ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুফিবাদ কী ও কেন

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪০৯ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্রষ্টাতে পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তাঁর সৃষ্টিজগতের জন্য ভালবাসাও অনুরূপ। সুফিবাদ বা তাসাওউফ বা ত্বরিকত ইসলামের প্রাণ। শরিয়ত ইসলামের দেহ বা দেহাবরণ, অনুষ্ঠান, অনুশাসন, আরাধনা ও উপাসনা।
ইসলামের বিশ্বব্যাপী জয় ও জনপ্রিয়তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুফিবাদের ভূমিকা অত্যুজ্জল। এর প্রকৃত দাবীদার মহান সুফিগণ, দরবেশগণ, আল্লাহ্র মহান ওলীগণ। কেননা ইসলাম ধর্মের বিকাশে নানা প্রতিকূল অবস্থায় ভীষণ ও ভয়াবহ, বীভৎসপরিবেশে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ইসলামের যে প্রথম প্রচার ও প্রসার তা সুফিগণেরই অবদান এবং জীবন মরণ দুর্জয় সাধনায় আল্লাহ প্রাপ্তির মহা উদ্দেশ্যে নিশীথ রাতের নির্জন ইবাদতে তাদের যেমন সীমা-পরিসীমা ছিল না, ইসলাম প্রচারেও তেমনই সাধনাতেও কোন ক্লান্তি ছিলনা। এক্ষেত্রেও তারা ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী সাধক, ন্যায়ের সৈনিক-মুজাহিদ ও সফলকাম সিদ্ধ পুরুষ। আবার অন্যদিকে ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে সুফিকুল যেখানেই মানবতা লাঞ্ছিত হয়েছে, মানবতার পতন ঘটেছে, সেখানেই মানুষ মাত্রকেই ভাই বলে তাদের হয়েছেন জীবনমরণ পণ করে। সত্য ও সুন্দরের পথে সংসারের কঠিন মাটিতে পবিত্র কোরআনের আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধ বণিতার মাঝে প্রেম-প্রীতি ভালবাসা ও মনুষত্বের অনির্বাণ মশাল জ্বালিয়ে দেন এই মহান সুফিসাধকগণ। যা ইসলামের ইতিহাসে চির অনির্বাণ। এখানেই তারা মহাপুরুষ। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর আহ্বানে এবং নির্মল মনুষ্যত্বের জয়গানে পবিত্র কোরআন তাদের শ্রম সাধনা এবং মানমর্যাদার স¦ীকৃতি দিল। এরূপ স্বীকৃতি মানব সমাজের কোন ধর্মের কোন গোষ্ঠীর ভাগ্যেই আর জোটেনি। বিশ্ববাসীর কাছে কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরতে ইসলামের নির্ভেজাল প্রচার ও নিরঙ্কুশ প্রসারেও এর মুল বাণী ও তা অমিত প্রাণশক্তিকে জাগ্রত করতে, দুর্গত মানবতার উদ্ধারকল্পে, আপসহীন চিত্তে মনুষ্যত্বের পতাকা উত্তোলন করতে বিশ্বমানবতা আপন করতে সকল প্রকার সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য পরিত্যাগ করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সবাইকে ভাইবোন বলে হাতে হাত রেখে বিশ্বভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করতে লা-শরীক এক আল্লাহ প্রেমে তাঁর প্রশংসা ও আশ্রয় পেতে জীর্ণমানবতার ময়দানে মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও অখন্ড মানব সমাজের চির অবহেলিত,গভীর বেদনাহত মানুষগুলির বুকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠায় সুফি সমাজের যে নিরন্তর উল্লেখযোগ্য অবদান, যে চিরস্মরণীয় লোমহর্ষক কাহিনী ও কথা, যে মৃত্যুহীন জীবনগাথা ইসলামের সারা চৌহদ্দী ও সর্বকালীন ইতিহাসে তা অপেক্ষা অধিক গুরুতর ও উল্লেখযোগ্য আর কিছু নাই। ইসলামের মহান সুফিকুল আজও সারা বিশ্বের মহাবিস্ময়। মানুষের চারিত্রিক, মানবিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন তাদের বাণীর ভা-ার আজও অব্যয় ও অক্ষয়।

