ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুফিবাদ বা সূফীজমে পরমতসহিষ্ণুতা

  • আপডেট সময় : ০৩:২২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪৭৩ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সূফীজমে “পরমতসহিষ্ণুতা “

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। এ ধর্মে জবরদস্তি ও অসহিষ্ণুতার কোন স্থান নেই।

পরমতসহিষ্ণুতা মানে কারো মতকে সহ্য করা। অন্যের মত, চিন্তা, বিশ্বাস ইত্যাদি সহ্য করার গুনকে পরমতসহিষ্ণুতা বলা হয়। কারো মত বা বিশ্বাসকে নিজের বিপরীতে হলেও সেটাকে সহ্য করা, প্রতিহত করার চেষ্টা না করা, দমিয়ে দেয়ার জন্য উগ্রপন্থা অবলম্বন না করা বা সে মত কে মৌখিক, লিখনী বা অন্য কোন অবলম্বনে ঠেকাবার চেষ্টা না করাও পরমতসহিষ্ণুতা।

 

সূফীবাদে বা তরীকতপন্থীদের কাছে পরমতসহিষ্ণুতা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন বিষয়। উগ্রতা, চরমপন্থা, বাড়াবাড়ীমুক্ত জীবনই সূফীবাদ।

হযরত খাজা খিজির (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) কে প্রথম স্বাক্ষাতেই পরমতসহিষ্ণুতার কথা বলেছিলেন।

 

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তায়েফের ময়াদানে রক্তাত্ত হওয়ার পরেও চুপ ছিলেন। তখন ফেরেশতাকূল বা সমগ্র সৃষ্টি আরজ করেছিলো, “হে রাসূল (সাঃ)! আপনি হুকুম দিন আমরা তায়েফবাসীকে ধূলায় মিশিয়ে দিবো। কিন্তু রাসূল (সাঃ) তা করেননি। উল্টো দোয়া করেছেন।

কিংবা হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামগ্রহনের পূর্বে তরবারী নিয়ে এগিয়ে আসার সময় তিঁনি রাগান্বিত হন নি।

 

তিঁনি কোনো মানুষকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেননি। তিঁনি প্রেম শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন, তিঁনি পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছেন। ৬২২ খ্রিঃ রাসূল (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেন। মদীনায় গিয়ে “ইসলামিক প্রথম রাষ্ট্র” স্থাপন করেন। সেই রাষ্ট্রের প্রণীত নীতিমালায় পরমতসহিষ্ণুতা আমরা দেখতে পাই।

রাসূল (সাঃ) পরমতসহিষ্ণুতার অনন্য শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তিনি সমাজকে শুদ্ধ করছেন আর সেই শুদ্ধ সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানবজাতীর ঐক্য, কল্যানের বিকাশ, মানবচিন্তার ঐক্য, মানবতার সম্মান, সমতা।

 

পরমতসহিষ্ণুতা দিয়ে মানুষের মন জয় করাই সূফীবাদীদের শিক্ষা। যুগে যুগে সকল আউলিয়া কেরাম সেই শিক্ষাই দিয়েছেন আমাদেরকে।

আমার হযরত পীর কেবলাজান সারা জীবন এই শিক্ষাই দিয়েছেন। যার ফলে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে সকল ধর্ম,বর্ণের মানুষের মিলন মেলা বসে। কে আশরাফ আর কে ফকির, কে শিক্ষিত বা কে দিন-মজুর সেই হিসাব জাকের মঞ্জিলে নেই।

 

হযরত পীর কেবলাজান যখন আটরশি থেকে সত্য তরিকা প্রচার শুরু করেন তখনকার স্থুল দৃষ্টি সম্পন্ন ওলামে ছু’গণ তিঁনার বিরুদ্ধে কত সিম্পোজিয়াম, সভা-সমিতি করল, লিফলেট বিতরন করলো অথচ তাঁদেরকে তিঁনি ক্ষমা করে দিলেন। বাংলাদেশের নামকরা একজন আলেম হুজুরপাকের বাড়ির পাশে সদরপুরে মাহফিলে বসে তিঁনাকে লক্ষ্য করে আজে-বাজে কথা বললো অথচ সেই আলমের জন্য তিনি হাত পাখাসমেত একজন লোক পাঠালেন তাকে বাতাস করার জন্য।

 

শাওয়াল ফকিরের এক ভক্তের সাথে আমার আর রাসেল ভাইয়ের স্বাক্ষাত হয়েছিল। ভক্ত আমাদেরকে জিসাগা করলো ” সূফীবাদ কি বুজেন? আমার বললাম, না! তখন উনি বললেন, ” ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, এমন সময় কথা নেই বার্তা নেই কেউ একজন আপনার গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো। আপনি যদি চুপ করে মুখ বুজে সহ্য করতে পারেন তবে আপনি তরিকতের রাস্তায় হাঁটতে পারবেন।

 

কেবলাজানের স্থলাভিষিক্ত হযরত খাজা মিয়া ভাই জান মুজাদ্দেদী (মাঃজিঃআঃ) ছাহেব বলেন, আপনাকে যদি কেউ গালি দেয় আমি তাকে গালি দিবেন না, আপনি বলবেন সবাই গালি দিতে জানে কিন্তু আমি জাকের, জাকেররা কখনও গালি দেয় না।”

 

বিশ্বজুড়ে অশান্তির মূল কারন হচ্ছে পরমত অসহিষ্ণুতা। মুসলিম উম্মারও একই সমস্যা। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ঘোষনায় মানবাধিকারের ৩২ টি ধারা ও ৩০ টি উপধারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে যদি ১৪০০ বছর আগের দয়াল নবীর মদীনার মসনদের পরমতসহিষ্ণুতার পন্থা অবলম্বন করতো তাহলে সত্যকারেই দুনিয়া শান্তি স্থাপন হতো।

 

যারা অন্যের মত, অন্যের বিশ্বাস মেনে নিতে না পেরে গালাগালি করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারা সূফীবাদী বা তরিকত পন্থী না তারই চরমপন্থি।

 

তরিকতের জ্ঞান অর্জনের প্রধান যোগ্যতা সহ্য করা ক্ষমতা অর্জন করা। চুপ থাকতে পারার ক্ষমতা। অভিযোগ না করে কষ্ট হজম করার সামর্থ্য অর্জন করা।

যে কোন পরিস্থিতিতে নিজকে স্থির রাখতে পারা এবং সহনশীল মনোভাব যারা দেখাতে পারেন তারাঁ প্রকৃত অর্থে সূফী।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

সুফিবাদ বা সূফীজমে পরমতসহিষ্ণুতা

আপডেট সময় : ০৩:২২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

সূফীজমে “পরমতসহিষ্ণুতা “

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। এ ধর্মে জবরদস্তি ও অসহিষ্ণুতার কোন স্থান নেই।

পরমতসহিষ্ণুতা মানে কারো মতকে সহ্য করা। অন্যের মত, চিন্তা, বিশ্বাস ইত্যাদি সহ্য করার গুনকে পরমতসহিষ্ণুতা বলা হয়। কারো মত বা বিশ্বাসকে নিজের বিপরীতে হলেও সেটাকে সহ্য করা, প্রতিহত করার চেষ্টা না করা, দমিয়ে দেয়ার জন্য উগ্রপন্থা অবলম্বন না করা বা সে মত কে মৌখিক, লিখনী বা অন্য কোন অবলম্বনে ঠেকাবার চেষ্টা না করাও পরমতসহিষ্ণুতা।

 

সূফীবাদে বা তরীকতপন্থীদের কাছে পরমতসহিষ্ণুতা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন বিষয়। উগ্রতা, চরমপন্থা, বাড়াবাড়ীমুক্ত জীবনই সূফীবাদ।

হযরত খাজা খিজির (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) কে প্রথম স্বাক্ষাতেই পরমতসহিষ্ণুতার কথা বলেছিলেন।

 

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তায়েফের ময়াদানে রক্তাত্ত হওয়ার পরেও চুপ ছিলেন। তখন ফেরেশতাকূল বা সমগ্র সৃষ্টি আরজ করেছিলো, “হে রাসূল (সাঃ)! আপনি হুকুম দিন আমরা তায়েফবাসীকে ধূলায় মিশিয়ে দিবো। কিন্তু রাসূল (সাঃ) তা করেননি। উল্টো দোয়া করেছেন।

কিংবা হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামগ্রহনের পূর্বে তরবারী নিয়ে এগিয়ে আসার সময় তিঁনি রাগান্বিত হন নি।

 

