ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

  • আপডেট সময় : ১১:২৭:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪১০ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মানুষের জীবন শুধু দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আত্মার এক দীর্ঘযাত্রা। যারা সত্য, জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতাকে আত্মস্থ করতে পারেন, তারা দেহের মৃত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুবরণ করেন না। এই চিরন্তন সত্যই প্রতিফলিত হয়েছে নিচের পংক্তিতে—

 

“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন,

দৈহিক মরণ তার নহে রে মরণ,

শত শত মুর্দাদেল মাটিরও উপর

তাহার চেয়েও অধিক ভালো যদিও সে কবরে।”

 

এই পংক্তিগুলো গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ বহন করে, যা মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মৃত্যুর প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে আমাদের চিন্তা-চেতনায় আলো ফেলতে সাহায্য করে।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও মৌলবাদ: ইসলামের দুটি প্রবাহের পার্থক্য ও আদর্শিক বিশ্লেষণ

আত্মার জাগরণ ও প্রকৃত জীবন

“জাগ্রত পরাণ” বলতে সেই আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে এবং সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। যারা জ্ঞান, সাধনা ও সত্যের পথে জীবন পরিচালিত করেন, তাদের আত্মা সবসময় জাগ্রত থাকে। তাদের দেহ একদিন বিলীন হলেও তাদের প্রভাব ও শিক্ষা চিরকাল বেঁচে থাকে।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক মহামানব, পীর-দরবেশ, সুফি-সাধক, নবী-রাসূলগণ দেহত‍্যাগ করেছেন, কিন্তু তাদের শিক্ষা, আদর্শ ও দীক্ষা যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে পথ দেখিয়ে যাচ্ছে। তাই বলা হয়, প্রকৃত মৃত্যু দেহের নয়, বরং আত্মার অবচেতনতার মৃত্যু।

 

দৈহিক মরণের প্রকৃত সংজ্ঞা

পংক্তির দ্বিতীয় লাইনে বলা হয়েছে— “দৈহিক মরণ তার নহে রে মরণ”। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, প্রকৃত মৃত্যু শুধু দেহের বিনাশ নয়; বরং যখন আত্মা অজ্ঞতা, পাপ ও ভোগবাদে নিমজ্জিত হয়, তখনই তা সত্যিকারের মৃত্যু।

 

এমন অনেক মানুষ আছে যারা শারীরিকভাবে জীবিত, কিন্তু তাদের মধ্যে সত্যের আলো নেই, নৈতিকতা নেই, আধ্যাত্মিক চেতনা নেই— তারা প্রকৃতপক্ষে মৃত। অন্যদিকে, যারা ন্যায়-নীতি, সত্য ও কল্যাণের বাণী বহন করেন, তারা মৃত্যুর পরও জীবিত থাকেন তাদের কর্ম ও শিক্ষা দ্বারা।

 

মৃত্যুর পরও যারা শ্রেষ্ঠ

শেষ দুটি লাইনে বলা হয়েছে—

“শত শত মুর্দাদেল মাটিরও উপর,

তাহার চেয়েও অধিক ভালো যদিও সে কবরে।”

 

এখানে “শত শত মুর্দাদে” বলতে বোঝানো হয়েছে সেইসব মানুষকে, যারা শারীরিকভাবে জীবিত থাকলেও তাদের আত্মা মৃতপ্রায়। তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত, তাদের মধ্যে কোনো আধ্যাত্মিক উপলব্ধি নেই। তারা দুনিয়াতে বেঁচে থেকেও মৃতের মতো।

 

অন্যদিকে, যারা সত্য, ধর্ম, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সাধনা করেছেন, তারা কবরস্থ হলেও প্রকৃতপক্ষে জীবিত, কারণ তাদের শিক্ষা ও কর্ম মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে।

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

এই পংক্তির গভীর অর্থ হলো— দেহের মৃত্যু প্রকৃত মৃত্যু নয়; বরং আত্মার অজ্ঞানতা ও পাপাচারই প্রকৃত মৃত্যু। যারা জ্ঞান, সত্য ও আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেন, তারা মৃত্যুর পরও অমর থাকেন। তাই আমাদের উচিত আত্মার জাগরণ সাধনা করা, সত্য ও কল্যাণের পথে চলা এবং এমন কর্ম করা, যা আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের জীবিত রাখবে।

 

এই বোধই আমাদের প্রকৃত সাফল্য ও চিরস্থায়ী জীবন দান করতে পারে।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

