ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শয়তান: ইতিহাসের প্রথম একপাক্ষিক তাওহীদবাদী

  • আপডেট সময় : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ২৬৯১ বার পড়া হয়েছে

প্রতীকী ছবি

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রথম তৌহীদি জনতা ছিলো শয়তান: কুরআন, হাদীস ও সমাজ বাস্তবতার আলোকে এক গভীর পাঠ

 

তাওহীদ বা এক আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস ইসলামের ভিত্তি ও মৌলিক স্তম্ভ। একজন প্রকৃত মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটতে হয়। তবে শুধু তাওহীদ মানলেই ঈমান পূর্ণ হয় না। ইসলাম ঈমানের শর্ত হিসেবে তাওহীদ, রিসালাত (নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য) এবং আখিরাতে বিশ্বাসকে একত্রে গ্রহণের কথা বলেছে।

 

বর্তমানে সমাজে এমন এক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যারা নিজেদের ‘তৌহীদি জনতা’ বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু আল্লাহর রাসূল, আউলিয়া কেরাম, ইসলামী ঐতিহ্য ও বেলায়তের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে। তারা তাওহীদের মোড়কে সমাজে হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এদের মতবাদ নতুন কিছু নয়—ইতিহাসে এই পথের প্রথম পথিক ছিলো ইবলিস বা শয়তান নিজে।

 

আরো পড়ুন:শয়তান কত প্রকার ও কী কী?—একটি ইসলামি বিশ্লেষণ

 

শয়তান: প্রথম ‘তৌহীদি জনতা’

 

ইবলিস ছিলো এমন এক সত্তা, যে আল্লাহর অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব এবং একত্বে বিশ্বাস করতো। তার পূর্ব নাম ছিল আযাযিল—একজন জ্বিন, যিনি ইবাদতের মাধ্যমে এতটাই উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যে ফেরেশতাদের মাঝে অবস্থান করতেন।

 

“ইবলিসের নাম ছিল আযাযিল। সে ছিল দুনিয়ার এক পরহেযগার জিন। ইবাদতে সে এত অগ্রগামী ছিল যে ফেরেশতাদের প্রধানদের একজন হিসেবে গণ্য হতো।”

(ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪২)

 

তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ‘তাওহীদবাদী’। আল্লাহ ছাড়া কাউকে মানতেন না, কিন্তু তাঁর ঈমান ছিল অসম্পূর্ণ, কারণ তিনি নবীর নির্দেশ অস্বীকার করেছিলেন।

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

আদম (আঃ)-এর সামনে সেজদার আদেশ: ইবলিসের অহংকার ও অস্বীকৃতি

 

আল্লাহ যখন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তখন ফেরেশতা এবং ইবলিসকে আদমের সামনে সেজদা করতে বলেন। এটি কোনো উপাসনামূলক সেজদা ছিল না, বরং সম্মান ও আনুগত্য প্রকাশ ছিল।

 

“আর স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম: আদমকে সিজদা করো। তখন সবাই সিজদা করলো, কেবল ইবলিস করলো না; সে অস্বীকার করলো, অহংকার করলো এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।”

(সূরা বাকারা: ৩৪)

 

ইবলিসের বক্তব্য ছিল:

“আমি তার চেয়ে উত্তম; আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।”

(সূরা আরাফ: ১২)

 

এখানে ইবলিসের মূল অপরাধ ছিল আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, নবীর মর্যাদা অস্বীকার করা এবং অহংকার করা। অর্থাৎ, সে ‘তাওহীদ’ মানলেও, ‘রিসালাত’ মানেনি।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 

তাওহীদ মানা যথেষ্ট নয়, রিসালাত মানাও ফরজ

 

ইবলিসের ঈমানের একটি অংশ ছিল—তাওহীদ। সে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি, বরং আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু সে রিসালাত মানেনি, ফলে সে কাফের হয়ে গেল।

“যে আল্লাহ ও রাসূলকে মানে না, সে অবশ্যই কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।”

(সূরা তাওবা: ৮৪)

 

“রাসূলের আনুগত্য করো; যদি তোমরা তা না করো, তবে জেনে রাখো, আমার রাস্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।”

(সূরা নূর: ৫৪)

 

