রাসূল (সাঃ) কখন নবুয়্যত লাভ করেন?

- আপডেট সময় : ০৬:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
রাসূল (সাঃ) কখন নবুয়্যত লাভ করেন/ কত বছর বয়সে নবুয়্যত প্রাপ্ত হয়েছিলেন
১. সকল নবীগনের কাছ থেকে শপথ গ্রহণ: মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
إِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ-
‘আর যখন মহান আল্লাহ সকল নবীর নিকট থেকে শপথ নিলেন এই বলে যে,আঁমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি।অতঃপর যখন আঁমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকটে রাসূল আসবেন যিঁনি তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়ন করবেন,তখন অবশ্যই তোমরা তার উপর ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বললেন, তোমরা কি স্বীকৃতি দিলে এবং এই কথা মেনে চলার অঙ্গীকার করলে।তারা বললেন, আমরা স্বীকৃত দিলাম।তখন আল্লাহ বললেন,তোমরা সাক্ষী থাক এবং আঁমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম’।
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৮১]
- এই আয়াত পেশ করার পর ইবনু কাছীর (রহঃ) রাঈসুল মুফাসসিরীন আবদুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)-এঁর বক্তব্য পেশ করেছেন।তিনি বলেন,
ما بعث الله نبيا من الأنبياء إلا أخذ عليه الميثاق، لئن بَعَث محمدًا وهو حَيّ ليؤمنن به ولينصرنه، وأمَرَه أن يأخذ الميثاق على أمته: لئن بعث محمد صلى الله عليه وسلم وهم أحياء ليؤمِنُنَّ به ولينصرُنَّه-
‘আল্লাহ এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করেননি যার কাছ থেকে এই শপথ গ্রহণ করেননি। তথা প্রত্যেক রাসূলের কাছে তিঁনি এই মর্মে শপথ নিয়েছেন যে,যদি আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রেরণ করেন এবং সেই নবী বা রাসূল জীবিত থাকে, তাহলে তারা যেন মুহাম্মাদ (সাঃ)- এঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাকে সাহায্য করে।তাদেরকে এও নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন তাদের উম্মতের কাছ থেকে এই বলে শপথ নেয় যে, যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) -কে প্রেরণ করা হয় এবং তারা জীবিত থাকে, তাহলে তারা যেন মুহাম্মাদ (সাঃ) -এঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাকে সহযোগিতা করে’।
[তাফসীরে ইবনে কাছীর, আলে ইমরান ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ] - এরপর ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,فالرسول محمد خاتم الأنبياء صلوات الله وسلامه عليه، دائما إلى يوم الدين، وهو الإمام الأعظم الذي لو وجد في أي عصر وجد لكان هو الواجب الطاعة المقدَّم على الأنبياء كلهم؛ ولهذا كان إمامهم ليلة الإسراء لما اجتمعوا ببيت المقدس، وكذلك هو الشفيع في يوم الحشر في إتيان الرب لِفَصْل القضاء، وهو المقام المحمود الذي لا يليق إلا له-
‘আর মুহাম্মাদ (সাঃ) কিয়ামত পর্যন্ত শেষ নবী। তিঁনিই হচ্ছেন মহান ইমাম যাঁকে কোনও যুগে পাওয়া গেলে সকল নবীর উপর তাঁর আনুগত্য করা জরূরী।আর এজন্যই মি‘রাজের রাত্রে তিঁনি তাদের ইমাম ছিলেন যখন তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে জমা হয়েছিলেন।অনুরূপই তিঁনি হাশরের ময়দানে তাদের জন্য আল্লাহকে বিচার শুরু করার সুফারিশ করবেন। আর এটাই মাকামে মাহমূদ,যা তিঁনি ব্যতীত কারো জন্য শোভা পায় না।
[তাফসীরে ইবনে কাছীর, আলে ইমরান ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ]
সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) -এঁর উপর ঈমান নিয়ে আসার জন্য সকল রাসূলের কাছ থেকে শপথ নেয়াটা মুহাম্মাদ (সাঃ) -এঁর সকল রাসূলের উপর কুল্লী বা সামষ্টিক ফযীলত। এইজন্য রাসূল (সাঃ) ওমর (রাঃ)-কে বলেছিলেন, যদি আজ মূসা (আ:) জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁর জন্য আঁমার আনুগত্য করা ছাড়া তাঁর কোন গত্যন্তর থাকত না।
[আহমাদ, মিশকাত হা/১৭৭, ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯]
মোটকথা হল: রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়া কেরামগনকে নিয়ে আল্লাহ তায়ালা এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন।এই মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা।তিঁনি নিঁজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি।সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা বা ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দর্শক।রাসূলের শুভ আগমন, সম্মান ও নবুয়্যতের স্বীকৃতি দান ইত্যাদি প্রসংগ) অন্যান্য নবীগনের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা।
আরো পড়ুন:“আমি তোমাদের কারো মত নই।” হাদিসটির পর্যালোচনা
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) তদীয় مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের ২/২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
بدانکہ اول مخلوقات وواسطۂ صدور کائنات وواسطۂ خلق عالم وآدم نور محمدست صلی اللہ علیہ وسلم- چنانکہ درحدیث صحیح وارد شدہ کہ اول ما خلق اللہ نوری وسائرمکونات علوی وسفلی ازان نور وازان جوھر پاک پیدا شدہ ازارواح واشباح وعرش وکرسی ولوح وقلم وبہشت ودوزخ وملک وفلک وانس وجن وآسمان وزمین وبحار وجبال واشجار وسائر مخلوقات ودرکیفیت صدور این کثرت ازان وحدت وبروز وظھور مخلوقات ازان جوھر عبارات وتغيرات غر
يب آوردہ اند وحدیث اول ما خلق اللہ العقل نزد محققین ومحدثین بصحت نرسیدہ وحدیث اول ما خلق اللہ القلم نیزگفتہ اند کہ مراد بعد العرش والماءاست کہ واقع شدہ است وکان عرشہ علی الماء الخ-
ভাবার্থ: এ এক চিরন্তন বাস্তবতা যে,নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টির প্রথম, সমস্ত কায়েনাতের ওসিলা,বিশ্বজগৎ এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম এঁর সৃষ্টির মাধ্যম হচ্ছে নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।সহিহ হাদিস শরীফে এসেছে,রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- اول ما خلق الله نورى ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহু নুরী’
অর্থাৎ আল্লাহতা’য়ালা সমস্ত মাখলুক সৃষ্টির পূর্বে আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং ঊর্ধ্ব ও অধঃজগতের সবকিছুই নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর নূর মোবারক থেকে সৃষ্ট। তাঁর পবিত্র নূরী জাওহার থেকে সৃষ্টি হয়েছে রূহসমূহ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম,বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, ইনসান, জিন, আসমান, জমিন, সাগর, পাহাড়, গাছ, বৃক্ষ এবং কুল মাখলুকাত। এ সকল কিছুর প্রকাশ ও বিকাশ ঘটেছে তাঁরই ওসিলায়।সেই হাকিকতের প্রকাশের বর্ণনায় বিজ্ঞ বিজ্ঞ আলেমগণ বিস্ময়কর ও সূক্ষ বর্ণনা পেশ করেছেন।’
এক রেওয়ায়েতে এসেছে-اول ما خلق الله العقل ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহুল আকলু’ আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আকল সৃষ্টি করেছেন।তবে এই হাদিস মুহাক্কিক ও মুহাদ্দিসগণের মতে সহিহ এর স্তরে পৌছেনি।অন্য রেওয়ায়েতে রয়েছে- اول ما خلق الله القلم ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহু কলম’ সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা কলম সৃষ্টি করেছেন।এ হাদিসটির অর্থ মুহাদ্দিসগণ এভাবে করেছেন যে,আরশ ও পানি সৃষ্টির পরে প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন।আবার কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যায় এ রকম এসেছে যে,পানি সৃষ্টি হয়েছিল আরশের পূর্বে وكان عرشه على الماء
