ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লাহর ওলীর পরিচয়

  • আপডেট সময় : ১২:২৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫৭১ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাক কুরআন ও হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীর পরিচয় :
 
‘ওলী’ শব্দটি আরবী বিলায়াত / ওয়ালায়াত শব্দ থেকে গৃহীত। শব্দটির অর্থ নৈকট্য, বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব। বিলায়াত অর্জনকারীকে ‘ওলী’ /‘ওয়ালী’ বলা হয়। অর্থাৎ নিকটবর্তী, বন্ধু, সাহায্যকারী বা অভিভাবক। ইসলামী পরিভাষায় ‘বিলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়েত বা ওলী শব্দের সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে।‘ওলী’ শব্দের বহুবচন হলো আউলিয়া। আমি এখানে আল্লাহর ওলী বা আল্লাহর বন্ধুর পরিচয় সম্পর্কে কুরআন পাক ও হাদীসের আলোকে আলোচনার চেষ্টা করছি।

পাক কুরআনের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
পাক কুরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ- الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
“জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহ্‌র ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না- যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে বা তাকওয়া অবলম্বন করে।”(সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৩)

উল্লিখিত আয়াতপাকে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
১। যারা ঈমান এনেছে।
২। যারা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করে যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।
এদু’টি গুণ যারা অর্জন করল তাদের কোন ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই আল্লাহর ওলী বা বন্ধু।

হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
এক,
সহীহ বোখারীতে আছে—
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، حَدَّثَنِي شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَىَّ عَبْدِي بِشَىْءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَىَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطُشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَىْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ، يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ ‏”‏‏.‏
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন যে, ফরয ইবাদতগুলো পালনের সাথে সাথে অনবরত নফল পালনের মাধ্যমে বান্দা বেলায়েত বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলী হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি যে কাজ আমি ফরয করেছি।(ফরয পালনই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কাজ)। এবং বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে বা আমার সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়, আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়, আমি তার হাত হয়ে যাই যদ্দ্বারা সে ধরে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যদ্দ্বারা সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।”(সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৬০৫৮ ইফা)

দুই
সহীহ আবু দাউদে আছে–
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَا: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ الْقَعْقَاعِ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ بْنِ عَمْرِو بْنِ جَرِيرٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ، وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ، قَالَ: هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ، وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا، فَوَاللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ، وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ، وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ وَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ (أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ) [يونس: ٦٢]
‘হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা নবী নন এবং শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদার কারণে নবীগণ ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাঃ! আমাদের অবহিত করুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ঐ সব লোক যারা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসে, অথচ তারা পরস্পর আত্মীয়ও নয় এবং পরস্পরকে সম্পদও দেয়নি। আল্লাহর শপথ! তাদের মুখমন্ডল যেমন নূর এবং তারা নূরের আসনে উপবেশন করবে। তারা ভীত হবে না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’’(সূরা ইউনুসঃ ৬২) (আবু দাউদ -৩৫২৭, ইবনে হিব্বান, ৫৭৩)

তিন,
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে আব্বাস সহ অনেক সাহাবায় কেরাম বলেছেন-
“তারাই আল্লাহর অলী যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।”
[তাবারানী ফিল কাবীর, হাদিস নং ১২৩২৫, দ্বীয়া আলমাক্বদিসী]

 

চার,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তমদের সম্পর্কে সুসংবাদ দিবোনা? সাহাবীরা বললেন হাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)। তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।
[সুনানে ইবনে মাজাহ- কিতাবুয যুহুদ, হাদিস নং ৪১১৯, বুখারীর –আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩২৩]

পাঁচ,
রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন-
নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর জিকিরের চাবি, যখনই তাদের দিকে তাকানো হয় তখন আল্লাহর জিকির হয়।
[তাবরানী- মুজামুল কাবীর, হাদিস নং ১০৪৭৬। বায়হাকী- শুআবুল ইমান, হাদিস নং ৪৯৯]

বর্ণিত হাদীস সমূহে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
যারা আল্লাহর ওলী তারা-
১। ফরয ইবাদত নিখুঁত ভাবে পালন করেন।
২। বেশী বেশী নফল বন্দেগী করেন।
৩। বন্দেগী করতে করতে তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করেন।
৪। তখন তারা এমন এক অবস্থা লাভ করেন যে তাদের হাত, পা, চোখ, কান তথা সর্বাংগ আল্লাহ নিজের বলে ঘোষণা দেন। একেই তরিকতের পরিভাষায় ফানাফিল্লাহ বলে। অর্থাত আল্লাহর অস্তিত্বে বিলীন হওয়া বলে।

