ঢাকা ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদব কি ?

  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫৫৪ বার পড়া হয়েছে

আদব কি ?

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পীরের হাতে মুরীদকে এমন ভাবে থাকিতে হয় যেমন ধৌতকারীর হাতে মূর্দা থাকে।ধৌতকারীর নিকটে মূর্দা বা শবদেহের যেমন কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে না, ধৌতকারী মুর্দাকে যেমন ভাবে নাড়ায়, মূর্দা বা শবদেহ সেই ভাবেই নড়ে;তোমরা যাহারা খোদাতায়ালাকে পাইতে চাও,পীরের হাতে তেমনি শবদেহ বা মুর্দার মতই থাক। ইহাই আদব।

পীরের ইচ্ছায় নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করিতে হয়।
পীর যখন যাহা নির্দেশ দান করেন, কাল বিলম্ব না করিয়া তাহা পালন করিতে হয়। পীরকে ভক্তি শ্রদ্ধা সবচেয়ে বেশী করিতে হয়।কারণ দুনিয়ার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করা গেলেও পীরের ঋণকে পরিশোধ করা যায় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীর বলেই মুরীদের দেলের কালিমা দূর হয়, সেখানে এসমে জাত ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ জেকের জারী হয়।

পীরের দয়াতেই মানুষ তাহার চিরশত্রু- অদম্য জানোয়ার, নাফসে আম্মারাকে মজবুত শৃংখলে আবদ্ধ করিতে পারে।পীরের দয়াতেই মুরীদের দেল হইতে দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়।

★ হযরত হাছান বসরী (রঃ) ছাহেব বলেনঃ-
‘‘মুহূর্তকালের জন্য দুনিয়ার প্রতি বিরাগ বা বিতৃষ্ণা
হাজার বছরের রোজা-নামাজের চাইতে উত্তম।”
দুনিয়াকে অবহেলা করার ক্ষমতা অর্জন পীরের দয়া ভিন্ন সম্ভব হয় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীতে মুরীদ শয়তানের কু-প্ররোচনার হাত হইতে বাঁচিতে পারে। পীরের দয়াতেই মুরীদ চিরস্থায়ী জীবনের সন্ধান পায়, অদৃশ্য জগত অবলোকন করে।পীরের নেকদৃষ্টিতেই মুরীদ জড় জগত, নূরের জগত ও সিফাতের জগত পার হইয়া খোদাতায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করে।

★ হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব তদীয়
‘মাবদা ওয়া মা’আদ’ নামক কিতাবে বলেন যেঃ-
“মহান খোদাতায়ালার রেযা বা সন্তুষ্টিকে পীরের রেযা
বা সন্তুষ্টির পশ্চাতে রাখা হইয়াছে।
যতক্ষণ না মুরীদ নিজেকে স্বীয় পীরের সন্তুষ্টির মধ্যে বিলীন করিয়া দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মহান খোদাতায়ালার রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয় না। মুরীদের সবচেয়ে বড় বিপদ হইল পীরের অসন্তুষ্টি।
সব রকমের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ সম্ভব,কিন্তু পীরের অসন্তুষ্টির কারণে যে ক্ষতি হয়,তাহা পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। পীরের অসন্তুষ্টি মুরীদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ।পীরের অসন্তুষ্টিতে মুরীদের দীনি আকিদায় ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং শরীয়তের হুকুম-আহকাম প্রতিপালনে অলসতা আসে;বাতেনী হাল বা উচ্চ মাকাম সমূহে উত্তীর্ণের কোন প্রশ্নই আসে না।
পীরের অন্তরে কষ্ট দেওয়ার পরেও যদি মুরীদের
মধ্যে কোন প্রকার হালের প্রভাব থাকে,তবে ইহাকে ছলনা মনে করিতে হইবে।কেননা শেষ পর্যন্ত ইহার প্রতিফল খারাপই হয় এবং তাহার পরিণতি ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই নয়।”
কাজেই খোদাপ্রাপ্তির পথে মুরীদকে সর্বদাই পীরের আদব ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখিতে হয়।

★হযরত মাওলানা রূমী (রহঃ) ছাহেব বলেন যেঃ-
‘‘বেয়াদব মাহরুমে গাশ্ত আজ ফাজ্‌লে রাব।”
অর্থাৎঃ- “বেয়াদব আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।”
পীরই যেহেতু খোদাপ্রাপ্তির অছিলা,চির হায়াত প্রাপ্তির মাধ্যম,পীরের হক তাই সকলের উপরে রাখিতে হয়;
পীরের প্রতি চরম আদব প্রদর্শন করিতে হয়।
★হযরত জোনায়েদ বোগদাদী (রঃ) ছাহেব তদীয়
তাছনিফাতে বলেনঃ-
“আদব বা শিষ্টাচার স্বর্ণ ও রৌপ্য হইতেও অধিক
মূল্যবান ও শ্রেয়।”

★খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত-সকল খন্ড একত্রে, নসিহত নং-৬৭।

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

আদব কি ?

