আশেকে রাসূল কাজী নজরুল ইসলাম

- আপডেট সময় : ১০:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২৫৭৫ বার পড়া হয়েছে
আমি যারই প্রেম পাগল সে তো মদিনা। মদিনা ওয়ালার প্রেমে পাগল ছিলো হযরত বেলাল (রাঃ), হযরত ওয়ায়েস করনী (রাঃ), হযরত সালমান ফারসী (রাঃ), হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানি (রাঃ), হযরত শাহসূফি খাজা বাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবসহ অসংখ্য অগনিত সাহাবায়ে কেরাম, আউলিয়া কেরাম যারা আশেকে রাসূল হিসাবে দুনিয়াতে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আর আমার রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে কালে কালে বিভিন্ন ভাষায় কত কাসিদা, কবিতা, প্রবন্ধ লিখা হলো যার কোন হিসাব নেই। হযরত রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে যত গুলো শব্দ চয়ন করা হয়েছে তার এক ভাগ শব্দও অন্য কারো জন্য চয়ন করা হয়নি। হযরত হাসসান ইবনে সাবেত, হযরত শরফুদ্দীন বুসরি, মহাকবি হাফেজ, হযরত রুমি (রহঃ) সহ কত শত আশেকে রাসূল নবীজীর শানে কাসিদা রচনা করছেন।
পারস্যের সাহিত্যের পর হযরত রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে সবচেয়ে বেশি শব্দ চয়ন যিনি করেছেন তিনি আশেকে রাসূল সূফী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
একবার কোনো এক প্রসঙ্গে ইবরাহিম খাঁর সাথে আলোচনার সময় সূফি কবি বলেছিলেন, “আমার শ্রেষ্ঠতম গুরু যিনি সেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা মনে করুন। তিঁনি মেরাজে গেলেন কিন্তু ধরার ধুলিকে ভুললেন না, ফিরে এলেন। কত গওস, কতুব, পয়গম্বর সে মহান সুন্দরের পরম আকর্ষনে নিজকে সম্পূর্ণ বিকিয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন কিন্তু আমার রাসূল সে আকর্ষনের চুম্বক খন্ডকে বুকের তলে পুষে নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁর সঙ্গে আর সবাইকে সেই সুন্দরের পথে ডেকে নিয়ে যেতে।”
‘খেয়া পারের তরণী’ কবিতায় কবি প্রথম রসূল (সাঃ) প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বললেন,
“পূণ্য পথের এ যে যাত্রীরা নিষ্পাপ
ধর্মেরি বর্মে সুরক্ষিত দিল সাফ!
নহে এরা শঙ্কিত বজ্র নিপাতেও
কান্ডারী আহমদ তরী ভরা পাথেয়।”
হযরত রাসূল (সাঃ) আগমনে আসমান-জমিন সহ সকল সৃষ্টি আনন্দে আত্নহারা। কবিও আনন্দে লিখলেন,
“তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে…..”
সকল মাখলাকাতের আনন্দ প্রকাশে কবি লিখলেন,
“কুল মখলুকে আজি ধ্বনী উঠে, “কে এলো ঐ”
কলেমা শাহাদাতের বাণী ঠোঁটে, কে এলো ঐ”…….
আরো লিখলেন,
“ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ, এলরে দুনিয়ায়………
“ইসলামের ঐ সওদা লয়ে
এল নবীন সওদাগর…….
রাসূলের প্রেমে বিভোর হয়ে কবি লিখলেন, “তৌহিদেরই মুর্শেদ আমার মুহাম্মদের নাম…….
“মোহাম্মদ মোর নয়ন মনি
মোহাম্মদ মোর জপমালা…….
প্রেমের আক্ষেপ নিয়ে গাইতেন, ” মোহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে,
তাই কিরে তোর কন্ঠের গান এমন মধুর লাগে।
রাসূল (সাঃ) এঁর পবিত্র কদম মোবারক বুকে নেয়ার আকুতি নিয়ে লিখলেন, “আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ……..
মদিনায় যাবার আকুতি নিয়ে লিখলেন, “মনে বড় আশা ছিলো যাবো মদিনায়……
“আয় মরুপারের হাওয়া, নিয়ে যারে মদিনা…….
নবীবির প্রশংসায় গাইতেন, “মারহাবা সৈয়দ মক্কি মদনী আল-আরবী
গাহিতে নন্দী গো যাঁর নিঃস্ব হল বিশ্ব কবি।”
“মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা
তুমি বাদশারও বাদশাহ কমলীওয়ালা।”
আরো অগনিত শব্দ রাসূলের শানে লিখছেন তিনি।
হযরত রাসূল (সাঃ) এর ওফাতে কবি লিখলেন,
“এ কি বিস্ময়!
আজরাইলেরও জলে ভর ভর চোখ!…..
“জিবরাইলের আতশী পাখা সে ভেঙ্গে যেন খান খান……
শোকের তীব্রতা গভীরতা বুজাতে কবি লিখলেন,
“রসুলের দ্বারে দাঁড়ায়ে কেন রে আজ জিন শয়তান? তারও বুক চেয়ে আসু ঝরে, ভাসে মদিনার ময়দান…….
“বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়।।
“নবীজি নাই” উঠল মাতম দুনিয়ায়!
আঁখি প্রদীপ এই ধরনীর
গেল নিভে ঘিরিল তিমির…..
সেই শোকেরই তুফান বহে ‘লু’ হাওয়ায়……
কবি হযরত রাসূলের (সাঃ) শানে অগণিত শব্দ চয়ন করে নিজকে দুনিয়ার বুকে আশেক রাসূল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
আজ কবির মহাপ্রয়ান দিবস। কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা
আরো পড়ুনঃ