ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ৩য় পর্ব

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪৫৪ বার পড়া হয়েছে

আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ৩য় পর্ব

আর মাত্র দু’চার দিন পরেই দেশের পথঘাটগুলো বিশ্ব জাকের মঞ্জিলাভিমুখি হয়ে উঠবে পবিত্র উরস উপলক্ষে। মাইলের পর মাইল চলবে আটরশির কাফেলা। এত মানুষ কেন যায় আটরশির পীর ছাহেব খাজা ফরিদপুরীর দরবারে? কি পায় তাঁর দরবার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে?
জাকের মঞ্জিল থেকে খাজা ফরিদপুরী প্রচারিত সত্য তরিকার তরঙ্গ স্পর্শ করেছে সকলের মন, ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে। মুসলমানগরা বলেন, সত্যপীর খাজাবাবা, বৌদ্ধ, খৃষ্টান আর হিন্দু ধর্মাবলম্বিগণ বলেন, সত্য গুরু মহান সাধক আটরশির পীর বাবা। যে নামেই তাঁকে ডাকা হোক সকল জাকের, আশেক এবং বিশ্ববাসীদের পরম শ্রদ্ধেয় পীর এবং ‘বন্ধু’ খাজাবাবা ফরিদপুরী।

মহান সূফী সাধক হযরত শাহসূফী “খাজা ফরিদপুরী” বলে পরিচিত অগণিত মানুষের কাছে। দেশী-বিদেশী অজস্র মানুষ তাঁর কাছে যান। কিন্তু তিনি কখনও কোথায়ও যান না। বছরে একবার তাঁর আপন পীর হযরত শাহ সূফী খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে যান পাবনা জেলার এনায়েতপুরে।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সূফী সাধক হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) এর আধ্যাত্নিক উত্তরাধিকারিগণের মধ্যে সবচেয়ে দীপ্তমান ব্যক্তিত্ব খাজা ফরিদপুরী। শুধু তাঁর অনুসারীদেরই পথ প্রদর্শক নন-নানান দেশের, নানান ধর্মের, নানান পেশার লোক তাঁর কাছে আসেন। তাদের অণ্বেষা কখনও আধ্যাত্নিক, কখনও ঐহ্যিক। সহজ-সরলভাবে তিঁনি তাদের কাছ থেকে তাদের দুঃখ-শোক-সমস্যার কথা শোনন। তাদের আধ্যাত্নিক শান্তি এবং জাগতিক সমস্যার পথ ও পন্থা সম্বন্ধে নির্দেশ দান করেন। প্রচার করেন ইসলাম বা শান্তির অমিয় বাণী।

সাধারণের কাছে যে বাণী তিঁনি প্রচার করেন তার মর্মকথা এই যে-বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্র সত্যের অপলাপ হচ্ছে। তাই সবাইকে তিঁনি সৎ হতে বলেন। কারন সৎ লোকের অভাব হলেই সমাজ জীবন বিপর্যস্ত হয়, বিপন্ন হয় জাতীয় জীবনও।

খাজা ফরিদপুরী বলেন, “কর্মক্ষেত্রের যে কোনও সৎ পেশাকেই তিনি সম্মানজনক মনে করেন। সবাইকে কর্মের প্রতি রাসূলে করিম (সাঃ) এর তাগিদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
প্রতিদিন তাঁর দরবারে আগত হাজার হাজার অনুসারী, যারা জাকের নামে পরিচিত, তাদের সাথে খাজা ফরিদপুরীর যে নিবিড় সম্পর্ক তা চোখে না দেখলে বুঝা যায় না। যারা তাকে দৈনন্দিন কর্মসূচীর মাঝে দেখেছেন তারা জানেন সর্বক্ষন কর্মের মাঝেই ধর্মের সারবত্তা সন্ধান করতে তিনি বলেন সবাইকে।

তিঁনি বলেন, যারা ভুল করেন তাদের উপদেশ দেবার জন্য আমার দরজা খোলা রাখতে হয়। এটা (বিশ্ব জাকের মঞ্জিল) জাতির জন্য একটা আধ্যাত্নিক প্লাট ফরম। আমার কর্মসূচীতে রাজনীতি নেই। সব দলের লোকজনেরাই আমার এখানে আসে। আমি তাদের উপদেশ দেই, সৎপথে চলুন, দেশকে রক্ষা করার জন্য হক কাজ করুন।

দুঃখ দৈন্য বেদনা যাতনা নিপীড়ন থেকে মানুষ শান্তি চায়। আমি আর কিছু না পারি অন্ততঃ কথা বলে মানুষকে শান্তি দেয়ার চেষ্টা করি।
⭕জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নঃ দেশবাসীর প্রতি আপনার উপদেশ কি?

