ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহসূফি খাজা ফরিদপুরী (কুঃ) ছাহেবের নসিহতের আলোকে

লাইলাতুল কদর হইল কুরআন-অবতরণ রজনী

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২৩৯৮ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লাইলাতুল কদর হইল কুরআন-অবতরণ রজনীঃ লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য ও ফযিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন,
অর্থাৎ-“আমি ইহাকে (কুরআন শরীফ) নাযিল করিয়াছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর হইল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই রাত্রিতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাহাদের পালন কর্তার নির্দেশে। এটা নিরাপত্তা, যাহা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কদরঃ ১-৫) আল্লাহপাক অন্যত্র আরও বলেন,
‎‫إِنَّا أَنْزَلْنَهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَرَكَةٍ

‬‎
অর্থাৎ-“আমি ইহা [কুরআন মজীদ] এক কল্যাণপূর্ণ রজনীতে অবতীর্ণ করিয়াছি।” (সূরা দুখানঃ ৩)
সূরা কদরের প্রথম আয়াতে দেখা যায় যে, পবিত্র কুরআন মজীদ শবে কদরে নাযিল হইয়াছে এবং সূরা দুখানের উল্লিখিত আয়াতে কুরআন অবতীর্ণের রজনী কল্যাণপূর্ণ রাত বলিয়া আখ্যায়িত হইয়াছে। ইহাতে সহজেই বুঝা যায় যে, শবে কদরের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে আছে পাক কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন মজীদ নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহপাক উক্ত রজনীকে মহিমান্বিত করিয়াছেন।

কুরআন মজীদ আল্লাহর কালাম। ইহা মানব জাতির মুক্তির সনদ। পাক কুরআন বিশ্ব মানবের পথপ্রদর্শক। শান্তির বাণীবাহক। কুরআন মজীদে আছে সর্ববিধ সমস্যার সমাধান। আছে ব্যক্তি সমস্যার সমাধান; আছে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় সমস্যার সমাধান। তেমনি ইহাতে আছে আধ্যাত্মিক সমস্যার সমাধান। কুরআন শরীফ শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাতের সূক্ষ্ম তথ্যাবলীতে পূর্ণ।
কালামুল্লাহ শরীফের তিনটি অবস্থা আছে। যথাঃ
* পাক কালামের হকিকতগত অবস্থা,
* লওহে মাহফুজস্থিত অবস্থা এবং
* প্রকাশ্য অবস্থা।

কুরআন মজীদের উৎপত্তিস্থল সিফাতে হাকীকীর অন্যতম সিফাত- সিফাতে কালাম। সিফাতে কালাম হইতে উৎপন্ন কালামুল্লাহ শরীফের অবর্ণনীয় ও অবোধগম্য অবস্থাই হকিকতে কুরআন। সেই উচ্চ মাকামে আল্লাহর কালাম আরম্ভ ও শেষ বিমুক্ত, ভাষা ও অক্ষরবিহীন অবস্থায় বর্তমান। হকিকতে কুরআনের মাকাম হইতে ভাষাবিহীন অবস্থায় শবে কদরের রজনীতেই আল্লাহর কালাম অবতরণ করিতে করিতে স্থলজগতের অন্তর্ভুক্ত মানিক্য সদৃশ ফলক ‘লওহে মাহফুজে’ ভাষার আকৃতিতে স্থিত হয়। একই রজনীতে আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাইল (আঃ) লওহে মাহফুজস্থিত আয়াতপাক সমূহ রাসূলে করীম (সাঃ) এর নিকট লইয়া আসেন। তাই শবে কদরকে বলা হয় কুরআন অবতরণ-রজনী। প্রতি বৎসর লাইলাতুল কদর উদ্যাপনের মৌলিক উদ্দেশ্যই হইল কুরআন মজীদের জন্ম বার্ষিকী পালন কিংবা পাক কালামের অবতরণ- রজনী উৎযাপন। কালামুল্লাহ শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণেই শবে কদরের এত কদর বা আদর।