সুফি শব্দের উৎপত্তি

সুফি শব্দের উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে । প্রতিটি মতের পিছনে কিছু না কিছু দলিল রয়েছে । আমরা এখানে কয়েকটি উল্লেখ করছি। (১) সাউফ অর্থ পশম (২) সাফা অর্থ পবিত্র (৩) সফ অর্থ সারি, লাইন বা শ্রেণী (৪) সুফিয়া (ঝড়ঢ়যরধ) অর্থ জ্ঞান।
১। সুফি শব্দের উৎপত্তি সাউফ বা পশম হতে । এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ধারণা অধিকাংশ সুফি তাঁদের দারিদ্র্যবশত পশম পরিধান করতেন তাই তাদের মতে সুফি শব্দটি “সাউফ” হতে উদ্ভুত।
২। সাফা শব্দ হতেও সুফি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে মর্মে অনেকে মনে করেন, কেননা সাফা শব্দের অর্থ সাফ তথা পবিত্রতা বা পবিত্রতা লাভ করা । সুফিগণের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহকে লাভ করা এবং আল্লাহকে লাভ করার প্রথম ও প্রধান কাজই হলো আপন সত্তাকে বা অন্তরাত্মাকে পবিত্র করা। তাই সাফা শব্দ হতে সুফি শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে মর্মে মনে করা হয়।
৩। সফ শব্দ হতেও সুফি শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে বলে যারা মনে করেন, তারা বলেন মহানবী (দঃ) এর সাথে একদল মানুষ সদাই নবীজীর (দঃ) জন্য প্রস্তুুত থাকতেন , তাঁরা মসজিদে নববীতেই থাকতেন , তারা ঘর- সংসার করেন নি, তাঁরা ছিলেন রাসূলে নিবেদিত প্রাণ, এদের বলা হতো আসহাবে সুফফা। সুফিগণ এঁেদর ভক্ত বা অনুসারী হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করতেন বিধায় সুফী শব্দটি সফ শব্দ হতে উদ্ভুত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
৪। সুফিয়া বা সুইউফ এটি গ্রীক শব্দ এর অর্থ প্রভুর বা ঈশ্বরের জ্ঞান । সুফিগন সব সময় স্রষ্টার সাধনায় মগ্ন থাকতেন, তাঁকে জানতে চাইতেন, তাঁর মহিমা বুঝতে চাইতেন , তাঁর আদি রহস্য উৎঘাটন করতেন, প্রসঙ্গত বলা যায় যে, এই ঝড়ঢ়যরধ শব্দের সাথে চযরষড়ং শব্দটি অর্থ প্রেম যোগ করে চযরষড়ং+ঝড়ঢ়যরধ= চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ শব্দটি তৈরী করা হয়েছে যার অর্থ জ্ঞান প্রেম বা জ্ঞানপ্রেমী । মহাত্মা প্ল্যাটো (৪২৮/৪২৭-৩৪৮/৩৪৭ খৃঃ পূঃ) গ্রীক দার্শনিক/রাজা চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ করহম এর যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তাতে তিনি যে একজন ঐশ্বরিক জ্ঞান সম্পন্ন রাজা হবেন তাই বর্ণনা করেছেন। তাই আমরা ধারণা করতে পারি প্রকৃতপক্ষে গ্রীক ভাষার চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ শব্দটির অর্থ হলো ঐশ্বরিক জ্ঞানে জ্ঞানী। কিন্তু পরবর্তীত ইংরেজ চিন্তাবিদগণ এই শব্দ আংশিক পরিবর্তন করে চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ অর্থ জ্ঞানের অনান্য সকল শাখাকে এই শব্দের অর্থ হিসাবে নির্বাচন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রী হিসাবে উড়পঃড়ৎ ড়ভ চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য বাঙালি চিন্তানায়কগণ এই শব্দের বাংলা অর্থ হিসেবে দার্শনিক শব্দটি নির্ধারণ করে এর মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখে প্রকৃত সত্য জানার আগ্রহকে বুঝিয়েছেন। অথবা জ্ঞান চক্ষু দিয়ে প্রকৃত সত্যকে যিনি দেখেন তিনিই দার্শনিক।

 