তিঁনি কোনো মানুষকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেননি। তিঁনি প্রেম শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন, তিঁনি পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছেন। ৬২২ খ্রিঃ রাসূল (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেন। মদীনায় গিয়ে “ইসলামিক প্রথম রাষ্ট্র” স্থাপন করেন। সেই রাষ্ট্রের প্রণীত নীতিমালায় পরমতসহিষ্ণুতা আমরা দেখতে পাই।

রাসূল (সাঃ) পরমতসহিষ্ণুতার অনন্য শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তিনি সমাজকে শুদ্ধ করছেন আর সেই শুদ্ধ সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানবজাতীর ঐক্য, কল্যানের বিকাশ, মানবচিন্তার ঐক্য, মানবতার সম্মান, সমতা।

 

পরমতসহিষ্ণুতা দিয়ে মানুষের মন জয় করাই সূফীবাদীদের শিক্ষা। যুগে যুগে সকল আউলিয়া কেরাম সেই শিক্ষাই দিয়েছেন আমাদেরকে।

আমার হযরত পীর কেবলাজান সারা জীবন এই শিক্ষাই দিয়েছেন। যার ফলে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে সকল ধর্ম,বর্ণের মানুষের মিলন মেলা বসে। কে আশরাফ আর কে ফকির, কে শিক্ষিত বা কে দিন-মজুর সেই হিসাব জাকের মঞ্জিলে নেই।

 

হযরত পীর কেবলাজান যখন আটরশি থেকে সত্য তরিকা প্রচার শুরু করেন তখনকার স্থুল দৃষ্টি সম্পন্ন ওলামে ছু’গণ তিঁনার বিরুদ্ধে কত সিম্পোজিয়াম, সভা-সমিতি করল, লিফলেট বিতরন করলো অথচ তাঁদেরকে তিঁনি ক্ষমা করে দিলেন। বাংলাদেশের নামকরা একজন আলেম হুজুরপাকের বাড়ির পাশে সদরপুরে মাহফিলে বসে তিঁনাকে লক্ষ্য করে আজে-বাজে কথা বললো অথচ সেই আলমের জন্য তিনি হাত পাখাসমেত একজন লোক পাঠালেন তাকে বাতাস করার জন্য।

 

শাওয়াল ফকিরের এক ভক্তের সাথে আমার আর রাসেল ভাইয়ের স্বাক্ষাত হয়েছিল। ভক্ত আমাদেরকে জিসাগা করলো ” সূফীবাদ কি বুজেন? আমার বললাম, না! তখন উনি বললেন, ” ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, এমন সময় কথা নেই বার্তা নেই কেউ একজন আপনার গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো। আপনি যদি চুপ করে মুখ বুজে সহ্য করতে পারেন তবে আপনি তরিকতের রাস্তায় হাঁটতে পারবেন।

 

কেবলাজানের স্থলাভিষিক্ত হযরত খাজা মিয়া ভাই জান মুজাদ্দেদী (মাঃজিঃআঃ) ছাহেব বলেন, আপনাকে যদি কেউ গালি দেয় আমি তাকে গালি দিবেন না, আপনি বলবেন সবাই গালি দিতে জানে কিন্তু আমি জাকের, জাকেররা কখনও গালি দেয় না।”

 

বিশ্বজুড়ে অশান্তির মূল কারন হচ্ছে পরমত অসহিষ্ণুতা। মুসলিম উম্মারও একই সমস্যা। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ঘোষনায় মানবাধিকারের ৩২ টি ধারা ও ৩০ টি উপধারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে যদি ১৪০০ বছর আগের দয়াল নবীর মদীনার মসনদের পরমতসহিষ্ণুতার পন্থা অবলম্বন করতো তাহলে সত্যকারেই দুনিয়া শান্তি স্থাপন হতো।

 

যারা অন্যের মত, অন্যের বিশ্বাস মেনে নিতে না পেরে গালাগালি করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারা সূফীবাদী বা তরিকত পন্থী না তারই চরমপন্থি।

 

তরিকতের জ্ঞান অর্জনের প্রধান যোগ্যতা সহ্য করা ক্ষমতা অর্জন করা। চুপ থাকতে পারার ক্ষমতা। অভিযোগ না করে কষ্ট হজম করার সামর্থ্য অর্জন করা।

যে কোন পরিস্থিতিতে নিজকে স্থির রাখতে পারা এবং সহনশীল মনোভাব যারা দেখাতে পারেন তারাঁ প্রকৃত অর্থে সূফী।

 

আরো পড়ুনঃ