হযরত শাহ আবদুল হক দেহলবী (রঃ) ছাহেব এই প্রসংগে বলেন- “রমজানুল মোবারক মাস এই উম্মতের জন্য বিশেষ দয়ার মাস। আল্লাহতায়ালা এই উম্মতের জন্য সীমাহীন দয়া ও রহমত করিয়াছেন ও করিতেছেন। তাহার দান অফুরন্ত ও অসংখ্য, উহা গণনা করা কাহারও পক্ষে সম্ভব নহে। আমাদের আত্মা, আমাদের জীবন, আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের চক্ষু, নাসিকা, কর্ণ, হস্ত, পদ, মন, মগজ সবকিছুই আল্লাহর নেয়ামত-যদ্বারা আমরা উপকৃত। মাটি, বাতাস, পানি, শস্যকণা, ফল, ফুল-যাহা কিছু আমাদের প্রয়োজন ছিল সবকিছু আল্লাহ মাটির দস্তরখানে আমাদের জন্য বিছাইয়া দিয়াছেন। আবার বিশেষভাবে মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বানাইয়াছেন, তাহাদিগকে খলিফা বানাইয়াছেন, সমগ্র সৃষ্টির উপর প্রাধান্য দান করিয়াছেন, যাহাতে তাহারা উহা উপভোগ করিতে পারে।

ইহা বিশেষ দান-কিন্তু সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত হইল আল্লাহর সহিত কথোপকথন ও তাঁহার কালামের উদ্দেশ্য হওয়া। মানুষের জন্য আল্লাহর সর্ববৃহৎ দান এই যে, আল্লাহ মানুষকে তাহার সহিত কথোপকথনের মর্যাদা দান করিয়াছেন, তাহাদের উদ্দেশ্যে কালাম করিয়াছেন, তাহাদিগকে তাঁহার কালাম নাযিলের যোগ্য করিয়াছেন, উহা বুঝা ও বুঝানো ও উহার তেলাওয়াতের সুযোগ দান করিয়াছেন। তাহার প্রতিটি নেয়ামতই সীমাহীন; কিন্তু এই নেয়ামত যে, আল্লাহতায়ালা মহান নবী করীম (সাঃ) কে প্রেরণ করিয়া তাহার মাধ্যমে আমাদিগকে তাঁহার সহিত আলাপের মর্যাদা দান করিয়াছেন, আমাদের নিকট কুরআন মজীদ পাঠাইয়াছেন এবং আমাদিগকে এতটুকু যোগ্যতা দান করিয়াছেন যাহাতে আমরা উহা তেলাওয়াত করিতে পারি, উহা শ্রবণ করিতে পারি, উহা বুঝিতে পারি, উহার উপর আমল করিতে পারি এবং উহার উপর চিন্তা ভাবনা করিতে পারি। ইহা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। ইহার কোন তুলনা নাই। কুরআন মজীদ হইল আল্লাহর কালামে নাফসী। আল্লাহর জাত ও সিফাতের ভার বহন ও উহা বুঝা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বহির্ভূত ব্যাপার। আল্লাহ তাহার কালামে নাফসীকে এই কালামে লফজী [শাব্দিক কথন)-তে রূপান্তরিত করিয়া উহাকে সহজ করিয়া দিয়াছেন। আল্লাহপাক তাই বলেন, “আমরা অতঃপর উহা বুঝা ও নসিহত গ্রহণ করার জন্য উহাকে সহজ করিয়া দিয়াছি।”. ..(সূরা কামারঃ ১৭)

“হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রঃ) বলেন, কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের ন্যায় নেয়ামত ফেরেশতাগণও পান নাই। এই জন্য হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে যে, ফেরেশতাগণ নামাযের জামাতে শরীক হন যাহাতে কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করিতে পারেন। সূরা ফাতেহা শেষ হইলে ‘আমীন’ বলেন। যেখানে কুরআন মজীদ পাঠ করা হয় সেখানে ফেরেশতাগণ জমায়েত হইয়া আরশ পর্যন্ত নীচ হইতে উপরে পাখা ছড়াইয়া দেন, আশেপাশে ঘেরাও করিয়া রাখেন যাহাতে কুরআন মজীদ-এর অছিলায় যে রহমত নাযিল হয় তাহাতে ফেরেশতাগণও ভাগী হইতে পারেন ও উহা শ্রবণ করিতে পারেন। শাহ ছাহেব আরও বলেন, কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের ফযিলত ও মর্যাদা কেবলমাত্র এই উম্মতই লাভ করিয়াছে। পূর্ববর্তী উম্মতকেও আল্লাহতায়ালা আহকাম দান করিয়াছেন, কিন্তু তাহাদিগকে কিতাব দান করিয়াছেন-কালাম দান করেন নাই।