সুফিবাদের পরিভাষাগত ব্যাখ্যা

১. আত্ম তত্ত¡, আত্মশুদ্ধি, আত্ম সংশোধন, আত্ম সংযম ও আত্ম সাধনার নাম সুফিবাদ।
২. রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী সুফি ত্বরিকাসমূহের প্রতিষ্ঠাতা হযরত আলী (আঃ) বলেন, যে নিজেকে চিনেছে, অনন্তর সে তার প্রভুকে চিনেছে, এই চিনা জানার নাম সুফিবাদ।
৩. সুফিবাদ একমাত্র পথ ও পন্থা। যার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত আদর্শ, শেষ লক্ষ্য ও আল্লাহ্্র জ্ঞানে ও মহিমায় পৌঁছাতে পারে।
৪. আল্লাহ্্র স্বভাবে আল্লাহ্্র প্রভাবে পরিচালিত হওয়ার নাম ‘সুফিবাদ’।
৫. সারা সৃষ্টিজগত যখন কোন মানুষের চোখে আল্লাহ্কে জানার ও বোঝার জন্য পাঠক্রম বা ঝুষষধনঁং হয়ে উঠে, তখন তা সুফিবাদ।
একজন সুফি পূর্ণ মানব (চবৎভবপঃ গধহ) যখন পূর্ণ মানবে পরিণত হন তখন তিনি ভ্রমণ করেন আল্লাহ্্র সাথেও আল্লাহ্্র মধ্যেই। তিনি আরোহন করেন স্বর্গে। আবার অবতরণ করেন মর্ত্যে তবে আল্লাহ্্র সাথে। এখানেই একজন পূর্ণ মানব বা সুফির সার্থকতা। মহাকবি ইকবাল বলেন, ঋষবব ঃড় এড়ফ ধহফ ঝঃৎবহমঃযবহবফ নু এড়ফ ধহফ ৎবঃঁৎহ ঃড় ঃযুংবষভ. এই সময় সুফিগণ আল্লাহ্্তেই বিলীন থাকেন। এটি একটি মহাক্ষণ। যে ক্ষণটিতে আমরা ইসলামের প্রথম যুদ্ধে বদর প্রান্তে মহা নবীজীর (সাঃ) মধ্যে লক্ষ্য করলাম। “বদর যুদ্ধে তোমরা তাদের বধ করোনি, আল্লাহ্ই তাদের তা করেছেন এবং তুমি যখন (কাকঁর) নিক্ষেপ করেছিলে, তুমি নিক্ষেপ করোনি, আল্লাহ্্ নিক্ষেপ করেছিলেন (সূরা আনফল-৮: ১৭)।

“যাহারা তোমার হাতে বায়আত করে তাহারা তো আল্লাহ্্র হাতে বায়আত করে। আল্লাহ্্র হাত তাহাদের হাতের উপর, অতঃপর যে উহা ভঙ্গ করে, উহা ভঙ্গ করিবার পরিণাম তাহারই এবং যে আল্লাহ্্র সহিত অঙ্গীকারপূর্ণ করে তিনি অব্যশই তাহাকে মহা পুরুস্কার দিবেন (সূরা ফাতাহ্ ২:১০)।

এই পর্যায়ে সুফিবর হযরত মনসুর হাল্লাজ বলেছেন, ‘আনাল হক’ আমিই মহা সত্য। আরো অনেক সুফ্ িএরূপ কথা বলেছেন। অথচ আব্বাসীয় খলিফা মুক্ততাদির বিল্লাহ্্ (৯০৮-৯৩২) এর আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কথিত এক শ্রেণির আলেম এক শ্রেণির ফতোয়া অনুযায়ী হযরত মনসুর হাল্লাজকে (রহঃ) ধর্মদ্রোহী হিসেবে অকথ্য নির্যাতনপূর্বক শহীদ করা হয় (৯২২ খৃঃ)।

প্রসঙ্গত বলা যায় যে, এভাবে উমাইয়া আব্বাসীয় শহীদ রাজ বংশের খিলাফতের তল্পীবাহক এক শ্রেণীর আলেম পবিত্র কুরআনের বিকৃত ব্যাখ্যা, জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাসের মাধ্যমে ইসলামের নামে এক ধরনের শরিয়ত প্রণয়ন করেন। যা আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে চালু আছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ ইসলামকে‘এজীদী ইসলাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সুফিবাদ বনাম শরিয়ত