 

যেমনঃ পাক কালামে আল্লাহতায়ালা নবীজীকে(সাঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন,
ক)
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ
‘যারা আপনার হাতে হাত রেখে বায়াত হয়, তারাতো আল্লাহরই হাতেই বায়াত হয়। তাদের হাতের উপর রয়েছে আল্লাহর হাত।’(সূরা ৪৮ ফাতহঃ ১০)

খ)
وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـكِنَّ اللّهَ رَمَى
‘আপনি যে ধুলির মুষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন তা আপনি করেননি, বরং তা করেছিলেন আল্লাহ স্ময়ং।’ (সূরা ৮ আনফালঃ ১৭)

কাজেই বুঝা গেল, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) আল্লাহর অস্তিত্বে লীন ছিলেন বিধায় আল্লাহপাক তার হাতকে নিজের হাত বলে উল্লেখ করেছেন।
৫। তখন তারা আল্লাহর নিকট এমন এক ‌মর্যাদা বা সম্মান লাভ করেন যে, তাদের সাথে কেউ কোনরকম শত্রুতা করলে আল্লাহ তা বরদাশত বা সহ্য করেন না।
৬। তাদের প্রার্থনাসমূহ আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন।
৭। আল্লাহতায়ালা নিজে তাদের অশ্রয়স্থল হন।
৮। তারা এমন এক স্তরে পৌঁছান এবং আল্লাহতায়ালায় এমনই নিবিড় প্রেম ও ভালবাসা অর্জন করেন যে এক পর্যায়ে নবী ও শহীদগণও তাদেরকে ঈর্ষা করে। তাদের না থাকে কোন ভয়, না থাকে কোন পেরেশানী। তারা আল্লাহর প্রেমসুধা পানে সদা ব্যস্ত থাকেন।

উল্লিখিত গুণসমূহ দয়াল নবীজী(সাঃ) এর মধ্যে পরিপূর্ণ বিরাজমান ছিল। তাই নবীজী(সাঃ)-ই আল্লাহর সবচেয়ে বড় বন্ধু বা ওলী। তারপর যারা নবী-করিম(সাঃ) এর পরিপূর্ণ অনুসরন তথা জাহেরী ও বাতেনী অনুসরনের মাধ্যমে উল্লিখিত গুণসমূহ অর্জন করতে পারেন তারাও আল্লাহর সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভে ধন্য হন। আল্লাহর কোর্ব হাছিল করেন। আল্লাহর ওলী বা বন্ধু হিসাবে পরিগণিত হন।

বর্তমান জামানায় আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সূফীসাধক হলেন বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব। দুনিয়াব্যাপী যার কোটি কোটি মুরীদান তারই বাতেনী প্রতিপালনে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য বা সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আল্লাহর ওলীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহর ওলীগণ হলেন জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরুপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারন করে, সেইরুপ আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহতায়ালার নূরের তাজাল্লীতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুনান্বিত হন।”

এমন আল্লাহর ওলী সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী(রাঃ) ছাহেব বলেন, “ওলী-আল্লাহগণ বিশ্ববাসীর জন্য নিরাপত্তার সনদ এবং জামানার জন্য ‘গনিমত’ স্বরূপ।” (সূত্রঃ মকতুবাদ শরীফ)
বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ)ছাহেব বলেন, ‘ওলী-আল্লাহসকল সেই জেকেরকারী দল-যাহাদের অছিলায় গাছে ফল হয়, জমিনে শস্য হয়, পানিতে মাছ হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে। তাঁহাদের অছিলাতেই জগতে রহমতের ধারা প্রবাহিত থাকে।’
(সূত্র-নসিহত সকল খন্ড একত্রে, পৃষ্ঠা নং-১১৬০)

অলী-আল্লাহগণের কেন এতো মর্যাদা ও সম্মান?