যেমন হযরত মূসা (আঃ)-কে তওরাত শরীফ দান করিয়াছেন। উহা লিপিবদ্ধ জিনিস ছিল, উহা কালাম বলা যায় না। কিতাব ভিন্ন জিনিস এবং কালাম ভিন্ন জিনিস। কালাম মুতাকাল্লিম [কালামকর্তা] উচ্চারণ করে ও উহাতে আওয়াজের সৃষ্টি হয়। কাহাকেও নিজের কুশলাদি লিখিয়া জানাইলে উহাকে কিতাব বলা যাইবে, আর যদি টেলিফোনে কথাবার্তা বলা হয় বা সামনা-সামনী সে কর্ণে শ্রবণ করে, উহাকে বলা হয় কালাম। কুরআন মজীদ হইল আল্লাহর কালাম। উহার শব্দ ও অর্থ-উভয়ই আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে। আল্লাহতায়ালা উহাকে আমাদের জন্য নিজে বুঝা ও অন্যকে বুঝাইবার মাধ্যম করিয়া দিয়াছেন ও উহার তেলাওয়াত আমাদের জন্য সহজ করিয়া দিয়াছেন।”
উপরের আলোচনা হইতে কুরআন মজীদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। এই মহান কুরআন মজীদ নাযিল শুরু হয় লাইলাতুল কদরে। তাই-ই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের এত গুরুত্ব।

 

আরো পড়ুনঃ 

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

শাহসূফি খাজা ফরিদপুরী (কুঃ) ছাহেবের নসিহতের আলোকে

লাইলাতুল কদর হইল কুরআন-অবতরণ রজনী

আপডেট সময় : ১১:৫৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

লাইলাতুল কদর হইল কুরআন-অবতরণ রজনীঃ লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য ও ফযিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন,
অর্থাৎ-“আমি ইহাকে (কুরআন শরীফ) নাযিল করিয়াছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর হইল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই রাত্রিতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাহাদের পালন কর্তার নির্দেশে। এটা নিরাপত্তা, যাহা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কদরঃ ১-৫) আল্লাহপাক অন্যত্র আরও বলেন,
‎‫إِنَّا أَنْزَلْنَهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَرَكَةٍ

‬‎
অর্থাৎ-“আমি ইহা [কুরআন মজীদ] এক কল্যাণপূর্ণ রজনীতে অবতীর্ণ করিয়াছি।” (সূরা দুখানঃ ৩)
সূরা কদরের প্রথম আয়াতে দেখা যায় যে, পবিত্র কুরআন মজীদ শবে কদরে নাযিল হইয়াছে এবং সূরা দুখানের উল্লিখিত আয়াতে কুরআন অবতীর্ণের রজনী কল্যাণপূর্ণ রাত বলিয়া আখ্যায়িত হইয়াছে। ইহাতে সহজেই বুঝা যায় যে, শবে কদরের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে আছে পাক কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন মজীদ নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহপাক উক্ত রজনীকে মহিমান্বিত করিয়াছেন।

কুরআন মজীদ আল্লাহর কালাম। ইহা মানব জাতির মুক্তির সনদ। পাক কুরআন বিশ্ব মানবের পথপ্রদর্শক। শান্তির বাণীবাহক। কুরআন মজীদে আছে সর্ববিধ সমস্যার সমাধান। আছে ব্যক্তি সমস্যার সমাধান; আছে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় সমস্যার সমাধান। তেমনি ইহাতে আছে আধ্যাত্মিক সমস্যার সমাধান। কুরআন শরীফ শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাতের সূক্ষ্ম তথ্যাবলীতে পূর্ণ।
কালামুল্লাহ শরীফের তিনটি অবস্থা আছে। যথাঃ
* পাক কালামের হকিকতগত অবস্থা,
* লওহে মাহফুজস্থিত অবস্থা এবং
* প্রকাশ্য অবস্থা।

