকম কঠোর সাধনা সহ্য করতে না পেরে বারেবারে বাড়ী ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর যাওয়া হয়নি। মোরাক্বাবা তথা ধ্যানে বসলে একাধারে ৫/৭ ঘন্টা বা আরও অধিক সময় নিমগ্ন থাকতেন।
অনাহারে অর্ধাহারে একদম ক্ষীণদেহ হয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও তাঁর কঠোর পরিশ্রমের সাধনা থেকে বিচ্যুত হননি।
কঠোর ধ্যান ও সাধনায় অতিবাহিত করার পর তাঁরই পীরের নিদের্শে কলকাতা যেতে বাধ্য হন জীবন-জীবিকার সন্ধানে। প্রথম প্রথম কলকাতা না যেতে নিজের পীর সাহেবের প্রতি আকুতি প্রকাশ করেন। যেহেতু তাঁর শরীর ছিল খুবই দুর্বল। টাকা-পয়সা নেই, কোথায় কার কাছে যাবে, কিভাবে থাকবে, কে চাকুরি দেবে এ সকল চিন্তা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলকাতা তাঁকে যেতেই হল। তথায় গিয়ে ফরিদপুর আটরশী নিবাসী মোহসিন খান সাহেবের সাথে পরিচয় পরবর্তী ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন। এতে মোহসিন খান তাঁর সাথে এনায়েতপুরস্থ পীরের দরবারে এসে মুরীদ হয়ে যান।
অতঃপর হযরত ফরিদপুরীর ভাতিজিকে মোহসীন খান বিয়ে করেন। অপরদিকে মোহসিন খানের ভাতিজীর সাথে হযরত ফরিদপুরী পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।
১৩৫৪ বাংলা সনে হযরত ফরিদপুরী কলকাতা থেকে ফরিদপুরের আটরশি চলে আসেন। আটরশিতে মোহসীন খানের গোয়াল ঘর পরিষ্কার করে বসবাস শুরু করেন। ঘরটি ছিল খুবই ক্ষুদ্র ছনের ছাউনিযুক্ত। তথা হতে তিনি তাবলিগে তরিক্বতের কাজ শুরু করেন।
ফরিদপুরের উক্ত এলাকায় কিছু কিছু গ্রাম নামকরণ হল আট রশি, সাড়ে সাত রশি, চৌদ্ধ রশি, আড়াই রশি ইত্যাদি।
ফরিদপুরের এই আট রশি গ্রামেই তিনি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম প্রথম তাঁর মুরীদরা মাহফিলের দিন মুষ্টি চাউল নিয়ে আসতেন। এক বছরের ব্যবধানে তিনি মাত্র ৮ টাকা দিয়ে একটি জীর্ণ কুঁড়েঘর খরিদ করেন। পরবর্তীতে এ কুঁেড় ঘরের নামকরণ করেন জাকের ক্যাম্প তথা জিকিরকারীগণের ক্যাম্প। যা পরবর্তীতে আজকের এ বিশাল বিশ্ব জাকের মঞ্জিল।
হযরত ফরিদপুরী তাঁর আত্মজীবনীতে আরও উল্লেখ করে গেছেন, তিনি যেদিন আটরশিতে আগমন করেন সেদিন ছিল পবিত্র ঈদুল আযহা তথা কোরবানী ঈদের দিন। উক্ত দিবসেই তথাকার স্থানীয় লোকজন লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যাচ্ছিল। তথায় কোন নামাজ ছিল না,সমাজ ছিল না, ধনী-মানী-জ্ঞানী-গুণী লোক বলতে ছিল না। গরু কোরবানী হত না,গরুর গোস্তকে মুসলমানরাও অখাদ্য মনে করত। মুসলমানীত্ব কি তা জানত না। ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ অস্পষ্ট ছিল।তিনি আটরশি পৌঁছে মোহসীন খান ও অপর ২ ব্যক্তিকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়লেন। ধীরে ধীরে আলোচ্য জাকের ক্যাম্পের জাকেরানের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সুনামও চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল তাঁর উক্ত জাকের ক্যাম্পের বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে দয়ে। তাঁর এ জাকের ক্যাম্পের বিরোধিতা করার জন্য অন্যান্য এলাকা থেকে আলেম-পীর, সাধারণ শিক্ষিত লোকজন, একত্রিত হয়ে জাকের ক্যাম্প প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে। বহু সভা সমাবেশের আয়োজন করে অসংখ্য প্রচার পত্র বিলিবণ্টন করে। কিন্তু তাদের এই বিরুদ্ধাচারণ সমূলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