পবিত্র কুরআনে স্রষ্টার সাথে বান্দার মহা মিলনের বিষয়টি কোন রূপ রূপক বা আভাস ইঙ্গিতে নয় বরং; দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লিখিত থাকা সত্তে¡ও এই সম্পর্কের দাবীদার একজন মহান আল্লাহ্্র অলিকে তথাকথিত শরিয়তের রক্ষাকারী হিসাবে কাজীর ফতোয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় হত্যায় (ঔঁফরপরধষ গঁৎফবৎ) প্রমাণিত হয় যে, কুরআন ও বিদ্যমান শরিয়ত এক নয়, বরং কুরআনে কোন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত থাকা সত্তে¡ও ফকীহ্্দের বানানো ইসলামী শরিয়ত কুরআনের উপরে অগ্রগণ্য বা সর্বজন মান্য হিসাবে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়টি স্পষ্টীকরণের জন্য শরিয়ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনে শরিয়ত সম্পর্কে বলা হয়েছে: আমি তোমার প্রতি (রাসূল) সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যা ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষক রূপে। সুতরাং, আল্লাহ্্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও এবং যে সত্য তোমার নিকট আসিয়াছে তাহা ত্যাগ করিয়া তাহাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করিও না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করিয়াছি…(সূরা মায়িদা ৪৮)। আলোচ্য আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী পার্থিব সমস্যার সমাধানের জন্য এই কিতাবক্ েভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই কিতাব কোন সাধারণ গ্রন্থ নয় যে, যে কোন সাধারণ আরবী ভাষাভাষী ব্যক্তিই এর সঠিক ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। তাই এই মহাগ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব আল্লাহ্্ স্বয়ং গ্রহণ করে তা ঘোষণার দায়িত্ব হযরত মুহম্মদকে (সাঃ) প্রদান করে ঘোষণা করলেন : তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করিবার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা উহার সহিত সঞ্চালন করিওনা। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করাইবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং, যখন আমি পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর, অতঃপর ইহা বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই (সূরা কিয়ামাহ : ১৬-১৯)।

কুরআন ব্যাখ্যার আল্লাহ্্ প্রদত্ত জ্ঞানের প্রকাশক ও প্রচারক হিসাবে রাসূল (সাঃ) যে সব কাজের আদেশ নিষেধ ও অনুমোদন দিয়েছেন তাই হাদিস বা রাসূলের সুন্নাহ্। রাসূল (সাঃ) এর ওফাত (৬৩২) এরপর ইসলাম ধর্ম-রাজনীতিতে (জবষরমড় চড়ষরঃরপং) এক মহা বিপর্যয় সংঘটিত হয়। রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ঈড়হপবঢ়ঃ- ই রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে এক পর্যায়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় এবং হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন (৬৫৬)। এ রকম টলটলায়মান ধর্ম-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের চাপে হযরত আলী (রাঃ) খলিফা হিসাবে শাসনভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা-আমলে ব্যাপক বিকৃতি ও পরিবর্তণ সাধিত হয়, যে কারণে হযরত আলীর (রাঃ) মত মহান রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নির্বাচিত নেতা ও জ্ঞান নগরীর দ্বারের বিরুদ্ধে মুসলমান নামধারী ব্যক্তিবর্গ একাধিক যুদ্ধে (জঙ্গে জামাল, সিফসিনের যুদ্ধ ও নাহরাইনের যুদ্ধ) অবতীর্ণ হন। ফলে লক্ষাধিক লোক মৃত্য মুখে পতিত হন। অতপর হযরত আলীর (রাঃ) শাহাদতের পর (৬৬১ খৃঃ) রাসূল (সাঃ) পরিবারের ঘোরতর শত্রু পরিবারের লোকেরা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার সাথে সাথে হযরত আলী (রাঃ) “ধর্ম ত্যাগী” ছিলেন এই বার্তা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করার নীতি প্রবর্তণ করেন। এই প্রচার অভিযান ৭৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বলবতৎ ছিল। যার রেশ এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে।

 

 

