ঢাকা ১২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাল মিয়া – বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রবীণ খাদেম

  • আপডেট সময় : ১০:১৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫০৪ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লাল মিয়া – বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রবীণ খাদেম

আজ যাকে নিয়ে লিখছি তিনি একজন সাধারণ মানুষ।

আপন পীরের প্রতি মহব্বত, আর নিবেদন দিয়ে কি করে একজন সাধারণ মানুষ নিজেকে এক অনন্যা স্থানে নিতে পারে তিনি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিল থাকবে, কেবলাজান হুজুরের পবিত্র নসিহত থাকবে এবং এর সাথে তিনি থেকে যাবেন ভক্তি আর নিষ্ঠার এক অনন্যা উদাহরণ হিসাবে।

কেবলাজান হুজুরের তরীকত প্রচারের সূচনা লগ্নে তিনি ছিলেন কেবলাজানের ছায়া সঙ্গী। ছিলেন কেবলাজানের ব্যাক্তিগত বাবুর্চি। ছিলেন কেবলাজানের পরিবারের একজনের মত। তিনি সম্মানিত লাল মিয়া। পবিত্র নসিহত শরীফে যে কয়েকজন সৌভাগ্যবান মুরিদ সন্তানের নাম কেবলাজান হুজুর লিপিবদ্ধ করেছেন লাল মিয়া তাঁদের একজন। লাল মিয়ার সম্মন্ধে কিছু বললে বলতে হয় পরশ পাথরের স্পর্শ পেয়ে এক অতি সাধারণ মানুষের অসাধারণ হবার কাহিনী। তার সম্মন্ধে আজ যে বিষয় গুলো বলার চেষ্টা করছি তারমধ্যে একটি ঘটনা ছাড়া সব ঘটনাগুলা আমার শোনা। তবে যাদের কাছ থেকে শুনেছি তারাও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল এর এক একজন কিংবদন্তী।

লাল মিয়া কে আমরা লাল চাচা বলেই ডাকতাম। তিনার ছেলেরা আমাদের অনেকের সমবয়সী। একসময় দরবার শরীফে নৈশ পাহারার খেদমত ছিল। আমরা ঢাকা থেকে দরবারে গেলে লাঠি হাতে সারারাত দরবারে পাহারার খেদমত করতাম। বলাবাহুল্য দরবারে কখনো রাতে কোন সমস্যা দেখি নাই তবুও এই খেদমত চলতো।একদিন রাতে পাহারার নিয়োজিত আছি। জামে মসজিদ এর সামনে দেখা গেলো একজন সমস্ত শরীর কাঁথা দিয়ে ঢেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে পা দিয়ে সোয়া। আমাদের সাথের এক কর্মী তার কাছে গিয়া বললো আল্লাহর দিকে পা দিয়ে কে শুয়ে আছেন। কাঁথার ভিতর থেকে জবাব দিলেন, যে দিকে আল্লাহ নাই পাটা ধরে সে দিকে ঘুরাইয়া দে। কাঁথা সরাতেই দেখলাম লাল চাচা। ক্ষমা চেয়ে চলে আসলাম। এখন চিন্তা করি কত কঠিন জবাব।

