আমার আহলে বায়তের উপমা নূহ (আঃ)’র নৌকার মতই

- আপডেট সময় : ১১:৫৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ২৭৪২ বার পড়া হয়েছে
হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) ফরমান, “আমার আহলে বায়তের উপমা নূহ (আঃ)’র নৌকার মতই।”
হিজরী তৃতীয় সনে হযরত আলী (রাঃ) ও হয়রত ফাতেমা (রাঃ) কোল জুড়ে আসলো তাঁহাদের প্রথম সন্তান হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)। হযরত রাসূল (সাঃ) এঁর কদমপাকে সুসংবাদ দেয়া হলো। তিঁনি সংবাদ পেয়ে দ্রুত ছুটে আসলেন। দু’হাতে তুলে নিলেন সদ্যপ্রসূত নাতিকে। কানে আযান দিলেন এবং গভীর ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। গোটা মদিনায় আনন্দ-উৎসব। হযরত হাসান (রাঃ) ছাহেবের দুই বছর পূর্ণ না হতে দুনিয়ায় আগমন করলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)। জন্মের সাত দিনের দিন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) মেষ/দুম্বা জবেহ করেন আকীকা দেন অতঃপর ইমাম ছাহেব (রাঃ) এঁর মাথার চুল কামিয়ে তার ওজনের সমপরিমানে রৌপ্য গরীবদের মাঝে বিতরণ করেন। ইমাম ছাহেবগণ (রাঃ) ছিলেন নবীজি (সাঃ) এঁর কলিজা টুকরা। এই দুনিয়াতে হযরত রাসূল (সাঃ) এঁর পবিত্র বংশ ধারা তাঁহাদের মাধ্যমে বিদ্যমান থাকবে বলে হযরত রাসূল (সাঃ) ঘোষনা দান করেন। হযরত রাসূল (সাঃ) তাঁহাদের দুই ভাইকে নিজের ছেলে হিসাবে অভিহিত করতেন।
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বর্ননা করেন, “হযরত রাসূল (সাঃ) হযরত ফাতিমাকে (রাঃ) বলতেন, আমার ছেলে দুটোকে ডাক। তাঁরা নিকটে এলে তিঁনি তাঁদের শরীর মোবারকে গন্ধ শুঁকতেন এবং জড়িয়ে ধরতেন।”
তাই হযরত ফাতেমা (রাঃ) হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) ছাহেবে কে দু’হাতের উপর রেখে দোলাতে দোলাতে আবৃত্তি করতেন, “আমার সন্তান নবীর মত দেখতে, আলীর মত নয়।”
হযরত উসামা ইবনে যায়দ (রাঃ) ফরমান, ” আমি একদিন আমার একটা প্রয়োজনে হযরত রাসূল (সাঃ) এঁর হুজরার দরজায় টোকা দিলাম। তিঁনি গায়ের চাদরে কিছু জড়িয়ে বেরিয়ে এলেন। আমি বুঝতে পারলাম না চাদরে জড়ানো কি জিনিস। আমি জানতে চাইলাম ইয়া রাসূল্লাহ! আপনি চাদরে ঢেকে রেখেছেন কি জিনিম? তিনি চাদর সরালে দেখলাম হাসান ও হুসাইন। তারপর তিঁনি বললেন, এরা দু’জন হলো আমার ছেলে এবং আমার মেয়ের ছেলে। হে আল্লাহ! আমি এদের দু’জনকে ভালোবাসি, আপনিও তাদেরকে ভালোবাসুন। আর তাদেরকে যারা ভালোবাসে তাদেরকেও ভালোবাসুন।”
একদিন হযরত রাসূল (সাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) গৃহে গিয়ে দেখেন আলী-ফাতেমা (রাঃ) ঘুমিয়ে আছেন, শিশু হাসান (রাঃ) খাবারের জন্য কান্না করছেন। হযরত রাসূল (সাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) ছাহেবকে কোলে তুলে বাহিরে এনে বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁধা ছাগীর দুধ নিজ হাতে দুইয়ে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) ছাহেবকে পান করিয়ে তাকে শান্ত করেন।
হযরত রাসূল (সাঃ) ইমাম ছাহেবদের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন,” হাসান ও হোসাইন বেহেশতে যুবকদের সরদার।”
একবার হযরত রাসূল (সাঃ) ডান কাঁধে ইমাম হাসান ও বাম কাঁধে ইমাম হোসাইন (রাঃ) ছাহেবেকে নিয়ে হাঁটতেছিলেন। এই দৃশ্য দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাহেব বললেন,” ইয়া রাসূল্লাহ (সাঃ)! একজনকে আমাকে দিন যাতে আপনার বোঝা হালকা হয়। উত্তরে দয়াল নবী (সাঃ) বললেন,” কি চমৎকার বাহন তাদের আর কি চমৎকার আরোহীই না তারা!”
