ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজান অপরিসীম ফজিলতের মাস – শাহসূফী খাজা ফরিদপুরী (কুঃ) ছাহেব

  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • / ২৪৬৫ বার পড়া হয়েছে

রমজান অপরিসীম ফজিলতের মাস sufibad

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রমজান অপরিসীম ফজিলতের মাসঃ

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে গউস পাক (রঃ) ছাহেব বলেন, “আল্লাহ এই বরকতময় মাসকে সৃষ্টি করিয়াছেন; ইহার বরকতের মাধ্যমে তোমাদিগকে পাপমুক্ত করিবার জন্য, তোমাদের দুস্কর্মের ক্ষতিপুরণ হওয়ার জন্য। এই সময় দুস্কৃতকারী ও কলহপ্রিয় মানুষ সৎকর্মশীল হয়। রিয়াযত ও অনুশীলনকারীগণ উচ্চ স্থান লাভ করেন। কেননা, ইহাতে আনাবাদী দেল আবাদ হয় এবং সর্ব প্রকার ক্ষতিপূরণ হয়। মসজিদগুলিতে অতিশয় জনসমাগম হয়। কুরআন তেলাওয়াতের দরুন অন্তরে স্বস্তি ও প্রশান্তি নামিয়া আসে। আল্লাহতায়ালা তাহার বান্দারে সমস্ত পদস্খলন ক্ষমা করিয়া দেন। যাহারা এই মাসে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, আল্লাহ তাহাদের অশ্রুবর্ষণের দরুণ দয়া করেন।”

রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব বলেন, “রমজানের মাস পরিপূর্ণভাবে কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত। এই হেদায়েতপূর্ণ মাসেই উহা নাযিল হইয়াছে। এই কারণেই এই মাসে সমস্ত পুণ্য ও সৌভাগ্যের সমাবেশ ঘটিয়াছে। যে কোন পুণ্য, বরকত বা সৌভাগ্য যাহার দ্বারা মানুষ সারা বৎসর উপকৃত হইতে পারে, উহা এই সমুদ্রের একটি বিন্দু পরিমান মাত্র। এই বরকতময় মাসে মানুষ পুণ্য কারযে আত্মনিয়োগ করিলে সারা বৎসর উহা কাজে আসিবে। আর যদি এই মাস অস্থিরতায় কাটে, তাহা হইলে সারাটি বৎসর তাহার অস্থিরতায় কটিবে। যে এই মাস পাইয়াছে ও ইহাতে সন্তুষ্ট হইয়াছে, সে অতি ভাগ্যবান। আর যে এই বরকতময় মাস অবহেলায় কাটাইয়া দেয় তাহার পক্ষে উহা বড়ই আফসোসের কথা। সে বরকত, সৌভাগ্য ও পূণ্য হইতে বঞ্চিত থাকিবে। মানুষ যদি এই মাসটি পূণ্য ও সৎকারযে অতিবাহিত করে, তাহা হইলে এই সমস্ত পুণ্য ও সৎকর্ম সারাটি বৎসর তাহার উপকারে আসে।

তিনি আরও বলেন, জানা প্রয়োজন যে, পবিত্র রমজান মহা সম্মানিত মাস।এই মাসের যে কোন নফল ইবাদত, যেমন নামাজ, জিকির ছদকা, অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। কেউ যদি এই মাসে কোন রোজাদার ব্যক্তিকে খাদ্য পরিবেশন করে ও ইফতার করায় আল্লাহপাক তাহাকে ক্ষমা করিবেন এবং দোযখ হইতে নিস্কৃতি দান করিবেন এবং উক্ত রোজাদারের ছওয়াবও কমিবে না। এই মাসে যদি কেউ ভৃত্যদয়ের কাজ লাঘব করে, তবে তাহাকেও আল্লাহপাক ক্ষমা করিবেন এবং দোযখ অনল হইতে মুক্তি দান করিবেন।……..

“হযরত নবী করীম (সাঃ) এই মাসে বন্দীদেরকে মুক্ত করিয়া দিতেন এবং প্রার্থীদের সকল যাঞ্চা পূর্ণ করিতেন। এই মাসে ‍যদি কেউ নেক আমল করিবার সুযোগ লাভ করে তবে সে সারা বছরই নেক কাজ করিবার সুযোগ পাইবে। এই মাস কাহারো অশান্তিতে অতিবাহিত হইলে সারা বছরই তাহার অশান্তিতে কাটিবে। অতএব যথাসাধ্য প্রফুল্লচিত্তে শান্তির সংগে এই মাস অতিবাহিত করার চেষ্টায় থাক উচিৎ এবং এই মাসকে আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত বলিয়া সর্বান্তকরণে মানিয়া নেয়া উচিৎ; এই মহান মাসের প্রতি রাত্রিতে যে কত সহস্র দোযখীদেরকে দোযখাগ্নি হইতে রেহাই দেয়া হয়-তাহা বলাই বাহুল্য। এই মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খুলিয়া দেওয়া হয় এবং দোযখের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। শৃংখলাবদ্ধ করা হয় শয়তানকে। আর উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া হয় রহমতের সকল তোরণ। সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা এবং সেহেরীর সময়সীমার শেষ ভাগে সেহেরী সম্পন্ন করা হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) এর আদর্শ। তিনি (সাঃ) এই ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ করিয়াছেন। মনে হয় বিলম্বে সেহরী এবং অবিলম্বে ইফতার করার মধ্যে বান্দার অক্ষমতা ও মুখাপেক্ষিতার নিদর্শন ফুটিয়া উঠে-যাহা বন্দেগীর মাকাম (মাকমে আবদিয়াত) এর জন্য শোভনীয়।” (মকতুব নং ৪৫, ১ম খন্ড)