এর পরপরই আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী ( রহঃ) বলেন-হাদিস শরীফে এসেছে,যখন কলম সৃষ্টির পর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বললেন লেখ,তখন কলম বললো, কি লেখবো? আল্লাহ তা’য়ালা বললেন- ما كان وما يكون الى الابد ‘মা কানা ওয়ামা ইয়াকুনু ইলাল আবাদ’ অতীত এবং ভবিষ্যতের সবকিছু লিখ।এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, কলম সৃষ্টির পূর্বেও কিছু সৃষ্টি হয়ে ছিল।
আলেমগণ বলেন-আরশ, কুরসি এবং রূহসমূহ সৃষ্টির পূর্বে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক প্রকাশ্য জগতে এসেছে। ما كان ‘মা কানা’ যা কিছু হয়েছিল এ অর্থই বহন করে। তাহল নূরে মুহাম্মদীর হাল ও সিফাতসমূহ।কেননা সমগ্র জগতের মধ্যে নূরে মুহাম্মদী অগ্রগণ্যতা সুসাব্যস্ত اول ما خلق الله نورى অপরদিকে وما يكون ‘ওমা ইয়াকুনু’ এর অর্থ হলো পৃথিবীর পরবর্তীতে প্রকাশিতব্য সকল কিছু। আলমে জহুর বা বাহ্যিকজগতে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত প্রমাণিত ছিল। যেমন আল্লাহর হাবিব বলেছেন- كنت نبيا وادم بين الروح والجسد অর্থ- আমি ঐ সময়ও নবী ছিলাম, যখন আদম (আঃ) আত্মা ও দেহের মাঝামাঝিতে ছিলেন। [মাদারিজুন নবুয়ত- ২-৩ পৃষ্ঠা]
আরো পড়ুন:ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিতে কদমবুছি
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) হাদিসের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন-
ودر اخبار آمدہ است کہ چون مخلوق شد نور انحضرت وبیرون آمدازوی انوار انبیاء علیہم السلام امرکرد اورا پروردگار تعالی کہ نظر کند بجانب انوار ایشان پس نظر کرد آنحضرت وپوشید انوار ایشاں را گفتندای پروردگار ما این کیست کہ پوشید نوروی انوار ما را گفت اللہ تعالی این نور محمد بن عبد اللہ است اگر ایمان آرید بوے میگرادنم شمارا انبیاء گفتند ایمان آوردیم یارب بوے وبہ نبوت وی پس گفت رب العزت جل جلالہ گواہ شدم برشمادانیست معنی قول حق سبحانہ تعالی واذا اخذ اللہ میثاق النبیین لما اتیتکم من کتاب رحکمۃ الایۃ- مدارج النبوۃ ص ۳/ ۲
ভাবার্থ: ‘হাদিস শরীফে এসেছে,যখন নূরে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করা হলো এবং তাঁর নূর থেকে (আল্লাহর হাবিবের নূর থেকে) সকল নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর নূরসমূহ বের করা হল, তখন আল্লাহ তায়ালা নূরে মোস্তফা আলাইহিস সালামকে বললেন, ঐ নূরসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।তিঁনি তাই করলেন।ফলে তাঁর নূরে সকল নূরের উপর প্রধান্য বিস্তার করল এবং অন্যান্য নূর হয়ে গেল আলোকবিহীন।তাঁরা নিবেদন করল, হে পরওয়ার দিগারে আলম! তা কার নূর যা আমাদের সকলের নূরকে ম্লান করে দিল? আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করলেন-এ নূর মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহর।তোমরা যদি তাঁর উপর ঈমান আন তবে আমি তোমাদেরকে নবুয়তের মর্জাদা দান করবো।সকলেই সমস্বরে বলল, হে আমাদের রব! আমরা তাঁর উপর ও তাঁর নবুয়তের উপর ঈমান আনলাম। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমি তোমাদের এ কথার সাক্ষী রইলাম। এদিকে ইঙ্গিত করেই কোরআন মজীদের এক আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে-
واذ اخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة الخ
অর্থাৎ আল্লাহ যখন নবীগণের নিকট থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করব। [মাদারিজুন নবুয়ত,২-৩ পৃষ্ঠা]
মূলকথা হল: রাসূল (সাঃ)‘র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয়।
ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (رحمة الله) বলেন-
اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله-
‘‘জেনে রাখুন! রাসূল (সাঃ)‘র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান হলো-এভাবে ঈমান আনা যে,আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর শরীর মোবারককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর পূর্বে পরে কোন মানুষকে তাঁর মতন করে সৃষ্টি করেননি।’’
[কুস্তালানী,মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ২/৫ পৃষ্ঠা,মাকতাবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু,মিশর।]
তাই সকলের জানা উচিত মানব জাতির অনুসরণ ও অনুকরণের সুবিধার্থে আল্লাহ তাঁকে বাহ্যিকভাবে মানবীয় আকৃতি ও মানবীয় কতেক গুণাবলি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে রয়েছে যে,হুযুরের অনুরূপ হওয়া অসম্ভব।হুযুরের বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে কাউকে হুযুরের গুণের মতো বললে, সে কাফির।
[আল-মুতামেদ, ১৩৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, ১/১৯পৃ.]
সহীহ মুসলিম শরীফের ২য় জিলদের ৩০১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে, হযরত হাসসান (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তাঁরই শানে আরবি কবিতা আবৃত্তি করেছেন। হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে যে সমস্ত কবিতা আবৃত্তি করতেন সে কবিতাগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি শ্লোক বা কবিতা নিন্মে পেশ করা হল:
ﺍﻧﻚ ﻭﻟﺪﺕ ﻣﺒﺮﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻋﻴﺐ
ﻛﺎﻧﻚ ﺧﻠﻘﺖ ﻛﻤﺎ ﺗﺸﺎﺀ
ﻭﺿﻢ ﺍﻻ ﻟﻪ ﺍﺳﻢ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺑﺎﺳﻤﻪ
ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺍﺷﻬﺪ
ﻭﺷﻖ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺍﺳﻤﻪ ﻟﻴﺠﻠﻪ
ﻓﺬﻭ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻭﻫﺬﺍ ﻣﺤﻤﺪ
(ﺩﻳﻮﺍﻥ ﺣﺴﺎﻥ ০ ﺣﻠﺒﻰ ﺷﺮﻳﻒ )
অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই আগমন করেছেন।আঁপনার এই সুরত মনে হয় যেন আঁপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম নিজের নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন।এর প্রমাণ হল,যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাজের জন্য আশহাদু আন্না মুহাম্মাাদার রাসূলুল্লাহ বলে আজান দেয়।
আল্লাহ তা’য়ালা আঁপন নামের অংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন,তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে।এর প্রমাণ হচ্ছে আরশের অধিপতির নাম হলো মাহমুদ এবং তাঁর নাম হল মুহাম্মাদ।
[দিওয়ানে হাসসান দ্র: এবং শেষের দুটি শ্লোক সিরতে হলবী নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৭৯ পৃষ্ঠায় আছে]
কেননা তিঁনিই সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু; তাঁর উসিলায় জগত সৃষ্টিঃ আমরা যে জান্নাত লাভের প্রতীক্ষায় এবং জাহান্নামের ভয় পাই তাও নবীজি (সাঃ)‘র ওসিলায় মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।হাদিসে পাকে রয়েছে
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.
‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি মুহাম্মদ (সাঃ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত,না দোযখ সৃষ্টি করতাম।’’
- দলিল
*(ক.) ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১,পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭ *(খ.) ইমাম তকিউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃষ্ঠা
*(গ.) জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ হাদিসঃ ২১
*(ঘ.) হাইসামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃষ্ঠা
*(ঙ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ২/১১৪ পৃষ্ঠা
*(চ.) ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭পৃ:
*(ছ.) আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃষ্ঠা
*(জ.) যুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব: ১২/২২০ পৃষ্ঠা
*(ঝ.) ইবনে কাসীর,কাসাসুল আম্বিয়া,১/২৯ পৃষ্ঠা,দারুল তা‘লিফ,কাহেরা,মিশর
★ইবনে কাসীর,সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃষ্ঠা,দারুল মা‘রিফ,বয়রুত লেবানন
★ইবনে কাসীর,মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃষ্ঠা,মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর।
*(ঞ.) ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন।
হযরত কাব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন,আকাশকে উঁচু করলেন এবং আঁপন নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন। তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন‘ তুঁমি মুহাম্মাদ হয়ে যাও।’অতএব সে নূর স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোঁমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোঁমার নাম মুহাম্মাদ রেখেছি। তোঁমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোঁমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব ।
[সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড,পৃঃ ৫০]
২. হযরত আদম (আ:) এঁর অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হওয়া ও দুনিয়ায় আগমণ।হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত।
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,হযরত আদম (আঃ) থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিঁনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।]
তখন তিঁনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর ওসীলায় আঁমি তোঁমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (সাঃ) কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাঁকে কখনো দেখ নি)?
তখন তিঁনি বলেন-যখন আঁপনি আঁমাকে সৃষ্টি করেছেন,আঁমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আঁমি আরশে লেখা দেখলাম-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।তখনই আঁমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই
যার নাম আঁপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।তখন ওহী নাজীল হল-তিঁনি সর্বশেষ নবী।তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।যদি তিঁনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”
[আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া: ১/১৮ পৃ:]
- হাদিসের মান পর্যালোচনা
*১. ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ।আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
*২. ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম,পৃ:১২০
*৩. ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
*৪. ইমাম কাস্তলানী বলেন,হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ ১/১৬৫
*৫. ইমাম সামহুদী বলেন,হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
**৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসায়েসুল কুবরাঃ১/৮*৭. সালাফীদের গুরু ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদিসটি দলিল হিসাবে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।”যদি মুহাম্মাদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন,এ হাদিসটি পূর্বের কথাকে শক্তিশালী করেছে।
[মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯]*৮.বাতিলদের জবাবে ইমাম ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন,এই হাদিসটি বানোয়াট নয়।এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।তিনি আরও বলেছেন,হাদিসের বর্ণনাকারী আব্দুর রাহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মিথ্যাবাদী নন।এবং এ হাদীসটি ও জাল নয়।বরং হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী।এমন হাদিস দ্বারা দলিল প্রদান করা যাবে নিঃসন্দেহে।
[আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ-১/১৯৫] - *৯. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন,এ কথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।
[আল আসরারুল মারফুআহ,১/২৯৫, মাওয়ারিদুর রাবী ফি মওলদুন্নবী; ১/১৮]*১০. দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশ্রাফ আলী থানভীও উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[নশরুত্তীব; পৃষ্ঠা ২৭।]*১১. ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (রহ:) স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘শারহে শামায়েল’ এ ইমাম হাকিমের রায় “হাদিসটি সহিহ্” হওয়াকে গ্রহণ কররেছেন।
[ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (রহ:) ‘শারহে শামায়েল’; ১/১১৫]*১২. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী (রহ:) উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[ইমাম ইউসূফ নাবাহানী: যাওয়াহিরুল বিহার; ২/১১৪।]*১৩. রিযাল শাস্ত্রবিদদের অন্যতম আল্লামা আযলূনী (রহ:) স্বীয় ‘কাশফুল খাফা’ এর দুই স্থানে উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[কাশফুল খাফা; ১/৪৬, ২/২১৪]
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত।
رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, হযরত আদম (আঃ) থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিঁনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।]
তখন তিঁনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর ওসীলায় আঁমি তোঁমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (সাঃ)কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাঁকে কখনো দেখ নি)?
তখন তিনি বলেন-যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন,আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে,মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই ।যাঁর নাম আঁপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।তখন ওহী নাজীল হল-তিঁনি সর্বশেষ নবী।তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”
[খাসায়েসুল কুবরা:১/১২;হা:১২]
★ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।
[আল খাসায়েসুল কুবরাঃ১/৮]
আরো পড়ুন:ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
★৩. হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে:
عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه
و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি ( যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উঁনাদের শেষে।”
[ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫ ]
হযরত ইবনু আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত রয়েছে, তাঁরা বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার জন্য নবুয়্যত কখন অবধারিত হয়েছে? জবাবে নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেন-
كنت نبيا وادم بين الروح والجسد
‘আঁমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম দেহ ও রূহের মধ্যে ছিলেন।’
[ইমাম সুয়ূতী, খাছায়েছুল কুবরা: ১/৩]
★৪. হযরত আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, নবী করীম সাঃ বলেন, আঁমি এবং আঁমার পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এমন,এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল; তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল।অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নবী সাঃ বলেন, আঁমিই সে ইট। আর আঁমিই সর্বশেষ নবী।
দলিল
*(ক). মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৬
*(খ). আহমাদ ৭৪৯০
*(গ). সহীহ বুখারী (মূল)-৩৫৩৫ আধুনিক প্রকাশনী: ৩২৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন:৩২৮০
★৫. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।
عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳(
হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া(রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম (আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা (আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।
*দলিল
*(ক.) মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদিস নং ৫৭৫৯
*(খ.) ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ
*(গ.) ঈমাম আহমদ ঈবনে হাম্বল(রহঃ): আল মুসনাদ ৫ম খণ্ড, ২৬২ পৃঃ
*(ঘ.) মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ, ১০ম খণ্ড, ২৯ পৃঃ
*(ঙ.) ডঃ আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী: আস- সিরাতুন নববীয়্যাহ,(কায়রুঃ দারুল ফজর লিত-তুরাস,১ম সং,১৪২৪ হিঃ/২০০৩ খৃ:) ১ম খণ্ড, ৫৯ পৃঃ
*(চ.) বায়হাকি: দালায়েলুন নবুয়ত :১/৮৩
*(ছ.) তাফসীরে ইবনে কাসীর :৪/৩৬০
*(জ.) হাকেম : মুসতাদরিক: ৩/৬১৬
*(ঝ.) নূর তত্ব, ৬৯ পৃঃ
কাযি শাওকানী তার এ তাফসীর গ্রন্থে সূরা আন’আমের ১৬৩ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেন-
وَقِيلَ: أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ، لِأَنَّهُ وَإِنْ كَانَ مُتَأَخِّرًا فِي الرِّسَالَةِ فَهُوَ أَوَّلُهُمْ فِي الْخَلْقِ، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ –
“হুযুর করীম (সাঃ) সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম।কেননা,তিনি রাসূল হিসেবে পরে আবির্ভূত হলেও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম।আল্লাহ তা’য়ালার উক্তি-স্মরণ করুন! যখন আমি মজবুত ওয়াদা নিয়েছি নবীগণ থেকে, আপনার নিকট থেকে এবং নূহ (عليه السلام) থেকে।এতে ঐ কথাই বিবৃত হয়েছে।”
[শাওকানী,তাফসীরে ফাতহুল কদীর, ২/২৩৬ পৃষ্ঠা,প্রাগুক্ত]
শুধু তাই নয় শাওকানী রাসূল (সাঃ)‘র বিলাদাতের আলোচনা করতে গিয়ে একটি হাদিস আনেন এভাবে-
وَبُشْرَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَرَأَتْ أُمُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَنَامِهَا أَنَّهُ خَرَجَ مِنْ بَيْنِ رِجْلَيْهَا سِرَاجٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورَ الشَّامِ.