তাঁর প্রথম দাম্পত্য জীবন সুখকর হয়নি। তাঁর আত্মজীবনীতে আরও উল্লেখ করেন। তাঁরই পিতার ইচ্ছায় মাত্র ১৬/১৭ বছর বয়সে শেরপুরস্থ এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কন্যাকে বিয়ে করেন। কিন্তু হযরত ফরিদপুরী এনায়েতপুরস্থ স্বীয় পীরের দরবারে জীবন উৎসর্গ করে শেরপুরস্থ পৈতিৃক বাড়ি ভিটা স্বত্ব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রথম দাম্পত্য জীবনে চিড় ধরেছিল।যেহেতু একদিকে দরিদ্রতা অন্যদিকে আটরশিতে মোহসীন খানের ভাতিজীকে দ্বিতীয় বিয়ে করায় উক্ত প্রথম স্ত্রী সংসার ত্যাগ করে পিত্রালয়ে চলে যান।হযরত ফরিদপুরী শ^শুরালয়ে গিয়ে উক্ত চলে যাওয়া প্রথম স্ত্রীকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তাঁর প্রথম স্ত্রী একেত স্বামীর নিঃস্ব অবস্থা, দ্বিতীয়ত স্বামীর দ্বিতীয় সংসার রয়েছে, এ সকল চিন্তা করে দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান। হযরত ফরিদপুরী পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্ত্রীর চাচাত বোনকে বিয়ে করেন।
বস্তুতঃ বিশ্বে তরিক্বত জগৎ তথা সুফি তত্ত্ব নিয়ে রেয়াজত তথা আধ্যাত্মিক সাধনা নিয়ে বহু লেখালেখি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বহু পীর সাহেব তাদের সন্তান বা মুরীদকে কঠোর রেয়াজতে নিয়োজিত রাখার কথা কথিত রয়েছে। তরিক্বতে রেয়াজত করাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমল পেরিয়ে পাকিস্তান আমলেও তরিক্বতে রেয়াজতে কামালিয়ত অর্জনে আলোকিত হওয়ার রেওয়াজ ছিল। সাথে সাথে দুনিয়ার যাবৎ ভোগ-বিলাস, আরাম- আয়েশ, শান শওকত পরিহার করার মাধ্যমে স্বর্গীয় ছোঁয়া তথা নিবিড় আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ বিরাজ করত। কিন্তু বর্তমানকালে তরিক্বত জগৎ বলতে ভোগ বিলাস,আরাম আয়েশের,শান শওকতের।
একালে পীরের কাছে মুরীদের মূল্যায়ন ধ্যান আধ্যাত্মিক যোগ্যতা সর্বোপরি বুজুর্গী দিয়ে নয়, বরং অর্থ-সম্পদ পার্থিব মান মর্যাদা দিয়ে। ফলশ্রুতিতে আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিবর্গ ধর্মীয় জ্ঞানে গভীরতম ব্যক্তিবর্গ তরিক্বত জগৎ থেকে দূরে সরে আছে বলতে পারা যায়। তার বিপরীতে নব্য ধনী ধর্মীয় বিষয়ে অজ্ঞ-মূর্খ ব্যক্তিদেরই বর্তমানে পীরের দরবারে আনাগোনা অত্যধিক পরিলক্ষিত হয় একালে।প্রকৃত তাসাউফ তথা সুফিজম হল কঠোর রেয়াজতের মাধ্যমে দুনিয়া বিমুখ হয়ে রিয়া তথা লোক দেখানো পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
দেশে দুনিয়া ও প্রচার বিমুখ যোগ্য পীর সাহেব যে নেই তা কিন্তু নয়। তবে এ সংখ্যা খুবই নগণ্য বলা চলে।
বস্তুতঃ বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতবর্ষে আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বিশালত্ব এ কালে ভাববার বিষয়। ১৯৮০ দশকের প্রথম দিকে পর পর দু’বার তথায় যাওয়া হয়েছিল। এ দু’বারই ঐ দরবারের হযরত পীর সাহেব কেবলার মোলাকাত হয়। এ মহান পীর সাহেব ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল দিবাগত রাত ঢাকার বনানীতে প্রায় ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। পর দিন ১ মে বাদ আছর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে জানাযা শেষে তারই প্রতিষ্ঠিত তরিক্বতের দরবারে শায়িত করা হয়। তার দুই সহধর্মীনির সংসারে তিনি দুই পুত্র তিন কন্যা সন্তান রেখে যান।