একদিন রাসূল (সাঃ) মসজিদে খুতবা দিচ্ছিলেন। সেখানে হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (সাঃ) উপস্থিত হলেন। তাঁদের পরনে ছিল লাল পোশাক। তাঁরা একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলো আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তিঁনি খুতবার জায়গা থেকে নেমে এলেন এবং তাঁদেরকে সামনে বসিয়ে রাখলেন এবং বললেন,”আমি দু’বালককে দেখার পর আর অপেক্ষা করতে পারিনি! তাঁরপর তিঁনি পুনরায় খুতবা দেয়া শুরু করলেন।”
হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) একদিন রাসূলের দরবারে উপস্থিত হয়ে দেখেন, হযরত রাসূল (সাঃ) বুক মোবারকের উপর হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (রাঃ) খেলছেন। হযরত আনসারী (রাঃ) জিগাসা করলেন, ইয়া রাসূল (সাঃ)! আপনি কি তাঁদেরকে ভালোবাসেন? তিঁনি জবাবে বললেন, “আমি কীভাবে তাদের ভাল না বেসে পারি, যেখানে পার্থিব জীবনে তারা আমার রায়হানা!”
হযরত রাসূল (সাঃ) একদিন দাওয়াত যাচ্ছিলেন। পথি মধ্যে দেখলেন হযরত হোসাইন (রাঃ) ছেলেদের সাথে খেলা করছেন। হযরত রাসূল (সাঃ) ইমাম ছাহেবকে দাওয়াতে নেয়ার জন্য ধরতে চাইলেন। কিন্তু ইমাম ছাহেব এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলেন। যতক্ষন না ধরতে পারলেন ততক্ষন আল্লাহর রাসূলও ছোটাছুটি করলেন। কিছুক্ষন পর ধরে কোলে তুলে নিলেন। ইমাম ছাহেবের মুখের উপর মুখ মোবারক রেখে রাসূল (সাঃ) বললেন, “হোসাইন আমার থেকে আর আমি হোসাইন থেকে। যে হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। সে আমার দৌহিত্রের মধ্যে একজন। যে আমাকে ভালোবাসে সে যেন হোসাইনকে ভালোবাসে।”
হযরত রাসূল (সাঃ) নামাজের সেজদায় গেলে ইমাম ছাহেবগণ রাসূলের ঘাড় মোবারকে চেপে বসে খেলতেন। আল্লাহর রাসূল ততক্ষন সেজদা থেকে মাথা মোবারক তুলতেন না যতক্ষন না ইমাম ছাহেবগণ ঘাড় মোবারক থেকে নামতেন।
ইমাম ছাহেবগণের (রাঃ) দুঃখে রাসূল (সাঃ) দুঃখ পেতেন। হযরত রাসূল (সাঃ) ফাতিমা-আলী (রাঃ) বাড়ির পাশ দিয়ে খুব ব্যবস্ততা নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এমন সময় ইমাম হোসাইন (সাঃ) কান্নার আওয়াজ তাঁর কানে গেল। তিঁনি বাড়ীতে ঢুকে একটু রাগত্বস্বরে বললেন,” তুমি কি জানো না, তাঁর কান্না আমাকে কষ্ট দেয়!”
হযরত রাসুল (সাঃ) এঁর সেই ভালোবাসার কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ছাহেবকে পাষন্ড ইয়াজিদ কারবালার প্রান্তরে নির্মম ভাবে হত্যা করেন। কারবালার পরে আজ পর্যন্ত পাষন্ড ইয়াজিদগংদের কার্যক্রম থেমে নাই।
আমার হযরত পীর কেবলাজান শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান, “এজিদ শুধু একজন ব্যক্তি নয়। এজিদ এক অশুভ শক্তি। এজিদি শক্তির সেলসেলা বিশ্ব ব্যাপী বিস্তৃত। সে শক্তি আজ বিরাট মহীরুহ। শিকড়সহ সেই এজিদি অপশক্তির মহীরুহ উৎপাটন করিতে হইলে প্রত্যেক মুসলমানেরই প্রয়োজন আত্নশুদ্ধির মাধ্যমে ত্যাগের গুন অর্জন করা। ইমাম ছাহেবের রক্ত সেই অনুপ্রেরণাই দেয়।”
লেখকঃ সুজন শাহজী