‘‘আঁমি হলাম হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম (عليه السلام) এর সুসংবাদ; আর মা আমেনা (رضي الله عنه) দেখেছিলেন যে, তাঁর থেকে [নুরে মুহাম্মাদী (সাঃ)] নূর বের হয়েছিল যা শাম দেশের অট্টালিকাগুলো আলোকিত হয়ে গিয়েছে।’’
[শাওকানী,তফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৪/৩০৮ পৃষ্ঠা,প্রাগুক্ত]
শুধু তাই নয় -শাওকানী রাসূল (সাঃ) সকল নবিদের সর্ব প্রথম এমনকি বাবা আদমেরও আগে সৃষ্টি বর্ণনা করেন তার তাফসিরে এভাবে-
وَابْنُ أَبِي حَاتِمٍ وَابْنُ مَرْدَوَيْهِ، وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي الدَّلَائِلِ وَالدَّيْلَمِيُّ، وَابْنُ عَسَاكِرَ مِنْ طَرِيقِ قَتَادَةَ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ الْآيَةَ قَالَ:্রكُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ-
ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله),- ইবনে মারদুআহ (رحمة الله), – আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) তার দালায়েলুল নবুয়াতে, – ইমাম দায়লামী (رحمة الله) এবং- ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) তাদের স্ব-স্বগ্রন্থেঃ↓ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে তিনি ↓হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) থেকে তিনি ↓হযরত আর হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, ↓তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা দিচ্ছেন –
“সুরা আহযাবের ৭নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন, “আমি সৃষ্টিতে সকল নবিদের প্রথম এবং প্রেরণে সবার শেষে।”
[শাওকানী,তাফসীরে ফাতহুল কুদীর, ৪/৩০৮ পৃষ্ঠা,প্রাগুক্ত]
আহলে হাদিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী তার একাধিক গ্রন্থে হাদিসটি সংকলন করেছেন।তার সু প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ ‘‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’’।সেখানে তিনি ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর সংকলিত একটি হাদিসে পাক যেমন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ “
‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,যখন আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন,তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন।হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন।অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? আল্লাহ তা‘য়ালা বললেন,এ তোমার আওলাদ হবে, তার নাম আসমানে আহমদ।তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং তিনি প্রেরণে (নবীদের) শেষ।তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।’’
★আলবানীর তাহক্বীকঃ আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري؛
‘‘আমি (আলবানী) বলছি,এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’ , ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’
★আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন।আমি বলবো এ হাদিসটি সহিহ এবং এ রাবীর হাদিসও গ্রহণযোগ্য।
হাদিসের সনদ মান বিশ্লেষণ
★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন
وقال عثمان الدارمي سألت بن معين عن الربيع فقال ليس به بأس
‘‘উসমান দারেমী (رحمة الله) এ রাবী সম্পর্কে ইবনে মুঈন (رحمة الله) এর কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
★ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال عمرو بن علي سمعت عفان يقول كان مبارك معتبرا
‘‘হযরত আমর বিন আলী (رحمة الله) বলেন,আমি শায়খ আফ্ফান (رحمة الله)কে বলতে শুনেছি মোবারকের তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’
★ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وذكره بن حبان في الثقات –
‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’
★ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال العجلي لا بأس به وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة
‘‘ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আবু যারওয়া (رحمة الله) বলেন, তিনি অনেক হাদিসে তাদলীস করতেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
★ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال بن أبي خيثمة عن بن معين معين ثقة
‘‘ইমাম ইবনে আবি খায়ছামা (رحمة الله) তিনি ইবনে মাঈন (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন যে, মোবারাক সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’ তাই প্রমাণিত হল সনদটি সহিহ তাতে কোন সন্দেহ নেই।
- লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ বুঝা গেল আদম (عليه السلام) ও আমাদের নবীকে নূর হিসেবেই দেখেছেন।কিন্তু আহলে হাদিস ও দেওবন্দীরা তাঁর সন্তানেরা এর বিপরীত কথা বলে।এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট করে প্রমাণ হয়, রাসূলে করিম (সাঃ) সৃষ্টির প্রথম, সৃষ্টির সূচনালগ্নে নবী হিসেবে ছিলেন এবং আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেও তিনি নূর অবস্থায় ছিলেন।অতএব,রাসূলে করিম (সাঃ) আদম (عليه السلام) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন।কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলে হযরত আদম (عليه السلام)। যা পূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে।
★৬. ইমাম বায়হাকী (رحمة الله), ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله), ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সহ অনেক ইমাম সংকলন করেছেন-
عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ , مَا كَانَ بَدْءُ أَمْرِكَ؟ قَالَ:دَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيمَ , وَبُشْرَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَرَأَتْ أُمِّي أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ مِنْهُ قُصُورُ الشَّامِ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ ্রخَرَجَ مِنِّي
‘‘হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) বলেন,রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে আপনার শুরু হল? প্রিয় নবি (সাঃ) বলেন,আমি ইবরাহিম (عليه السلام)-এর দোয়া, ঈসা (عليه السلام) -এর সুসংবাদ, নিশ্চয় আমার মা তাঁর ভিতর থেকে নূর বের হতে দেখেন, ঐ নূরের আলোতে শাম দেশের দালানগুলো আলোকিত হয়ে যায়।’’
★এ হাদিসটি প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন-
أخرجه ابن سعد بإسناد رجاله ثقات.