✅হযরত ফরিদপুরীঃ আমার উপদেশ ইসলামের রজ্জুকে শক্ত করে ধরা। আমি যে সব উপদেশ দেই তা পালন করলে অতি ভাল। আর না করলে অন্ততঃ ভাল মানুষ হতে হবে। তবেই মঙ্গল। আর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিঁনি বলেন, “দুনিয়া ছেড়ে দিলে চলবে না। আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। এই জন্য আধুনিক শিক্ষাও প্রয়োজন। আধুনিক শিক্ষা না হলে পার্থিব জ্ঞানের প্রসার হবে না। কোন কাজও হবে না।

⭕সাংবাদিকের আর একটি প্রশ্নঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের জন্য সরকারী কোন সাহায্য চান না কেন?

✅উত্তরঃ চাই না। কারণ এখানে আমরা লক্ষ হাতে কাজ করি। আমরা নিজেরাই কর্মী। নিজেরাই শ্রমিক। আমি টাকা বাক্সে রেখে দেবার জন্য আসিনি। সমস্তই আল্লাহ ও রাসূলের কাজে ব্যয় করছি।

ইসলামকে রাসূলাল্লাহর স্বপ্নের সুন্দর রঙ্গে রঙ্গিন করাই আমার একান্ত আশা। অর্থলিপ্সা, রাজ্য লিপ্সা নিয়া আমি আসিনি। তাই যদি হত তা হলে তো সবচেয়ে বড় দল হতো আমার। প্রায় এক কোটি লোক।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা খাজা ফরিদপুরী শুধু আধ্যাত্নিক জ্ঞানের অধিকারী নন। তিনি উদারপন্থী এবং যুগসচেতন পথপ্রদর্শক।
মানবতাবোধ এবং ঐক্য আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। খাজা ফরিদপুরী তাঁর ভক্তদের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের আর্দশে যে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ এদেশের মানুষের মধ্যে বিকশিত করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছেন হয়ত কালক্রমে তা-ই জাতীয় ঐক্যের পটভূমি রচনা করবে। খাজা ফরিদপুরী বলেনঃ এদেশের মানুষ রাসূলে করিম (সাঃ) এর খাঁটি উম্মত। যদিও দুনিয়ার অনেক মুসলমান আজ বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন সত্য তরিকার বাণী এদেশ থেকে দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তিঁনি বলেন, নব পর্যায়ে খাঁটি ইসলামের পুনরুজ্জীবনের লক্ষন এদেশের মাটিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চিত্রাবাংলা নিবন্ধ
( মীর সিরাজুল হুদা রচিত নিবন্ধ সংক্ষেপিত, ১৮-২-৮৩)

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ৩য় পর্ব

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ৩য় পর্ব

আর মাত্র দু’চার দিন পরেই দেশের পথঘাটগুলো বিশ্ব জাকের মঞ্জিলাভিমুখি হয়ে উঠবে পবিত্র উরস উপলক্ষে। মাইলের পর মাইল চলবে আটরশির কাফেলা। এত মানুষ কেন যায় আটরশির পীর ছাহেব খাজা ফরিদপুরীর দরবারে? কি পায় তাঁর দরবার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে?
জাকের মঞ্জিল থেকে খাজা ফরিদপুরী প্রচারিত সত্য তরিকার তরঙ্গ স্পর্শ করেছে সকলের মন, ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে। মুসলমানগরা বলেন, সত্যপীর খাজাবাবা, বৌদ্ধ, খৃষ্টান আর হিন্দু ধর্মাবলম্বিগণ বলেন, সত্য গুরু মহান সাধক আটরশির পীর বাবা। যে নামেই তাঁকে ডাকা হোক সকল জাকের, আশেক এবং বিশ্ববাসীদের পরম শ্রদ্ধেয় পীর এবং ‘বন্ধু’ খাজাবাবা ফরিদপুরী।

মহান সূফী সাধক হযরত শাহসূফী “খাজা ফরিদপুরী” বলে পরিচিত অগণিত মানুষের কাছে। দেশী-বিদেশী অজস্র মানুষ তাঁর কাছে যান। কিন্তু তিনি কখনও কোথায়ও যান না। বছরে একবার তাঁর আপন পীর হযরত শাহ সূফী খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে যান পাবনা জেলার এনায়েতপুরে।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সূফী সাধক হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) এর আধ্যাত্নিক উত্তরাধিকারিগণের মধ্যে সবচেয়ে দীপ্তমান ব্যক্তিত্ব খাজা ফরিদপুরী। শুধু তাঁর অনুসারীদেরই পথ প্রদর্শক নন-নানান দেশের, নানান ধর্মের, নানান পেশার লোক তাঁর কাছে আসেন। তাদের অণ্বেষা কখনও আধ্যাত্নিক, কখনও ঐহ্যিক। সহজ-সরলভাবে তিঁনি তাদের কাছ থেকে তাদের দুঃখ-শোক-সমস্যার কথা শোনন। তাদের আধ্যাত্নিক শান্তি এবং জাগতিক সমস্যার পথ ও পন্থা সম্বন্ধে নির্দেশ দান করেন। প্রচার করেন ইসলাম বা শান্তির অমিয় বাণী।