প্রায় ৬০ একর এরিয়া নিয়ে শক্ত মজবুত বাউন্ডারী দ্বারা এ দরবারের মূল এরিয়া। বৃহত্তর এরিয়া প্রায় ৬ শত একর এরিয়া জুড়ে। চারতলা বিশিষ্ট বিশাল হাসপাতাল রয়েছে, সাথে এম্বুলেন্স, ঔষধপত্রসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সমেত। ৭/৮ জন ডাক্তার ও নার্স দায়িত্বপালনরত। পীরের দরবারে ছওয়াবের নিয়তে বাৎসরিক ঘুরে ঘুরে সহ¯্র জাকের রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী খাদেম হিসেবে। তৎমধ্যে একটি গ্রুপ শুধু মাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত রয়েছে পালাক্রমে। শুক্রবার এবং বন্ধের দিন বাদে দৈনিক ৩/৪ হাজার জাকের তথা সেবক দু’বেলা খাবার খায়। শুক্রবার ও ছুটির দিন গুলিতে এ সংখ্যা বেড়ে ৪/৫ হাজার ছেড়ে যায়।
মাজার এরিয়ায় প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা ৮/১০ টি দালান রয়েছে। যেগুলো বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পরিচালনায় বিভিন্ন অফিস দপ্তর। দরবার এরিয়ার একদিকে ৩/৪ তলা বিশিষ্ট প্রায় ১৫০/২০০ ফুট লম্বাকৃতির দু’টি দালান। যা কামিল মাদরাসা হিসেবে পাঠদানরত। এখানকার ছাত্ররা ফ্রি খাবে। এখানে রয়েছে তিনটি হ্যালিপ্যাড, পোস্ট অফিস, ব্যাংক। নিয়মিত রান্নার জন্য রয়েছে ৫/৬ শত চুলা,স্থায়ী টয়লেট রয়েছে ৬/৭ শত, ৫টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর রয়েছে। তৎমধ্যে একটি জেনারেটরের ক্ষমতা ১ মেগাওয়াট। এখানে মহিলাগণের কঠোর পর্দার ব্যবস্থা রয়েছে বলে ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে বারে বারে দাবি করা হয়।
সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশায়িত বৈদেশিক ও এন জিও গুলোর মাধ্যমে কোন প্রকার সাহায্য তথায় নেই। যাবতীয় আনজাম লক্ষ কোটি জাকের ও ভক্তদের দানে হচ্ছে। ৪ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ মাহফিলে ৭০ লক্ষ জাকের ভক্ত শরীক হয় বলে তাদের দাবী। ঐ সময় ১০-১২ বর্গ কিলোমিটারে বিশাল এরিয়া নিয়ে জাকের ও ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকে। ঐ সময় অসংখ্য জেনারেটর নেয়া হয় ঢাকা থেকে। নির্মাণ করা হয় হাজার হাজার অস্থায়ী শৌচাগার। ঢাকা থেকে শত শত ট্রাকে ওরশ মাহফিলের মালামাল পৌঁছানো হয়।
৪ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশে ৩ হাজারের অধিক গরু ও মহিষ, ৭ হাজারের অধিক ছাগল জবেহ করা হয়। তার অতিরিক্ত উট, দুব্বা, হরিণ, গয়াল, পাহাড়ী গরুও থাকে। এখানে বাৎসরিক ৭/৮টি মাহফিল হয়।
এখানকার জামে মসজিদ ৫ শত কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ। দেশের মধ্যে এটা একটি বিশাল দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
মরহুম হযরত পীর ছাহেবের মাজার নাকি নির্মিত হবে হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে।
মরহুম পীর ছাহেব তার দেয়া মাজার যেয়ারতের নির্দেশনা হল: ১.মাজারে সেজদাহ করবে না, ইহা হারাম ও শিরক। ২.মাজারে বিলাপ বা খেদোক্তি করবে না, উচ্চস্বরে ক্রন্দন করবে না। ৩. মাজারে আলোকসজ্জা করবে না, তবে যেয়ারতের সুবিধার্থে একটু দূরে উঁচুতে এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক আলো প্রজ্জলিত করতে পার বা অন্যভাবে আলোর ব্যবস্থা করেত পারে। ৪.মাজারে পুষ্পমাল্য প্রদান করবে না। ৫.মাজারকে ফুলশয্যার বাসর রাতের ঘরের মত সাজাবে না। ৬. মাজারে মোমবাতি বা আতশবাতি জ্বালাবে না। ৭.মাজারে গিলাপ বা ছাদরে আচ্ছাদিত করবে না। ৮.শরীয়তের খেলাপ হয় এমন কাজ করবে না।