‘‘ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেছেন আর সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।’’
★আলবানী এ হাদিসটি প্রসঙ্গে অন্য পুস্তকে লিখেন-
(صحيح)…..ابن سعد عن أبى أمامة
-‘‘(সহীহ)…..ইবনে সা‘দ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে।’’
★ইমাম আব্দুর রাউফ মানাভী (رحمة الله) লিখেন-
قال ابن حجر: صححه ابن حبان والحاكم -‘
‘ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইমাম হাকেম সনদটিকে সহিহ বলেছেন।’’
- লক্ষণীয় একটি বিষয়ঃ এই হাদিসে বলা হয়েছে-
خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ –
‘‘নিশ্চয় মা আমেনার ভেতর থেকে নূর বের হয়েছে।’’
★আর এটি তিনি দেখেছিলেন জাগ্রত অবস্থায় ও চর্ম চোখে।এখানে মাটির কথা বলেননি বরং নূরের কথাই তিনি বলেছেন।
দেওবন্দীরা যাকে অস্বীকার করলে তাদের হাদিসের সনদ হারিয়ে ফেলে যিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি হচ্ছেন আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)।মুহাদ্দিস সাহেব স্বীয় সিরাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নবুয়ত” এর দ্বিতীয় খন্ডের ২য় পৃষ্ঠায় – রাসূল (সাঃ) এঁর সৃষ্টি সম্পর্কে উল্লেখ করেন।
بدانك اول مخلوقات وواسطہ صدور كا ئنات وواسطہ خلق عالم وادم عليه السلام نور محمد صلى الله عليہ وسلم ست چنانچہ حديث در در صحيح دار دشده كہ اول ما خلق الله نورى وسائر مكونات علوى وسفلى ازاں نور وازاں جوهر پاك پيدا شده-
“জেনে রেখাে,সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং কুল মাখলুকাত তথা আদম সৃষ্টিরও একমাত্র মাধ্যম নূরে মুহাম্মদী।কেননা সহিহ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে
اول ما خلق الله نورى
‘আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আঁমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উৰ্ব্ব ও নিম্ন জগতের সবই তাঁরই নূরে পাক ও মৌলিক সত্ত্বা থেকেই সৃষ্ট।”
[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী: মাদারেজুন নবুয়্যাত: ২/২]
তিনি তাঁর কিতাবে সূরা আনআমের ১৬৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলেন-
اما اول وى صلى الله عليہ وسلم اوليت درايجاد كہ اول ما خلق الله نورى اوليت در نبوت كہ كنت اويست نبيا وادم منجدل فى طينة واول در عالم در روز ميثاق الست بربكم قالوا بلى واول من امن بالله وبذالك امرت وانا واول المسلمين-
‘‘তিঁনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম।ইরশাদ করেন,আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন,তাহলো আঁমারই নূর।তিঁনি নবুওয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। অতপর ইরশাদ ফরমান,আঁমি নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছিল (এঁর সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি)। তিঁনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহর বাণী ‘আঁমি কি তোমাদের রব নই?’ এঁর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যাঁ’ বলে সম্মানিত উত্তরদাতা।তিঁনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী।’’
[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী: মাদারেজুন নবুয়্যাত: ১/৬ পৃ.]
শাব্বির আহমদ উসমানী তিনি ওলামায়ে দেওবন্দের সুপ্রসিদ্ধ আলেম।তিনি নিজে কুরআনের একটি তাফসীর গ্রন্থও লিখেছেন।তার রচিত তাফসিরে তিনি বলেন
عموما مفسرين وانا اول المسلمين كا مطلب يہ ليتے ہیں كہ اس امت محمد يہ كے اعتبار سے آپ اول المسلمين ليكن جب جامع ترمذى كى حديث “كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد” كے موافق آپ اولا الانبياء ہیں تو اول المسلمين ہونے ميں كيا شبہ هو سكتا ہے –
“সাধারণত মুফাসসিরগণ “আঁমি সর্বপ্রথম মুসলিম” এর ব্যাখ্যা এভাবেই করে থাকেন যে তিনি উম্মতে মুহাম্মদিয়ার তুলনায় সর্বপ্রথম মুসলিম।কিন্তু জামে তিরমিযীর হাদিস। “আঁমি তখন নবি ছিলাম,যখন আদম রূহ ও দেহের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।” (অর্থাৎ- তাঁর সৃষ্টি হয়নি) এর আলােকে যেহেতু তিঁনি সর্বপ্রথম নবী, অতএব,তিঁনি মৌলিক অর্থে সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়াতে কি সন্দেহ থাকতে পারে? (অর্থাৎ তিঁনি নি:সন্দেহে সর্বপ্রথম মুসলিম)”
[মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী: তরজুমানুল কোরআন: পাদটিকা মাওলানা শাব্বির আহমদ।ওসমানী: পাদটিকা ২, পৃঃ১৪]
★৭. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
كنت اول النبيين في الخلق واخرهم في البعث
‘আঁমি হলাম সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে নবীদের শেষ।’
দলিল
*(ক.) ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২
*(খ.) ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫
*(গ.) ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০
*(ঘ.) ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩
হাদিস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে:
عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه
و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আঁমি প্রেরিত হয়েছি ( যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।”
দলিল
*(ক.) তাফসীরে বাগবী ৫/২০২
*(খ.) দূররে মানছুর ৫/১৮৪
*(গ.) শেফা শরীফ ১/৪৬৬
*(ঘ.) মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬
*(ঙ.) কানযুল উম্মাল, ৩১৯১৬
*(চ.) ইমাম দায়লামী,আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২
*(ছ.) ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫
*(ছ.) ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০
*(জ.) ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩
*(ঝ.) তাফসীরে রুহুল মায়ানী ২১/১৫৪
*(ঞ.) জাওয়াহিরুল বিহার ৪/২৩৪
*(ট). সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন,তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন।হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন।অবশেষে তিঁনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিঁনি ইরশাদ করলেন,এ তোঁমার আওলাদ আহমদ (সাঃ)।তিঁনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে,হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’
দলিল
*(ক.) ইমাম বায়হাকী,দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
*(খ.) ইমাম সুয়ূতী: খাসায়েসুল কোবরা: ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩।
*(গ.) আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক: ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন।
*(ঘ.) ইমাম জুরকানী,শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
*(ঙ.) মুত্তাকী হিন্দী: কানযুল উম্মাল: ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬
*(চ.) আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা,৪/২৮৫ পৃ.
*(ছ.) ইমাম কাস্তাল্লানী,মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া,১/৪৯ পৃ.
*(জ.) ইমাম দিয়ার বকরী,তারীখুল খামীস,১/৪৫ পৃ.
*(ঝ.) সার্রাজ, হাদিসাহ, হাদিস নং.২৬২৮
*(ঞ.) ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখালিসিয়্যাত,৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০। *(ট.) সালিম জার্রার,আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ,৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩।
*(ঠ.) ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ,১/৭১ পৃ.
*(ড.) ইফরাকী,মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক, ২/১১১ পৃ.।
*(ঢ.) শরহে মাওয়াহেব ১/৪৩
- এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
- এমনকি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري
‘‘আমি (আলবানী) বলছি,এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’
[আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২]
- ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-
وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة
‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ হযরত জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’
[ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা,সৌদি আরব,প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.]
- এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস,হাফেযুল হাদিস,বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উলেখ করেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে,যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি।সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (সাঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে,তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে,তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত: স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (সাঃ)-এঁর কে সকল সৃষ্টির প্রথম এবং রাসূলের নবুয়্যত যে অবধারিত তা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন,তারপরও যারা এঁর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা চিন্তার বিষয়!
★৮. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
حَدَّثَنَا أَبُو هَمَّامٍ الْوَلِيدُ بْنُ شُجَاعِ بْنِ الْوَلِيدِ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ قَالَ “ وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَفِي الْبَابِ عَنْ مَيْسَرَةَ الْفَجْرِ .
