জাকের পার্টি জাতীয় নির্বাচন
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২৫৭২ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশের মাত্র এক বছরের মাথায় জাকের পার্টি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করে।
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দেয়। অনেকটা ধুমকেতুর মতো নির্বাচনী রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হয় জাকের পার্টি। নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার তথাকথিক প্রচলিত সংস্কৃতি পরিহার করে, নির্বাচনী যুদ্ধে প্রচন্ড সাহসিকতা নিয়ে নিশ্চিত বিপর্যয়ের আশংকা সত্বেও গুণগত পরিবর্তনের সূচনা করে। অর্থ্যাৎ প্রচলিত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ না যেয়ে ভাগ্যাহত মানুষকে পরিবর্তনের আহবান জানায়।একেবারেই আনকোরা ও ক্ষেত্রবিশেষে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বাড়ী বাড়ী যেয়ে জনগনকে তাদের ভোটাধিকারের মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরীর কাজে নেমে পড়ে। অত্যন্ত কম সময়ের দুঃসাধ্য এ অভিযাত্রায় জাতীয় নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রথম বারের মতো গুণগত পরিবর্তনের মহান কাজ সহজসাধ্য ছিল না। তারপরেও অল্প সময়ের প্রচেষ্টায় বেশ কিছু আসনে দারুন সাড়া পায় জাকের পার্টি।
এ আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীরা পরাজয়ের আশংকায় পড়েন। অন্যদিকে সারাদেশে জাকের পার্টির প্রার্থী, নেতা-কর্মী, সমর্থক শুভানুধ্যায়ীরা প্রবল উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে জনগনের দ্বারে দ্বারে যান। পার্টির প্রতীক গোলাপ ফুল ভিন্ন তাৎপর্য ও ভালোলাগা নিয়ে গ্রহনযোগ্যতা পায় দেশব্যাপী। গোলাপের সুবাস জনগনের কাছে পৌছানোর প্রাথমিক অভিযানে দারুন সফলতা পায় জাকের পার্টি।
সে সময়ে পত্রপত্রিকাও ইাতবাচক গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় এবং তখন দেশেরও একমাত্র ইলেকট্রনিক প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সে সময়ের জাকের পাটির্র সুপ্রীম কমান্ড কাউন্সিল সদস্য পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সুদীর্ঘ বক্তৃতায় জাকের পার্টি গঠনের ঐতিহাসিক প্রয়োজন ও তাৎপর্য, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং নির্বাচনী মেনিফেষ্টো তুলে ধরেন। তাঁর বক্তৃতায় নতুন আশার সঞ্চার হয় জনমানসে।দেশ ও জাতির সংকট নিরসন ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নতুন স্রোতধারার সন্ধান পায় জাতি। এদিকে, আগাম নির্বাচনী জরিপে জাকের পার্টি নতুন দল হিসাবে বেশ আধিপত্য বিস্তার করে। পূর্বাভাস দেয়া হয়, জাকের পার্টি প্রথম অংশগ্রহনেই সন্মানজনক আসন পাচ্ছে। তারপরেই ঘনিয়ে আসে নির্বাচনের চূড়ান্ত দিন। ওদিকে ক্ষমতার রাজনীতির চিরচেনা ইঞ্জিনিয়ারিংও চরম রূপ নেয়।
২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের বুক ভরা আশা নিয়ে জনগন নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে যায়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটদান চলে। সন্ধ্যায় দেশবাসী একমাত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচারিত লাইভ নির্বাচনী ফলাফল দেখায় মনোনিবেশ করে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রথম থেকেই দেখা যায়, জাকের পার্টির প্রার্থীরা কম ভোট পাচ্ছেন। পরবর্তী কয়েক ঘন্টায় দেখা গেলো জাকের পার্টিকে দুঃখজনকভাবে অত্যন্ত অসুানজনক ভোটের কোটায় নিক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। একটি পরিকল্পিত ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জাকের পার্টির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা হলো। এ ফলাফলে স্তম্ভিত হয় প্রকৃত দেশপ্রেমিক মানুষ। জাকের পার্টির অসংখ্য নেতা-কর্মী,সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী হতবাক হয়ে পড়েন। জাতির সামনে জাকের পার্টিকে অসুান করার এহেন অপচেষ্টা অবশ্য খুব একটা সফল হয় নি। কিছু দিনের মধ্যেই নব উদ্যমে কাজ শুরু করে জাকের পার্টি।
