ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মক্কা-মদিনার পথে

  • আপডেট সময় : ০২:১৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪৬০ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

“স্মৃতিচারনঃ মক্কা-মদিনার পথে”

গত সাবান মাসের প্রথম সপ্তাহের কথা।
দরবার শরীফের জনৈক খাদেম রাত বারোটায় ফোন করে জানালেন, ” হুজুর কেবলাজান জরুরী ভিত্তিতে সাক্ষাৎ করতে বলেছেন”।
রাতে বেশ দুশ্চিন্তায় অতিবাহিত করলাম। সকালেই রওজা হলাম দরবার শরীফ অভিমুখে। হুজুর কেবলার সঙ্গে দেখা করতেই তিনি বললেন, “বাবা, ওদের দু’ভাই কে নিয়া এবার হজ্বে যান”।

মাহফুজ বদলায় হজ্ব আর আপনি এবং ফয়সল আদায় করবেন ফরজ হজ্ব। এব্যাপারে আপনি মানসিকভাবে তৈরি হয়ে নিন। অত্যন্ত বিনীত সুরে বললাম, “আল্লাহ পাকের বায়তুল্লাহ শরীফ ও রসূলে পাকের রওজা মোবারক যাবার মত সাহস পাই না – যদি না আমার দয়াল পীর খাছভাবে মেহেরবানী না করেন।

হুজুর কেবলাজান বললেন,” বাবা, কামেল পীর সর্বাবস্থায় মুরিদানের সাথে থাকেন”। আপনার যাবার জন্য প্রস্তুত হ’ন, আমি রাসূলুল্লাহ (দঃ) কাছে দোয়া করবো। ভীতভাব কেটে গেল আমার।
হুজুর কেবলাজান যদি পাশে থাকেন তবে তাঁর না-লায়েক গোলাম মরনে, কবরে, হাসরে-ফুলছেরাতে বিন্দুমাত্রও ভয় করবে না। আর রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতে যাওয়াতে সৌভাগ্যের ব্যাপার।

যদিও কাবা শরিফ পাথরের তৈরী একটি গৃহ মাত্র-মানব চক্ষুর সম্মুখে বিরাজমান। কিন্তু অাসল কাঁবার অবস্থানতো অাসমানী জগতে।
আল্লাহর জাত পাক হতে বিচ্ছুরিত নূর যা তাঁর জাতের পর্দা হয়ে গেছে, সেটাই হাকিকতে কাবা বা বায়তুল্লাহ। সেই নূরের পর্দা দিয়ে নির্মিত ঘরই বায়তুল্লাহ।

কাবাকে সামনে রেখে আল্লাহতায়ালাকে সেজদা করতে হয়। নামাজীর হায়াতে ওয়াহদানী নূরের পর্দাকে চাক্ষুস দেখতে পায়।
অতঃপর তা অন্তরালে গেলে ক্যুয়তে নাজরীর বরকতে আল্লাহর দর্শন বা মেরাজ লাভের সৌভাগ ঘটে। কাজেই দয়াল পীরের রুহানী মদদ ছাড়া আসল বায়তুল্লাহ জিয়ারত সবার জন্যই কল্পনাতীত।
১৩ই আগষ্ট দিবাগত রাত দেড়টার ফ্লাইটে রওনা হ’তে হবে।

আকাঙ্কা হলো হাজী ক্যাম্প থেকে এহরাম না বেঁধে যদি আমার দয়াল পীরের কাছ থেকে হজ্বের এহরাম বেধেঁ রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর দেশে যেতে পারতাম তবে অনেক তৃপ্ত পেতাম। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত হজ্ব কর্মকর্তার নিকট আমার কাংখিত প্রস্তাব পেশ করলাম।
তিনি সানন্দে বললেন, ৮ই আগষ্ট রিপোর্টিং করে যান এবং অবশ্যই ১২ই আগষ্টের মধ্যে হাজী ক্যাম্পে হাজীর হবেন। উৎফুলল্লচিত্তে পৌছলাম হুজুর কেবলাজানের কাছে।
এহেন ঘটনা ব্যাখ্যায় হুজুর কেবলা বললেন, ” আমার ও মনে এমন ইচ্ছে ছিল”। আমি নিজ হাতে তোমাদের এহরাম পড়িয়ে নবী করিম (সাঃ)র কাছে পাঠিয়ে দেবো।

সমস্ত রমজান মাস আল্লাহ পাকের দরবারে হজ্ব কবুলের প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছিলাম। নিজের জাগতিক চিন্তা-ভাবনা পনিহার করে সঠিক চিত্তে হজ্বব্রত পালন করতে সক্ষম হবো কিনা এবং মহান আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে কিনা এই চিন্তায় ছিলাম দিশেহারা।
অাগত প্রায় ১২ই আগস্ট। দরবার শরীফের বড়ই তলা হলে আমি হজ্বে কেরান, বড় পীরজাদা হজ্বে একরাদ, মেজ পীরজাদা, জনাব আবদুস ছামাদ, জনাব এলাহী বকস, হজ্বে তামাহুর জন্য সাদা কাপড়ের এরহাম পরিধান করলাম।
আলহাজ্ব মাওলানা সালাহউদ্দিন সাহেব (বর্তমান খতিব বায়তুল মোকারম জামে মসজিদ) এহরামের তরতিব বলে দিলেন এবং হুজুর কেবলাজান নিজে আল্লাহর পথে আমাদের সোপর্দ করলেন।