আরো পড়ুনঃ 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সুফিবাদ কী ও কেন

আপডেট সময় : ০৯:৪৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

স্রষ্টাতে পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তাঁর সৃষ্টিজগতের জন্য ভালবাসাও অনুরূপ। সুফিবাদ বা তাসাওউফ বা ত্বরিকত ইসলামের প্রাণ। শরিয়ত ইসলামের দেহ বা দেহাবরণ, অনুষ্ঠান, অনুশাসন, আরাধনা ও উপাসনা।
ইসলামের বিশ্বব্যাপী জয় ও জনপ্রিয়তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুফিবাদের ভূমিকা অত্যুজ্জল। এর প্রকৃত দাবীদার মহান সুফিগণ, দরবেশগণ, আল্লাহ্র মহান ওলীগণ। কেননা ইসলাম ধর্মের বিকাশে নানা প্রতিকূল অবস্থায় ভীষণ ও ভয়াবহ, বীভৎসপরিবেশে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ইসলামের যে প্রথম প্রচার ও প্রসার তা সুফিগণেরই অবদান এবং জীবন মরণ দুর্জয় সাধনায় আল্লাহ প্রাপ্তির মহা উদ্দেশ্যে নিশীথ রাতের নির্জন ইবাদতে তাদের যেমন সীমা-পরিসীমা ছিল না, ইসলাম প্রচারেও তেমনই সাধনাতেও কোন ক্লান্তি ছিলনা। এক্ষেত্রেও তারা ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী সাধক, ন্যায়ের সৈনিক-মুজাহিদ ও সফলকাম সিদ্ধ পুরুষ। আবার অন্যদিকে ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে সুফিকুল যেখানেই মানবতা লাঞ্ছিত হয়েছে, মানবতার পতন ঘটেছে, সেখানেই মানুষ মাত্রকেই ভাই বলে তাদের হয়েছেন জীবনমরণ পণ করে। সত্য ও সুন্দরের পথে সংসারের কঠিন মাটিতে পবিত্র কোরআনের আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধ বণিতার মাঝে প্রেম-প্রীতি ভালবাসা ও মনুষত্বের অনির্বাণ মশাল জ্বালিয়ে দেন এই মহান সুফিসাধকগণ। যা ইসলামের ইতিহাসে চির অনির্বাণ। এখানেই তারা মহাপুরুষ। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর আহ্বানে এবং নির্মল মনুষ্যত্বের জয়গানে পবিত্র কোরআন তাদের শ্রম সাধনা এবং মানমর্যাদার স¦ীকৃতি দিল। এরূপ স্বীকৃতি মানব সমাজের কোন ধর্মের কোন গোষ্ঠীর ভাগ্যেই আর জোটেনি। বিশ্ববাসীর কাছে কোরআনের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরতে ইসলামের নির্ভেজাল প্রচার ও নিরঙ্কুশ প্রসারেও এর মুল বাণী ও তা অমিত প্রাণশক্তিকে জাগ্রত করতে, দুর্গত মানবতার উদ্ধারকল্পে, আপসহীন চিত্তে মনুষ্যত্বের পতাকা উত্তোলন করতে বিশ্বমানবতা আপন করতে সকল প্রকার সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য পরিত্যাগ করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সবাইকে ভাইবোন বলে হাতে হাত রেখে বিশ্বভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করতে লা-শরীক এক আল্লাহ প্রেমে তাঁর প্রশংসা ও আশ্রয় পেতে জীর্ণমানবতার ময়দানে মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও অখন্ড মানব সমাজের চির অবহেলিত,গভীর বেদনাহত মানুষগুলির বুকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠায় সুফি সমাজের যে নিরন্তর উল্লেখযোগ্য অবদান, যে চিরস্মরণীয় লোমহর্ষক কাহিনী ও কথা, যে মৃত্যুহীন জীবনগাথা ইসলামের সারা চৌহদ্দী ও সর্বকালীন ইতিহাসে তা অপেক্ষা অধিক গুরুতর ও উল্লেখযোগ্য আর কিছু নাই। ইসলামের মহান সুফিকুল আজও সারা বিশ্বের মহাবিস্ময়। মানুষের চারিত্রিক, মানবিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন তাদের বাণীর ভা-ার আজও অব্যয় ও অক্ষয়।