সাধারণের কাছে যে বাণী তিঁনি প্রচার করেন তার মর্মকথা এই যে-বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্র সত্যের অপলাপ হচ্ছে। তাই সবাইকে তিঁনি সৎ হতে বলেন। কারন সৎ লোকের অভাব হলেই সমাজ জীবন বিপর্যস্ত হয়, বিপন্ন হয় জাতীয় জীবনও।

খাজা ফরিদপুরী বলেন, “কর্মক্ষেত্রের যে কোনও সৎ পেশাকেই তিনি সম্মানজনক মনে করেন। সবাইকে কর্মের প্রতি রাসূলে করিম (সাঃ) এর তাগিদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
প্রতিদিন তাঁর দরবারে আগত হাজার হাজার অনুসারী, যারা জাকের নামে পরিচিত, তাদের সাথে খাজা ফরিদপুরীর যে নিবিড় সম্পর্ক তা চোখে না দেখলে বুঝা যায় না। যারা তাকে দৈনন্দিন কর্মসূচীর মাঝে দেখেছেন তারা জানেন সর্বক্ষন কর্মের মাঝেই ধর্মের সারবত্তা সন্ধান করতে তিনি বলেন সবাইকে।

তিঁনি বলেন, যারা ভুল করেন তাদের উপদেশ দেবার জন্য আমার দরজা খোলা রাখতে হয়। এটা (বিশ্ব জাকের মঞ্জিল) জাতির জন্য একটা আধ্যাত্নিক প্লাট ফরম। আমার কর্মসূচীতে রাজনীতি নেই। সব দলের লোকজনেরাই আমার এখানে আসে। আমি তাদের উপদেশ দেই, সৎপথে চলুন, দেশকে রক্ষা করার জন্য হক কাজ করুন।

দুঃখ দৈন্য বেদনা যাতনা নিপীড়ন থেকে মানুষ শান্তি চায়। আমি আর কিছু না পারি অন্ততঃ কথা বলে মানুষকে শান্তি দেয়ার চেষ্টা করি।
⭕জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নঃ দেশবাসীর প্রতি আপনার উপদেশ কি?

✅হযরত ফরিদপুরীঃ আমার উপদেশ ইসলামের রজ্জুকে শক্ত করে ধরা। আমি যে সব উপদেশ দেই তা পালন করলে অতি ভাল। আর না করলে অন্ততঃ ভাল মানুষ হতে হবে। তবেই মঙ্গল। আর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিঁনি বলেন, “দুনিয়া ছেড়ে দিলে চলবে না। আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। এই জন্য আধুনিক শিক্ষাও প্রয়োজন। আধুনিক শিক্ষা না হলে পার্থিব জ্ঞানের প্রসার হবে না। কোন কাজও হবে না।

⭕সাংবাদিকের আর একটি প্রশ্নঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের জন্য সরকারী কোন সাহায্য চান না কেন?

✅উত্তরঃ চাই না। কারণ এখানে আমরা লক্ষ হাতে কাজ করি। আমরা নিজেরাই কর্মী। নিজেরাই শ্রমিক। আমি টাকা বাক্সে রেখে দেবার জন্য আসিনি। সমস্তই আল্লাহ ও রাসূলের কাজে ব্যয় করছি।

ইসলামকে রাসূলাল্লাহর স্বপ্নের সুন্দর রঙ্গে রঙ্গিন করাই আমার একান্ত আশা। অর্থলিপ্সা, রাজ্য লিপ্সা নিয়া আমি আসিনি। তাই যদি হত তা হলে তো সবচেয়ে বড় দল হতো আমার। প্রায় এক কোটি লোক।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা খাজা ফরিদপুরী শুধু আধ্যাত্নিক জ্ঞানের অধিকারী নন। তিনি উদারপন্থী এবং যুগসচেতন পথপ্রদর্শক।
মানবতাবোধ এবং ঐক্য আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। খাজা ফরিদপুরী তাঁর ভক্তদের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের আর্দশে যে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ এদেশের মানুষের মধ্যে বিকশিত করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছেন হয়ত কালক্রমে তা-ই জাতীয় ঐক্যের পটভূমি রচনা করবে। খাজা ফরিদপুরী বলেনঃ এদেশের মানুষ রাসূলে করিম (সাঃ) এর খাঁটি উম্মত। যদিও দুনিয়ার অনেক মুসলমান আজ বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন সত্য তরিকার বাণী এদেশ থেকে দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তিঁনি বলেন, নব পর্যায়ে খাঁটি ইসলামের পুনরুজ্জীবনের লক্ষন এদেশের মাটিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চিত্রাবাংলা নিবন্ধ
( মীর সিরাজুল হুদা রচিত নিবন্ধ সংক্ষেপিত, ১৮-২-৮৩)