প্রাশান্ত মনে অনুভূতি এলো পৃথিবীর সব কিছু উপেক্ষা করে যেন সাদা কাফনের কাপড় জড়িয়ে পীরে কেবলার কদম থেকে অাল্লাহ রসুল (দঃ)- এর রওজা মোবারক জিয়ারতে যাচ্ছি।
সত্যি কথা বলতে কি, তখনকার প্রকৃত আনন্দ উদ্বেল মানসিকতার ভাষায় ব্যক্ত করা দুরূহ ব্যাপার। বাস্তবতার মুখোমুখি না হলে কারো পক্ষেই হয়তো এহেন প্রশান্তির শীতল পরশ বোধগম্যে আসবে না।

১২ ই আগষ্ট।
আত্নীয়-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি, বন্ধু-বান্ধব ঢাকা পযর্ন্ত সঙ্গে এলেও মনে হলো যেন শেষ বিদায় দিতে সঙ্গী হয়েছে এরা। কিছুক্ষন পরেই শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেবে সবাই।
অবশেষে যথাদিনে যথাসময়ে অন্য সবের মাঝে মেজর জেনারেল আতিকুর রহমান সাহেব বিদায় সম্ভাষন জানিয়ে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দিলেন আমাদের। পেছনে পড়ে রইলেন সব আপনজন। আমরা আল্লাহর পথযাত্রী। মনে শুধু শঙ্কা – কবুল হবে কি হজ্ব? মনের অজান্তে কোন বেয়াদবী হয়ে না যায়।

১৪ ই আগষ্ট উড়োজাহাজেই ফজরের আদায় করে পবিত্র জেদ্দা বিমান বন্দরে অবতরন করলাম।
আধুনিক পরশে বিরাট শহর জেদ্দা। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর পবিত্র কদম এঁর স্পর্শ রয়েছে এই মাটিতে। শোকরানা নামাজ আদায় করলাম দুই রাকাত।

অতঃপর ইমিগ্রেশন ও ব্যাংকের ঝামেলা শেষ করে বাংলাদেশের দূতাবাসের গাড়ীতে রওনা হলাম পবিত্র মক্কা শরিফের দিকে। যতই অগ্রসর হচ্ছি ততই পুলকিত মনের পাশাপাশি বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো। দোয়া-দরুদ পড়ছি অনবরত।
পবিত্র হারাম শরীফের কাছে গাড়ী পৌছুতেই জোহরের আজানের সুমধুর ধ্বনি কানে এসে যেন প্রতিধ্বনিত হলো “নামাজে এসো”। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ী থামিয়ে অজু সেরে মসজিদে হারামে জোহরের নামাজ পড়লাম। ভিতরে কালো গিলাপে ঢাকা বায়তুল্ল্যাহ শরীফ যেন মনের মুকুরে ঝলক দিয়ে উঠলো।
তোয়াফে গেলাম আছর নামাজের পর। সাফা মারোয়া ছায়ী করে প্রান ভরে পবিত্র বায়তুল্ল্যাহ দেখতে থাকলাম।

মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে বিশ্রামস্থলে ফিরে এলাম। এই বিশ্রামস্থলটি ঠিক হারাম শরিফের গেটের সাথেই রাস্তার পার্শ্বে।
প্রতিদিন রাত ২.৫০ ঘটিকায় বায়তুল্লাহ শরীফে গিয়ে নফল তোয়াফ করে প্রার্থনা করতাম, “আল্লাহ আমার দয়াল পীরের খাতিরে হজ্বের যাবতীয় কাজ মনের যাবতীয় আশা যেমন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ পড়া, হাতেমের ভেতরে নামাজ পড়া, মক্কা শরীফের ঘর ও আমার মধ্যে অন্য লোক না থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া, মক্কার ঘরের চৌকাট, মোলতাজেম তার চুম্বন দেয়া, দোয়া করা” সব কিছুই আল্লাহ দয়া করে সুযোগ দিয়েছেন।

