ঢাকা ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জাকের ক্যাম্প’ হইতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল-ইহা এক বিরাট ইতিহাস

  • আপডেট সময় : ০৪:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫৪৪ বার পড়া হয়েছে

‘জাকের ক্যাম্প' হইতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল-ইহা এক বিরাট ইতিহাস

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রথমে আমি যেদিন আটরশিতে আসি-সেইদিন ছিল কোরবানীর ঈদের দিন। আমি দেখিলাম, সেই ঈদের দিনে লোকজন লাঙ্গল-জোয়াল লইয়া মাঠে যাইতেছে।

এখানে নামাজ ছিল না-সমাজ ছিল না। ধনী, মানী, জ্ঞানী, গুণী লোক ছিল না। গরু কোরবানী হইতো না।
গরুর গোস্তকে এই এলাকার মোসলমানেরা অস্পৃশ্য মনে করিত। ইসলাম কি-তাহারা জানিত না। পার্শ্বেই ছিল হিন্দু জমিদারের বাড়ী। এই এলাকার মোসলমানগণ জমিদার বাড়ীর পূজায় অংশ গ্রহণ করিত; পূজার প্রসাদ খাইত। তাহারা হিন্দুয়ানী রীতিকে ভালবাসিত। হিন্দুয়ানী রীতিতেই চলিত।

ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ তাহাদের কাছে অপরিচিত ছিল। আমার মনে হয়, আটরশির মত এত নিকৃষ্ট গ্রাম বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি ছিল না।
সেই ঈদের দিনে জনাব মহসীন উদ্দিন খান ও তদীয় অপর দুই ভাইকে লইয়া পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করিয়া খোদাতায়ালার নিকট এই দু’আ করিলাম, ‘‘হে খোদাতায়ালা!
এই যে তিন/চার জন আমরা ঈদের নামাজ পড়িলাম।

দয়া করিয়া তুমি এখানে বিশাল ঈদের জামাত কায়েম কর।”
মহান খোদাতায়ালার দয়ায় আজ এখানে বিশাল ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
যাই হোক, ১৩৫৪ সনে প্রতিষ্ঠিত ‘জাকের ক্যাম্প’ হইতে ধুমধামে তরিকা প্রচারের কাজ চলিতে থাকে। ক্যাম্পের ছাউনী ছিল ছনের এবং বেড়া বা বেষ্টনী ছিল সুপারী গাছের খোলের। আমার এক পুরাতন মুরীদ, নাম কালু লস্কর। সেই আমাকে সুপারী গাছের খোল সরবরাহ করিত।ধীরে ধীরে আগন্তকদের ভিড় বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যাম্পের ক্ষেত্রও বাড়াইতে হয়। প্রথমে নিকটস্থ এলাকা থেকে, ততপর পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন, থানা, জেলা থেকে, এমনকি দেশের সর্বত্র থেকে দলে দলে মানুষ আসা শুরু করে। তাহাদেরকে তরিকা দিতাম, খোদাপ্রাপ্তির তালিম দিতাম। এই ভাবে প্রচার কার্য দ্রুত গতিতে চলিতে থাকে।

প্রথমে প্রচারকেন্দ্র হিসাবে ক্যাম্প ছিল ছনের তৈরী ঘর-যাহার বেড়া ছিল সুপারী খোলের। কয়েক বছরের ব্যবধানে ছনের তৈরী ক্যাম্পের জায়গা দখল করে টিনের তৈরী ঘর এবং বেড়াও দেওয়া হয় টিন দ্বারা।
তখন ক্যাম্পের নাম দেওয়া হয় ‘‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল।”