নির্বাচন পরবর্তী অভিজ্ঞতায় কার্যকরভাবে সাংগঠনিক কাঠামো পূণর্বিন্যাস ও বিস্তৃতির কাজ শুরু হয়। এবার সাংগঠনিক শৃঙ্খলও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়। পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী জাকের পার্টির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
একে একে পূনর্গঠিত হতে থাকে জেলা কমিটি, থানা কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি। এর পরের ৫ বছরে জাকের পার্টি নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে।
রাজনীতির মাঠে পথ পরিক্রমনের গতিধারায় ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি জাতীয় নির্বাচন। এবার নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি জনগনের আরো কাছে যান জাকের পার্টি চেয়ারম্যান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করেন। সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে যায়গায় যায়গায় স্বতস্ফুর্ত জনতার আবদারে অসংখ্য পথসভায় বক্তৃতা করতে বাধ্য হন। এ সময় সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ঝটিকা সফরে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান জনগনের মাঝে ব্যাপক প্রাণসঞ্চার করেন।
এবার’৯১ এর গতিধারায় জনমনে একটা আশংকা আগে থেকেই ঘনীভূত হয়। আবারও কি ইঞ্জিনিয়ারিং হবে? শেষ পর্যন্ত সে শংকাই বাস্তবতা লাভ করে। ১৯৯৬’র জাতীয় নির্বাচনে একইভাবে কম ভোটের কোটায় নিক্ষিপ্ত করা হলো জাকের পার্টিকে।
তবে সবচাইতে লক্ষ্যনীয় , পরপর দু’বারের জাতীয় নির্বাচনে জাকের পার্টি ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসাবে আবির্ভূত হলো।
দেখা গেলো, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জাকের পার্টিকে আটকানোর পরেও বেশ কিছু আসনে জাকের পার্টি যে ভোট পেয়েছে ঠিক তার কাছাকাছি বা তার চেয়ে কম ভোটে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। এর মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। আত্মপ্রকাশের শুরুতেই একটি রাজনৈতিক দলের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসাবে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারা দারুন অর্জন নিংসন্দেহে।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন যখন আসে, তখন সীমাহীন শোকের সাগরে নিমজ্জিত জাকের পার্টি, দেশে এবং বিদেশে। কারন জাকের পার্টির মহান প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের কোটি কোটি শান্তিকামী মানুষের হৃদয়েশ্বর, বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব ২০০১ সালের ১ মে, ১৮ বৈশাখ দারুল বাকায় তশরীফ নেন। মহা শোকের এ আঘাতে দেশ বিদেশে অবর্ণনীয় শোকের আবহে নিপতিত হয় জাকের পার্টির কোটি কোটি নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং স্রষ্টাপ্রেমী মানুষ। শোকের আঘাত এতটাই তীব্র ও অকষ্মাৎ ছিল যে, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সকলে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েন।
কঠিন এ সময়ে জাকের পার্টির সর্বোচ্চ নেতা পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব ও পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেব শোককে শক্তিতে পরিনত করে তা জাকের পার্টির দেশ বিদেশের সকল নেতা, কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীর মাঝে সঞ্চার করেন। গনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই অবশেষে প্রবল শোকের চাদর সরিয়ে নাম মাত্র ৫টি আসনে নির্বাচন করে জাকের পার্টি।
সাম্প্রতিক ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যতিক্রমী কৌশলগত নির্বাচনে অংশ নেয় জাকের পার্টি। তবে এবার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপযপূর্ণ দিক ছিল প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নির্বাচনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের অংশগ্রহন।