হে জাকেরান! সিয়াম সাধনার গুরুত্ব ও তাৎপর‌য সম্পর্কিত আলোচনা হইতে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছ যে, রমজান মহাপবিত্র ও মহা সম্মানিত মাস। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। সাধনার মাস। আত্মসংযমের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। নাফসের বন্ধন মুক্ত হওয়ার মাস।নাফসের উপর ‘খুদি’র শাসন প্রতিষ্ঠার মাস। দু‘আ কবুলিয়তের মাস। ছবরের মাস। তাকওয়ার মাস। কুরআন অবতরণের মাস। কুরআন তেলাওয়াতের মাস। সহানুভুতি ও সহমর্মিতার মাস। আত্মত্যাগের মাস। সৌহার্দ্য ও ভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাস। বরযখবাসীদের খুশীর মাস। বিজয়ের মাস। রমজান খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। পূণ্যের মাস। বলা যায়, রমজান পুণ্যের বসন্তকাল।

কাজেই হে জাকেরান! তোমরা ‍যদি খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করিতে চাও, স্বীয় নাফসের উপর রূহের শাসন প্রতিষ্ঠা করিতে চাও নাফসকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখিতে চাও, তবে যথার্থ সিয়াম সাধনায় রমজান মাস অতিবাহিত কর।অংগ-প্রত্যংগ সমূহকে পাপকর্ম হইতে এবং দেলকে পাপ চিন্তা হইতে বিরত রাখ। তাহা হইলে হাতের রোজা, পায়ের রোজা, চোখের রোজা, দেলের রোজা তথা সমস্ত সত্ত্বার রোজাসহ সর্বাঙ্গিন সুন্দর রোজা পালনে সক্ষম হইবে। আল্লাহপাক তোমাদিগকে দয়া করুন।আমীন!

গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তির আলোকে শাহসূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসহিত শরীফ, ২০তম খন্ড,  নসিহত নম্বর ১২৪ ।

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

রমজান অপরিসীম ফজিলতের মাস – শাহসূফী খাজা ফরিদপুরী (কুঃ) ছাহেব

আপডেট সময় : ০৬:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

রমজান অপরিসীম ফজিলতের মাসঃ

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে গউস পাক (রঃ) ছাহেব বলেন, “আল্লাহ এই বরকতময় মাসকে সৃষ্টি করিয়াছেন; ইহার বরকতের মাধ্যমে তোমাদিগকে পাপমুক্ত করিবার জন্য, তোমাদের দুস্কর্মের ক্ষতিপুরণ হওয়ার জন্য। এই সময় দুস্কৃতকারী ও কলহপ্রিয় মানুষ সৎকর্মশীল হয়। রিয়াযত ও অনুশীলনকারীগণ উচ্চ স্থান লাভ করেন। কেননা, ইহাতে আনাবাদী দেল আবাদ হয় এবং সর্ব প্রকার ক্ষতিপূরণ হয়। মসজিদগুলিতে অতিশয় জনসমাগম হয়। কুরআন তেলাওয়াতের দরুন অন্তরে স্বস্তি ও প্রশান্তি নামিয়া আসে। আল্লাহতায়ালা তাহার বান্দারে সমস্ত পদস্খলন ক্ষমা করিয়া দেন। যাহারা এই মাসে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, আল্লাহ তাহাদের অশ্রুবর্ষণের দরুণ দয়া করেন।”

রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব বলেন, “রমজানের মাস পরিপূর্ণভাবে কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত। এই হেদায়েতপূর্ণ মাসেই উহা নাযিল হইয়াছে। এই কারণেই এই মাসে সমস্ত পুণ্য ও সৌভাগ্যের সমাবেশ ঘটিয়াছে। যে কোন পুণ্য, বরকত বা সৌভাগ্য যাহার দ্বারা মানুষ সারা বৎসর উপকৃত হইতে পারে, উহা এই সমুদ্রের একটি বিন্দু পরিমান মাত্র। এই বরকতময় মাসে মানুষ পুণ্য কারযে আত্মনিয়োগ করিলে সারা বৎসর উহা কাজে আসিবে। আর যদি এই মাস অস্থিরতায় কাটে, তাহা হইলে সারাটি বৎসর তাহার অস্থিরতায় কটিবে। যে এই মাস পাইয়াছে ও ইহাতে সন্তুষ্ট হইয়াছে, সে অতি ভাগ্যবান। আর যে এই বরকতময় মাস অবহেলায় কাটাইয়া দেয় তাহার পক্ষে উহা বড়ই আফসোসের কথা। সে বরকত, সৌভাগ্য ও পূণ্য হইতে বঞ্চিত থাকিবে। মানুষ যদি এই মাসটি পূণ্য ও সৎকারযে অতিবাহিত করে, তাহা হইলে এই সমস্ত পুণ্য ও সৎকর্ম সারাটি বৎসর তাহার উপকারে আসে।