দৈনিক আল মুজাদ্দেদ এ কর্মরত থাকা অবস্থায় একদিন সৈয়দ সিরাজুল কবীর চাচা কেবলাজানের রেফারেন্স দিয়ে একটি ঘটনা বললেন। একবার কেবলাজান নৌকাযোগে এনায়েতপুর যাচ্ছেন যথারীতি লাল চাচা কেবলাজানের সফরসঙ্গী। কেবলাজানের নৌকাতেই তিনি আছেন।
কথা প্রসঙ্গে কেবলাজান বললেন, আমার পীর খাজা এনায়েতপুরি দুনিয়ায় আসছিলেন আমার জন্য। কিন্তু লাল মিয়া আমি যার জন্য আসছি তাকে এখনো পাই নাই। এই কথার পরে হঠাৎ লাল মিয়া নৌকার মাঝিকে বললেন মাঝি নৌকা পাড়ে ভিরাও। মাঝি তাই করলো। মাঝি মনে করলো হয়তো লাল মিয়ার টয়লেট এর প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু লাল মিয়া তার মালছামান এর পোটলা নিয়ে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। কিছু দূর যেতেই কেবলাজান মাঝিকে বললেন লাল মিয়া কে ডাকেন। লাল মিয়া ফিরে আসতে কেবলাজান বললেন কই যাও। অভিমানী লাল মিয়ার উত্তর আপনি তো আমার জন্য আসেন নাই। তাহলে আমি আপনার পিছনে ঘুরবো কেন? কেবলাজান লাল মিয়াকে নৌকাতে উঠতে বললেন। নৌকা আবার চলতে শুরু করলে কেবলাজান লাল চাচাকে বললেন লাল আকাশে চাঁদ একটাই থাকে। তাই বলে কি চাঁদের পাশে উজ্জ্বল তাঁরা গুলো কি থাকে না। তুমি না হয় চাঁদের পাশের একটা তাঁরা হয়েই থাকলা ।।

[কেবলাজানের সাথে লাল চাচার এনায়েতপুরের জীবনের অনেক ঘটনা শুনেছি কিন্তু সব বিষয় লেখা যায় না। কারণ অনেক ঘটনার বর্ণনা সবাই উপলব্ধি করতে পারবে না। ভুল বার্তা পৌঁছানো কারো কাজ না।]

কেবলাজান হুজুরের এক মহা তপস্যা ছিল না খাওয়া। আর এই না খাওয়া রোগই তিনাকে আমাদের থেকে জুদা করেছে। কেবলাজানের শরীর মুবারক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ভালো পুষ্টিকর কিছু খান না, কিছু খেলেও খুবই সামান্য। এ অবস্থা সহ্য করা লাল মিয়া জন্য কঠিন। তিনি ঠিক করলেন সকালের নাস্তা ফেনাভাত বা খিচুড়ির সাথে যদি একটু ঘি দেওয়া যায় তাহলে কেবলাজানের শরীর মুবারক একটু পুষ্টি পাবে। তিনিই কেবলাজানের বাবুর্চি। তিনি এক জাকের ভাই এর মারফত ঘি জোগাড় করে, খুবই সামান্য সকালের নাস্তায় দিতেন। পরিমান এতো কম দিতেন যাতে কেবলাজান বুজতে না পারেন। বুঝতে পারলে হয়তো আর খাবেন না। একদিন কেবলাজান সকালে নাস্তা খেতে খেতে বললেন লাল মিয়া তুমি কি খিচুড়িতে ঘি দিছো? সে রকমের গন্ধ পাই। লাল মিয়ার উত্তর, তেলই জোগাড় হয় না আবার ঘি…..[বলাই বাহুল্য তখন কেবলাজানের আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন।] আশেক মাশুকের প্রেম বুঝি এমনই হয়।

লাল চাচা একদিন কেবলাজানের কাছে আসলেন জানতে পারলেন কেবলাজান ও পীর আম্মাজান না খেয়ে আছেন কারণ ঘরে চাল নাই। একথা শোনার পরে লাল চাচা তার বাড়িতে গেলেন শুনলেন তার বাড়ির অবস্থাও একই। নিজের বাড়ি তাকে ভাবাচ্ছে না, তার মাথায় একটাই চিন্তা কেবলাজানের পরিবার না খাওয়া। টাকার কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে তিনি তার ঘরের চালে [টিনের ছাদকে চাল বলে] উঠলেন চালের টিন খুললেন। টিন নিয়ে ১৪ রশি বাজারে গিয়া বিক্রি করেন। চাল কিনে কেবলাজান এর কদম মুবারক এ জমা দিলেন।

মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আজ শান সওকত পূর্ন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল। আজ দরবার থেকে চাওয়া হলে কোটি কোটি টাকা দেবার লোকের অভাব নাই। কেয়ামত পর্যন্ত যদি সবাই প্রাণ খুলে খেদমত করে সব খেদমত মিলে নিজের ঘরের চালের টিন খুলে বিক্রি করে কেনা কয়েক সের চালের সমান হবে কিনা। প্রেম ভক্তি কি একেই বলে।।

জীবনের শেষ সময়ে একদিন দরবারে প্রচুর লোক সমাগম। কেবলাজান হুজরা শরীফে সবার সাথে দেখা করছেন। দূরে দাড়িয়ে লাল চাচা চোখে পানি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। চোখে পানি কেন জানতে চাইলে বললেন হুজুর অনেক আগে একদিন বলছিলেন, লাল এমন একটা দিন আসবে আমি তোমায় দেখে না চিনার মতো আচরণ করবো আর তুমি ইচ্ছা করলেও আমার সাথে দেখা করতে পারবা না। আজ তার দুই টাই দেখলাম।

হটাৎ লাল মিয়া হুজরা শরীফ এ ঢুকলেন। কেবলাজান হলরুমে। লাল মিয়া কে দেখে কেবলাজান তড়িঘড়ি করে ভিতর বাড়ির দিকে যেতে চাইলেন। লাল মিয়া নাছোড়। কেবলাজানের কাছে জানতে চাইলেন আপনি অনুমোদন দিয়ে দিলেন। কেবলাজান বললেন আমি দেই নাই তোমার দাদা হুজুর চাইছে। লাল মিয়া বললেন, চাইছে না দিছেন। কেবলাজান হুজুর বললেন চাইছে। লাল মিয়া কদমবুচি করে নিজের বাড়িতে গেলেন, বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরবারে এসে থাকতে শুরু করলেন। এটাই তার শেষ বাড়িতে যাওয়া।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হাসপাতালের তখনকার ডাক্তার শফিক সাহেব এর কাছে শুনেছি, লাল চাচা হাসপাতালে ভর্তি। খুব কষ্ট পাচ্ছে। ডাক্তার হুজরা শরীফ গেলেন ঢাকায় ফোন করতে। লাল চাচার জন্য একটা ইনজেকশন আনতে হবে। হুজুর কেবলাজান ডাক্তার শফিক সাহেবকে বললেন, বাবা ইনজেকশন আনা লাগবে না, আজ রহমতের সময় লাল এর সব যন্ত্রনার অবসান হবে। ঠিক রহমতের সময় লাল মিয়া ইহলোক ত্যাগ করেন। পীর আর মুরীদের বাক্যলাপ আশেক ছাড়া কে বুঝিবে। কেবলাজানই আবার লাল চাচার মৃত্যুর সংবাদ শুনে অস্থির হয়ে পড়েন। কে বুঝিবে অলি আল্লাহর খেলা।।।।

লাল চাচার জানাজার পরে কেবলাজান তিনার দুই আওলাদ কে দিয়ে লাল চাচার খাঁটিয়া উঠিয়ে লাল মিয়াকে দরবার থেকে বিদায় দেন। কেবলাজানের হুকুমে লাল মিয়াকে এমন জায়গায় দাফন করা হয়, যেন প্রতি দিন যাতায়াত এর সময়ে কেবলাজান লাল মিয়ার কবরটা দেখতে পান। কেবলাজান নিজে উপস্থিত হয়ে জিয়ারত করছিলেন লাল চাচার কবর। প্রতিদিন একনজর দেখতেন বৈকালিক ভ্রমণের সময়।

ত্যাগ এর মহিমায় লাল মিয়াকে জানবে আগামী দিনের মানুষ কেবলাজান হুজুরের বাবুর্চি আর পরিবারের সদস্য এর মতো একজন অসাধারণ মানুষ হিসাবে। কেবলাজানের রত্ন ভাণ্ডারে কত রত্নের সমারোহ ছিল তা কেবল কেবলাজানই ভালো জানেন।

লিখেছেনঃ লুৎফুল হাফিজ পলাশ

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

লাল মিয়া – বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রবীণ খাদেম

আপডেট সময় : ১০:১৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

লাল মিয়া – বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রবীণ খাদেম

আজ যাকে নিয়ে লিখছি তিনি একজন সাধারণ মানুষ।

আপন পীরের প্রতি মহব্বত, আর নিবেদন দিয়ে কি করে একজন সাধারণ মানুষ নিজেকে এক অনন্যা স্থানে নিতে পারে তিনি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিল থাকবে, কেবলাজান হুজুরের পবিত্র নসিহত থাকবে এবং এর সাথে তিনি থেকে যাবেন ভক্তি আর নিষ্ঠার এক অনন্যা উদাহরণ হিসাবে।

কেবলাজান হুজুরের তরীকত প্রচারের সূচনা লগ্নে তিনি ছিলেন কেবলাজানের ছায়া সঙ্গী। ছিলেন কেবলাজানের ব্যাক্তিগত বাবুর্চি। ছিলেন কেবলাজানের পরিবারের একজনের মত। তিনি সম্মানিত লাল মিয়া। পবিত্র নসিহত শরীফে যে কয়েকজন সৌভাগ্যবান মুরিদ সন্তানের নাম কেবলাজান হুজুর লিপিবদ্ধ করেছেন লাল মিয়া তাঁদের একজন। লাল মিয়ার সম্মন্ধে কিছু বললে বলতে হয় পরশ পাথরের স্পর্শ পেয়ে এক অতি সাধারণ মানুষের অসাধারণ হবার কাহিনী। তার সম্মন্ধে আজ যে বিষয় গুলো বলার চেষ্টা করছি তারমধ্যে একটি ঘটনা ছাড়া সব ঘটনাগুলা আমার শোনা। তবে যাদের কাছ থেকে শুনেছি তারাও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল এর এক একজন কিংবদন্তী।

লাল মিয়া কে আমরা লাল চাচা বলেই ডাকতাম। তিনার ছেলেরা আমাদের অনেকের সমবয়সী। একসময় দরবার শরীফে নৈশ পাহারার খেদমত ছিল। আমরা ঢাকা থেকে দরবারে গেলে লাঠি হাতে সারারাত দরবারে পাহারার খেদমত করতাম। বলাবাহুল্য দরবারে কখনো রাতে কোন সমস্যা দেখি নাই তবুও এই খেদমত চলতো।একদিন রাতে পাহারার নিয়োজিত আছি। জামে মসজিদ এর সামনে দেখা গেলো একজন সমস্ত শরীর কাঁথা দিয়ে ঢেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে পা দিয়ে সোয়া। আমাদের সাথের এক কর্মী তার কাছে গিয়া বললো আল্লাহর দিকে পা দিয়ে কে শুয়ে আছেন। কাঁথার ভিতর থেকে জবাব দিলেন, যে দিকে আল্লাহ নাই পাটা ধরে সে দিকে ঘুরাইয়া দে। কাঁথা সরাতেই দেখলাম লাল চাচা। ক্ষমা চেয়ে চলে আসলাম। এখন চিন্তা করি কত কঠিন জবাব।