অবশ্য এর আগে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ১৯৯৯ সালে বিশেষ কারণে ফরিদপুরের সদরপুর- চরভদ্রাসন আসনে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। পদ্মা পাড়ের অবহেলিত মানুষ অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন কি ভাবে তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে সংসদে পাঠানো যায়। এ ব্যাপারে তাদের বহু চেষ্টা ছিল। অবশেষে ঐ আসনের সংসদ সদস্য মারা গেলে আসে উপ-নির্বাচন। আর এ উপ-নির্বাচনকেই এ জনপদের ভাগ্যবিড়ম্বিত মানূষগুলো আশা পূরণের পরম উপলক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়ে শুরু করে ইতিহাস বিরল আর্তি।
প্রাণপ্রিয় নেতা পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেবের কাছে তারা ছুটে আসে এবং তাঁকে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহনে প্রাণের আকুতি জানায়। মানুষগুলো জানতো প্রিয় নেতা রাজী হবেন না। তাই নানা ভাবে তারা আকুতি জানাতে থাকলো। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অবশেষে সদরপুর-চরভদ্রাসনের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলো, যেভাবেই হোক প্রিয় নেতাকে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করাতে হবে। অবশেষে একদিন সকাল থেকেই এ দু’থানার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হতে থাকলেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাঠে আর তিল ধারনের ঠাঁই থাকলো না। মাঠ উপচে রাস্তা দোকান পাট, খেলার মাঠ, পতিত জমিতে আশ্রয় নিল জনতা। শুরু হলো শ্লোগান। জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে নির্বাচনে দাড়াতেই হবে। হাজার হাজার মানুষের প্রাণের আকুতিতে আর ঘরে থাকতে পারলেন না জাকের পার্টি চেয়াম্যোন। তাঁকে মাদ্রাসার মাঠে ছুটে আসতে হলো।
ভাগ্যবিড়ম্বিত সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের প্রাণের দাবী আর অকৃত্রিম ভালোবাসায় সাড়া দিতে বাধ্য হলেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী। উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহনের সম্মতি দেয়ার সাথে সাথে নেচে উঠলো উপস্থিত হাজার হাজার জনতা।
তখন হর্ষধ্বনী আর গগনবিদারী মুহুমুর্হু শ্লোগানে কান পাতা দায় হয়ে উঠে। সেই শুরু । পরবর্তী ৩৫ দিনে এক কথায় হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো পদ্মা পাড়ের অবহেলিত নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা স্রেফ পাগলপারা হয়ে গেলেন প্রিয় নেতার জন্য। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান বের হতেন গনসংযোগে।
নাওয়া খাওয়া, বিশ্রাম ভূলে অবিরাম ছুটে যেতেন প্রাণের জনগনের কাছে। পথিমধ্যে কখনো নিবিড় মমতায় জড়িয়ে ধরতেন ঘর্মাক্ত রিক্সাচালক, ভ্যান চালক, ছিন্ন পোষাকের ভিক্ষুক, দিনমজুর, ছিন্নমূল, শ্রমিক কিংবা মুটে মজুরকে। কৃষক, স্কুল ও কলেজ শিক্ষক , ছাত্র ছাত্রী, ব্যাবসায়ী, শিল্পপতি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে।
ভাদ্রের কাঠ ফাটা রোদ, প্রাণ ওষ্ঠাগত গরম আর কখনো বা প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ছুটে গেলেন প্রাণ প্রিয় জনগনের কাছে। তাও ঘন্টার পর ঘন্টা অবিরাম পায়ে হেটে।
কখনো ইট বিছানো পথ, কখনো মেঠো পথ, কখনো ক্ষেতের আল, কখনো বা প্যাকপ্যাকে কাদায় ভরা ভয়ংকর পিচ্ছিল পথ, খানাখন্দ, ডোবা-নালা কোন কিছুকেই পরোয়া করেন নি। খাল, বিল, খরস্রোতা নদী নালা এমনকি প্রমত্তা পদ্মা পাড় হয়েছেন অবলীলায়। কখনো সাঁকো, কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকা, কখনো বা ছোট নৌকা আবার কখনো বা কোমর কিংবা বুক সমান পানি ঠেলে ছুটে গেছেন প্রিয় জনগনের কুড়ে ঘরে। নদী ভাঙ্গনে বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষের প্লাাস্টিক শীটে ছাওয়া ছাউনিতে। কখনো বা কৃষকের ছনের কুটিরে বা উঠানে। আর সর্বস্তরের মানুষের বাড়ী, ঘর, দোকান-পাট, ব্যাবসা কেন্দ্র, হাট বাজার, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা – কোন কিছুই বাদ রাখেন নি। ছুটে গেছেন দীর্ঘ দিনের নিরাময় অযোগ্য রোগীর পাশে। অসংখ্য বার নবজাতক কিংবা কোলের শিশুকে নিজ বুকে টেনে নিয়ে চুমু খেয়েছেন পরম মমতায়।