আপডেট সময় : ০৫:২৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পীরের হাতে মুরীদকে এমন ভাবে থাকিতে হয় যেমন ধৌতকারীর হাতে মূর্দা থাকে।ধৌতকারীর নিকটে মূর্দা বা শবদেহের যেমন কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে না, ধৌতকারী মুর্দাকে যেমন ভাবে নাড়ায়, মূর্দা বা শবদেহ সেই ভাবেই নড়ে;তোমরা যাহারা খোদাতায়ালাকে পাইতে চাও,পীরের হাতে তেমনি শবদেহ বা মুর্দার মতই থাক। ইহাই আদব।

পীরের ইচ্ছায় নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করিতে হয়।
পীর যখন যাহা নির্দেশ দান করেন, কাল বিলম্ব না করিয়া তাহা পালন করিতে হয়। পীরকে ভক্তি শ্রদ্ধা সবচেয়ে বেশী করিতে হয়।কারণ দুনিয়ার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করা গেলেও পীরের ঋণকে পরিশোধ করা যায় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীর বলেই মুরীদের দেলের কালিমা দূর হয়, সেখানে এসমে জাত ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ জেকের জারী হয়।

পীরের দয়াতেই মানুষ তাহার চিরশত্রু- অদম্য জানোয়ার, নাফসে আম্মারাকে মজবুত শৃংখলে আবদ্ধ করিতে পারে।পীরের দয়াতেই মুরীদের দেল হইতে দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়।

★ হযরত হাছান বসরী (রঃ) ছাহেব বলেনঃ-
‘‘মুহূর্তকালের জন্য দুনিয়ার প্রতি বিরাগ বা বিতৃষ্ণা
হাজার বছরের রোজা-নামাজের চাইতে উত্তম।”
দুনিয়াকে অবহেলা করার ক্ষমতা অর্জন পীরের দয়া ভিন্ন সম্ভব হয় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীতে মুরীদ শয়তানের কু-প্ররোচনার হাত হইতে বাঁচিতে পারে। পীরের দয়াতেই মুরীদ চিরস্থায়ী জীবনের সন্ধান পায়, অদৃশ্য জগত অবলোকন করে।পীরের নেকদৃষ্টিতেই মুরীদ জড় জগত, নূরের জগত ও সিফাতের জগত পার হইয়া খোদাতায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করে।

★ হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব তদীয়
‘মাবদা ওয়া মা’আদ’ নামক কিতাবে বলেন যেঃ-
“মহান খোদাতায়ালার রেযা বা সন্তুষ্টিকে পীরের রেযা
বা সন্তুষ্টির পশ্চাতে রাখা হইয়াছে।
যতক্ষণ না মুরীদ নিজেকে স্বীয় পীরের সন্তুষ্টির মধ্যে বিলীন করিয়া দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মহান খোদাতায়ালার রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয় না। মুরীদের সবচেয়ে বড় বিপদ হইল পীরের অসন্তুষ্টি।
সব রকমের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ সম্ভব,কিন্তু পীরের অসন্তুষ্টির কারণে যে ক্ষতি হয়,তাহা পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। পীরের অসন্তুষ্টি মুরীদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ।পীরের অসন্তুষ্টিতে মুরীদের দীনি আকিদায় ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং শরীয়তের হুকুম-আহকাম প্রতিপালনে অলসতা আসে;বাতেনী হাল বা উচ্চ মাকাম সমূহে উত্তীর্ণের কোন প্রশ্নই আসে না।
পীরের অন্তরে কষ্ট দেওয়ার পরেও যদি মুরীদের
মধ্যে কোন প্রকার হালের প্রভাব থাকে,তবে ইহাকে ছলনা মনে করিতে হইবে।কেননা শেষ পর্যন্ত ইহার প্রতিফল খারাপই হয় এবং তাহার পরিণতি ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই নয়।”
কাজেই খোদাপ্রাপ্তির পথে মুরীদকে সর্বদাই পীরের আদব ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখিতে হয়।

★হযরত মাওলানা রূমী (রহঃ) ছাহেব বলেন যেঃ-
‘‘বেয়াদব মাহরুমে গাশ্ত আজ ফাজ্‌লে রাব।”
অর্থাৎঃ- “বেয়াদব আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।”
পীরই যেহেতু খোদাপ্রাপ্তির অছিলা,চির হায়াত প্রাপ্তির মাধ্যম,পীরের হক তাই সকলের উপরে রাখিতে হয়;
পীরের প্রতি চরম আদব প্রদর্শন করিতে হয়।
★হযরত জোনায়েদ বোগদাদী (রঃ) ছাহেব তদীয়
তাছনিফাতে বলেনঃ-
“আদব বা শিষ্টাচার স্বর্ণ ও রৌপ্য হইতেও অধিক
মূল্যবান ও শ্রেয়।”

★খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত-সকল খন্ড একত্রে, নসিহত নং-৬৭।

আরো পড়ুনঃ