কুরআন মজীদের উৎপত্তিস্থল সিফাতে হাকীকীর অন্যতম সিফাত- সিফাতে কালাম। সিফাতে কালাম হইতে উৎপন্ন কালামুল্লাহ শরীফের অবর্ণনীয় ও অবোধগম্য অবস্থাই হকিকতে কুরআন। সেই উচ্চ মাকামে আল্লাহর কালাম আরম্ভ ও শেষ বিমুক্ত, ভাষা ও অক্ষরবিহীন অবস্থায় বর্তমান। হকিকতে কুরআনের মাকাম হইতে ভাষাবিহীন অবস্থায় শবে কদরের রজনীতেই আল্লাহর কালাম অবতরণ করিতে করিতে স্থলজগতের অন্তর্ভুক্ত মানিক্য সদৃশ ফলক ‘লওহে মাহফুজে’ ভাষার আকৃতিতে স্থিত হয়। একই রজনীতে আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাইল (আঃ) লওহে মাহফুজস্থিত আয়াতপাক সমূহ রাসূলে করীম (সাঃ) এর নিকট লইয়া আসেন। তাই শবে কদরকে বলা হয় কুরআন অবতরণ-রজনী। প্রতি বৎসর লাইলাতুল কদর উদ্যাপনের মৌলিক উদ্দেশ্যই হইল কুরআন মজীদের জন্ম বার্ষিকী পালন কিংবা পাক কালামের অবতরণ- রজনী উৎযাপন। কালামুল্লাহ শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণেই শবে কদরের এত কদর বা আদর।

হযরত শাহ আবদুল হক দেহলবী (রঃ) ছাহেব এই প্রসংগে বলেন- “রমজানুল মোবারক মাস এই উম্মতের জন্য বিশেষ দয়ার মাস। আল্লাহতায়ালা এই উম্মতের জন্য সীমাহীন দয়া ও রহমত করিয়াছেন ও করিতেছেন। তাহার দান অফুরন্ত ও অসংখ্য, উহা গণনা করা কাহারও পক্ষে সম্ভব নহে। আমাদের আত্মা, আমাদের জীবন, আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের চক্ষু, নাসিকা, কর্ণ, হস্ত, পদ, মন, মগজ সবকিছুই আল্লাহর নেয়ামত-যদ্বারা আমরা উপকৃত। মাটি, বাতাস, পানি, শস্যকণা, ফল, ফুল-যাহা কিছু আমাদের প্রয়োজন ছিল সবকিছু আল্লাহ মাটির দস্তরখানে আমাদের জন্য বিছাইয়া দিয়াছেন। আবার বিশেষভাবে মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বানাইয়াছেন, তাহাদিগকে খলিফা বানাইয়াছেন, সমগ্র সৃষ্টির উপর প্রাধান্য দান করিয়াছেন, যাহাতে তাহারা উহা উপভোগ করিতে পারে।