এখানে রয়েছে স্থায়ীভাবে শতাধিক মাইক দৈনন্দিন যিকির মাহফিলসহ নানান ঘোষণার জন্য। আছে উট, দুব্বা, গরু, ছাগল ইত্যাদির জন্য হাসপাতাল, সে অনুপাতে ডাক্তার, সেবক।
গত ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ রবিবার পুনঃ যেয়ারতের পাশাপাশি অতিথি হয়ে চট্টগ্রাম থেকে সন্ধ্যার পর এ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হই। সাথে কয়েকজন সহযাত্রী তথা যেয়ারতকারী। ভিভিআইপি আতিথেয়তা বাংলাদেশের জমিনে তরিক্বতের জংশনে যে সম্ভব তা এখানে এসে উপলদ্ধি করলাম। এখানে রয়েছে ভিভিআইপিদের জন্য সেন্ট্রাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল ব্লক। সে অনুপাতে প্রধান খাদেমের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের খাদেম গ্রুপ। বিশাল বিশাল বৈঠকখানা, ডাইনিং রুম, একাধিক শয়ন কক্ষ। সব কিছুতে মনে হয় পাঁচতারকামানকে ছাড়িয়ে যাবে। রাতের খাবার, সকালের নাস্তায় ১০/১২ আইটেমের রাজসিক আতিথেয়তা দেশে তরিক্বতের দরবারে হওয়াটা ভাববার বিষয়।
তাদের সিস্টেম, খাওয়ার টেবিলে খাবার প্ল্যাট ও গ্লাস থাকবে মাত্র। ভাত তরকারী পানির জগ খাদমগণের হাতে হাতে থাকবে। প্রধান খাদেমমহ আমাদেরকে আতিথেয়তার জন্য ৫/৬ জন খাদেম অতি আন্তরিকতার ভিতর সজাগ দৃষ্টিতে আতিথেয়তা দেন।
বস্তুতঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ফরিদপুর জেলা সদর থেকে ১৫/২০ কি.মি হতে পারে। দেশের উত্তরবঙ্গে ও দক্ষিণ বঙ্গে বৃহত্তর ফরিদপুরসহ, বৃহত্তর বরিশাল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ রংপুর,রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ একাধিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে। তবে বরিশাল বিভাগে ছারছীনা ও চরমোনাই কঠোর শরীয়তের ভিতর তরিক্বতকে ধরে রেখেছে। কিন্তু বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দেশের ঐ দিককার তরিক্বতের জংশনে শরীয়ত খুবই দুর্বল। চট্টগ্রাম অতঃপর সিলেট এরপর নোয়াখালী ও কুমিল্লায় যেভাবে বড় বড় মাদ্রাসা, আলেম ওলামার ব্যাপকতা তাতে তরিক্বতে শরীয়তের প্রভাব অনায়াসে বুঝা যায়।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মহান পীর হযরত শাহ সুফি খাজা হাসমত উল্লাহ (রহ.)। তাঁর পীর হচ্ছেন এনায়েতপুর দরবারে হযরত খাজা ইউনুচ আলী (রহ.)। তাঁর পীর হচ্ছেন কলকাতা পাক সার্কাস গোবরা (১) কবরস্থানের উত্তরপাশে শায়িত হযরত সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রহ.)। তাঁর পীর হচ্ছেন কলকাতা মানিকতলায় শায়িত হযরত সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.)।
মহান আল্লাহ পাক বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে তরিক্বতের খেদমত করতে গিয়ে শরীয়তে কঠোর থাকতে মরহুম হযরত পীর ছাহেব কেবলার সন্তান-সন্ততীদের তাওফিক দান করুক। আমিন॥
আটরশি দরবার শরীফ কোথায়
ফরিদপুর জেলা সদরপুর উপজেলা আটরশি গ্রামে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফ অবস্থিত ।
আরো পড়ুনঃ
- সুফিবাদ বা সূফীজমে পরমতসহিষ্ণুতা
- মোমিন বান্দার পরিচয়
- আসহাবে সুফফা
- বায়াত না হওয়ার কুফল
- আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ১ম পর্ব
- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সৃষ্টির ফাউন্ডেশন – শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (রাঃ) ছাহেব
- শাহ নেয়ামাতুল্লাহ ওয়ালী (রহঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী
- সুফিবাদ কী ? সুফীবাদের মূলনীতি ও স্তর সমূহ