সুফি শব্দের উৎপত্তি

সুফি শব্দের উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে । প্রতিটি মতের পিছনে কিছু না কিছু দলিল রয়েছে । আমরা এখানে কয়েকটি উল্লেখ করছি। (১) সাউফ অর্থ পশম (২) সাফা অর্থ পবিত্র (৩) সফ অর্থ সারি, লাইন বা শ্রেণী (৪) সুফিয়া (ঝড়ঢ়যরধ) অর্থ জ্ঞান।
১। সুফি শব্দের উৎপত্তি সাউফ বা পশম হতে । এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর ধারণা অধিকাংশ সুফি তাঁদের দারিদ্র্যবশত পশম পরিধান করতেন তাই তাদের মতে সুফি শব্দটি “সাউফ” হতে উদ্ভুত।
২। সাফা শব্দ হতেও সুফি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে মর্মে অনেকে মনে করেন, কেননা সাফা শব্দের অর্থ সাফ তথা পবিত্রতা বা পবিত্রতা লাভ করা । সুফিগণের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহকে লাভ করা এবং আল্লাহকে লাভ করার প্রথম ও প্রধান কাজই হলো আপন সত্তাকে বা অন্তরাত্মাকে পবিত্র করা। তাই সাফা শব্দ হতে সুফি শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে মর্মে মনে করা হয়।
৩। সফ শব্দ হতেও সুফি শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে বলে যারা মনে করেন, তারা বলেন মহানবী (দঃ) এর সাথে একদল মানুষ সদাই নবীজীর (দঃ) জন্য প্রস্তুুত থাকতেন , তাঁরা মসজিদে নববীতেই থাকতেন , তারা ঘর- সংসার করেন নি, তাঁরা ছিলেন রাসূলে নিবেদিত প্রাণ, এদের বলা হতো আসহাবে সুফফা। সুফিগণ এঁেদর ভক্ত বা অনুসারী হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করতেন বিধায় সুফী শব্দটি সফ শব্দ হতে উদ্ভুত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
৪। সুফিয়া বা সুইউফ এটি গ্রীক শব্দ এর অর্থ প্রভুর বা ঈশ্বরের জ্ঞান । সুফিগন সব সময় স্রষ্টার সাধনায় মগ্ন থাকতেন, তাঁকে জানতে চাইতেন, তাঁর মহিমা বুঝতে চাইতেন , তাঁর আদি রহস্য উৎঘাটন করতেন, প্রসঙ্গত বলা যায় যে, এই ঝড়ঢ়যরধ শব্দের সাথে চযরষড়ং শব্দটি অর্থ প্রেম যোগ করে চযরষড়ং+ঝড়ঢ়যরধ= চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ শব্দটি তৈরী করা হয়েছে যার অর্থ জ্ঞান প্রেম বা জ্ঞানপ্রেমী । মহাত্মা প্ল্যাটো (৪২৮/৪২৭-৩৪৮/৩৪৭ খৃঃ পূঃ) গ্রীক দার্শনিক/রাজা চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ করহম এর যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তাতে তিনি যে একজন ঐশ্বরিক জ্ঞান সম্পন্ন রাজা হবেন তাই বর্ণনা করেছেন। তাই আমরা ধারণা করতে পারি প্রকৃতপক্ষে গ্রীক ভাষার চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ শব্দটির অর্থ হলো ঐশ্বরিক জ্ঞানে জ্ঞানী। কিন্তু পরবর্তীত ইংরেজ চিন্তাবিদগণ এই শব্দ আংশিক পরিবর্তন করে চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ অর্থ জ্ঞানের অনান্য সকল শাখাকে এই শব্দের অর্থ হিসাবে নির্বাচন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রী হিসাবে উড়পঃড়ৎ ড়ভ চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য বাঙালি চিন্তানায়কগণ এই শব্দের বাংলা অর্থ হিসেবে দার্শনিক শব্দটি নির্ধারণ করে এর মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখে প্রকৃত সত্য জানার আগ্রহকে বুঝিয়েছেন। অথবা জ্ঞান চক্ষু দিয়ে প্রকৃত সত্যকে যিনি দেখেন তিনিই দার্শনিক।

 