একদিন রাতে তোয়াফের সময় বারংবার মনে হলো,
হে খোদা, বায়তুল্ল্যাহ যদি তোমারই ঘর হয় তবে আমি তোমার গুনাহগার এক বান্দা তোমারই দরবারে প্রার্থনা করছি, তোমারই পিয়ারা নায়েবে রসুল আমার পীর কেবলার নির্দেশে এসেছিঃ আমার ভাগ্যে কি তোমার দিদার হবে না, আমার গুনাহ কি তোমার দরবারে মাফ হবে না।? এহেন প্রার্থনায় যখন মশগুল তখন আমার পীরের দোয়ায় আল্লাহপাক হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সময় আমাকে এমন নেয়ামত দান করলেন যার নেই কোন হাহাকার চাওয়া-পাওয়া।

বর্তমানে সৌদি সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত করতে গিয়ে ইব্রাহিম (আঃ) থেকে রসূল মকবুল (সাঃ) স্মৃতির সাথে জড়িত বহু নিদর্শন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছেন, যেমন-ছাফা মারওয়া পাহাড় কেটে সমতল করেছেন, হযরত খাজিদার বাড়ী অর্থাৎ রসুলে করিম (সাঃ)’এর সন্তানদের জন্মস্থান, যেখানে মা ফাতেমার লঙ্গর খানার ডেক, গামলা ইত্যাদি হাজী সাহেবরা দেখে ফয়েজ পেতেন সেটাকে সংস্কার করেছেন।
একমাত্র জান্নাতুল মাওয়া হযরত খাদিজার কবরের দেয়ালের এক পার্শ্বে পড়ে থাকা এগুলো ছাড়া অন্য কোন স্মৃতি নেই। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)’র জন্মস্থানে গিয়ে সৌদি পুলিশের ভয়ে রাস্তার অপর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করতে হলো।

বর্তমানে এহেন অনেক কিছুর হেরফের আশেকে রসুলগনের জন্য মনঃপুত নয়। শুনে এলাম হারাম শরীফের এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে জায়গা উন্নয়নের আওতায় আনয়ন করা হবে।
মক্কা শরীফ থেকে শুধুমাত্র একটা বিছানা ও ছোট একটা জগ নিয়ে ৭ ই জিলহজ্ব দিবাগত রাতে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাংলাদেশের দূতাবাসে নির্মিত তাবুতে ৪ দিনের জন্য ছ’হাজার রিয়েল অর্থাৎ বাংলা দেশী ৫১ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল।
৮ ই জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করলাম অসহ্য গরমের ভেতর। উত্তপ্ত পরিবেশে যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

অতঃপর ৯ তারিখে ফজর নামাজ বাদ রওনা হলাম আরাফার উদ্দেশ্যে। আরাফার ময়দানে পৌছতে সকাল প্রায় ৯ টা বেজে গেল। আরাফার ময়দান যেন হাসরের ময়দান। অস্বাভাবিক গরমের পাশাপাশি তপ্ত হাওয়া যেন লেলিহান আগুনের ছোঁয়ায় শরীরের সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়।
অথচ এই দিনই জোহর থেকে অাছর ওয়াক্ত পযর্ন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান মানেই হজ্বব্রত পালন। এখানেই আল্লাহর করুনা প্রার্থনার উপযুক্ত স্থান। পরিবেশে প্রতিয়মান হয় দুনিয়ার সব কিছু রেখে, দুনিয়ার সব কিছু ভূলে গিয়ে লক্ষ লক্ষ হাজিদের আবেগ উজাড় করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায় আত্নহারা।

কান্নার প্রতিধ্বনিতে মনে হয় যেন সব হাজীই আপনজনকে হারিয়ে বিলাপ করছে। আমিও তাদের মাঝে এক গুনাহগার বান্দা ছিলাম। মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই ফিরে এলাম মিনার উদ্দেশ্যে।
পথিমধ্যে মোজদালেফায় মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়ে রাত যাপন করে পরদিন ফরজ ওয়াক্তে পুনরায় রওনা হলাম মিনার পথে।
১০ ই জিলহাজ্ব হামরাতুল আকারায় রমি করে কোরবানীর ব্যবস্থা করলাম। তিনদিন হামরায় ঢিল মারা হজ্বের অন্যতম অনুষ্ঠান। দিবাগত রাতেই তোয়াফে জিয়ারত শেষে মিনায় ফিরে রাত অতিবাহিত করলাম।

হজ্বের নিয়তে দোয়া কবুলের উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহগুলো হলো, বায়তুল্লাহ শরীফে তাকবীর তাহলীল, তোয়াফের স্থান, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন,রোকেনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তি স্থান, মুলতাজেম, হাতীমের মধ্যে মীজাবে রহমতের নীচে, মাকামে ইব্রাহিমের সামনে, জমজম কূপের পাড়, ছাফা মারওয়া পাহাড়, সাইকরার স্থান, মিনায়, তজুমরায়, আরাফার ময়দান, মুজদালেফায়, জান্নাতুল মেয়াল্লায়, গহর হিরা, জবল রহমত, মিনার মসজিদ, মিল্লাদুন্নাবী এবং হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত হামজা (রাঃ) এর বাড়ি ইত্যাদি।