তিনি আরও বলেন, জানা প্রয়োজন যে, পবিত্র রমজান মহা সম্মানিত মাস।এই মাসের যে কোন নফল ইবাদত, যেমন নামাজ, জিকির ছদকা, অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। কেউ যদি এই মাসে কোন রোজাদার ব্যক্তিকে খাদ্য পরিবেশন করে ও ইফতার করায় আল্লাহপাক তাহাকে ক্ষমা করিবেন এবং দোযখ হইতে নিস্কৃতি দান করিবেন এবং উক্ত রোজাদারের ছওয়াবও কমিবে না। এই মাসে যদি কেউ ভৃত্যদয়ের কাজ লাঘব করে, তবে তাহাকেও আল্লাহপাক ক্ষমা করিবেন এবং দোযখ অনল হইতে মুক্তি দান করিবেন।……..

“হযরত নবী করীম (সাঃ) এই মাসে বন্দীদেরকে মুক্ত করিয়া দিতেন এবং প্রার্থীদের সকল যাঞ্চা পূর্ণ করিতেন। এই মাসে ‍যদি কেউ নেক আমল করিবার সুযোগ লাভ করে তবে সে সারা বছরই নেক কাজ করিবার সুযোগ পাইবে। এই মাস কাহারো অশান্তিতে অতিবাহিত হইলে সারা বছরই তাহার অশান্তিতে কাটিবে। অতএব যথাসাধ্য প্রফুল্লচিত্তে শান্তির সংগে এই মাস অতিবাহিত করার চেষ্টায় থাক উচিৎ এবং এই মাসকে আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত বলিয়া সর্বান্তকরণে মানিয়া নেয়া উচিৎ; এই মহান মাসের প্রতি রাত্রিতে যে কত সহস্র দোযখীদেরকে দোযখাগ্নি হইতে রেহাই দেয়া হয়-তাহা বলাই বাহুল্য। এই মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খুলিয়া দেওয়া হয় এবং দোযখের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। শৃংখলাবদ্ধ করা হয় শয়তানকে। আর উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া হয় রহমতের সকল তোরণ। সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা এবং সেহেরীর সময়সীমার শেষ ভাগে সেহেরী সম্পন্ন করা হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) এর আদর্শ। তিনি (সাঃ) এই ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ করিয়াছেন। মনে হয় বিলম্বে সেহরী এবং অবিলম্বে ইফতার করার মধ্যে বান্দার অক্ষমতা ও মুখাপেক্ষিতার নিদর্শন ফুটিয়া উঠে-যাহা বন্দেগীর মাকাম (মাকমে আবদিয়াত) এর জন্য শোভনীয়।” (মকতুব নং ৪৫, ১ম খন্ড)

হে জাকেরান! সিয়াম সাধনার গুরুত্ব ও তাৎপর‌য সম্পর্কিত আলোচনা হইতে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছ যে, রমজান মহাপবিত্র ও মহা সম্মানিত মাস। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। সাধনার মাস। আত্মসংযমের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। নাফসের বন্ধন মুক্ত হওয়ার মাস।নাফসের উপর ‘খুদি’র শাসন প্রতিষ্ঠার মাস। দু‘আ কবুলিয়তের মাস। ছবরের মাস। তাকওয়ার মাস। কুরআন অবতরণের মাস। কুরআন তেলাওয়াতের মাস। সহানুভুতি ও সহমর্মিতার মাস। আত্মত্যাগের মাস। সৌহার্দ্য ও ভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাস। বরযখবাসীদের খুশীর মাস। বিজয়ের মাস। রমজান খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। পূণ্যের মাস। বলা যায়, রমজান পুণ্যের বসন্তকাল।

কাজেই হে জাকেরান! তোমরা ‍যদি খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করিতে চাও, স্বীয় নাফসের উপর রূহের শাসন প্রতিষ্ঠা করিতে চাও নাফসকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখিতে চাও, তবে যথার্থ সিয়াম সাধনায় রমজান মাস অতিবাহিত কর।অংগ-প্রত্যংগ সমূহকে পাপকর্ম হইতে এবং দেলকে পাপ চিন্তা হইতে বিরত রাখ। তাহা হইলে হাতের রোজা, পায়ের রোজা, চোখের রোজা, দেলের রোজা তথা সমস্ত সত্ত্বার রোজাসহ সর্বাঙ্গিন সুন্দর রোজা পালনে সক্ষম হইবে। আল্লাহপাক তোমাদিগকে দয়া করুন।আমীন!

গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তির আলোকে শাহসূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসহিত শরীফ, ২০তম খন্ড,  নসিহত নম্বর ১২৪ ।

আরো পড়ুনঃ