ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজান ফজিলতের মাস

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • / ২৪৬৬ বার পড়া হয়েছে

রমজান ফজিলতের মাস

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
রমজান অতীব ফজিলতের মাস। এই মাসে বেহেশতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তান ও ইহার সহযোগীদের তথা দুষ্ট জ্বীনদের শৃংখলিত করা হয়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ- যখন রমজানের প্রথম রাত উপস্থিত হয় তখন সব জান্নাতের দরজা খুলিয়া দেওয়া হয় এবং পূর্ণ মাস ব্যাপী একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না।
আল্লাহতায়ালা একজন ঘোষককে হুকুম প্রদান করেনঃ- সে এই মর্মে ঘোষণা দেয়- ‘‘হে পূণ্যের আশাবাদী!অগ্রসর হও, হে অমংগলাকাংখী! পিছে হট। আরও ঘোষণা দেয়- আছে কোন ক্ষমাপ্রার্থী? তাহাকে ক্ষমা করা হইবে। আছে কোন প্রার্থনাকারী? তাহার প্রার্থনা কবুল করা হইবে। আছে কোন তওবাকারী? তাহার তওবা কবুল করা হইবে। সকাল পর্যন্ত এই আহবান অব্যাহত থাকে।
ইফতারের সময় প্রতি রাত্রে আল্লাহতায়ালা দশ লক্ষ পাপাচারী ব্যক্তিকে মুক্তি দান করেন, যাহাদের জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হইয়া গিয়াছিল।”
হযরত ছালমান ফারছী (রাঃ) ছাহেব বলেনঃ- একদা রাসূলে পাক (সাঃ) আমাদিগকে শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেনঃ-
“হে মানবমন্ডলী!তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করিয়াছে একটি মহান মাস-মোবারক মাস, এমন মাস যাহাতে একটি রাত রহিয়াছে যাহা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। আল্লাহ উহার রোজাসমূহ করিয়াছেন (তোমাদের উপর) ফরজ এবং উহার রাত্রিতে নামাজ পড়াকে তোমাদের জন্য করিয়াছেন নফল।
যে ব্যক্তি সেই মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করিল সে ঐ ব্যক্তির সমান হইল যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করিল, আর যে ব্যক্তি সে মাসে একটি ফরজ আদায় করিল সে ঐ ব্যক্তির সমান হইল যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করিল।
উহা ছবরের মাস, আর ছবরের ছওয়াব হইল বেহেশত। উহা সহানুভূতির মাস। ইহা সেই মাস যাহাতে মোমিনের রেজেক বাড়াইয়া দেওয়া হয়।”
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছেঃ- রাসূলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ রমজান মাসে পাঁচটি বিষয় আমার উম্মতকে এমন দেওয়া হইয়াছে যাহা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেওয়া হয় নাই।
  • রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশ্‌কের সুগন্ধি হইতেও বেশী সুগণ্ধময়।
  • ফেরেশতাগণ ইফতার পরযন্ত রোজাদারের গুনাহ মাফির জন্য দু‘আ করিতে থাকে।
  • দুর্বৃত্ত শয়তানদেরকের এই মাসে শৃংখলিত করা হয়।
  • প্রতিদিন আল্লাহতায়ালা জান্নাতকে সুসজ্জিত করেন এবং বলেন, “আমার নেক বান্দারা দুনিয়ার দুঃখ ক্লেশ ত্যাগ পূর্বক শীঘ্রই (বেহেশতে) আসিতেছে।”
  • রমজানের শেষ রাত্রে রোজাদারেদের গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করা হইলঃ- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! এই ক্ষমা কি শবে কদরে হইয়া থাকে? রাসূলে পাক (সাঃ) বলিলেনঃ- না; বরং নিয়ম হইলো মজদুর কাজ শেষ করার পরেই মুজুরী পাইয়া থাকে।
রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর করুনাবৃষ্টি অবিরাম ধারায় বর্ষিত হইতে থাকে।
এই মোবারক মাসকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হইয়াছে। যথাঃপ্রথম দশ দিন আল্লাহর রহমত নাযিলের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফেরাতের অর্থাৎ ক্ষমা ও গুনাহ মাফের এবং শেষ দশ দিন নাজাতের তথা দোযখ হইতে মুক্তি পাইবার সৌভাগ্যকাল। রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ আল্লাহপাক নির্ধারিত করিয়া দিয়াছেন।
প্রথমতঃ রোজাদার যে আনন্দ ইফতারে সময় লাভ করিয়া থাকে।
দ্বিতীয়তঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহপাকের সহিত সাক্ষাতের সময় যাহা রোজাদার অনুভব করিবে।
সারা রমজান মাসই ইবাদতের মাস। সাইমুদ দাহর, কাইমুল লাইল। দিনে রোজা, রাত্রে নামাজ। দিবারাত্র ব্যাপী এমন ইবাদতের মাস আর দ্বিতীয়টি নাই। তাই রমজান কল্যাণময় মাস। রমজান শ্রেষ্ঠমত মাস।
হে জাকেরান! তোমরা রোজার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত সম্পর্কে কিছু বুঝিতে পারিলে। তোমরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে রোজা পালন কর। রমজান মাসে শুধু পূণ্য আর পূণ্য। এই মাস পূণ্য অর্জনের প্রতিযোগিতার মাস। তোমরা রোজা রাখিবে, যাহারা পার তাহারা কুরআন তেলাওয়াত করিবে, অধিক নফল ইবাদত করিবে, তরিকতের কাজ সমূহ যথাযথ আদায় করিবে। মনে রাখিও, এই মাসের ইবাদত-বন্দেগীতে আল্লাহপাক এত অধিক খুশী হন, যাহার তুলনা নাই। একটি নফল এই মাসে একটি ফরজের সমপরযায়ের হয়। একটি ফরজ ৭০টি ফরজের সমান হয়। কাজেই মহব্বতের সাথে রমজানের রোজা ও অন্যান্য বন্দেগী পালন কর। আল্লাহপাক তোমাদিগকে দয়া করুন। আমীন!
গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত শরীফ, ২০তম খন্ড, পৃষ্টা-১২/১৩/১৪।