কারণ–
তারা কোন কামেল বুযুর্গের তত্ত্বাবধানে থেকে দীর্ঘ সময়ব্যপী খোদাপ্রাপ্তির রাস্তায় কঠিন তপস্যা করে, নির্ধারিত ফরয বন্দেগীর বাইরে দিবা-রাত্র ব্যাপী নফল বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে জড় জগত, নূরের জগত ও সেফাতের জগত পার হয়ে আল্লাহর এমনই এক নিবিড় নৈকট্য হাছিল করে – যা ভাষায় বর্ণনার অতীত। শুধু এতটুকুন বলা যায় যে আল্লাহর নিবিড় সান্নিধ্যে পৌঁছে আল্লাহর নূরের তাজাল্লিতে প্রজ্জলিত হয়ে তারা হযরত মুসা (আঃ) এর নূর প্রজ্জলিত বৃক্ষের মত হয়। এ মর্যাদা তারা লাভ করেন নবীজী (সাঃ) এর পরিপূর্ণ জাহেরী ও বাতেনী অনুসরণের মাধ্যমে । তাদের ৩৩ কোটি লোমকুপের সাথে তখন আল্লাহ নূরের সংযোগে তৈরী হয়। তখন তাদের ভীতরে-বাইরে, সামনে-পিছে, ডানে-বামে তথা সর্বদিকে কেবলই আল্লাহর নূর আর নূর। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন,
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ –
আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নূরের মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) [ সুরা যুমার ৩৯:২২ ]

যাদের কালব জাগ্রত হয়েছে, অন্তর চক্ষু খুলে গেছে, অন্তর কর্ণ পরিস্কার হয়ে গেছে –তারা যখন উল্লিখিত আল্লাহর ওলির দিকে তাকায়, তখন তাদের আল্লাহর কথাই স্মরণ হয়ে যায় যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
হাশরে শেষ বিচারের দিনে মানুষ তিন দলে ভাগ হয়ে যাবে।
১। ডান দিকের দল ২। বাম দিকের দল, এবং ৩। অগ্রবর্তী দল।
ডান দিকের দল হবে জান্নাতী। বাম দিকের দল হবে জাহান্নামী এবং অগ্রবর্তী দল হবে জান্নাতী এবং থাকবেন আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে। তারাই হলেন নবী, রসূল ও আউলিয়াগণ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَكُنتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً
এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৭ ]
فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৮ ]
وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ
এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৯ ]
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ
অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:১০ ]
أُوْلَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ
তারাই নৈকট্যশীল, [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:১১ ]

হে আল্লাহ!আমরা আপনার ওলীদেরকে ভালবাসি।আমাদের রাসূল(সাঃ) বলেছেন, যে যাকে ভালবাসে সে তার সংগে।আল মাররু মা’আ মান আহাব্বা। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর ওলীদের সংগী হওয়ার তৌফিক দিন।আমিন।

 

আরো পড়ুনঃ

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

আল্লাহর ওলীর পরিচয়

আপডেট সময় : ১২:২৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

পাক কুরআন ও হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীর পরিচয় :
 
‘ওলী’ শব্দটি আরবী বিলায়াত / ওয়ালায়াত শব্দ থেকে গৃহীত। শব্দটির অর্থ নৈকট্য, বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব। বিলায়াত অর্জনকারীকে ‘ওলী’ /‘ওয়ালী’ বলা হয়। অর্থাৎ নিকটবর্তী, বন্ধু, সাহায্যকারী বা অভিভাবক। ইসলামী পরিভাষায় ‘বিলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়েত বা ওলী শব্দের সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে।‘ওলী’ শব্দের বহুবচন হলো আউলিয়া। আমি এখানে আল্লাহর ওলী বা আল্লাহর বন্ধুর পরিচয় সম্পর্কে কুরআন পাক ও হাদীসের আলোকে আলোচনার চেষ্টা করছি।

পাক কুরআনের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
পাক কুরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ- الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
“জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহ্‌র ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না- যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে বা তাকওয়া অবলম্বন করে।”(সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৩)

উল্লিখিত আয়াতপাকে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
১। যারা ঈমান এনেছে।
২। যারা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করে যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।
এদু’টি গুণ যারা অর্জন করল তাদের কোন ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই আল্লাহর ওলী বা বন্ধু।

হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
এক,
সহীহ বোখারীতে আছে—
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، حَدَّثَنِي شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَىَّ عَبْدِي بِشَىْءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَىَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطُشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَىْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ، يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ ‏”‏‏.‏
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন যে, ফরয ইবাদতগুলো পালনের সাথে সাথে অনবরত নফল পালনের মাধ্যমে বান্দা বেলায়েত বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলী হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি যে কাজ আমি ফরয করেছি।(ফরয পালনই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কাজ)। এবং বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে বা আমার সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়, আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়, আমি তার হাত হয়ে যাই যদ্দ্বারা সে ধরে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যদ্দ্বারা সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।”(সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৬০৫৮ ইফা)