৩৬০৯। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! আঁপনার নবুওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? তিঁনি বললেনঃ যখন আদম (আঃ) তাঁর শরীর ও রুহের মধ্যে ছিলেন।
[সহীহঃ সহীহাহ (১৮৫৬), মিশকাত (৫৭৫৮)]
★আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে গারীব।উপর্যুক্ত সনদেই আমরা শুধুমাত্র হাদীসটি অবগত হয়েছি। মাঈসারাহ আল-ফাজর হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
★৯. হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিঁনি বলেছেন “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম (আঃ) মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। অপর সহিহ বর্ননায় আছে, যখন আদম (আঃ) রুহ ও দেহের মধ্যে ছিলেন।”
দলিল
*(ক.) সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদীস নং-৬৪০৪
*(খ.) মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩
*(গ.) মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯
*(ঘ.) মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫
*(ঙ.) শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২
*(চ.)মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯
*(ছ.)আল মু’জামুল কাবীর,হাদীস নং-৬৩১
আরো পড়ুন:সহীহ্ হাদিসের আলোকে কবর যিয়ারত কী জায়েয
★১০. হাদিস শরীফে আরও এরশাদ হয়েছে:
ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺟﻌﻔﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻨﺎﻥ ﺍﻟﻌﻮﻓﻲ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﻃﻬﻤﺎﻥ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﺴﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﻣﻴﺴﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻣﺘﻰ ﻛﻨﺖ ﻧﺒﻴﺎً؟ ﻗﺎﻝ : « ﻟَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻷﺭْﺽَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻓَﺴَﻮَّﺍﻫﻦَّ ﺳَﺒْﻊَ । ﺳَﻤَﻮﺍﺕٍ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻌَﺮْﺵَ ﻛَﺘَﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﺎﻕِ ﺍﻟﻌَﺮْﺵِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﺍِ ﺧَﺎﺗَﻢُ ﺍﻷﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺍﻟَّﺘﻲ ﺃﺳْﻜَﻨَﻬَﺎ ﺁﺩَﻡَ ﻭَﺣَﻮَّﺍﺀَ ﻓَﻜَﺘَﺐَ ﺍﺳْﻤِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻷﺑْﻮَﺍﺏِ ﻭَﺍﻷﻭْﺭَﺍﻕِ ﻭَﺍﻟﻘِﺒَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟﺨِﻴَﺎﻡِ ﻭَﺁﺩَﻡُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺮُّﻭﺡِ ﻭﺍﻟﺠَﺴَﺪ
হযরত মায়সারাহ (রা:) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন -আমি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে রাসূল (সাঃ) আঁপনি কখন থেকে নবী ছিলেন?
নবীজি বললেন আল্লাহ তা’আলা যখন জমিন সৃষ্টি করলেন অতঃপর আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন অতঃপর আসমানকে সাতটি স্তরে তৈরি করলেন অতঃপর আরশ তৈরি করলেন এবং আরশের খুটিতে লিখে দিলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সর্বশেষ নবী।অতঃপর আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করলেন যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) বাস করেছিল। আর আমার নাম জান্নাতের দরজা সমূহে,লিখে দেওয়া হয়েছিল। তখনো আদম রুহ ও শরীরে আলাদা ছিলো এবং (আঁমি তখনো নবী ছিলাম)।
[ইবনে জাওযি (রহ:) আল ওয়াফা ফি আহওয়ালিল মোস্তফা : পৃঃ ২৬]
★ইমাম মুহাম্মদ ইউসুফ আল সালেহী (রহ:) বলেন-
ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﻮﺯﻱ ﺑﺴﻨﺪ ﺟﻴﺪ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ
ইবনে জাওযি (রহ:) অত্র হাদিস বর্ণনা করেছেন, এটির সনদ শক্তিশালী এবং এতে কোন ত্রুটি নেই।
[সুবুলুল হাদি ওয়ার রাশাদ, ১/৮৬]
ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ-
‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এঁর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো।কারণ যদি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) না হতেন,তাহলে আঁমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম,না বেহেশত,না দোযখ সৃজন করতাম।আঁমি (আল্লাহ) যখন পানির উপর আরশ তৈরী করেছিলাম,তখন তা এদিক সেদিক কম্পন করতে লাগল।তখন আঁমি তার উপর কালেমা শরীফ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখে দিলাম অতঃপর আরশ স্থির হয়ে গেল।’’
দলিল
*(ক.) ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক,২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, *(খ.) আল্লামা ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম, ৪৫ পৃ.
*(গ.) আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী, আফজালুল র্কুরা
*(ঘ.) আল্লামা সিরাজুদ্দীন বলকীঃ ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, ১/১৪০ পৃ.
*(ঙ.) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ মাওদ্বুআতুল কাবীর, ১০১ পৃ.
*(চ.) ইমাম ইবনে সা’দঃ আত্-তবকাতুল কোবরা
*(ছ.) ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া
*(জ.) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ পৃ. হাদিসঃ ২১
*(ঝ.) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃ.
*(ঞ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী,জাওয়াহিরুল বিহার, ২/১১৪ পৃ. *(ট.) ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল ইতিদাল: ৫/২৯৯ পৃ. রাবী: ৬৩৩৬
*(ঠ.) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ লিসানুল মিযানঃ ৪/৩৫৪ পৃ.
*(ড.) ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭ পৃ.
*(ণ.) আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃ.
*(ত.) জুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব: ১২/২২০ পৃ.
*(থ.) ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১/২৯ পৃ. দারুল তা‘লিফ, কায়রু, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃ. দারুল মা‘রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃ. মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর।
*(দ.) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা
✦ইমাম হাকেম (رحمة الله) এ হাদিসটিকে সংকলন করে লিখেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেননি।’’
[ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হা/৪২২৭]
✦ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ সমাধানকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله), ইমাম সুবকী (رحمة الله), ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)সহ এক জামাআত মুহাদ্দিসগণ মেনে নিয়েছেন যে হাদিসটির সনদ সহীহ বলেছেন।
★★ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উক্ত সনদের অন্যতম রাবী ‘আমর ইবনু আউস আল-আনসারী’ সম্পর্কে লিখেন-‘‘এ লোকটি মূলত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।………এটি ইবনু আব্বাসের নামে বানানো জাল হাদীস।’’ অথচ তিনি নির্ভরযোগ্য কোন আসমাউর রিজালের আলোকে উক্ত রাবীকে অজ্ঞাত পরিচায়ক প্রমাণ করতে পারেননি।
✦অথচ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি সহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন-
وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসখানা সংকলন করেছেন, সহীহ্ বলে মত প্রকাশ করেছেন।”
[ইমাম সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৯ পৃ:; আল্লামা সামহুদী: ওফাউল ওফা, ৪/২২৪ পৃ:]
✦ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) রাবী ‘আমর বিন আউস’ এর বিস্তারিত জীবনী আলোচনা করেছেন তিনি তাকে মাজহুল বলেননি।
[মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১০/১৩৩ পৃ. ক্রমিক.৪০৬৩]
পর্যালোচনা
★এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে রাসূল (সাঃ) কে সৃষ্টি করা না হলে না আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হতো, না জান্নাত, না জাহান্নাম সৃষ্টি করা হতো।
এবার এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করা হল:
১ম সনদ
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,
২য় সনদ
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,
-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد
”মহান আল্লাহ পাক উঁনার রাসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আঁপনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আঁপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন,তাঁরা যেন উঁনার প্রতি ঈমান আনে।
যদি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করতাম না,যদি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।আর যখন আঁমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো,যখনই আরশের মধ্যে
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم
লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ
দলিল*
*(ক.) মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ:),কিতাব: তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন খন্ড: ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
*(খ.) মুখতাছারুল মুসতাদরাক: ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা
★ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র উস্তাদ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) [ওফাত. ২৩০ হি.] একটি হাদিস সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে দুই ধারায় বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
দলিল
*(ক.) ইমাম ইবনে সা‘দ,আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
*(খ.) ইবনে কাসির,বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
*(গ.) শিফা শরীফ,১/১১৪ পৃ.