অশীতিপর বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধার কাছে মাথা নিয়েছেন তাদের দোয়া ও আর্শীবাদ পাবার জন্য। বিনিময়ে তারা যে প্রতিদান দিয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশের সামর্থ রাখে না। স্রেফ মহাকাব্য। তাই দেখা যেতো সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
কিন্তু প্রাণ প্রিয় নেতা যে পথে যাবেন, সে পথে জায়গায় জায়গায় কুপি বাতি, পাটখড়ির মশাল কিংবা হ্যারিকেন হাতে শিশু কিশোর আবাল, বৃদ্ধ বনিতা- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান তথা সকল ধর্ম মত পথের মানূষ একসাথে দাড়িয়ে থাকতেন।
ঘন্টার পর ঘন্টা নিষ্পলক অপেক্ষা- কখন আসেন প্রিয় নেতা। তাকে যে এক নজর দেখতেই হবে। একটু ছুঁয়ে দিতে হবে। প্রাণের সমর্থন জানাতে হবে। আহা বাছা ! নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। অসম্ভব উজ্জল, মায়াবী গায়ের রং, কোমল কুসুম মুখাবয়ব রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। চুল লম্বা হয়ে ঘাড় ছাড়িয়েছে। তাকে এক নজর দেখলে যে চোখের পানি বাঁধ মানে না। তাই জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে এক নজর দেখা মাত্রই অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। জনতার কান্না তাঁকেও অশ্রুসজল করতো।
জনতার নেতা আসমানী ঔদার্যে সর্বস্তরের মানুষকে এতটাই পাগলপারা করলেন যে, ভাষানচড়ে পুত্র হারা, দীনহীন এক বৃদ্ধা প্রিয় নেতাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। তার ভাষায় বললেন, “আমি বিক্কায় নামুম তোর নিগা”। গনসংযোগের মায়াভরা এ দিনগুলোতে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যেমন কৃষকের দাওয়ায় বসেছেন, তেমনি উঠানের পাশে পাতায় ছাওয়া ছোট রান্না ঘরে রান্নাবান্নায় ব্যস্ত পল্লীবধুঁর চুলার পাশে যেয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। কখনো রিক্সা বা ভ্যান চালিয়েছেন।
একবার সদরপুর ব্রীজ পেরিয়ে রাস্তায় দেখা হলো করাতীতের সাথে (যারা হস্ত চালিত বড় করাতে গাছ কেটে কাঠ বানান)। তাদের সারা গায়ে কালি মাখা।
জাকের পার্টি চেয়ারম্যানকে দেখা মাত্র বাশের মাচা থেকে লাফ দিয়ে তারা নীচে নামলো। আর তাদের হতবিহ্বল করে সফেদ সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত জাকের পার্টি চেয়ারম্যান বুকে জড়িয়ে ধরলেন। করাতীরা যেন এ ঘটনা নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাদের গায়ে মাখা কালি জড়িয়ে গেলো প্রিয় নেতার পাঞ্জাবীতে। কিন্তু সে দিকে যে ভ্রুক্ষেপই নেই প্রিয় নেতার!
একইভাবে জীবনের ঝুকি নিয়ে ভরা বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিলেন একাধিকবার। দুর্গম চরের সকল জনপদে ছুটে গেলেন কোমর সমান, বুক সমান পানিতে হেঁটে। তাদের ঘরে ঘরে গেলেন। ঘুড়ে দাড়ানোর, ভালো ভাবে বেচে থাকার সাহস, সঙ্কল্প সঞ্চার করলেন তাদের মাঝে। পদ্মা চরের মানুষগুলোও বিস্মিত। এর আগে কেউ তো এত মমতা নিয়ে তাদের কাছে ছুটে আসে নি। পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে নি। তাছাড়া এখানে এ জনপদে কেউ তো আসেই না। এ কোন রাজপুত্র! আরে এ যে ভাগ্য ফেরানোর নেতা! জীবন গদ্যে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির স্বপ্ন জাগানো বহুকাঙ্খিত নেতা। তাকেই তো খোঁজা হচ্ছে বছরের পর বছর। প্রমত্তা পদ্মার রুপালী ঢেউ, সুদীর্ঘ বালিয়ারী, প্রবল বাতাস কিংবা অপরুপ জ্যোৎনা রাতে এ নেতার আগমনের কথাইতো ভেসে বেড়ায়।