পূর্বেই বলা হইয়াছে, পীর কেবলাজান শত সহস্র পরীক্ষা নিরীক্ষার কষ্টিপাথরে যাচাই করিয়া এই মিছকীনকে খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞানের যোগ্য বলিয়া মনে করেন এবং আধ্যাত্মিক নেয়ামতে পরিপূর্ণ ডালা মাথায় দিয়া এই অজ পাড়াগাঁ আটরশিতে পাঠাইয়া দেন সত্য তরিকা, সত্য ইসলাম প্রচারের জন্য।
কেবলাজান হুজুরের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সন হইতে এই আটরশি হইতে সত্য তরিকা প্রচার কাজ শুরু করি। জনাব মহসিন খান ছাহেবের অতি ক্ষুদ্র একটি ছনের ঘর ছিল-যে ঘরে তিনি একটি বকনা বাছুর পালিতেন। আমি তরিকা প্রচারের স্বার্থে তাহার নিকট সেই ঘরটি চাইলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাহা আমাকে প্রদান করেন। সেই ক্ষুদ্র ঘর হইতে তরিকা প্রচারের কর্মসূচী শুরু হয়।প্রতি সপ্তাহে একটি করিয়া জলসা করিতাম।
উপস্থিত খোদাঅন্বেষীদের তালিম দিতাম, সবক দিতাম। আল্লাহ ও রাসূলে পাক (সাঃ) এর মহব্বতপূর্ণ ওয়াজ নসিহত শ্রবণে সকলেই অশ্রুপাত করিত। প্রত্যেকটি জলসাতেই প্রচুর ফয়েয ওয়ারেদ হইত। ০৮ রশি, সাড়ে ০৭ রশি, ১৪ রশি, আড়াই রশি, ব্রাহ্মণদ্বী প্রভৃতি এলাকার জাকেরান ও আশেকানসকল মুষ্ঠি চাউল দিত।

ততকালীন সময়ে গরুও খুব সস্তা ছিল। ০৩/০৪ টাকায় মাঝারী আকৃতির গরু পাওয়া যাইত। জাকেরানদের দেওয়া মুষ্ঠি দ্বারা সাপ্তাহিক জলসা সম্পন্ন করিতাম। ধীরে ধীরে হেদায়েতের কলেবর বৃদ্ধি পায় খোদাতালাশীদের ভীড় জমে। ফলে এক বছর অন্তে পার্শ্ববর্তী গ্রাম হইতে মাত্র আট (০৮) টাকার বিনিময়ে একটি কুড়ে ঘর ক্রয় করি। কুড়ে ঘরটির নাম দেওয়া হয় ‘‘জাকের ক্যাম্প।”
সময়ের বিবর্তনে, কালের ব্যবধানে সেই জাকের ক্যাম্প বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পরিণত হইয়াছে।

সূত্রঃ- বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি।

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘জাকের ক্যাম্প’ হইতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল-ইহা এক বিরাট ইতিহাস

আপডেট সময় : ০৪:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রথমে আমি যেদিন আটরশিতে আসি-সেইদিন ছিল কোরবানীর ঈদের দিন। আমি দেখিলাম, সেই ঈদের দিনে লোকজন লাঙ্গল-জোয়াল লইয়া মাঠে যাইতেছে।

এখানে নামাজ ছিল না-সমাজ ছিল না। ধনী, মানী, জ্ঞানী, গুণী লোক ছিল না। গরু কোরবানী হইতো না।
গরুর গোস্তকে এই এলাকার মোসলমানেরা অস্পৃশ্য মনে করিত। ইসলাম কি-তাহারা জানিত না। পার্শ্বেই ছিল হিন্দু জমিদারের বাড়ী। এই এলাকার মোসলমানগণ জমিদার বাড়ীর পূজায় অংশ গ্রহণ করিত; পূজার প্রসাদ খাইত। তাহারা হিন্দুয়ানী রীতিকে ভালবাসিত। হিন্দুয়ানী রীতিতেই চলিত।

ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ তাহাদের কাছে অপরিচিত ছিল। আমার মনে হয়, আটরশির মত এত নিকৃষ্ট গ্রাম বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি ছিল না।
সেই ঈদের দিনে জনাব মহসীন উদ্দিন খান ও তদীয় অপর দুই ভাইকে লইয়া পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করিয়া খোদাতায়ালার নিকট এই দু’আ করিলাম, ‘‘হে খোদাতায়ালা!
এই যে তিন/চার জন আমরা ঈদের নামাজ পড়িলাম।