দুই
সহীহ আবু দাউদে আছে–
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَا: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ الْقَعْقَاعِ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ بْنِ عَمْرِو بْنِ جَرِيرٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ، وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ، قَالَ: هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ، وَلَا أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا، فَوَاللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ، وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لَا يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ، وَلَا يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ وَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ (أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ) [يونس: ٦٢]
‘হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা নবী নন এবং শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদার কারণে নবীগণ ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাঃ! আমাদের অবহিত করুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ঐ সব লোক যারা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসে, অথচ তারা পরস্পর আত্মীয়ও নয় এবং পরস্পরকে সম্পদও দেয়নি। আল্লাহর শপথ! তাদের মুখমন্ডল যেমন নূর এবং তারা নূরের আসনে উপবেশন করবে। তারা ভীত হবে না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’’(সূরা ইউনুসঃ ৬২) (আবু দাউদ -৩৫২৭, ইবনে হিব্বান, ৫৭৩)

তিন,
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে আব্বাস সহ অনেক সাহাবায় কেরাম বলেছেন-
“তারাই আল্লাহর অলী যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।”
[তাবারানী ফিল কাবীর, হাদিস নং ১২৩২৫, দ্বীয়া আলমাক্বদিসী]

 

চার,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তমদের সম্পর্কে সুসংবাদ দিবোনা? সাহাবীরা বললেন হাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)। তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।
[সুনানে ইবনে মাজাহ- কিতাবুয যুহুদ, হাদিস নং ৪১১৯, বুখারীর –আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩২৩]

পাঁচ,
রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন-
নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর জিকিরের চাবি, যখনই তাদের দিকে তাকানো হয় তখন আল্লাহর জিকির হয়।
[তাবরানী- মুজামুল কাবীর, হাদিস নং ১০৪৭৬। বায়হাকী- শুআবুল ইমান, হাদিস নং ৪৯৯]

বর্ণিত হাদীস সমূহে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
যারা আল্লাহর ওলী তারা-
১। ফরয ইবাদত নিখুঁত ভাবে পালন করেন।
২। বেশী বেশী নফল বন্দেগী করেন।
৩। বন্দেগী করতে করতে তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করেন।
৪। তখন তারা এমন এক অবস্থা লাভ করেন যে তাদের হাত, পা, চোখ, কান তথা সর্বাংগ আল্লাহ নিজের বলে ঘোষণা দেন। একেই তরিকতের পরিভাষায় ফানাফিল্লাহ বলে। অর্থাত আল্লাহর অস্তিত্বে বিলীন হওয়া বলে।

 

যেমনঃ পাক কালামে আল্লাহতায়ালা নবীজীকে(সাঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন,
ক)
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ
‘যারা আপনার হাতে হাত রেখে বায়াত হয়, তারাতো আল্লাহরই হাতেই বায়াত হয়। তাদের হাতের উপর রয়েছে আল্লাহর হাত।’(সূরা ৪৮ ফাতহঃ ১০)

খ)
وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـكِنَّ اللّهَ رَمَى
‘আপনি যে ধুলির মুষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন তা আপনি করেননি, বরং তা করেছিলেন আল্লাহ স্ময়ং।’ (সূরা ৮ আনফালঃ ১৭)

কাজেই বুঝা গেল, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) আল্লাহর অস্তিত্বে লীন ছিলেন বিধায় আল্লাহপাক তার হাতকে নিজের হাত বলে উল্লেখ করেছেন।
৫। তখন তারা আল্লাহর নিকট এমন এক ‌মর্যাদা বা সম্মান লাভ করেন যে, তাদের সাথে কেউ কোনরকম শত্রুতা করলে আল্লাহ তা বরদাশত বা সহ্য করেন না।
৬। তাদের প্রার্থনাসমূহ আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন।
৭। আল্লাহতায়ালা নিজে তাদের অশ্রয়স্থল হন।
৮। তারা এমন এক স্তরে পৌঁছান এবং আল্লাহতায়ালায় এমনই নিবিড় প্রেম ও ভালবাসা অর্জন করেন যে এক পর্যায়ে নবী ও শহীদগণও তাদেরকে ঈর্ষা করে। তাদের না থাকে কোন ভয়, না থাকে কোন পেরেশানী। তারা আল্লাহর প্রেমসুধা পানে সদা ব্যস্ত থাকেন।

উল্লিখিত গুণসমূহ দয়াল নবীজী(সাঃ) এর মধ্যে পরিপূর্ণ বিরাজমান ছিল। তাই নবীজী(সাঃ)-ই আল্লাহর সবচেয়ে বড় বন্ধু বা ওলী। তারপর যারা নবী-করিম(সাঃ) এর পরিপূর্ণ অনুসরন তথা জাহেরী ও বাতেনী অনুসরনের মাধ্যমে উল্লিখিত গুণসমূহ অর্জন করতে পারেন তারাও আল্লাহর সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভে ধন্য হন। আল্লাহর কোর্ব হাছিল করেন। আল্লাহর ওলী বা বন্ধু হিসাবে পরিগণিত হন।