দেয়া নেয়ার এ পালা নির্বাচনী মহাকাব্যে এক স্বতন্ত্র্য মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়ে আছে। সময়ে তা উদ্ভাসিত হবে স্বমহিমায়। নির্বাচনী গনসংযোগের নতুন ইতিহাসের এ দিনগুলোতে দেখা গেলো জাকের পার্টি চেয়ারম্যান প্রতিদিন গড়ে কম করে হলেও ৩০ কিলোমিটার মেঠো পথ, সড়ক পথ হেটেছেন। রাজনৈতিক দলের সকল নেতা, কর্মী, সমর্থক সব মত পার্থক্য, দলীয় স্বার্থ, ভেদাভেদ ভুলে এক মন এক পাণ হয়ে গেলেন পীরজাদা আলহাজ্জ মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদীর জন্য।
ইতিহাস বিরল নির্বাচনী গনসংযোগের মাধ্যমে তিনি গোটা জনপদের হৃদয়ের আসন দখল করলেন । এক কথায় নির্বাচনের আগেই ৯০ শতাংশেরও অধিক ভোটারের হৃদয়ের রায় পেয়ে গেলেন। পরবর্তীতে সে সময়ের অপরাজনীতির মারপ্যাচে স্বতস্ফুর্ত জনগনের ব্যাপক প্রাণহানীর নিশ্চিত আশংকা দেখা দিলে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান শুধু জনগনের জানমাল রক্ষায় নির্বাচন বয়কট করেন। নিশ্চিত বিজয় দূরে ঠেললেন অবলীলায়।
অথচ নির্বাচনের বাকী ছিল মাত্র দু’দিন। অবশেষে শেষ নির্বাচনী সমাবেশে বিজয়ের সুরভিতে পাগলপারা জনতা যখন বর্ণাঢ্য বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে সদরপুর স্টেডিয়াম অভিমুখে আসছিল, তখন অপরাজনীতির নোংরামী আর সহিংস বাঁধার মুখে পড়ে এ সব মিছিল। প্রতিপক্ষ সংঘর্ষ আর হানাহানির উস্কানী দেয়। কিন্তু উৎসবমুখর জনতা এ ফাঁদে পা দেয় নি।
অবশেষে সেদিন অর্ধলক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষ সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান যখন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেন। তখন উৎসবমুখর সমাবেশ মুহুর্তেই প্রবল কান্নায় ভারাকান্ত হয়ে পড়লো। জনতা সমস্বরে না না বলে আর্তি জানাতে থাকলেন। কিন্তু জাকের পার্টি চেয়ারম্যানের কাছে যে, তার জনগন আগে। ক্ষমতা তো তুচ্ছ। নিজের নিরঙ্কুশ আধিপত্য ও নিশ্চিত বিজয় দূরে ঠেলে ব্যাপক রক্তপাত ও সহিংসতা থেকে শুধু নিরীহ জনসাধারনের জীবন রক্ষায় নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচনী রাজনীতি তথা ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস, নতুন মাইলফলক উন্মোচন করলেন জাকের পার্টি চেয়ারম্যান।
সে সমাবেশে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ভোটারদের ভোট বয়কটের আহবান জানান। ঠিকই নির্বাচনের দিন দেখা গেলো শতকরা ২ ভাগ ভোটারও ভোট কেন্দ্রে যায় নি। যাই হোক পরবর্তীতে এ নির্বাচন ও ফলাফল জাতীয় সকল পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়। এমনকি বাস্তবতার বিরুদ্ধে মনগড়া ফলাফলের চরমতম প্রদর্শনীতে হতবাক হয়ে জাতীয় পত্রপত্রিকা সে সময় নানা ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনও ছাপে।
তারপর সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। আগেই বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ এ নির্বাচনে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান এবং তার দল অংশগ্রহন করে কৌশলগত কারনে। ফলাফল দেখে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু এ নির্বাচনে দারুন ভাবে কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয় জাকের পার্টি। সারা দেশে ৩০ টিরও অধিক আসনে অংশগ্রহন করে জাকের পার্টি। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান’৯৯ এর ন্যায় আবারও গনসংযোগে নেমে জনতার হৃদয় দখল করে নেন। তার জনসংযোগ দেখে মনে হয়েছে, ৯৯ এ যেখানে থেমেছিলেন সেখাণ থেকেই যেন আবার শুরু করেছেন। ফলাফল – যথারীতি জনগন পাগলপারা তাঁর জন্য। তারপর আবার বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নিজের এবং দলের বিজয়কে মুখ্য না করা।
সোজা কথা, জাতীয় রাজনীতি ও নির্বাচনী রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের দরুহ অভিযাত্রায় জাকের পার্টি ২০ বছরের ও অধিক সময় ধরে আপন স্বার্থ ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার সুফল জনগন অবশ্যই পাবে।