ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব

- আপডেট সময় : ০৮:১৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
- / ২৩৯৮ বার পড়া হয়েছে
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব
বিবাহ (নিকাহ) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের শৃঙ্খলা ও শুদ্ধতার জন্যই নয়, বরং আখিরাতের সফলতার জন্যও অপরিহার্য। এটি মানব সমাজের ভিত্তি এবং পারিবারিক জীবনের মূল স্তম্ভ। কুরআন ও হাদিসে বিবাহের ব্যাপক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ।
বিবাহের সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য
ইসলামে বিবাহ হল একজন পুরুষ ও নারীর বৈধ বন্ধন, যার মাধ্যমে তারা একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হয় এবং ইসলামী বিধান অনুসারে জীবনযাপন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো:
1. নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করা – বিবাহ মানুষকে অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে রাখে এবং চরিত্রের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে।
2. পারিবারিক বন্ধন গঠন করা – এটি ভালোবাসা, সম্মান, এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সাহায্য করে।
3. সন্তান-সন্ততির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা – বিবাহের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম বৈধ হয় এবং তাদের জন্য সঠিক পরিচর্যা ও শিক্ষা নিশ্চিত হয়।
4. আল্লাহর নির্দেশ পালন করা – বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং অনেক ক্ষেত্রে ফরজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কুরআন ও হাদিসে বিবাহের গুরুত্ব
কুরআনে বিবাহের নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সম্পদশালী করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
(সূরা নূর: ৩২)
আরো পড়ুন:সুফিবাদ কী ও কেন
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে বিবাহ শুধুমাত্র একটি ঐচ্ছিক সামাজিক প্রথা নয়, বরং এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।
হাদিসে বিবাহের গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কারণ এটি দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪০০)
এই হাদিসে নবী করিম (সা.) বিবাহকে যুবকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এটি নৈতিকতা ও আত্মসংযম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিবাহ ইসলামের অর্ধেক ইমান
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি বিবাহ করল, সে যেন তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করল। অতএব, সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।” (বায়হাকি, শু’আবুল ঈমান: ৫৪৮৬)
এখানে বোঝানো হয়েছে যে, বিবাহ একজন মুসলিমের জন্য ইমানকে পূর্ণতা দান করে এবং তাকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে।
বিবাহের মাধ্যমে সমাজের উপকারিতা
১. নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা – বিবাহ মানুষকে অবৈধ সম্পর্ক থেকে রক্ষা করে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা কমায়।
২. পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি – স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে পারিবারিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
3. সন্তানদের উত্তম লালন-পালন – বিবাহিত পরিবারে সন্তানরা সঠিক ইসলামি শিক্ষা পায় এবং নৈতিকভাবে সুসংগঠিত হয়।
৪. মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা – বিবাহ একজন ব্যক্তিকে মানসিক প্রশান্তি ও জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামে বিবাহ শুধুমাত্র একটি সামাজিক বা পারিবারিক বন্ধন নয়; এটি একটি ইবাদত, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করে। এটি মুসলমানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুসারে পালন করা উচিত। বিবাহের মাধ্যমে মানুষ নৈতিকতার উচ্চশিখরে পৌঁছতে পারে এবং পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে সফলতা লাভ করতে পারে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সুস্থ ও পূণ্যময় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।