সুফিবাদের পরিভাষাগত ব্যাখ্যা

১. আত্ম তত্ত¡, আত্মশুদ্ধি, আত্ম সংশোধন, আত্ম সংযম ও আত্ম সাধনার নাম সুফিবাদ।
২. রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী সুফি ত্বরিকাসমূহের প্রতিষ্ঠাতা হযরত আলী (আঃ) বলেন, যে নিজেকে চিনেছে, অনন্তর সে তার প্রভুকে চিনেছে, এই চিনা জানার নাম সুফিবাদ।
৩. সুফিবাদ একমাত্র পথ ও পন্থা। যার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত আদর্শ, শেষ লক্ষ্য ও আল্লাহ্্র জ্ঞানে ও মহিমায় পৌঁছাতে পারে।
৪. আল্লাহ্্র স্বভাবে আল্লাহ্্র প্রভাবে পরিচালিত হওয়ার নাম ‘সুফিবাদ’।
৫. সারা সৃষ্টিজগত যখন কোন মানুষের চোখে আল্লাহ্কে জানার ও বোঝার জন্য পাঠক্রম বা ঝুষষধনঁং হয়ে উঠে, তখন তা সুফিবাদ।
একজন সুফি পূর্ণ মানব (চবৎভবপঃ গধহ) যখন পূর্ণ মানবে পরিণত হন তখন তিনি ভ্রমণ করেন আল্লাহ্্র সাথেও আল্লাহ্্র মধ্যেই। তিনি আরোহন করেন স্বর্গে। আবার অবতরণ করেন মর্ত্যে তবে আল্লাহ্্র সাথে। এখানেই একজন পূর্ণ মানব বা সুফির সার্থকতা। মহাকবি ইকবাল বলেন, ঋষবব ঃড় এড়ফ ধহফ ঝঃৎবহমঃযবহবফ নু এড়ফ ধহফ ৎবঃঁৎহ ঃড় ঃযুংবষভ. এই সময় সুফিগণ আল্লাহ্্তেই বিলীন থাকেন। এটি একটি মহাক্ষণ। যে ক্ষণটিতে আমরা ইসলামের প্রথম যুদ্ধে বদর প্রান্তে মহা নবীজীর (সাঃ) মধ্যে লক্ষ্য করলাম। “বদর যুদ্ধে তোমরা তাদের বধ করোনি, আল্লাহ্ই তাদের তা করেছেন এবং তুমি যখন (কাকঁর) নিক্ষেপ করেছিলে, তুমি নিক্ষেপ করোনি, আল্লাহ্্ নিক্ষেপ করেছিলেন (সূরা আনফল-৮: ১৭)।

“যাহারা তোমার হাতে বায়আত করে তাহারা তো আল্লাহ্্র হাতে বায়আত করে। আল্লাহ্্র হাত তাহাদের হাতের উপর, অতঃপর যে উহা ভঙ্গ করে, উহা ভঙ্গ করিবার পরিণাম তাহারই এবং যে আল্লাহ্্র সহিত অঙ্গীকারপূর্ণ করে তিনি অব্যশই তাহাকে মহা পুরুস্কার দিবেন (সূরা ফাতাহ্ ২:১০)।

এই পর্যায়ে সুফিবর হযরত মনসুর হাল্লাজ বলেছেন, ‘আনাল হক’ আমিই মহা সত্য। আরো অনেক সুফ্ িএরূপ কথা বলেছেন। অথচ আব্বাসীয় খলিফা মুক্ততাদির বিল্লাহ্্ (৯০৮-৯৩২) এর আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কথিত এক শ্রেণির আলেম এক শ্রেণির ফতোয়া অনুযায়ী হযরত মনসুর হাল্লাজকে (রহঃ) ধর্মদ্রোহী হিসেবে অকথ্য নির্যাতনপূর্বক শহীদ করা হয় (৯২২ খৃঃ)।

প্রসঙ্গত বলা যায় যে, এভাবে উমাইয়া আব্বাসীয় শহীদ রাজ বংশের খিলাফতের তল্পীবাহক এক শ্রেণীর আলেম পবিত্র কুরআনের বিকৃত ব্যাখ্যা, জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাসের মাধ্যমে ইসলামের নামে এক ধরনের শরিয়ত প্রণয়ন করেন। যা আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে চালু আছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ ইসলামকে‘এজীদী ইসলাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সুফিবাদ বনাম শরিয়ত