এইসব স্থানে দোয়া ও জিয়ারত করার পর বিদায়ী তোয়াফ করে ১লা সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় SAPTCO বাসে মদিনা শরীফেরউদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
১লা সেপ্টেম্বর আছর নামাযের অাগে মদিনা মনোয়ারায় পৌছে আছরের নামাজ আদায় করলাম।
হোটেল জাহারাতুল মদিনায় সিট ভাড়া করে পরের দিন মসজিদ নব্বীর ভেতরে গেলাম।
আমি এতই বেকারার হয়ে গেলাম যে বড় পীরজাদা মিয়া ভাইজান হাত ধরে রওজায়ে জান্নাতে নিয়ে গেলেন।
আমাদের কোন মোয়াল্লেম বা গাইড ছিলো না। হঠাৎ মাওলানা আব্দুল হালিম রওজা শরীফের একজন খাদেম, যার সহিত মিনায় আলাপ হয়েছিলো তিনি নিয়ম মাফিক প্রথম জেয়ারত করালেন।

তিনি দেখিয়ে দিলেন কোন খানে ৪০ জন লোক রওজা পাক হতে হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) লাশ মোবারক তুলতে এসে মসজিদ নব্বীর মাটির নিচে চলে যায়, কোন স্থান পযর্ন্ত বাদশা নুরুদ্দিনের আমলে ২ জন ইহুদি রসুলে মকবুল (দঃ) লাশ মোবারক তুলতে এসেছিল, হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাতের স্থান।

আছহাবে সোফফার স্থান, মা ফাতেমার হুজরা, হযরত আবু বকর (রাঃ) বাড়ি, জাবে জিব্রাইল। তিনি প্রথম দিন আমাদিগকে চিনিয়ে দিলেন, হুজুর পাক (সাঃ) মেহরাব, রওজায়ে জান্নাতের ভিতর ছয়টি মত্তর্বাপূর্ন খুটি আছে যথাঃ
১. উছতুয়া নায়ে হান্নাম এই স্তম্বটি মেহরাবে নবিজির ডান পার্শ্বে সেই কাঠের স্থলে অবস্থিত যা মিম্বার তৈরী হওয়ার পর উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে।
২. উছতুয়া নায়ে ছারির যেখানে হযরত (সাঃ) এতেকাফ করতেন।
৩. উছতুয়া নায়ে ওকুদ এখানে বিদেশী প্রতিনিধীগনের সাথে হযরত (সাঃ) আলাপ করতেন।
৪. উছতুয়া নায়ে আলী যেখানে দাড়িঁয়ে হযরত আলী (রাঃ) পাহারত থাকতেন।
৫. উছতুয়ানায়েন আয়েশা যাহা হযরত আয়েশা হযরত আব্দুল্লা বিন জুবায়ের কে দেখায়ে দেন।
৬. উছতুনায়ে যোটিল বা তওবার শেষ স্তম্ভ তিনটি হুজরা শরীফের পশ্চিম দিকে জালি মোবারকের সাথে অবস্থিত। সউদি পুলিশের ধাক্কা খেয়েও তা অনেকে স্পর্শ করে থাকেন।

বর্তমান সৌদি বাদশা মসজিদে নবিজিতে নামাজ পড়তে নিষেধ করে না তবে রওজা পাক জিয়ারতে ভীষন কড়াকড়ি আরোপ করছেন।
প্রতি রাত্রে তিনটার থেকে মসজিদে নববিতে যেতাম ও তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করে বিভিন্ন বরকতপূর্ন স্থান সমূহের নফল নামাজ পড়তাম।
শেষ বিদায়ে জিয়ারতের দিন রওজা পাকে মোরাবাকায় বসে নবী করিম (সাঃ) নিকট হতে বিদায় নিলাম।
১২ ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান যোগে ঢাকায় পৌছলাম। পথিমধ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লীর আকাশে আমাদের বিমানটি এক প্রচন্ড ঝাঁকুনী খায়। ঢাকা পৌঁছে জানতে পারলাম বিমানের দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছিল।

অন্য দুটি ইঞ্জিন চালিয়ে বিমান ঢাকায় পৌঁছে। সংবাদটি শুনে আতঙ্কিত হলাম ও দু’রাকাত শুকরানা নফল নামাজ আদায় করলাম।
দরবারে হাজির হয়ে হজ্বের সফর শেষ করলাম। আমার দয়াল পীরের কাছ থেকে গিয়ে মক্কা মোয়াজ্জমা, মিনা, আরাফাত, মদিনা মনওয়ারাও জিয়ারত করে আবার এই তাঁর কদমে হাজির হয়ে জীবন ধন্য করলাম। আমিন।

গ্রন্থসূত্রঃ  আল-মুজাদ্দেদ সাময়িকী। 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

One thought on “মক্কা-মদিনার পথে

  1. খাজা বাবা ফরিদপুরী সত্য তরিকা প্রচারে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে বানী গুলো ধন্যবাদ এখান থেকে পোস্ট কপি করলাম ভাইজান😊💛🧡💗