বর্তমান জামানায় আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সূফীসাধক হলেন বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব। দুনিয়াব্যাপী যার কোটি কোটি মুরীদান তারই বাতেনী প্রতিপালনে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য বা সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আল্লাহর ওলীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহর ওলীগণ হলেন জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরুপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারন করে, সেইরুপ আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহতায়ালার নূরের তাজাল্লীতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুনান্বিত হন।”

এমন আল্লাহর ওলী সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী(রাঃ) ছাহেব বলেন, “ওলী-আল্লাহগণ বিশ্ববাসীর জন্য নিরাপত্তার সনদ এবং জামানার জন্য ‘গনিমত’ স্বরূপ।” (সূত্রঃ মকতুবাদ শরীফ)
বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ)ছাহেব বলেন, ‘ওলী-আল্লাহসকল সেই জেকেরকারী দল-যাহাদের অছিলায় গাছে ফল হয়, জমিনে শস্য হয়, পানিতে মাছ হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে। তাঁহাদের অছিলাতেই জগতে রহমতের ধারা প্রবাহিত থাকে।’
(সূত্র-নসিহত সকল খন্ড একত্রে, পৃষ্ঠা নং-১১৬০)

অলী-আল্লাহগণের কেন এতো মর্যাদা ও সম্মান?

কারণ–
তারা কোন কামেল বুযুর্গের তত্ত্বাবধানে থেকে দীর্ঘ সময়ব্যপী খোদাপ্রাপ্তির রাস্তায় কঠিন তপস্যা করে, নির্ধারিত ফরয বন্দেগীর বাইরে দিবা-রাত্র ব্যাপী নফল বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে জড় জগত, নূরের জগত ও সেফাতের জগত পার হয়ে আল্লাহর এমনই এক নিবিড় নৈকট্য হাছিল করে – যা ভাষায় বর্ণনার অতীত। শুধু এতটুকুন বলা যায় যে আল্লাহর নিবিড় সান্নিধ্যে পৌঁছে আল্লাহর নূরের তাজাল্লিতে প্রজ্জলিত হয়ে তারা হযরত মুসা (আঃ) এর নূর প্রজ্জলিত বৃক্ষের মত হয়। এ মর্যাদা তারা লাভ করেন নবীজী (সাঃ) এর পরিপূর্ণ জাহেরী ও বাতেনী অনুসরণের মাধ্যমে । তাদের ৩৩ কোটি লোমকুপের সাথে তখন আল্লাহ নূরের সংযোগে তৈরী হয়। তখন তাদের ভীতরে-বাইরে, সামনে-পিছে, ডানে-বামে তথা সর্বদিকে কেবলই আল্লাহর নূর আর নূর। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন,
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ –
আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নূরের মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) [ সুরা যুমার ৩৯:২২ ]

যাদের কালব জাগ্রত হয়েছে, অন্তর চক্ষু খুলে গেছে, অন্তর কর্ণ পরিস্কার হয়ে গেছে –তারা যখন উল্লিখিত আল্লাহর ওলির দিকে তাকায়, তখন তাদের আল্লাহর কথাই স্মরণ হয়ে যায় যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
হাশরে শেষ বিচারের দিনে মানুষ তিন দলে ভাগ হয়ে যাবে।
১। ডান দিকের দল ২। বাম দিকের দল, এবং ৩। অগ্রবর্তী দল।
ডান দিকের দল হবে জান্নাতী। বাম দিকের দল হবে জাহান্নামী এবং অগ্রবর্তী দল হবে জান্নাতী এবং থাকবেন আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে। তারাই হলেন নবী, রসূল ও আউলিয়াগণ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَكُنتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً
এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৭ ]
فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৮ ]
وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ
এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৯ ]
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ
অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:১০ ]
أُوْلَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ
তারাই নৈকট্যশীল, [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:১১ ]

হে আল্লাহ!আমরা আপনার ওলীদেরকে ভালবাসি।আমাদের রাসূল(সাঃ) বলেছেন, যে যাকে ভালবাসে সে তার সংগে।আল মাররু মা’আ মান আহাব্বা। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর ওলীদের সংগী হওয়ার তৌফিক দিন।আমিন।

 

আরো পড়ুনঃ