সুতরাং, এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলেই কেউ মুমিন হয়ে যায় না, যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রেরিত রাসূলদের অনুসরণ করে।

 

আরো পড়ুন:সুফিবাদ ও মৌলবাদ: ইসলামের দুটি প্রবাহের পার্থক্য ও আদর্শিক বিশ্লেষণ

 

আবু জাহেলের ঈমান: এক বিকৃত ‘তাওহীদবাদ’

 

নবী করিম (সাঃ)-এর যুগেও এমন একটি চরিত্র ছিল—আবু জাহেল। ইসলামবিরোধিতার প্রতীক হলেও, ইতিহাসবিদদের মতে, আবু জাহেল মূলত তাওহীদবাদে বিশ্বাসী ছিল।

 

তার বিপত্তি ছিল, রিসালাত অস্বীকারে। সে বলত, “আমার ভাতিজা কিভাবে নবী হতে পারে? আমি সমাজের নেতা, যদি তাকে মানি, তাহলে আমার অবস্থান কোথায় থাকবে?”

 

“আবু জাহেল বলতো—আমি জানি মুহাম্মদ (সাঃ) মিথ্যা বলেন না। কিন্তু আমরা ও বানু হাশিম গোত্র সবসময় প্রতিযোগিতায় ছিলাম। এখন যদি আমরা তার নবুয়তকে স্বীকার করি, তাহলে চিরতরে হার মেনে নিতে হবে।”

(ইবনে হিশাম, সীরাতুন্নবী)

 

এই অহংকার, গোত্রীয় বিদ্বেষ ও দুনিয়াবি মান-সম্মান রক্ষার নামে সে হকের সামনে মাথানত করেনি। সে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতো, কিন্তু আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করতো—ঠিক শয়তানের মতো।

 

আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

 

আজকের সমাজের ‘তৌহীদি জনতা’ ও ইবলিসীয় চেতনা

 

বর্তমানে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজেদের ‘তৌহীদি জনতা’ বলে প্রচার করে। তারা বলে—“আমরা শুধু আল্লাহকে মানি, কোনো ওলি, পীর, মাজার, বেলায়ত মানি না। রাসূলকে মানুষ হিসেবে দেখি, অতিরিক্ত সম্মান শিরক।”

 

এরা মাজার ভাঙে, আউলিয়াদের কবর অপবিত্র বলে মনে করে, হাজার বছরের ইসলামি ঐতিহ্য ধ্বংস করে। বাস্তবে এদের চিন্তা-চেতনা ইবলিসীয় অহংকার ও আবু জাহেলীয় বিদ্বেষের প্রতিচ্ছবি।

 

আরো পড়ুন:ইসলামে ফেতরাত: একটি পর্যালোচনা

 

ইসলামের প্রকৃত চেতনা: তাওহীদ + রিসালাত + বেলায়াত

 

একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও একপাক্ষিক বিশ্বাসে ঈমান পূর্ণ মনে করে না। কুরআন ও হাদীসের আলোকে পূর্ণ ঈমানের সংজ্ঞা হল:

 

“তিনটি জিনিস যার মধ্যে না থাকলে সে ঈমানের স্বাদ পাবে না—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট সবার চেয়ে প্রিয় হবে, (২) সে কাউকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে, (৩) ও কুফরির মধ্যে ফিরে যাওয়াকে সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও অপছন্দ করবে।”

(সহীহ বুখারী)

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

 

শয়তান ছিল ইতিহাসের প্রথম ‘তৌহীদি জনতা’। সে শুধু আল্লাহকে মানতো, কিন্তু আদম (আ.)-এর নবুয়ত মানেনি। অহংকার, হিংসা, আত্মম্ভরিতা এবং নবীর প্রতি বিদ্বেষ তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

 

আজ যারা আল্লাহর নাম নিয়ে, তাওহীদের ব্যানারে নবী, আউলিয়া, ইসলামী ঐতিহ্য, ও সুফি পথকে অস্বীকার করে, তারা আসলে সেই ইবলিসীয় চেতনার ধারক।

 

তাওহীদ মানা ফরজ, কিন্তু তার সঙ্গে রিসালাত ও বেলায়াত মানাই ইসলাম। এ তিনটির মধ্যে যে একটিকেও অস্বীকার করে, সে প্রকৃত মুমিন নয়।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শয়তান: ইতিহাসের প্রথম একপাক্ষিক তাওহীদবাদী