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

মক্কা-মদিনার পথে

আপডেট সময় : ০২:১৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

“স্মৃতিচারনঃ মক্কা-মদিনার পথে”

গত সাবান মাসের প্রথম সপ্তাহের কথা।
দরবার শরীফের জনৈক খাদেম রাত বারোটায় ফোন করে জানালেন, ” হুজুর কেবলাজান জরুরী ভিত্তিতে সাক্ষাৎ করতে বলেছেন”।
রাতে বেশ দুশ্চিন্তায় অতিবাহিত করলাম। সকালেই রওজা হলাম দরবার শরীফ অভিমুখে। হুজুর কেবলার সঙ্গে দেখা করতেই তিনি বললেন, “বাবা, ওদের দু’ভাই কে নিয়া এবার হজ্বে যান”।

মাহফুজ বদলায় হজ্ব আর আপনি এবং ফয়সল আদায় করবেন ফরজ হজ্ব। এব্যাপারে আপনি মানসিকভাবে তৈরি হয়ে নিন। অত্যন্ত বিনীত সুরে বললাম, “আল্লাহ পাকের বায়তুল্লাহ শরীফ ও রসূলে পাকের রওজা মোবারক যাবার মত সাহস পাই না – যদি না আমার দয়াল পীর খাছভাবে মেহেরবানী না করেন।

হুজুর কেবলাজান বললেন,” বাবা, কামেল পীর সর্বাবস্থায় মুরিদানের সাথে থাকেন”। আপনার যাবার জন্য প্রস্তুত হ’ন, আমি রাসূলুল্লাহ (দঃ) কাছে দোয়া করবো। ভীতভাব কেটে গেল আমার।
হুজুর কেবলাজান যদি পাশে থাকেন তবে তাঁর না-লায়েক গোলাম মরনে, কবরে, হাসরে-ফুলছেরাতে বিন্দুমাত্রও ভয় করবে না। আর রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতে যাওয়াতে সৌভাগ্যের ব্যাপার।

যদিও কাবা শরিফ পাথরের তৈরী একটি গৃহ মাত্র-মানব চক্ষুর সম্মুখে বিরাজমান। কিন্তু অাসল কাঁবার অবস্থানতো অাসমানী জগতে।
আল্লাহর জাত পাক হতে বিচ্ছুরিত নূর যা তাঁর জাতের পর্দা হয়ে গেছে, সেটাই হাকিকতে কাবা বা বায়তুল্লাহ। সেই নূরের পর্দা দিয়ে নির্মিত ঘরই বায়তুল্লাহ।

কাবাকে সামনে রেখে আল্লাহতায়ালাকে সেজদা করতে হয়। নামাজীর হায়াতে ওয়াহদানী নূরের পর্দাকে চাক্ষুস দেখতে পায়।
অতঃপর তা অন্তরালে গেলে ক্যুয়তে নাজরীর বরকতে আল্লাহর দর্শন বা মেরাজ লাভের সৌভাগ ঘটে। কাজেই দয়াল পীরের রুহানী মদদ ছাড়া আসল বায়তুল্লাহ জিয়ারত সবার জন্যই কল্পনাতীত।
১৩ই আগষ্ট দিবাগত রাত দেড়টার ফ্লাইটে রওনা হ’তে হবে।

আকাঙ্কা হলো হাজী ক্যাম্প থেকে এহরাম না বেঁধে যদি আমার দয়াল পীরের কাছ থেকে হজ্বের এহরাম বেধেঁ রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর দেশে যেতে পারতাম তবে অনেক তৃপ্ত পেতাম। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত হজ্ব কর্মকর্তার নিকট আমার কাংখিত প্রস্তাব পেশ করলাম।
তিনি সানন্দে বললেন, ৮ই আগষ্ট রিপোর্টিং করে যান এবং অবশ্যই ১২ই আগষ্টের মধ্যে হাজী ক্যাম্পে হাজীর হবেন। উৎফুলল্লচিত্তে পৌছলাম হুজুর কেবলাজানের কাছে।
এহেন ঘটনা ব্যাখ্যায় হুজুর কেবলা বললেন, ” আমার ও মনে এমন ইচ্ছে ছিল”। আমি নিজ হাতে তোমাদের এহরাম পড়িয়ে নবী করিম (সাঃ)র কাছে পাঠিয়ে দেবো।

