ঢাকা ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভিশাপ

  • আপডেট সময় : ১০:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪৮৩ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অভিশাপ

আমরা রাগে ক্ষোভে বা হুদাই অথবা নিজের মতের বিপরীতে গেলে অন্যজনকে অভিশাপ দেই, গজব দেই, ক্ষতি বা ধ্বংষ কামনা করি। এমন বাজে কাজ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসলামে বিশেষ করে তরিকতপন্থীদের জন্য ইহা হারাম কাজ। সূফীবাদের আরেক নাম প্রেম বিতরণ, অভিশাপ দেয়া নয়।
মুমিন মুসলমানগণ কখনো কাউকে অভিশাপ দেয় না। এই সম্পর্কে হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, “মু’মিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না।” (তিরমিজি শরীফ)
হযরত রাসূল (সাঃ) উম্মতে মুহাম্মদীকে সর্তক করে বলেন, “তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দিবে না।” (তিরমিজি শরীফ)
হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান, “কাহারও নিন্দা করা, অনিষ্ট করা এবং কাহাকেও অভিসম্পাত করা বোজর্গগণের নিষেধ।”
এই অভিশাপ সম্পর্কিত একটি ঘটনা শুননঃ
উত্তর বঙ্গের এক জাকের ভাই তৎকালিন সময়ে নগরবাড়ি ফেরী ঘাটে হোটেল বা রেস্টুরেন্টে ব্যবসা করতেন। ঘাটে অনেক হোটেল ছিলো এক সারিতে অন্যান্য পন্যের দোকান ও ছিলো। বেশ কয়েকদিন যাবত ধরে একটা পাগলের মত লোক ঘাট এলাকায় ঘুরাঘুরি করে, পাগলের মত লোকটা জলন্ত কয়লার আগুনে হাত দিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করতো, গরম টগবগ করা ভাতের হাঁড়ি থেকে হাত ডুবিয়ে ভাত খায়। ঘাটের লোকজন, ব্যবসায়ীরা পাগল লোকটাকে বজুর্গ মনে করে অনেক আদর যত্ন করা শুরু করলো। ঐ পাগল লোকটা হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক জাকের ভাইয়ের হোটেলে এসে হাত পেতে টাকা চাইলো তখন জাকের ভাই বললেন আমি আপনাকে কোন টাকা পয়সা দিবো না, আর সবার মত আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আমি আটরশি দরবার শরীফে যাই। আমার পীরের দরবার ছারা অন্য কোন যায়গাতে আমি টাকা পয়সা দেই না। তখন ঐ পাগল লোকটা বললো তাকে টাকা না দিলে ঐ জাকের ভাই এবং তার হোটেল ব্যবসা ধংস হয়ে যাবে।
হোটেল মালিক জাকের ভাইয়ের মনে একটু ভয় ধরে গেল, আশপাশের ব্যবসায়ীরাও তাকে বললো কাজ টা ভাল করেন নাই। সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে দিলেই পারতেন। খামাখা পাগলারে ক্ষপিয়ে দিলেন, যদি মজ্জুব কোন ওলী হয় পাগল লোকটা তাহলে তো তার অভিশাপে আপনার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে ঐ জাকের ভাই ভয় পেয়ে গেল। এবং ঠিক করলো পরের দিন সকালে দরবার শরীফে যাবে এবং পীর কেবলাজান এর নিকট বিষয়টা নিয়া নালিশ করবে।
পরের দিন সকালে দরবার শরীফে গিয়ে তিনি কেবলাজান হুজুরের নিকট সব ঘটনা খুলে বললেন। আর কেবলাজান হুজুরের কাছে কেঁদে কেটে বললেন হুজুর পাক আমার কোন ক্ষতি হবে নাতো, পাগলের অভিশাপে? কেবলাজান হুজুর বললেন, ” বাবা আল্লাহর ওলীগণ কখনো কোন মানুষ কে অভিশাপ দেন না, আল্লাহর ওলীরা সৃষ্টি কে ভালবাসেন, নিজের ক্ষতি হলেও কোন সৃষ্টির ক্ষতি কামনা করতে পারেন না। ওলী আলাহ সকল কখনোই অভিশাপ দেয় না। উনি বাবা আল্লাহর ওলী না। আপনি কোন চিন্তা কইরেন বাবা। আপনি খুব ভাল কাজ করেছেন তাকে টাকা পয়সা দেন নাই। যান বাবা আপনার দাদাপীর দয়া করবেন।” জাকের ভাই শীতল মন নিয়ে বাড়ি চলে গেলেন।”
যারা মানুষকে অভিশাপ দেয় তাদের উদ্দ্যেশে হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, “যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্যে বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়, অতঃপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়।” (আবু দাউদ শরীফ)
যারা অভিশাপ দেয় তাদের আখেরাত সম্পর্কে হযরত রাসূল (সাঃ) বলেন, “কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ)
মানুষকে অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরো পড়ুনঃ 
Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