আপডেট সময় : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রথম তৌহীদি জনতা ছিলো শয়তান: কুরআন, হাদীস ও সমাজ বাস্তবতার আলোকে এক গভীর পাঠ

 

তাওহীদ বা এক আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস ইসলামের ভিত্তি ও মৌলিক স্তম্ভ। একজন প্রকৃত মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটতে হয়। তবে শুধু তাওহীদ মানলেই ঈমান পূর্ণ হয় না। ইসলাম ঈমানের শর্ত হিসেবে তাওহীদ, রিসালাত (নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য) এবং আখিরাতে বিশ্বাসকে একত্রে গ্রহণের কথা বলেছে।

 

বর্তমানে সমাজে এমন এক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যারা নিজেদের ‘তৌহীদি জনতা’ বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু আল্লাহর রাসূল, আউলিয়া কেরাম, ইসলামী ঐতিহ্য ও বেলায়তের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে। তারা তাওহীদের মোড়কে সমাজে হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এদের মতবাদ নতুন কিছু নয়—ইতিহাসে এই পথের প্রথম পথিক ছিলো ইবলিস বা শয়তান নিজে।

 

আরো পড়ুন:শয়তান কত প্রকার ও কী কী?—একটি ইসলামি বিশ্লেষণ

 

শয়তান: প্রথম ‘তৌহীদি জনতা’

 

ইবলিস ছিলো এমন এক সত্তা, যে আল্লাহর অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব এবং একত্বে বিশ্বাস করতো। তার পূর্ব নাম ছিল আযাযিল—একজন জ্বিন, যিনি ইবাদতের মাধ্যমে এতটাই উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যে ফেরেশতাদের মাঝে অবস্থান করতেন।

 

“ইবলিসের নাম ছিল আযাযিল। সে ছিল দুনিয়ার এক পরহেযগার জিন। ইবাদতে সে এত অগ্রগামী ছিল যে ফেরেশতাদের প্রধানদের একজন হিসেবে গণ্য হতো।”

(ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪২)

 

তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ‘তাওহীদবাদী’। আল্লাহ ছাড়া কাউকে মানতেন না, কিন্তু তাঁর ঈমান ছিল অসম্পূর্ণ, কারণ তিনি নবীর নির্দেশ অস্বীকার করেছিলেন।

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

আদম (আঃ)-এর সামনে সেজদার আদেশ: ইবলিসের অহংকার ও অস্বীকৃতি

 

আল্লাহ যখন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তখন ফেরেশতা এবং ইবলিসকে আদমের সামনে সেজদা করতে বলেন। এটি কোনো উপাসনামূলক সেজদা ছিল না, বরং সম্মান ও আনুগত্য প্রকাশ ছিল।

 

“আর স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম: আদমকে সিজদা করো। তখন সবাই সিজদা করলো, কেবল ইবলিস করলো না; সে অস্বীকার করলো, অহংকার করলো এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।”

(সূরা বাকারা: ৩৪)

 

ইবলিসের বক্তব্য ছিল:

“আমি তার চেয়ে উত্তম; আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।”

(সূরা আরাফ: ১২)

 

এখানে ইবলিসের মূল অপরাধ ছিল আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, নবীর মর্যাদা অস্বীকার করা এবং অহংকার করা। অর্থাৎ, সে ‘তাওহীদ’ মানলেও, ‘রিসালাত’ মানেনি।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 

তাওহীদ মানা যথেষ্ট নয়, রিসালাত মানাও ফরজ

 

ইবলিসের ঈমানের একটি অংশ ছিল—তাওহীদ। সে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি, বরং আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু সে রিসালাত মানেনি, ফলে সে কাফের হয়ে গেল।

“যে আল্লাহ ও রাসূলকে মানে না, সে অবশ্যই কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।”

(সূরা তাওবা: ৮৪)

 

“রাসূলের আনুগত্য করো; যদি তোমরা তা না করো, তবে জেনে রাখো, আমার রাস্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।”

(সূরা নূর: ৫৪)

 

সুতরাং, এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলেই কেউ মুমিন হয়ে যায় না, যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রেরিত রাসূলদের অনুসরণ করে।