সমস্ত রমজান মাস আল্লাহ পাকের দরবারে হজ্ব কবুলের প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছিলাম। নিজের জাগতিক চিন্তা-ভাবনা পনিহার করে সঠিক চিত্তে হজ্বব্রত পালন করতে সক্ষম হবো কিনা এবং মহান আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে কিনা এই চিন্তায় ছিলাম দিশেহারা।
অাগত প্রায় ১২ই আগস্ট। দরবার শরীফের বড়ই তলা হলে আমি হজ্বে কেরান, বড় পীরজাদা হজ্বে একরাদ, মেজ পীরজাদা, জনাব আবদুস ছামাদ, জনাব এলাহী বকস, হজ্বে তামাহুর জন্য সাদা কাপড়ের এরহাম পরিধান করলাম।
আলহাজ্ব মাওলানা সালাহউদ্দিন সাহেব (বর্তমান খতিব বায়তুল মোকারম জামে মসজিদ) এহরামের তরতিব বলে দিলেন এবং হুজুর কেবলাজান নিজে আল্লাহর পথে আমাদের সোপর্দ করলেন।

প্রাশান্ত মনে অনুভূতি এলো পৃথিবীর সব কিছু উপেক্ষা করে যেন সাদা কাফনের কাপড় জড়িয়ে পীরে কেবলার কদম থেকে অাল্লাহ রসুল (দঃ)- এর রওজা মোবারক জিয়ারতে যাচ্ছি।
সত্যি কথা বলতে কি, তখনকার প্রকৃত আনন্দ উদ্বেল মানসিকতার ভাষায় ব্যক্ত করা দুরূহ ব্যাপার। বাস্তবতার মুখোমুখি না হলে কারো পক্ষেই হয়তো এহেন প্রশান্তির শীতল পরশ বোধগম্যে আসবে না।

১২ ই আগষ্ট।
আত্নীয়-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি, বন্ধু-বান্ধব ঢাকা পযর্ন্ত সঙ্গে এলেও মনে হলো যেন শেষ বিদায় দিতে সঙ্গী হয়েছে এরা। কিছুক্ষন পরেই শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেবে সবাই।
অবশেষে যথাদিনে যথাসময়ে অন্য সবের মাঝে মেজর জেনারেল আতিকুর রহমান সাহেব বিদায় সম্ভাষন জানিয়ে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দিলেন আমাদের। পেছনে পড়ে রইলেন সব আপনজন। আমরা আল্লাহর পথযাত্রী। মনে শুধু শঙ্কা – কবুল হবে কি হজ্ব? মনের অজান্তে কোন বেয়াদবী হয়ে না যায়।

১৪ ই আগষ্ট উড়োজাহাজেই ফজরের আদায় করে পবিত্র জেদ্দা বিমান বন্দরে অবতরন করলাম।
আধুনিক পরশে বিরাট শহর জেদ্দা। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর পবিত্র কদম এঁর স্পর্শ রয়েছে এই মাটিতে। শোকরানা নামাজ আদায় করলাম দুই রাকাত।

অতঃপর ইমিগ্রেশন ও ব্যাংকের ঝামেলা শেষ করে বাংলাদেশের দূতাবাসের গাড়ীতে রওনা হলাম পবিত্র মক্কা শরিফের দিকে। যতই অগ্রসর হচ্ছি ততই পুলকিত মনের পাশাপাশি বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো। দোয়া-দরুদ পড়ছি অনবরত।
পবিত্র হারাম শরীফের কাছে গাড়ী পৌছুতেই জোহরের আজানের সুমধুর ধ্বনি কানে এসে যেন প্রতিধ্বনিত হলো “নামাজে এসো”। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ী থামিয়ে অজু সেরে মসজিদে হারামে জোহরের নামাজ পড়লাম। ভিতরে কালো গিলাপে ঢাকা বায়তুল্ল্যাহ শরীফ যেন মনের মুকুরে ঝলক দিয়ে উঠলো।
তোয়াফে গেলাম আছর নামাজের পর। সাফা মারোয়া ছায়ী করে প্রান ভরে পবিত্র বায়তুল্ল্যাহ দেখতে থাকলাম।

মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে বিশ্রামস্থলে ফিরে এলাম। এই বিশ্রামস্থলটি ঠিক হারাম শরিফের গেটের সাথেই রাস্তার পার্শ্বে।
প্রতিদিন রাত ২.৫০ ঘটিকায় বায়তুল্লাহ শরীফে গিয়ে নফল তোয়াফ করে প্রার্থনা করতাম, “আল্লাহ আমার দয়াল পীরের খাতিরে হজ্বের যাবতীয় কাজ মনের যাবতীয় আশা যেমন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ পড়া, হাতেমের ভেতরে নামাজ পড়া, মক্কা শরীফের ঘর ও আমার মধ্যে অন্য লোক না থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া, মক্কার ঘরের চৌকাট, মোলতাজেম তার চুম্বন দেয়া, দোয়া করা” সব কিছুই আল্লাহ দয়া করে সুযোগ দিয়েছেন।