আপডেট সময় : ১১:২৭:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

মানুষের জীবন শুধু দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আত্মার এক দীর্ঘযাত্রা। যারা সত্য, জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতাকে আত্মস্থ করতে পারেন, তারা দেহের মৃত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুবরণ করেন না। এই চিরন্তন সত্যই প্রতিফলিত হয়েছে নিচের পংক্তিতে—

 

“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন,

দৈহিক মরণ তার নহে রে মরণ,

শত শত মুর্দাদেল মাটিরও উপর

তাহার চেয়েও অধিক ভালো যদিও সে কবরে।”

 

এই পংক্তিগুলো গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ বহন করে, যা মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মৃত্যুর প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে আমাদের চিন্তা-চেতনায় আলো ফেলতে সাহায্য করে।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও মৌলবাদ: ইসলামের দুটি প্রবাহের পার্থক্য ও আদর্শিক বিশ্লেষণ

আত্মার জাগরণ ও প্রকৃত জীবন

“জাগ্রত পরাণ” বলতে সেই আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে এবং সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। যারা জ্ঞান, সাধনা ও সত্যের পথে জীবন পরিচালিত করেন, তাদের আত্মা সবসময় জাগ্রত থাকে। তাদের দেহ একদিন বিলীন হলেও তাদের প্রভাব ও শিক্ষা চিরকাল বেঁচে থাকে।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক মহামানব, পীর-দরবেশ, সুফি-সাধক, নবী-রাসূলগণ দেহত‍্যাগ করেছেন, কিন্তু তাদের শিক্ষা, আদর্শ ও দীক্ষা যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে পথ দেখিয়ে যাচ্ছে। তাই বলা হয়, প্রকৃত মৃত্যু দেহের নয়, বরং আত্মার অবচেতনতার মৃত্যু।

 

দৈহিক মরণের প্রকৃত সংজ্ঞা

পংক্তির দ্বিতীয় লাইনে বলা হয়েছে— “দৈহিক মরণ তার নহে রে মরণ”। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, প্রকৃত মৃত্যু শুধু দেহের বিনাশ নয়; বরং যখন আত্মা অজ্ঞতা, পাপ ও ভোগবাদে নিমজ্জিত হয়, তখনই তা সত্যিকারের মৃত্যু।

 

এমন অনেক মানুষ আছে যারা শারীরিকভাবে জীবিত, কিন্তু তাদের মধ্যে সত্যের আলো নেই, নৈতিকতা নেই, আধ্যাত্মিক চেতনা নেই— তারা প্রকৃতপক্ষে মৃত। অন্যদিকে, যারা ন্যায়-নীতি, সত্য ও কল্যাণের বাণী বহন করেন, তারা মৃত্যুর পরও জীবিত থাকেন তাদের কর্ম ও শিক্ষা দ্বারা।

 

মৃত্যুর পরও যারা শ্রেষ্ঠ

শেষ দুটি লাইনে বলা হয়েছে—

“শত শত মুর্দাদেল মাটিরও উপর,

তাহার চেয়েও অধিক ভালো যদিও সে কবরে।”

 

এখানে “শত শত মুর্দাদে” বলতে বোঝানো হয়েছে সেইসব মানুষকে, যারা শারীরিকভাবে জীবিত থাকলেও তাদের আত্মা মৃতপ্রায়। তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত, তাদের মধ্যে কোনো আধ্যাত্মিক উপলব্ধি নেই। তারা দুনিয়াতে বেঁচে থেকেও মৃতের মতো।

 

অন্যদিকে, যারা সত্য, ধর্ম, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সাধনা করেছেন, তারা কবরস্থ হলেও প্রকৃতপক্ষে জীবিত, কারণ তাদের শিক্ষা ও কর্ম মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে।

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

এই পংক্তির গভীর অর্থ হলো— দেহের মৃত্যু প্রকৃত মৃত্যু নয়; বরং আত্মার অজ্ঞানতা ও পাপাচারই প্রকৃত মৃত্যু। যারা জ্ঞান, সত্য ও আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেন, তারা মৃত্যুর পরও অমর থাকেন। তাই আমাদের উচিত আত্মার জাগরণ সাধনা করা, সত্য ও কল্যাণের পথে চলা এবং এমন কর্ম করা, যা আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের জীবিত রাখবে।

 

এই বোধই আমাদের প্রকৃত সাফল্য ও চিরস্থায়ী জীবন দান করতে পারে।