ইহা বিশেষ দান-কিন্তু সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত হইল আল্লাহর সহিত কথোপকথন ও তাঁহার কালামের উদ্দেশ্য হওয়া। মানুষের জন্য আল্লাহর সর্ববৃহৎ দান এই যে, আল্লাহ মানুষকে তাহার সহিত কথোপকথনের মর্যাদা দান করিয়াছেন, তাহাদের উদ্দেশ্যে কালাম করিয়াছেন, তাহাদিগকে তাঁহার কালাম নাযিলের যোগ্য করিয়াছেন, উহা বুঝা ও বুঝানো ও উহার তেলাওয়াতের সুযোগ দান করিয়াছেন। তাহার প্রতিটি নেয়ামতই সীমাহীন; কিন্তু এই নেয়ামত যে, আল্লাহতায়ালা মহান নবী করীম (সাঃ) কে প্রেরণ করিয়া তাহার মাধ্যমে আমাদিগকে তাঁহার সহিত আলাপের মর্যাদা দান করিয়াছেন, আমাদের নিকট কুরআন মজীদ পাঠাইয়াছেন এবং আমাদিগকে এতটুকু যোগ্যতা দান করিয়াছেন যাহাতে আমরা উহা তেলাওয়াত করিতে পারি, উহা শ্রবণ করিতে পারি, উহা বুঝিতে পারি, উহার উপর আমল করিতে পারি এবং উহার উপর চিন্তা ভাবনা করিতে পারি। ইহা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। ইহার কোন তুলনা নাই। কুরআন মজীদ হইল আল্লাহর কালামে নাফসী। আল্লাহর জাত ও সিফাতের ভার বহন ও উহা বুঝা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বহির্ভূত ব্যাপার। আল্লাহ তাহার কালামে নাফসীকে এই কালামে লফজী [শাব্দিক কথন)-তে রূপান্তরিত করিয়া উহাকে সহজ করিয়া দিয়াছেন। আল্লাহপাক তাই বলেন, “আমরা অতঃপর উহা বুঝা ও নসিহত গ্রহণ করার জন্য উহাকে সহজ করিয়া দিয়াছি।”. ..(সূরা কামারঃ ১৭)

“হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রঃ) বলেন, কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের ন্যায় নেয়ামত ফেরেশতাগণও পান নাই। এই জন্য হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে যে, ফেরেশতাগণ নামাযের জামাতে শরীক হন যাহাতে কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করিতে পারেন। সূরা ফাতেহা শেষ হইলে ‘আমীন’ বলেন। যেখানে কুরআন মজীদ পাঠ করা হয় সেখানে ফেরেশতাগণ জমায়েত হইয়া আরশ পর্যন্ত নীচ হইতে উপরে পাখা ছড়াইয়া দেন, আশেপাশে ঘেরাও করিয়া রাখেন যাহাতে কুরআন মজীদ-এর অছিলায় যে রহমত নাযিল হয় তাহাতে ফেরেশতাগণও ভাগী হইতে পারেন ও উহা শ্রবণ করিতে পারেন। শাহ ছাহেব আরও বলেন, কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের ফযিলত ও মর্যাদা কেবলমাত্র এই উম্মতই লাভ করিয়াছে। পূর্ববর্তী উম্মতকেও আল্লাহতায়ালা আহকাম দান করিয়াছেন, কিন্তু তাহাদিগকে কিতাব দান করিয়াছেন-কালাম দান করেন নাই।

যেমন হযরত মূসা (আঃ)-কে তওরাত শরীফ দান করিয়াছেন। উহা লিপিবদ্ধ জিনিস ছিল, উহা কালাম বলা যায় না। কিতাব ভিন্ন জিনিস এবং কালাম ভিন্ন জিনিস। কালাম মুতাকাল্লিম [কালামকর্তা] উচ্চারণ করে ও উহাতে আওয়াজের সৃষ্টি হয়। কাহাকেও নিজের কুশলাদি লিখিয়া জানাইলে উহাকে কিতাব বলা যাইবে, আর যদি টেলিফোনে কথাবার্তা বলা হয় বা সামনা-সামনী সে কর্ণে শ্রবণ করে, উহাকে বলা হয় কালাম। কুরআন মজীদ হইল আল্লাহর কালাম। উহার শব্দ ও অর্থ-উভয়ই আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে। আল্লাহতায়ালা উহাকে আমাদের জন্য নিজে বুঝা ও অন্যকে বুঝাইবার মাধ্যম করিয়া দিয়াছেন ও উহার তেলাওয়াত আমাদের জন্য সহজ করিয়া দিয়াছেন।”
উপরের আলোচনা হইতে কুরআন মজীদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। এই মহান কুরআন মজীদ নাযিল শুরু হয় লাইলাতুল কদরে। তাই-ই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের এত গুরুত্ব।

 

আরো পড়ুনঃ