একদিন রাতে তোয়াফের সময় বারংবার মনে হলো,
হে খোদা, বায়তুল্ল্যাহ যদি তোমারই ঘর হয় তবে আমি তোমার গুনাহগার এক বান্দা তোমারই দরবারে প্রার্থনা করছি, তোমারই পিয়ারা নায়েবে রসুল আমার পীর কেবলার নির্দেশে এসেছিঃ আমার ভাগ্যে কি তোমার দিদার হবে না, আমার গুনাহ কি তোমার দরবারে মাফ হবে না।? এহেন প্রার্থনায় যখন মশগুল তখন আমার পীরের দোয়ায় আল্লাহপাক হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সময় আমাকে এমন নেয়ামত দান করলেন যার নেই কোন হাহাকার চাওয়া-পাওয়া।

বর্তমানে সৌদি সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত করতে গিয়ে ইব্রাহিম (আঃ) থেকে রসূল মকবুল (সাঃ) স্মৃতির সাথে জড়িত বহু নিদর্শন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছেন, যেমন-ছাফা মারওয়া পাহাড় কেটে সমতল করেছেন, হযরত খাজিদার বাড়ী অর্থাৎ রসুলে করিম (সাঃ)’এর সন্তানদের জন্মস্থান, যেখানে মা ফাতেমার লঙ্গর খানার ডেক, গামলা ইত্যাদি হাজী সাহেবরা দেখে ফয়েজ পেতেন সেটাকে সংস্কার করেছেন।
একমাত্র জান্নাতুল মাওয়া হযরত খাদিজার কবরের দেয়ালের এক পার্শ্বে পড়ে থাকা এগুলো ছাড়া অন্য কোন স্মৃতি নেই। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)’র জন্মস্থানে গিয়ে সৌদি পুলিশের ভয়ে রাস্তার অপর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করতে হলো।

বর্তমানে এহেন অনেক কিছুর হেরফের আশেকে রসুলগনের জন্য মনঃপুত নয়। শুনে এলাম হারাম শরীফের এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে জায়গা উন্নয়নের আওতায় আনয়ন করা হবে।
মক্কা শরীফ থেকে শুধুমাত্র একটা বিছানা ও ছোট একটা জগ নিয়ে ৭ ই জিলহজ্ব দিবাগত রাতে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাংলাদেশের দূতাবাসে নির্মিত তাবুতে ৪ দিনের জন্য ছ’হাজার রিয়েল অর্থাৎ বাংলা দেশী ৫১ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল।
৮ ই জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করলাম অসহ্য গরমের ভেতর। উত্তপ্ত পরিবেশে যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

অতঃপর ৯ তারিখে ফজর নামাজ বাদ রওনা হলাম আরাফার উদ্দেশ্যে। আরাফার ময়দানে পৌছতে সকাল প্রায় ৯ টা বেজে গেল। আরাফার ময়দান যেন হাসরের ময়দান। অস্বাভাবিক গরমের পাশাপাশি তপ্ত হাওয়া যেন লেলিহান আগুনের ছোঁয়ায় শরীরের সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়।
অথচ এই দিনই জোহর থেকে অাছর ওয়াক্ত পযর্ন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান মানেই হজ্বব্রত পালন। এখানেই আল্লাহর করুনা প্রার্থনার উপযুক্ত স্থান। পরিবেশে প্রতিয়মান হয় দুনিয়ার সব কিছু রেখে, দুনিয়ার সব কিছু ভূলে গিয়ে লক্ষ লক্ষ হাজিদের আবেগ উজাড় করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায় আত্নহারা।

কান্নার প্রতিধ্বনিতে মনে হয় যেন সব হাজীই আপনজনকে হারিয়ে বিলাপ করছে। আমিও তাদের মাঝে এক গুনাহগার বান্দা ছিলাম। মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই ফিরে এলাম মিনার উদ্দেশ্যে।
পথিমধ্যে মোজদালেফায় মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়ে রাত যাপন করে পরদিন ফরজ ওয়াক্তে পুনরায় রওনা হলাম মিনার পথে।
১০ ই জিলহাজ্ব হামরাতুল আকারায় রমি করে কোরবানীর ব্যবস্থা করলাম। তিনদিন হামরায় ঢিল মারা হজ্বের অন্যতম অনুষ্ঠান। দিবাগত রাতেই তোয়াফে জিয়ারত শেষে মিনায় ফিরে রাত অতিবাহিত করলাম।

হজ্বের নিয়তে দোয়া কবুলের উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহগুলো হলো, বায়তুল্লাহ শরীফে তাকবীর তাহলীল, তোয়াফের স্থান, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন,রোকেনে ইয়ামেনী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তি স্থান, মুলতাজেম, হাতীমের মধ্যে মীজাবে রহমতের নীচে, মাকামে ইব্রাহিমের সামনে, জমজম কূপের পাড়, ছাফা মারওয়া পাহাড়, সাইকরার স্থান, মিনায়, তজুমরায়, আরাফার ময়দান, মুজদালেফায়, জান্নাতুল মেয়াল্লায়, গহর হিরা, জবল রহমত, মিনার মসজিদ, মিল্লাদুন্নাবী এবং হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত হামজা (রাঃ) এর বাড়ি ইত্যাদি।