অভিশাপ

আপডেট সময় : ১০:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

অভিশাপ

আমরা রাগে ক্ষোভে বা হুদাই অথবা নিজের মতের বিপরীতে গেলে অন্যজনকে অভিশাপ দেই, গজব দেই, ক্ষতি বা ধ্বংষ কামনা করি। এমন বাজে কাজ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসলামে বিশেষ করে তরিকতপন্থীদের জন্য ইহা হারাম কাজ। সূফীবাদের আরেক নাম প্রেম বিতরণ, অভিশাপ দেয়া নয়।
মুমিন মুসলমানগণ কখনো কাউকে অভিশাপ দেয় না। এই সম্পর্কে হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, “মু’মিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না।” (তিরমিজি শরীফ)
হযরত রাসূল (সাঃ) উম্মতে মুহাম্মদীকে সর্তক করে বলেন, “তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দিবে না।” (তিরমিজি শরীফ)
হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান, “কাহারও নিন্দা করা, অনিষ্ট করা এবং কাহাকেও অভিসম্পাত করা বোজর্গগণের নিষেধ।”
এই অভিশাপ সম্পর্কিত একটি ঘটনা শুননঃ
উত্তর বঙ্গের এক জাকের ভাই তৎকালিন সময়ে নগরবাড়ি ফেরী ঘাটে হোটেল বা রেস্টুরেন্টে ব্যবসা করতেন। ঘাটে অনেক হোটেল ছিলো এক সারিতে অন্যান্য পন্যের দোকান ও ছিলো। বেশ কয়েকদিন যাবত ধরে একটা পাগলের মত লোক ঘাট এলাকায় ঘুরাঘুরি করে, পাগলের মত লোকটা জলন্ত কয়লার আগুনে হাত দিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করতো, গরম টগবগ করা ভাতের হাঁড়ি থেকে হাত ডুবিয়ে ভাত খায়। ঘাটের লোকজন, ব্যবসায়ীরা পাগল লোকটাকে বজুর্গ মনে করে অনেক আদর যত্ন করা শুরু করলো। ঐ পাগল লোকটা হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক জাকের ভাইয়ের হোটেলে এসে হাত পেতে টাকা চাইলো তখন জাকের ভাই বললেন আমি আপনাকে কোন টাকা পয়সা দিবো না, আর সবার মত আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আমি আটরশি দরবার শরীফে যাই। আমার পীরের দরবার ছারা অন্য কোন যায়গাতে আমি টাকা পয়সা দেই না। তখন ঐ পাগল লোকটা বললো তাকে টাকা না দিলে ঐ জাকের ভাই এবং তার হোটেল ব্যবসা ধংস হয়ে যাবে।
হোটেল মালিক জাকের ভাইয়ের মনে একটু ভয় ধরে গেল, আশপাশের ব্যবসায়ীরাও তাকে বললো কাজ টা ভাল করেন নাই। সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে দিলেই পারতেন। খামাখা পাগলারে ক্ষপিয়ে দিলেন, যদি মজ্জুব কোন ওলী হয় পাগল লোকটা তাহলে তো তার অভিশাপে আপনার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে ঐ জাকের ভাই ভয় পেয়ে গেল। এবং ঠিক করলো পরের দিন সকালে দরবার শরীফে যাবে এবং পীর কেবলাজান এর নিকট বিষয়টা নিয়া নালিশ করবে।
পরের দিন সকালে দরবার শরীফে গিয়ে তিনি কেবলাজান হুজুরের নিকট সব ঘটনা খুলে বললেন। আর কেবলাজান হুজুরের কাছে কেঁদে কেটে বললেন হুজুর পাক আমার কোন ক্ষতি হবে নাতো, পাগলের অভিশাপে? কেবলাজান হুজুর বললেন, ” বাবা আল্লাহর ওলীগণ কখনো কোন মানুষ কে অভিশাপ দেন না, আল্লাহর ওলীরা সৃষ্টি কে ভালবাসেন, নিজের ক্ষতি হলেও কোন সৃষ্টির ক্ষতি কামনা করতে পারেন না। ওলী আলাহ সকল কখনোই অভিশাপ দেয় না। উনি বাবা আল্লাহর ওলী না। আপনি কোন চিন্তা কইরেন বাবা। আপনি খুব ভাল কাজ করেছেন তাকে টাকা পয়সা দেন নাই। যান বাবা আপনার দাদাপীর দয়া করবেন।” জাকের ভাই শীতল মন নিয়ে বাড়ি চলে গেলেন।”
যারা মানুষকে অভিশাপ দেয় তাদের উদ্দ্যেশে হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, “যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্যে বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়, অতঃপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়।” (আবু দাউদ শরীফ)
যারা অভিশাপ দেয় তাদের আখেরাত সম্পর্কে হযরত রাসূল (সাঃ) বলেন, “কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ)
মানুষকে অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরো পড়ুনঃ