দৈনিক আল মুজাদ্দেদ এ কর্মরত থাকা অবস্থায় একদিন সৈয়দ সিরাজুল কবীর চাচা কেবলাজানের রেফারেন্স দিয়ে একটি ঘটনা বললেন। একবার কেবলাজান নৌকাযোগে এনায়েতপুর যাচ্ছেন যথারীতি লাল চাচা কেবলাজানের সফরসঙ্গী। কেবলাজানের নৌকাতেই তিনি আছেন।
কথা প্রসঙ্গে কেবলাজান বললেন, আমার পীর খাজা এনায়েতপুরি দুনিয়ায় আসছিলেন আমার জন্য। কিন্তু লাল মিয়া আমি যার জন্য আসছি তাকে এখনো পাই নাই। এই কথার পরে হঠাৎ লাল মিয়া নৌকার মাঝিকে বললেন মাঝি নৌকা পাড়ে ভিরাও। মাঝি তাই করলো। মাঝি মনে করলো হয়তো লাল মিয়ার টয়লেট এর প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু লাল মিয়া তার মালছামান এর পোটলা নিয়ে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। কিছু দূর যেতেই কেবলাজান মাঝিকে বললেন লাল মিয়া কে ডাকেন। লাল মিয়া ফিরে আসতে কেবলাজান বললেন কই যাও। অভিমানী লাল মিয়ার উত্তর আপনি তো আমার জন্য আসেন নাই। তাহলে আমি আপনার পিছনে ঘুরবো কেন? কেবলাজান লাল মিয়াকে নৌকাতে উঠতে বললেন। নৌকা আবার চলতে শুরু করলে কেবলাজান লাল চাচাকে বললেন লাল আকাশে চাঁদ একটাই থাকে। তাই বলে কি চাঁদের পাশে উজ্জ্বল তাঁরা গুলো কি থাকে না। তুমি না হয় চাঁদের পাশের একটা তাঁরা হয়েই থাকলা ।।

[কেবলাজানের সাথে লাল চাচার এনায়েতপুরের জীবনের অনেক ঘটনা শুনেছি কিন্তু সব বিষয় লেখা যায় না। কারণ অনেক ঘটনার বর্ণনা সবাই উপলব্ধি করতে পারবে না। ভুল বার্তা পৌঁছানো কারো কাজ না।]

কেবলাজান হুজুরের এক মহা তপস্যা ছিল না খাওয়া। আর এই না খাওয়া রোগই তিনাকে আমাদের থেকে জুদা করেছে। কেবলাজানের শরীর মুবারক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ভালো পুষ্টিকর কিছু খান না, কিছু খেলেও খুবই সামান্য। এ অবস্থা সহ্য করা লাল মিয়া জন্য কঠিন। তিনি ঠিক করলেন সকালের নাস্তা ফেনাভাত বা খিচুড়ির সাথে যদি একটু ঘি দেওয়া যায় তাহলে কেবলাজানের শরীর মুবারক একটু পুষ্টি পাবে। তিনিই কেবলাজানের বাবুর্চি। তিনি এক জাকের ভাই এর মারফত ঘি জোগাড় করে, খুবই সামান্য সকালের নাস্তায় দিতেন। পরিমান এতো কম দিতেন যাতে কেবলাজান বুজতে না পারেন। বুঝতে পারলে হয়তো আর খাবেন না। একদিন কেবলাজান সকালে নাস্তা খেতে খেতে বললেন লাল মিয়া তুমি কি খিচুড়িতে ঘি দিছো? সে রকমের গন্ধ পাই। লাল মিয়ার উত্তর, তেলই জোগাড় হয় না আবার ঘি…..[বলাই বাহুল্য তখন কেবলাজানের আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন।] আশেক মাশুকের প্রেম বুঝি এমনই হয়।

লাল চাচা একদিন কেবলাজানের কাছে আসলেন জানতে পারলেন কেবলাজান ও পীর আম্মাজান না খেয়ে আছেন কারণ ঘরে চাল নাই। একথা শোনার পরে লাল চাচা তার বাড়িতে গেলেন শুনলেন তার বাড়ির অবস্থাও একই। নিজের বাড়ি তাকে ভাবাচ্ছে না, তার মাথায় একটাই চিন্তা কেবলাজানের পরিবার না খাওয়া। টাকার কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে তিনি তার ঘরের চালে [টিনের ছাদকে চাল বলে] উঠলেন চালের টিন খুললেন। টিন নিয়ে ১৪ রশি বাজারে গিয়া বিক্রি করেন। চাল কিনে কেবলাজান এর কদম মুবারক এ জমা দিলেন।

মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আজ শান সওকত পূর্ন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল। আজ দরবার থেকে চাওয়া হলে কোটি কোটি টাকা দেবার লোকের অভাব নাই। কেয়ামত পর্যন্ত যদি সবাই প্রাণ খুলে খেদমত করে সব খেদমত মিলে নিজের ঘরের চালের টিন খুলে বিক্রি করে কেনা কয়েক সের চালের সমান হবে কিনা। প্রেম ভক্তি কি একেই বলে।।

জীবনের শেষ সময়ে একদিন দরবারে প্রচুর লোক সমাগম। কেবলাজান হুজরা শরীফে সবার সাথে দেখা করছেন। দূরে দাড়িয়ে লাল চাচা চোখে পানি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। চোখে পানি কেন জানতে চাইলে বললেন হুজুর অনেক আগে একদিন বলছিলেন, লাল এমন একটা দিন আসবে আমি তোমায় দেখে না চিনার মতো আচরণ করবো আর তুমি ইচ্ছা করলেও আমার সাথে দেখা করতে পারবা না। আজ তার দুই টাই দেখলাম।

হটাৎ লাল মিয়া হুজরা শরীফ এ ঢুকলেন। কেবলাজান হলরুমে। লাল মিয়া কে দেখে কেবলাজান তড়িঘড়ি করে ভিতর বাড়ির দিকে যেতে চাইলেন। লাল মিয়া নাছোড়। কেবলাজানের কাছে জানতে চাইলেন আপনি অনুমোদন দিয়ে দিলেন। কেবলাজান বললেন আমি দেই নাই তোমার দাদা হুজুর চাইছে। লাল মিয়া বললেন, চাইছে না দিছেন। কেবলাজান হুজুর বললেন চাইছে। লাল মিয়া কদমবুচি করে নিজের বাড়িতে গেলেন, বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরবারে এসে থাকতে শুরু করলেন। এটাই তার শেষ বাড়িতে যাওয়া।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হাসপাতালের তখনকার ডাক্তার শফিক সাহেব এর কাছে শুনেছি, লাল চাচা হাসপাতালে ভর্তি। খুব কষ্ট পাচ্ছে। ডাক্তার হুজরা শরীফ গেলেন ঢাকায় ফোন করতে। লাল চাচার জন্য একটা ইনজেকশন আনতে হবে। হুজুর কেবলাজান ডাক্তার শফিক সাহেবকে বললেন, বাবা ইনজেকশন আনা লাগবে না, আজ রহমতের সময় লাল এর সব যন্ত্রনার অবসান হবে। ঠিক রহমতের সময় লাল মিয়া ইহলোক ত্যাগ করেন। পীর আর মুরীদের বাক্যলাপ আশেক ছাড়া কে বুঝিবে। কেবলাজানই আবার লাল চাচার মৃত্যুর সংবাদ শুনে অস্থির হয়ে পড়েন। কে বুঝিবে অলি আল্লাহর খেলা।।।।

লাল চাচার জানাজার পরে কেবলাজান তিনার দুই আওলাদ কে দিয়ে লাল চাচার খাঁটিয়া উঠিয়ে লাল মিয়াকে দরবার থেকে বিদায় দেন। কেবলাজানের হুকুমে লাল মিয়াকে এমন জায়গায় দাফন করা হয়, যেন প্রতি দিন যাতায়াত এর সময়ে কেবলাজান লাল মিয়ার কবরটা দেখতে পান। কেবলাজান নিজে উপস্থিত হয়ে জিয়ারত করছিলেন লাল চাচার কবর। প্রতিদিন একনজর দেখতেন বৈকালিক ভ্রমণের সময়।

ত্যাগ এর মহিমায় লাল মিয়াকে জানবে আগামী দিনের মানুষ কেবলাজান হুজুরের বাবুর্চি আর পরিবারের সদস্য এর মতো একজন অসাধারণ মানুষ হিসাবে। কেবলাজানের রত্ন ভাণ্ডারে কত রত্নের সমারোহ ছিল তা কেবল কেবলাজানই ভালো জানেন।

লিখেছেনঃ লুৎফুল হাফিজ পলাশ