ইসলামে ক্ষুধা দর্শন
- আপডেট সময় : ০৩:৫৯:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪
- / ২৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
নিজের বদঅভ্যাস গুলো পরিবর্তন করার জন্য ক্ষুধার্ত থাকা অনেক সহায়ক। নাফসকে নিয়ন্ত্রন করার অন্যতম উপায় ক্ষুধার্ত থাকা। একজন মানুষ যখন ক্ষুধার্ত পেটে থাকে রঙ্গিন দুনিয়া তাকে আর্কষন করে না। ক্ষুধার যন্ত্রনা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, আপনি আল্লাহতায়ালার সামনে কতটা দুর্বল এবং অভাবী। ভরা পেটে হৃদয়ে অমনোযোগীতা সৃষ্টি হয় কিন্তু ক্ষুধার মাধ্যমে হৃদয় জেগে ওঠে। তৃপ্তি যেমন দেহকে ভারী করে তোলে তেমনি ক্ষুধা আত্নাকে আলোকিত করে। যার জন্য যুগে যুগে মহামানবগণ কখনই পেট পুরে আহার করেন নি।
শাহসূফী হযরত মাওলানা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান, “আমার পীর কেবলাজান (খাজা এনায়েতপুরী রহ.) পেট ভরিয়া কখনও আমাকে খাইতে দেন নাই। অর্ধ চামচ ভাত, তদসংগে কিঞ্চিত তরকারী-ইহাই ছিল আমার খানা। কখনও দিনে একবার, কখনও বা দিনে দুইবার।” অতঃপর পীর কেবলাজান আমাকে বলিলেন, “আটদিন অন্তর অন্তর আহার করিবে।”
হযরত রাসূল (সাঃ) যখন মেরাজে গিয়ে জান্নাত ভ্রমন করেন তখন মহান খোদাতায়ালার সাথে নিবিড় আলাপ হয় তখন আল্লাহপাক বললেনঃ হে আমার বন্ধু! আপনি কি জানেন আমার বান্দা কখন আমার নিকটবর্তী হয়?
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ জানি না। আপনি বলুন। আল্লাহপাক বললেনঃ যখন সে ক্ষুধার্ত থাকে অথবা সেজদায় থাকে। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ! ক্ষুধার্ত থাকার ফলাফল কি? আল্লাহপাক বললেনঃ ” প্রজ্ঞা, অন্তরের সুরক্ষা, আমার নিকটবর্তী হওয়া, স্বল্প দুঃখ, মানুষের উপর বোঝা কমা, সত্য বলা।”
আত্নশুদ্ধি বা নাফসের করাল গ্রাস থেকে বাঁচার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের একটি হলো “ক্ষুধার্ত” থাকা।
হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, “যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়তে ভুখা থাকবে সে কিয়ামতের কঠিন বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।” একদিন মা আয়েশা (রাঃ) কে রাসূল (সাঃ) বললেন, “হে আয়েশা! বেহেশতের দরজা অবিরাম নাড়া দিতে থাকো। তখন মা আয়েশা (রাঃ) জিসাগা করলেন, ইয়া রাসূল্লাহ (সাঃ)! বেহেশতের দরজা কিভাবে নাড়া দেব? তখন আল্লাহ রাসূল (সাঃ) ফরমাইলেন,” ক্ষুধা ও তৃষ্ঞা দ্বারা।”
হযরত রাসূল (সাঃ) আরো ফরমান, ” তোমরা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ঞার্ত থেকে নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করো। কেননা তার সওয়াব কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সমান।”
হযরত মা আয়েশা (রাঃ) ফরমান, ” হযরত রাসূল (সাঃ) কখনও পেট ভরে আহার করেন নি। আমি কোন কোন সময় তিঁনার ক্ষুধার অবস্থা দেখে কাঁদতে শুরু করতাম। আমার হাত তিঁনার পেটে বুলাতাম বলতাম, আমার প্রান আপনার প্রতি উৎসর্গ, দুনিয়া থেকে এতটুকুই কবুল করুন যা শারিরিক শক্তি বহাল রাখার জন্য প্রয়োজন হয়। উত্তরে তিঁনি বলতেন, আয়েশা! দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক, আমার ভাই স্থিরপ্রতিজ্ঞ রাসূলগণ তো এর চেয়েও কঠিনতম অবস্থায় ধৈর্য ধারন করতেন।” তাই শাহসূফী হযরত মাওলানা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলতেন, “বাবা! একজন খানা খান না আরেকজন ভোগবিলাসী, তাদের কি বন্ধুত্ব হতে পারে?”
রাসূল (সাঃ) ক্ষুধা ও দারিদ্রতাকে ঐশ্বর্যের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। মা ফাতেমা (রাঃ) ক্ষুধার্ত থাকতে থাকতে তিঁনার চেহারা মুবারক হলুদ হয়ে যেতো।
ইমাম হাসান (রাঃ) ফরমান, ” একদিন আমরা সবার জন্য এক বেলা পর আহারের সুযোগ হল। আব্বাজান, আমি, ইমাম হুসাইন (রাঃ) খেয়েছেন। আম্মাজান হযরত ফাতেমা এখনই খাবেন এমন সময় দরজায় এক ভিক্ষুক এসে এভাবে ভিক্ষা করল যে, রাসূল তনয়ার প্রতি সালাম, আমি দু’বেলার উপোস, আমাকে খাবার দিন। এটা শুনে আম্মাজান আমাকে বললেন, যাও, এই খাবার ওই ভিক্ষুককে দিয়ে এসো, আমি তো একবেলার অভুক্ত আর সে দু’বেলাই খায়নি।”
তাই আমার হযরত পীর কেবলাজান বলতেন,
” দিনে কম খাও যদিও তুমি রোজাদার নও, উদরপূর্ণ করিয়া খাইওনা কারন তুমি চতুষ্পদ জন্তু নও।”
বর্তমানে যে মহামারি চলছে তারপর হয়ত মহামারীর কারনে আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে।
আসুন খাবার অপচয় রোধ করি। অভুক্তকে খাবার দেই। আমার কেবলাজানের পবিত্র নির্দেশনা,
” অল্প আহার, অল্প নিদ্রা ও অল্প কথার অভ্যাস করা একান্তু আবশ্যক।” তিঁনার পবিত্র নির্দেশনা মোতাবেক নিজকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।