পবিত্র কুরআনে স্রষ্টার সাথে বান্দার মহা মিলনের বিষয়টি কোন রূপ রূপক বা আভাস ইঙ্গিতে নয় বরং; দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লিখিত থাকা সত্তে¡ও এই সম্পর্কের দাবীদার একজন মহান আল্লাহ্্র অলিকে তথাকথিত শরিয়তের রক্ষাকারী হিসাবে কাজীর ফতোয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় হত্যায় (ঔঁফরপরধষ গঁৎফবৎ) প্রমাণিত হয় যে, কুরআন ও বিদ্যমান শরিয়ত এক নয়, বরং কুরআনে কোন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত থাকা সত্তে¡ও ফকীহ্্দের বানানো ইসলামী শরিয়ত কুরআনের উপরে অগ্রগণ্য বা সর্বজন মান্য হিসাবে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়টি স্পষ্টীকরণের জন্য শরিয়ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনে শরিয়ত সম্পর্কে বলা হয়েছে: আমি তোমার প্রতি (রাসূল) সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যা ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষক রূপে। সুতরাং, আল্লাহ্্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও এবং যে সত্য তোমার নিকট আসিয়াছে তাহা ত্যাগ করিয়া তাহাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করিও না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করিয়াছি…(সূরা মায়িদা ৪৮)। আলোচ্য আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী পার্থিব সমস্যার সমাধানের জন্য এই কিতাবক্ েভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই কিতাব কোন সাধারণ গ্রন্থ নয় যে, যে কোন সাধারণ আরবী ভাষাভাষী ব্যক্তিই এর সঠিক ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। তাই এই মহাগ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব আল্লাহ্্ স্বয়ং গ্রহণ করে তা ঘোষণার দায়িত্ব হযরত মুহম্মদকে (সাঃ) প্রদান করে ঘোষণা করলেন : তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করিবার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা উহার সহিত সঞ্চালন করিওনা। ইহা সংরক্ষণ ও পাঠ করাইবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং, যখন আমি পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর, অতঃপর ইহা বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই (সূরা কিয়ামাহ : ১৬-১৯)।

কুরআন ব্যাখ্যার আল্লাহ্্ প্রদত্ত জ্ঞানের প্রকাশক ও প্রচারক হিসাবে রাসূল (সাঃ) যে সব কাজের আদেশ নিষেধ ও অনুমোদন দিয়েছেন তাই হাদিস বা রাসূলের সুন্নাহ্। রাসূল (সাঃ) এর ওফাত (৬৩২) এরপর ইসলাম ধর্ম-রাজনীতিতে (জবষরমড় চড়ষরঃরপং) এক মহা বিপর্যয় সংঘটিত হয়। রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞানের ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ঈড়হপবঢ়ঃ- ই রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে এক পর্যায়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় এবং হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন (৬৫৬)। এ রকম টলটলায়মান ধর্ম-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের চাপে হযরত আলী (রাঃ) খলিফা হিসাবে শাসনভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা-আমলে ব্যাপক বিকৃতি ও পরিবর্তণ সাধিত হয়, যে কারণে হযরত আলীর (রাঃ) মত মহান রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নির্বাচিত নেতা ও জ্ঞান নগরীর দ্বারের বিরুদ্ধে মুসলমান নামধারী ব্যক্তিবর্গ একাধিক যুদ্ধে (জঙ্গে জামাল, সিফসিনের যুদ্ধ ও নাহরাইনের যুদ্ধ) অবতীর্ণ হন। ফলে লক্ষাধিক লোক মৃত্য মুখে পতিত হন। অতপর হযরত আলীর (রাঃ) শাহাদতের পর (৬৬১ খৃঃ) রাসূল (সাঃ) পরিবারের ঘোরতর শত্রু পরিবারের লোকেরা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার সাথে সাথে হযরত আলী (রাঃ) “ধর্ম ত্যাগী” ছিলেন এই বার্তা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করার নীতি প্রবর্তণ করেন। এই প্রচার অভিযান ৭৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বলবতৎ ছিল। যার রেশ এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে।

 

 

আরো পড়ুনঃ