এইসব স্থানে দোয়া ও জিয়ারত করার পর বিদায়ী তোয়াফ করে ১লা সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় SAPTCO বাসে মদিনা শরীফেরউদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
১লা সেপ্টেম্বর আছর নামাযের অাগে মদিনা মনোয়ারায় পৌছে আছরের নামাজ আদায় করলাম।
হোটেল জাহারাতুল মদিনায় সিট ভাড়া করে পরের দিন মসজিদ নব্বীর ভেতরে গেলাম।
আমি এতই বেকারার হয়ে গেলাম যে বড় পীরজাদা মিয়া ভাইজান হাত ধরে রওজায়ে জান্নাতে নিয়ে গেলেন।
আমাদের কোন মোয়াল্লেম বা গাইড ছিলো না। হঠাৎ মাওলানা আব্দুল হালিম রওজা শরীফের একজন খাদেম, যার সহিত মিনায় আলাপ হয়েছিলো তিনি নিয়ম মাফিক প্রথম জেয়ারত করালেন।

তিনি দেখিয়ে দিলেন কোন খানে ৪০ জন লোক রওজা পাক হতে হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) লাশ মোবারক তুলতে এসে মসজিদ নব্বীর মাটির নিচে চলে যায়, কোন স্থান পযর্ন্ত বাদশা নুরুদ্দিনের আমলে ২ জন ইহুদি রসুলে মকবুল (দঃ) লাশ মোবারক তুলতে এসেছিল, হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাতের স্থান।

আছহাবে সোফফার স্থান, মা ফাতেমার হুজরা, হযরত আবু বকর (রাঃ) বাড়ি, জাবে জিব্রাইল। তিনি প্রথম দিন আমাদিগকে চিনিয়ে দিলেন, হুজুর পাক (সাঃ) মেহরাব, রওজায়ে জান্নাতের ভিতর ছয়টি মত্তর্বাপূর্ন খুটি আছে যথাঃ
১. উছতুয়া নায়ে হান্নাম এই স্তম্বটি মেহরাবে নবিজির ডান পার্শ্বে সেই কাঠের স্থলে অবস্থিত যা মিম্বার তৈরী হওয়ার পর উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে।
২. উছতুয়া নায়ে ছারির যেখানে হযরত (সাঃ) এতেকাফ করতেন।
৩. উছতুয়া নায়ে ওকুদ এখানে বিদেশী প্রতিনিধীগনের সাথে হযরত (সাঃ) আলাপ করতেন।
৪. উছতুয়া নায়ে আলী যেখানে দাড়িঁয়ে হযরত আলী (রাঃ) পাহারত থাকতেন।
৫. উছতুয়ানায়েন আয়েশা যাহা হযরত আয়েশা হযরত আব্দুল্লা বিন জুবায়ের কে দেখায়ে দেন।
৬. উছতুনায়ে যোটিল বা তওবার শেষ স্তম্ভ তিনটি হুজরা শরীফের পশ্চিম দিকে জালি মোবারকের সাথে অবস্থিত। সউদি পুলিশের ধাক্কা খেয়েও তা অনেকে স্পর্শ করে থাকেন।

বর্তমান সৌদি বাদশা মসজিদে নবিজিতে নামাজ পড়তে নিষেধ করে না তবে রওজা পাক জিয়ারতে ভীষন কড়াকড়ি আরোপ করছেন।
প্রতি রাত্রে তিনটার থেকে মসজিদে নববিতে যেতাম ও তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করে বিভিন্ন বরকতপূর্ন স্থান সমূহের নফল নামাজ পড়তাম।
শেষ বিদায়ে জিয়ারতের দিন রওজা পাকে মোরাবাকায় বসে নবী করিম (সাঃ) নিকট হতে বিদায় নিলাম।
১২ ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান যোগে ঢাকায় পৌছলাম। পথিমধ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লীর আকাশে আমাদের বিমানটি এক প্রচন্ড ঝাঁকুনী খায়। ঢাকা পৌঁছে জানতে পারলাম বিমানের দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছিল।

অন্য দুটি ইঞ্জিন চালিয়ে বিমান ঢাকায় পৌঁছে। সংবাদটি শুনে আতঙ্কিত হলাম ও দু’রাকাত শুকরানা নফল নামাজ আদায় করলাম।
দরবারে হাজির হয়ে হজ্বের সফর শেষ করলাম। আমার দয়াল পীরের কাছ থেকে গিয়ে মক্কা মোয়াজ্জমা, মিনা, আরাফাত, মদিনা মনওয়ারাও জিয়ারত করে আবার এই তাঁর কদমে হাজির হয়ে জীবন ধন্য করলাম। আমিন।

গ্রন্থসূত্রঃ  আল-মুজাদ্দেদ সাময়িকী।