 

আরো পড়ুন:সুফিবাদ ও মৌলবাদ: ইসলামের দুটি প্রবাহের পার্থক্য ও আদর্শিক বিশ্লেষণ

 

আবু জাহেলের ঈমান: এক বিকৃত ‘তাওহীদবাদ’

 

নবী করিম (সাঃ)-এর যুগেও এমন একটি চরিত্র ছিল—আবু জাহেল। ইসলামবিরোধিতার প্রতীক হলেও, ইতিহাসবিদদের মতে, আবু জাহেল মূলত তাওহীদবাদে বিশ্বাসী ছিল।

 

তার বিপত্তি ছিল, রিসালাত অস্বীকারে। সে বলত, “আমার ভাতিজা কিভাবে নবী হতে পারে? আমি সমাজের নেতা, যদি তাকে মানি, তাহলে আমার অবস্থান কোথায় থাকবে?”

 

“আবু জাহেল বলতো—আমি জানি মুহাম্মদ (সাঃ) মিথ্যা বলেন না। কিন্তু আমরা ও বানু হাশিম গোত্র সবসময় প্রতিযোগিতায় ছিলাম। এখন যদি আমরা তার নবুয়তকে স্বীকার করি, তাহলে চিরতরে হার মেনে নিতে হবে।”

(ইবনে হিশাম, সীরাতুন্নবী)

 

এই অহংকার, গোত্রীয় বিদ্বেষ ও দুনিয়াবি মান-সম্মান রক্ষার নামে সে হকের সামনে মাথানত করেনি। সে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতো, কিন্তু আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করতো—ঠিক শয়তানের মতো।

 

আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

 

আজকের সমাজের ‘তৌহীদি জনতা’ ও ইবলিসীয় চেতনা

 

বর্তমানে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজেদের ‘তৌহীদি জনতা’ বলে প্রচার করে। তারা বলে—“আমরা শুধু আল্লাহকে মানি, কোনো ওলি, পীর, মাজার, বেলায়ত মানি না। রাসূলকে মানুষ হিসেবে দেখি, অতিরিক্ত সম্মান শিরক।”

 

এরা মাজার ভাঙে, আউলিয়াদের কবর অপবিত্র বলে মনে করে, হাজার বছরের ইসলামি ঐতিহ্য ধ্বংস করে। বাস্তবে এদের চিন্তা-চেতনা ইবলিসীয় অহংকার ও আবু জাহেলীয় বিদ্বেষের প্রতিচ্ছবি।

 

আরো পড়ুন:ইসলামে ফেতরাত: একটি পর্যালোচনা

 

ইসলামের প্রকৃত চেতনা: তাওহীদ + রিসালাত + বেলায়াত

 

একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও একপাক্ষিক বিশ্বাসে ঈমান পূর্ণ মনে করে না। কুরআন ও হাদীসের আলোকে পূর্ণ ঈমানের সংজ্ঞা হল:

 

“তিনটি জিনিস যার মধ্যে না থাকলে সে ঈমানের স্বাদ পাবে না—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট সবার চেয়ে প্রিয় হবে, (২) সে কাউকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে, (৩) ও কুফরির মধ্যে ফিরে যাওয়াকে সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও অপছন্দ করবে।”

(সহীহ বুখারী)

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

 

শয়তান ছিল ইতিহাসের প্রথম ‘তৌহীদি জনতা’। সে শুধু আল্লাহকে মানতো, কিন্তু আদম (আ.)-এর নবুয়ত মানেনি। অহংকার, হিংসা, আত্মম্ভরিতা এবং নবীর প্রতি বিদ্বেষ তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

 

আজ যারা আল্লাহর নাম নিয়ে, তাওহীদের ব্যানারে নবী, আউলিয়া, ইসলামী ঐতিহ্য, ও সুফি পথকে অস্বীকার করে, তারা আসলে সেই ইবলিসীয় চেতনার ধারক।

 

তাওহীদ মানা ফরজ, কিন্তু তার সঙ্গে রিসালাত ও বেলায়াত মানাই ইসলাম। এ তিনটির মধ্যে যে একটিকেও অস্বীকার করে, সে প্রকৃত মুমিন নয়।