দয়া করিয়া তুমি এখানে বিশাল ঈদের জামাত কায়েম কর।”
মহান খোদাতায়ালার দয়ায় আজ এখানে বিশাল ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
যাই হোক, ১৩৫৪ সনে প্রতিষ্ঠিত ‘জাকের ক্যাম্প’ হইতে ধুমধামে তরিকা প্রচারের কাজ চলিতে থাকে। ক্যাম্পের ছাউনী ছিল ছনের এবং বেড়া বা বেষ্টনী ছিল সুপারী গাছের খোলের। আমার এক পুরাতন মুরীদ, নাম কালু লস্কর। সেই আমাকে সুপারী গাছের খোল সরবরাহ করিত।ধীরে ধীরে আগন্তকদের ভিড় বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যাম্পের ক্ষেত্রও বাড়াইতে হয়। প্রথমে নিকটস্থ এলাকা থেকে, ততপর পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন, থানা, জেলা থেকে, এমনকি দেশের সর্বত্র থেকে দলে দলে মানুষ আসা শুরু করে। তাহাদেরকে তরিকা দিতাম, খোদাপ্রাপ্তির তালিম দিতাম। এই ভাবে প্রচার কার্য দ্রুত গতিতে চলিতে থাকে।

প্রথমে প্রচারকেন্দ্র হিসাবে ক্যাম্প ছিল ছনের তৈরী ঘর-যাহার বেড়া ছিল সুপারী খোলের। কয়েক বছরের ব্যবধানে ছনের তৈরী ক্যাম্পের জায়গা দখল করে টিনের তৈরী ঘর এবং বেড়াও দেওয়া হয় টিন দ্বারা।
তখন ক্যাম্পের নাম দেওয়া হয় ‘‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল।”

পূর্বেই বলা হইয়াছে, পীর কেবলাজান শত সহস্র পরীক্ষা নিরীক্ষার কষ্টিপাথরে যাচাই করিয়া এই মিছকীনকে খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞানের যোগ্য বলিয়া মনে করেন এবং আধ্যাত্মিক নেয়ামতে পরিপূর্ণ ডালা মাথায় দিয়া এই অজ পাড়াগাঁ আটরশিতে পাঠাইয়া দেন সত্য তরিকা, সত্য ইসলাম প্রচারের জন্য।
কেবলাজান হুজুরের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সন হইতে এই আটরশি হইতে সত্য তরিকা প্রচার কাজ শুরু করি। জনাব মহসিন খান ছাহেবের অতি ক্ষুদ্র একটি ছনের ঘর ছিল-যে ঘরে তিনি একটি বকনা বাছুর পালিতেন। আমি তরিকা প্রচারের স্বার্থে তাহার নিকট সেই ঘরটি চাইলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাহা আমাকে প্রদান করেন। সেই ক্ষুদ্র ঘর হইতে তরিকা প্রচারের কর্মসূচী শুরু হয়।প্রতি সপ্তাহে একটি করিয়া জলসা করিতাম।
উপস্থিত খোদাঅন্বেষীদের তালিম দিতাম, সবক দিতাম। আল্লাহ ও রাসূলে পাক (সাঃ) এর মহব্বতপূর্ণ ওয়াজ নসিহত শ্রবণে সকলেই অশ্রুপাত করিত। প্রত্যেকটি জলসাতেই প্রচুর ফয়েয ওয়ারেদ হইত। ০৮ রশি, সাড়ে ০৭ রশি, ১৪ রশি, আড়াই রশি, ব্রাহ্মণদ্বী প্রভৃতি এলাকার জাকেরান ও আশেকানসকল মুষ্ঠি চাউল দিত।

ততকালীন সময়ে গরুও খুব সস্তা ছিল। ০৩/০৪ টাকায় মাঝারী আকৃতির গরু পাওয়া যাইত। জাকেরানদের দেওয়া মুষ্ঠি দ্বারা সাপ্তাহিক জলসা সম্পন্ন করিতাম। ধীরে ধীরে হেদায়েতের কলেবর বৃদ্ধি পায় খোদাতালাশীদের ভীড় জমে। ফলে এক বছর অন্তে পার্শ্ববর্তী গ্রাম হইতে মাত্র আট (০৮) টাকার বিনিময়ে একটি কুড়ে ঘর ক্রয় করি। কুড়ে ঘরটির নাম দেওয়া হয় ‘‘জাকের ক্যাম্প।”
সময়ের বিবর্তনে, কালের ব্যবধানে সেই জাকের ক্যাম্প বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পরিণত হইয়াছে।

সূত্রঃ- বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি।

 

আরো পড়ুনঃ