রমজান তাকওয়ার মাস – খাজাবাবা ফরিদপুরী
- আপডেট সময় : ০৭:৩০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
- / ২৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
রমজানের আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হইল-ইহা মানুষকে তাকওয়ার গুণে গুণী করে; মুত্তাকী হিসাবে গড়িয়া তোলে। রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মূখ্য উদ্দেশ্যই নিজেকে মুত্তাকী হিসাবে গড়িয়া তোলা। আল্লাহপাক কুরআন মজিদে ফরমানঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হইয়াছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হইয়াছিল; যেন তোমরা মুত্তাকী হইতে পার।”(সূরা বাকারাঃ-১৮৩)
মুত্তাকী শব্দের উৎপত্তি ঘটিয়াছে ‘বেক্বায়াতুন’ বা “তাক্বউন” শব্দ হইতে। এই শব্দদ্বয়ের অর্থ হইল-ভীতিমিশ্রিত সাবধানতা বা সতর্কতা। আর ‘তাকওয়া’ অর্থ হইতেছে সাবধান বা সতর্ক হওয়া। অর্থাৎ সাবধানী চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকেই বলা হয় মুত্তাকী। তাকওয়া মানবদেহের এমন একটি উন্নত অবস্থা যাহা মানুষকে খোদাভীরু করিয়া তোলে এবং যাবতীয় পাপ ও অন্যায় হইতে নিজের অংগ প্রত্যংগ ও দেলকে বিরত রাখিতে সাহায্য করে। পাক কালামে ‘মুত্তাকী’র সংজ্ঞায় আল্লাহপাক বলেনঃ- ‘‘মোত্তাকী হইলেন তাহারা -‘‘যাহারা না দেখিয়া তাহাদের রবকে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত।” (সূরাঃ- আম্বিয়াঃ-৪৯).
“যাহারা সত্য আনিয়াছে এবং সত্যকে সত্য বলিয়া জানিয়া লইয়াছে-তাহারাই মুত্তাকী।” (সূরাঃ- যুমারঃ-৩৩).
বলা হইয়াছে-রমজানের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ফরজ করা হইয়াছে যাহাতে সিয়ামপালনকারী নিজেকে মুত্তাকী হিসাবে তৈরী করিতে সক্ষম হয়। ইহার তাৎপর্য কি? ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে চারটি তথা নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্জ আমলের সহিত সম্পর্কিত।
এই চারটির মধ্যে রোজার আমল একটু ভিন্ন প্রকৃতির। নামাজ, যাকাত বা হজ্জের আমলের মধ্যে এমন কিছু প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি আছে যাহাতে সহজেই অনুমেয় হয় যে আমলকারী বন্দেগীতে রত।
যেমন নামাজে উঠা-বসা বা রুকু, সেজদা, হজ্জে সফর কিংবা যাকাতে অর্থপ্রদান ইত্যাদি। কিন্তু রোজার মধ্যে এমন কোন আমল নাই -যাহা দেখিয়া অন্য কেহ বুঝিতে পার যে লোকটি রোজাদার। রোজাদারের সহিত আল্লাহপাকের একটি গোপন সম্পর্ক থাকে। রোজাদার দিনব্যাপী পানাহার থেকে বিরত থাকে। তাহার সম্মুখে উপাদেয় ও লোভনীয় খাদ্য সামগ্রী যতই থাকুক না কেন-সে তাহা আহার করে না। ক্ষুধায় প্রাণ ছটফট করে, তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিয়া যায় তথাপিও সে পানাহার করে না। সে যে লোক ভয়, সমাজের ভয় কিংবা রাস্ট্রীয় ভয়ে আহার করে না-তাহা নহে; বরং সে ভয় করে খোদাতায়ালাকে। খোদাতায়ালা যে তাহার সমুদয় কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করিতেছেন, রমজানের বরকতে সে তাহা উপলব্ধি করিতে পারে। তাই ক্ষুধার প্রচন্ড জ্বালা সত্ত্বেও গোপনেও সে পানাহার করিতে পারে না।
মাসব্যাপী উক্তরূপ অনুশীলনে রোজদারের দেলে খোদার ভয় দৃঢ়ভাবে স্থিতি লাভ করে এবং সে তাকওয়ার গুণে গুণী হয়। ধীরে ধীরে তাকওয়ার প্রভাবে রোজাদারের ভিতর অবস্থা পরিশোধিত হয়। তখন সে যাবতীয় পাপ হইতে স্বীয় অংগ-প্রত্যংগ ও দেলকে হেফাযতে রাখিতে পারে। তাহার মনে আর অনিষ্টকর চিন্তা প্রবেশ করিতে পারে না, তাহার চক্ষু আর নিষিদ্ধ দৃষ্টিপাত করিতে পারে না। জিহবা মিথ্যা কথা বলিতে পারে না, গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা করিতে পারে না। হাত দ্বারা কোন পাপ সংঘটিত হয় না, পা কোন অন্যায় পদক্ষেপ করে না।
সে মুত্তাকী বা খোদাভীরু ও পরহেজগারের আসন দখল করে। তেমন অবস্থাতে রোজাদারের রোজা কবুলিয়তের যোগ্যতা পায়। যে রোজাদারের রোজা তাহার মধ্যে তাকওয়ার গুণ পয়দা করিতে পারে না, তাহার রোজা রোজা মনে হইলেও হকিকতে অনশন মাত্র, সিয়াম নহে।
দয়াল নবী রাসূলে পাক (সাঃ) বলেনঃ”যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করিবে না; তাহার কেবল পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই।”
তিনি আরও বলেনঃ “অনেক সিয়াম পালনকারী এমন আছে, কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া যাহার ভাগ্যে অন্য কিছুই জোটে না।”
তাকওয়ার গুণ অর্জন করাই রোজা বা সিয়াম সাধনার মৌলিক উদ্দেশ্য। যিনি তাকওয়ার গুণে গুণী তিনিই মুত্তাকী। মুত্তাকীর পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেনঃ- “মুত্তাকীদের জন্য রহিয়াছে তোমার রবের কাছে আখেরাতের কল্যাণ।”(সূরাঃ- যূখরুফঃ- ৩৫)
গ্রন্থসূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহসূফী হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পবিত্র নসিহত শরীফ, ২০তম খন্ড, পৃষ্টা-১৭/১৮/১৯