কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত
দরূদ শরিফের গুরুত্ব, ফজিলত ও দোয়া কবুলের রহস্য

- আপডেট সময় : ১০:০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
- / ২৩৯০ বার পড়া হয়েছে
দরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফজিলত
আমাদের প্রিয় নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি ভালোবাসা, আনুগত্য ও শ্রদ্ধা ব্যতীত আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ঈমান সম্পূর্ণ হয় না। কুরআনুল কারিমে বারবার তাঁর অনুসরণ ও দরূদ পাঠের নির্দেশ এসেছে, যা নবীজীর মর্যাদার প্রকাশ এবং মুমিন বান্দার জন্য রহমত ও বরকতের অশেষ সুযোগ।
দরূদ পাঠের নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা বলেন—
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করো ও সালাম প্রেরণ করো।”
— সূরা আহযাব : ৫৬
এই আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, নবীজীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করা শুধু একটি আমল নয়, বরং এটি একটি ঈমানি দায়িত্ব।
দরূদের অর্থ ও তাৎপর্য
‘দরূদ’ শব্দটি ফারসি, যার অর্থ শুভকামনা বা কল্যাণ প্রার্থনা। ইসলামী পরিভাষায় এটি ‘আস-সালাতু আলান-নবী’— অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য কল্যাণ কামনা ও দোয়া।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সময় বলা হয়—
“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” — অর্থাৎ “আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর”।
এটাই প্রকৃত অর্থে দরূদ।
দরূদ শরিফ পাঠের পদ্ধতি
সহিহ হাদিসে হজরত কা’ব ইবনে ওজরা (রা.) বর্ণনা করেন—
নবী করিম (সা.) বলেছেন,
“বলো— আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ’লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আ’লি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ’লি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আ’লি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।”
(বুখারি, মুসলিম)
অর্থাৎ—
“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত ও বরকত নাজিল করুন, যেমন আপনি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারে নাজিল করেছিলেন।”
আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য
দরূদ পাঠের ফজিলত ও উপকারিতা
১. রহমত, মাগফিরাত ও মর্যাদা বৃদ্ধি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।”
(মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি)
২. ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন
“যে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে, ফেরেশতারা ততক্ষণ তার জন্য দোয়া করতে থাকে, যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করে।”
(ইবনে মাজাহ, আহমদ)
৩. দরূদ পাঠকারীর জন্য নবীজীর সুপারিশ (শাফাআত) অবধারিত
“যে ব্যক্তি দরূদ পাঠ করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।”
(তাবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ)
৪. কিয়ামতের দিন নবীজীর নিকটতম সঙ্গী
“কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে সেই ব্যক্তি, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করেছে।”
(তিরমিজি)
৫. দোজাহানের কামনা পূর্ণ হয়
উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন—
“যদি তুমি তোমার সমস্ত দোয়া দরূদে পরিণত করো, তবে তোমার কামনা পূর্ণ হবে, গুনাহ মাফ হবে।”
(তিরমিজি, তাবারানি)
৬. দরূদ পাঠ দান ও সদকার বিকল্প
“যে মুসলমান দান করতে অক্ষম, সে যেন দোয়ায় বলে—
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা, ওয়া আলাল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।’
এটি তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।”
(ইবনে হিববান)
৭. উম্মতের সালাম নবীজীর নিকট পৌঁছে যায়
“আল্লাহর জমিনে এমন ফেরেশতা আছেন, যারা আমার উম্মতের সালাম আমাকে পৌঁছে দেন।”
(আহমদ, নাসায়ি)
৮. দরূদ ছাড়া দোয়া আসমানে ওঠে না
হযরত উমর ফারুক (রা.) বলেন—
“যে পর্যন্ত তুমি নবীর ওপর দরূদ পাঠ না করবে, তোমার দোয়া আসমানে পৌঁছায় না।”
(তিরমিজি)
দরূদ পাঠের ফল ও প্রভাব
দরূদ পাঠ মুমিনের অন্তরকে প্রশান্ত করে, গুনাহ মোচন করে, রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে এবং দোয়া কবুলের কারণ হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি আমার নাম শুনে দরূদ পাঠ করে না, সে কৃপণ ব্যক্তি।”
(তিরমিজি)
এমনকি কিয়ামতের দিন নবীজীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্দা হবে সেই ব্যক্তি, যে সর্বাধিক দরূদ পাঠ করে।
দরূদ শরিফ এমন এক মহান ইবাদত যা দ্বারা বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নবীজীর ভালোবাসা অর্জন করে। এটি সহজ, কিন্তু এর সওয়াব অপরিসীম। দোয়ার শুরু ও শেষে দরূদ পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়, গুনাহ মোচন হয় এবং অন্তর আলোকিত হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি গভীর ভালোবাসা দান করুন এবং বেশি বেশি দরূদ ও সালাম পাঠ করার তাওফিক দিন।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ’লি মুহাম্মাদ।
আরো পড়ুন: