রোজা আল্লাহ্র নিকট প্রিয় হওয়ার কারণ
- আপডেট সময় : ১০:৩৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪
- / ২৪৩১ বার পড়া হয়েছে
রোজা আল্লাহ্র নিকট প্রিয় হওয়ার কারণ
শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমানঃ
আল্লাহতায়ালা রোজাকে একান্ত আপনার বলিয়া ঘোষণা দিলেন- কেন? কি রহস্য আছে ইহাতে?
এক্ষেত্রে রমজান শব্দের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। রমজান আরবী শব্দ। ইহার শাব্দিক অর্থ তাপাধিক্য বা তাপের উচ্চমাত্রা। ইহা “রমজ” ধাতু হইতে উৎপন্ন।
‘রমজ’- এর বুৎপত্তিগত অর্থ পোড়ান, জ্বালান বা দহন করা।
রমজানের রোজা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হওয়ার অন্তর্নিহিত রহস্য উক্ত রমজ (দহন) শব্দের মধ্যে নিহিত। ইহা সকলেরই জানা যে, খনিলব্ধ স্বর্ণ খাদ মিশ্রিত থাকে। খাদ মিশ্রিত স্বর্ণ ব্যবহার উপযোগী নহে। স্বর্ণকে ব্যবহার উপযোগী করিতে হইলে অর্থাৎ স্বর্ণকে খাদ মুক্ত করিতে হইলে ইহাকে দহন করিতে হয় তথা নাইট্রিক এসিডে পোড়াইতে হয়। এসিডে দগ্ধিভূত হইয়া সোনা খাদমুক্ত হয়। ইহার উজ্জ্বলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ও ব্যবহার উপযোগী হয়।
মানবদেহে চারটি জড় উপাদান তথা আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের সমন্বয়ে গঠিত। চতুর্বিধ জড় উপাদানে গঠিত মানব শরীরে আরও এক জড় সত্ত্বা বর্তমান-যাহাকে ‘নাফস’ বলে। নাফসের উৎস জড় উপাদান হওয়াতে সংগত কারণেই ইহার বৈশিষ্ট বা স্বভাব অন্ধকারময়। যাবতীয় কুচিন্তা ও কু-স্বভাব নাফস হইতেই উৎপন্ন হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ মোহ, মদ, মাৎসর্য, হিংসা, কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদি। অসৎ রিপুসমূহ নাফস হইতেই সৃষ্ট। সর্বদা খোদাদ্রোহিতায় লিপ্ত থাকা নাফসের জাত স্বভাব। উল্লিখিত জড় বৈশিষ্ট্যসমূহকে নাফসের খাদ হিসাবে উল্লেখ করা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত নাফস খাদযুক্ত থাকে অর্থাৎ নাফসে উল্লিখিত তমদোষ সমূহ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত নাফস আল্লাহর শত্রু বলিয়া বিবেচিত। আল্লাহপাক বান্দাকে স্ব স্ব নাফসকে খাদমুক্ত করিতে আদেশ দিয়াছেন। কিন্তু ইহা কিভাবে সম্ভব? স্বর্ণকে খাদ মুক্ত করিতে যেমন নাইট্টিক এসিডে ফেলিয়া ইহার খাদসমূহকে জ্বালাইয়া ফেলিতে হয়। তবেই স্বর্ণ খাদমুক্ত হয়; তেমনি নাফসকে খাদমুক্ত করিতে হইলে তথা নাফসের অন্ধকার দোষসমূহ ঝাড়িয়া ফেলিতে হইলে নাফসকেও দাহন করা প্রয়োজন। কিন্তু জাগতিক আগুন দ্বারা কিংবা নাইট্রিক এসিড দ্বারা নাফসকে জ্বালানো যায় না। নাফসকে দাহনের জন্য যে অগ্নির প্রয়োজন হয় তাহা দেহে উৎপন্ন হয় কেবলমাত্র আনাহারের দ্বারা। একমাত্র অনাহারের অগ্নি নাফসকে জ্বালাইয়া ইহাকে খাদমুক্ত করিতে পারে; তথা ক্ষুধার আগুনে নাফস দগ্ধিভূত হইলে কেবল তখনই ইহা স্বীয় অনিষ্টকর দোষসমূহ পরিত্যাগ করিতে পারে; নাপাকি পরিত্যাগ করিয়া পবিত্রতার মাকামে পৌছাইতে পারে।
রোজার অর্থই হইল ছুবেহ ছাদেক হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনাহারে থাকা ও প্রবৃত্তিকে সংযত রাখা। রোজার অনাহারে দেহে উৎপন্ন আগুন আল্লাহর শত্রু নাফসে আম্মারাকে পোড়াইয়া তাহার অনিষ্টকর দোষসমূহ ত্যাগ করিতে বাধ্য করে। এই জন্য রোজা সর্ববিধ নেক আমলের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
আল্লাহর শত্রু নাফসের সাথে যুদ্ধকে দয়াল নবী রাসূলে পাক (সাঃ) ‘‘জেহাদে আকবর” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। যে কোন যুদ্ধেই বিজয়ের জন্য যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন। নাফসের সাথে যুদ্ধে রোজার অনাহার প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করে। কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসরয, হিংসা-কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদির প্রভাবকে রোজায় সৃষ্ট আগুন দুর্বল করিয়া দেয়। তাই রাসূলে পাক (সাঃ) রোজাকে “ঢাল” বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন।
গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত শরীফ, ২০তম খন্ড,নসিহত নম্বর ১২৩, পৃষ্টা-১০/১১/১২।
আরো পড়ুনঃ
- সুফিবাদ বা সূফীজমে পরমতসহিষ্ণুতা
- মোমিন বান্দার পরিচয়
- আসহাবে সুফফা
- বায়াত না হওয়ার কুফল
- আটরশি দরবার । আটরশির কাফেলা । ১ম পর্ব
- রমজানের তাৎপর্য ও ফজিলত