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

রমজান ফজিলতের মাস

আপডেট সময় : ০৬:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
রমজান অতীব ফজিলতের মাস। এই মাসে বেহেশতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তান ও ইহার সহযোগীদের তথা দুষ্ট জ্বীনদের শৃংখলিত করা হয়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ- যখন রমজানের প্রথম রাত উপস্থিত হয় তখন সব জান্নাতের দরজা খুলিয়া দেওয়া হয় এবং পূর্ণ মাস ব্যাপী একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না।
আল্লাহতায়ালা একজন ঘোষককে হুকুম প্রদান করেনঃ- সে এই মর্মে ঘোষণা দেয়- ‘‘হে পূণ্যের আশাবাদী!অগ্রসর হও, হে অমংগলাকাংখী! পিছে হট। আরও ঘোষণা দেয়- আছে কোন ক্ষমাপ্রার্থী? তাহাকে ক্ষমা করা হইবে। আছে কোন প্রার্থনাকারী? তাহার প্রার্থনা কবুল করা হইবে। আছে কোন তওবাকারী? তাহার তওবা কবুল করা হইবে। সকাল পর্যন্ত এই আহবান অব্যাহত থাকে।
ইফতারের সময় প্রতি রাত্রে আল্লাহতায়ালা দশ লক্ষ পাপাচারী ব্যক্তিকে মুক্তি দান করেন, যাহাদের জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হইয়া গিয়াছিল।”
হযরত ছালমান ফারছী (রাঃ) ছাহেব বলেনঃ- একদা রাসূলে পাক (সাঃ) আমাদিগকে শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেনঃ-
“হে মানবমন্ডলী!তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করিয়াছে একটি মহান মাস-মোবারক মাস, এমন মাস যাহাতে একটি রাত রহিয়াছে যাহা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। আল্লাহ উহার রোজাসমূহ করিয়াছেন (তোমাদের উপর) ফরজ এবং উহার রাত্রিতে নামাজ পড়াকে তোমাদের জন্য করিয়াছেন নফল।
যে ব্যক্তি সেই মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করিল সে ঐ ব্যক্তির সমান হইল যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করিল, আর যে ব্যক্তি সে মাসে একটি ফরজ আদায় করিল সে ঐ ব্যক্তির সমান হইল যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করিল।
উহা ছবরের মাস, আর ছবরের ছওয়াব হইল বেহেশত। উহা সহানুভূতির মাস। ইহা সেই মাস যাহাতে মোমিনের রেজেক বাড়াইয়া দেওয়া হয়।”
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছেঃ- রাসূলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ রমজান মাসে পাঁচটি বিষয় আমার উম্মতকে এমন দেওয়া হইয়াছে যাহা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেওয়া হয় নাই।
  • রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশ্‌কের সুগন্ধি হইতেও বেশী সুগণ্ধময়।
  • ফেরেশতাগণ ইফতার পরযন্ত রোজাদারের গুনাহ মাফির জন্য দু‘আ করিতে থাকে।
  • দুর্বৃত্ত শয়তানদেরকের এই মাসে শৃংখলিত করা হয়।
  • প্রতিদিন আল্লাহতায়ালা জান্নাতকে সুসজ্জিত করেন এবং বলেন, “আমার নেক বান্দারা দুনিয়ার দুঃখ ক্লেশ ত্যাগ পূর্বক শীঘ্রই (বেহেশতে) আসিতেছে।”
  • রমজানের শেষ রাত্রে রোজাদারেদের গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করা হইলঃ- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! এই ক্ষমা কি শবে কদরে হইয়া থাকে? রাসূলে পাক (সাঃ) বলিলেনঃ- না; বরং নিয়ম হইলো মজদুর কাজ শেষ করার পরেই মুজুরী পাইয়া থাকে।
রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর করুনাবৃষ্টি অবিরাম ধারায় বর্ষিত হইতে থাকে।
এই মোবারক মাসকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হইয়াছে। যথাঃপ্রথম দশ দিন আল্লাহর রহমত নাযিলের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফেরাতের অর্থাৎ ক্ষমা ও গুনাহ মাফের এবং শেষ দশ দিন নাজাতের তথা দোযখ হইতে মুক্তি পাইবার সৌভাগ্যকাল। রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ আল্লাহপাক নির্ধারিত করিয়া দিয়াছেন।
প্রথমতঃ রোজাদার যে আনন্দ ইফতারে সময় লাভ করিয়া থাকে।
দ্বিতীয়তঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহপাকের সহিত সাক্ষাতের সময় যাহা রোজাদার অনুভব করিবে।
সারা রমজান মাসই ইবাদতের মাস। সাইমুদ দাহর, কাইমুল লাইল। দিনে রোজা, রাত্রে নামাজ। দিবারাত্র ব্যাপী এমন ইবাদতের মাস আর দ্বিতীয়টি নাই। তাই রমজান কল্যাণময় মাস। রমজান শ্রেষ্ঠমত মাস।
হে জাকেরান! তোমরা রোজার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত সম্পর্কে কিছু বুঝিতে পারিলে। তোমরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে রোজা পালন কর। রমজান মাসে শুধু পূণ্য আর পূণ্য। এই মাস পূণ্য অর্জনের প্রতিযোগিতার মাস। তোমরা রোজা রাখিবে, যাহারা পার তাহারা কুরআন তেলাওয়াত করিবে, অধিক নফল ইবাদত করিবে, তরিকতের কাজ সমূহ যথাযথ আদায় করিবে। মনে রাখিও, এই মাসের ইবাদত-বন্দেগীতে আল্লাহপাক এত অধিক খুশী হন, যাহার তুলনা নাই। একটি নফল এই মাসে একটি ফরজের সমপরযায়ের হয়। একটি ফরজ ৭০টি ফরজের সমান হয়। কাজেই মহব্বতের সাথে রমজানের রোজা ও অন্যান্য বন্দেগী পালন কর। আল্লাহপাক তোমাদিগকে দয়া করুন। আমীন!
গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত শরীফ, ২০তম খন্ড, পৃষ্টা-১২/১৩/১৪।

আরো পড়ুনঃ