*(ঘ.) কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃ.
সনদ পর্যালোচনা
★আহলে হাদিসদের এবং জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের ইমাম,ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) [ওফাত. ৭৭৪ হি.] এ হাদিস সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি অধিক দৃঢ় ও অধিক বিশুদ্ধ।’’
[ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.]
আপনারাই দেখুন ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এই হাদিসটির দুটি ধারায় বর্ণনা করেছেন আর প্রত্যেকটিই সনদই অনেক শক্তিশালী।হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর আরেকজন ছাত্রও এই হাদিসটি তার থেকে বর্ণনা করেছেন।
★ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وروى ابن إسحاق عن قتادة مرسلا قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، كنت أول الناس في الخلق وآخرهم في البعث
‘‘ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) তিনি কাতাদা (رضي الله عنه) হতে মুরসাল হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
[ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৮ পৃ.]
★ইবনে ইসহাক সহীহ মুসলিমের রাবী এবং সত্যবাদী।
[ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৬৭ পৃষ্ঠা, ক্রমিক. ৫৭২৫]
- বুঝা গেল কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে এই হাদিসটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
★হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর চতুর্থ সূত্রটি ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) মারফূ মুত্তাসিল সনদে উল্লেখ করেন এভাবে-
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.
‘‘তিনি যথাক্রমে…জাফর ইবনু আহমাদ ইবনে আসেম থেকে তিনি হিশাম ইবনু আম্মার তেকে তিনি ওয়ালীদ থেকে তিনি তার দুই উস্তাদ খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর থেকে তিনি তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি হাসান বসরী (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিওবা প্রেরিত হয়েছি (নবীদের ক্ষেত্রে) সবার শেষে।’’
[ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৪৮৮-৪৮৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০৬]
- সনদ পর্যালোচনা
এই সনদটিও সহীহ লিগাইরিহী; কেননা এই সনদের তাবেয়ী কাতাদার দুই ছাত্র খুলাইদ এর হাদিসের মান ‘হাসান’ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর এর হাদিসের মান ‘সহীহ’ পর্যায়ের।
খুলাইদ ইবনে দা‘লাজের গ্রহণযোগ্যতা:
★ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: هُوَ صَالِحٌ.
‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি।’’
★যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/১৯৬ পৃ.
★যাহাবী,মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৬৬৩ পৃ. ★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৫৪ পৃ. ★ইমাম মিয্যী,তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.
ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَال أَبُو حاتم الرازي : صالح.
‘‘ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’
তার হাদিসের মান ‘হাসান’ বলে বুঝা যায়।
[ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.]
তবে ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার দুটি সনদ সংকলন করেন; আর দুটোকেই সহীহ বলেছেন।যেমন-
حَدَّثَنَا مُكْرَمُ بْنُ أَحْمَدَ الْقَاضِي، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الْأَبَّارُ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَرْكُونُ الدِّمَشْقِيُّ، ثنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ أَبُو عَمْرٍو السَّدُوسِيُّ، أَظُنُّهُ عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا …… هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
‘‘…খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি আবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে……….ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন,এই সনদটি সহীহ।’’
[ইমাম হাকেম,আল-মুস্তাদরাক, ৩/১৬২ পৃ. হা/৪৭১৫, তিনি তার আরেকটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন।দেখুন-ইমাম হাকেম,আল-মুস্তাদরাক, ৪/৮৫ পৃ. হা/৬৯৫৯]
কাতাদার দ্বিতীয় ছাত্র সাঈদ ইবনে বাশিরের গ্রহণযোগ্যতা: হযরত কাতাদার অপর ছাত্র ‘সাঈদ ইবনু বাশীর বাছরী’ এর হাদিস সর্বনিম্ন ‘সহীহ’ পর্যায়ের।কেননা তিনি হাফেযুল হাদিস ছিলেন।
★ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، الصَّدُوْقُ، الحَافِظُ
‘‘তিনি হাদিসের ইমাম,মুহাদ্দিস,সত্যবাদী, হাফেযুল হাদিস ছিলেন।’’
★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ.
‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার স্থান হচ্ছে সত্যবাদী বলা।’’
★ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ بَقِيَّةُ: سَأَلْتُ شُعْبَةَ عَنْ سَعِيْدِ بنِ بَشِيْرٍ، فَقَالَ: ذَاكَ صَدُوْقُ اللِّسَانِ.
‘‘বাকিয়্যাত তিনি ইমাম শুবা (رحمة الله) কে সাঈদ ইবনে বাশীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,তিনি সত্যবাদী।’’
★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.
তবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
قال بقية عن شعبة ذاك صدوق اللسان وفي رواية صدوق اللسان في الحديث
‘‘তার থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে,তিনি হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
قال عثمان الدارمي سمعت دحيما يوثقه
‘‘হযরত উসমান দারেমী (رحمة الله) বলেন, আমি আমি দুহাইম (رحمة الله) কে তাকে সিকাহ বলতে শুনেছি।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال أبو بكر البزار هو عندنا صالح ليس به بأس.
‘‘ইমাম আবু বকর বাজ্জার (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট তিনি সৎ হাদিস বর্ণনাকারী, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]
ইমাম যাহাবী আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ مَرْوَانُ الطَّاطَرِيُّ: سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ يَقُوْلُ: حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بنُ بَشِيْرٍ، وَكَانَ حَافِظاً. وَقَالَ دُحَيْمٌ: يُوَثِّقُونَهُ، كَانَ حَافِظاً.
‘‘মারওয়ান আত-তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়ানাকে বলতে শুনেছি, সাঈদ ইবনে বাশীর হাফেযুল হাদিস ছিলেন। ইমাম দুহাইম (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ, হাফেযুল হাদিস।’’
★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী, তারিখুল ইসলাম,৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.
আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
ولما ذكره ابن شاهين في الثقات قال: قال شعبة بن الحجاج: هو مأمون خذوا عنه. وذكره الحاكم في الثقات وخرج حديثه في مستدركه، وقال: كان إمام أهل الشام في عصره إلا أن الشيخين لما يخرجاه.
‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ইমাম শু‘বা ইবনে হাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, তিনি নেককার আমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতাম, ইমাম হাকেম (رحمة الله) তাকে সিকাহ তে রেখেছেন এবং মুস্তাদরাকে তার হাদিস সংকলন করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শাম দেশের তৎকালিন যুগের ইমাম ছিলেন যদিও বুখারী, মুসলিমে তার হাদিস সংকলন হয়নি।’’
★ইমাম ইবনে শাহীন,তারিখু আসমাউ সিকাত, ১/৯৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৩২ ★মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال البزار: سعيد بن بشير عندنا صالح ليس به بأس حسن الحديث
‘‘ইমাম বাজ্জার বলেন, সাঈদ ইবনে বাশার আমাদের নিকট সৎ ব্যক্তি,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। তার হাদিস ‘সুন্দর’ পর্যায়ের।’’
[ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০]
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
ولما ذكره ابن خلفون في الثقات
‘‘ইমাম ইবনে খালফুন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’
[ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০]
ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার একটি হাদিস সংকলন করেন লিখেন-
حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ مُحَمَّدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ الْفَقِيهُ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الدَّارِمِيُّ، ثنا أَبُو الْجُمَاهِرِ مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ التَّنُوخِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ….. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَسَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ إِمَامُ أَهْلِ الشَّامِ فِي عَصْرِهِ إِلَّا أَنَّ الشَّيْخَيْنِ لَمْ يُخَرِّجَاهُ [التعليق – من تلخيص الذهبي] صحيح
‘‘…সাঈদ বিন বাশীর তাবেয়ী কাতাদা থেকে তিনি হাসান বসরী হতে তিনি সামুরা ইবনে জুনদুব (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন,…..।ইমাম হাকেম বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ।সাঈদ ইবনে বাসীর শাম দেশের তার সময়ের হাদিসের ইমাম ছিলেন,যদিও শাইখাইন তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি।ইমাম যাহাবী (رحمة الله) একমত পোষণ করে বলেন,এটি সহীহ।’’
[ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০৩ পৃ. হা/৯৯৫, তিনি এ হাদিসকে সহীহ বলেছেন আর ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। আল-মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ২/১২৫ পৃ. হা/২৫৩৬, ২/১৬২ পৃ. হা/২৫১, ৩/১৩০ পৃ. হা/৪৬১৭, ৩/৭৪৫ পৃ. হা/৬৭০৯, ৪/১৪১পৃ. হা/৭১৬২, ৪/১৭৭ পৃ. হা/৭২৭৯, হা/৮১০৪, ৪/৫০৬পৃ. হা/৮৪২১]
এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ইমাম তাবরানী, বাগভী (رحمة الله)সহ একজামাত মুহাদ্দিগণ সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ، ثَنَا أَبُو الْجُمَاهِرِ، ثَنَا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ قَالَ كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
‘‘তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, আঁমি সৃষ্টিতে সমস্ত নবীদের পূর্বে এবং প্রেরণের দিক দিয়ে নবীদের শেষ।’’
দলিল
*(ক.) ইমাম তাবরানী,মুসনাদিশ শামেয়্যীন, ৪/৩৪ পৃ. হা/২৬৬২
*(খ.) ইমাম দায়লামী: আল ফিরদাউস- ৩/২৮২ পৃ. হা/৪৮৫০,৭১৯৫
*(গ.) ইমাম বাগভী: মাআলিমুত তানজীল: ৩/৫০৮ পৃ.
*(ঘ.) আল্লামা ইবনে কাসীর: তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৪৭০ পৃ.
*(ঙ.) আল্লামা আলূসী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী: ১২/১৫৪ পৃ.
*(চ.) আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি,তাফসিরে দুররুল মানসূর: ৬/৫৭০ পৃ.
*(ছ.) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা: ১/৫পৃ. হা/১
*(জ.) ইমাম ইবনে আদি: আল কামিল: ৩/৩৭৩ পৃ.
উপরের হাদিসে এবং এ হাদিসে কোনো প্রার্থক্য নেই, কেননা সকল নবীই মানব জাতিতে দুনিয়ায় এসেছেন। তবে আমাদের মত নয়। এ হাদিসের সনদও সহীহ, সনদে রাবী ‘সাঈদ বিন বশীর’ রয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বে আলোকপাত করেছি।
পর্যালোচনা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের সহীহ হাদিসের আলোকে দীবালকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে গেল যে,মহান রব তা‘য়ালা সমস্ত নবী-রাসূল এবং মানবের মধ্যে প্রথম যাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি হচ্ছেন রাসূল (সাঃ)।আর তিঁনি সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে নবী ছিলেন, এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে না।
রাসূল (সাঃ) কখন নবুয়্যত লাভ করেন/ কত বছর বয়সে নবুয়্যত প্রাপ্ত হয়েছিলেন! -৪র্থ পর্ব
★১১. নির্ভরযোগ্য হাদিস শরিফে বর্নিত হয়েছে
وعن ابلى هريرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه و سلم سائل جبريل عليه السلام فقال يا جبريل كم عمرك من السنين فقال يا رسول الله مست اعلم غير ان فى الحجاب الرابع نجما يطلع في سبعين الف سنة مرة رايته اثنين و سبعين الف مرة فقال يا جبريل و عزة ربى جل جلا له انا ذالك الكوب-
অর্থ: হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত,কোন এক সময় হযরত রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন “হে জিব্রাইল! তোমার বয়স কত বৎসর হইয়াছে?”
হযরত জিব্রাইল (আঃ) উত্তর করিলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার বয়স সম্পর্কে কিছুই বলিতে পারিনা।তবে আমি আঁপনাকে আমার বয়স সম্পর্কে এতটুকু তথ্য জানাইতে পারি যে, চতুর্থ আসমানে একটি উজ্জ্বল তারকা ছিল,উক্ত তারকাটি ৭০ হাজার বৎসর পর পর আসমানে একবার উদয় হইত।আমি উহাকে ৭২ হাজার বার উদয় হইতে দেখিয়াছি।
তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিব্রাঈল! আঁমার প্রতিপালকের ইজ্জতের কসম। নিশ্চয় আঁমিই ছিলাম সেই উজ্জ্বল নক্ষত্র বা তারকা ।”
দলিল
*(ক.) ইমাম বুখারী (রহ:): আত তাশরীফাতে ফি খাসায়েস ওয়াল মুজিজাত ২/২৫৪ পৃ:
*(খ.) ইমাম বুখারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখিত-তারিখ উল কাবির
*(গ.) ইমাম বুরহান উদ্দিন হালাবী শাফেয়ী: সিরাতে হালাবিয়্যাহ ১ম খন্ড:৪৯ পৃ: [ইমাম বুখারীর সুত্রে]
*(ঘ.) আল্লামা ইসমাইল হাক্কী: তফসীরে রুহুল বয়ান: ৩/৫৪৩,সুরা তওবা ১২৮ নং আয়াত
*(ঙ.) আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: যাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৩৩৯
[নিজস্ব সনদে আবু হুরায়রা (রা:) থেকে]
*(চ.) আল্লামা শফী উকাড়ভী: যিকরে হাসীন: ৩০ পৃ:
★ ইমাম বুরহান উদ্দিন শাফেয়ী (রহ:) একজন গ্রহনযোগ্য মুহাদ্দিস।মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) শরহে শিফা ১/৩৭ সহ অসংখ্য স্থানে ইমাম হালাবীর মতামত উল্লেখ্য করেছেন।
★ইমাম হালাবী তার সিরাতে হালাবিয়্যার প্রথমে বলেন,সীরাত গ্রন্থ সমুহে সহিহ, সাক্বীম,দ্বইফ,বালাগ,মুরসাল,মুনকাতা ও মু’দাল হাদিস সমুহ একত্রিত করা হয় কিন্তু জাল বা মওদ্বু হাদিস নয়।
[সিরাতে হালাবিয়্যাহ,১ম খন্ড,৭ পৃ:]
প্রথমটি হচ্ছে-হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করেন,আপনার বয়স কত? তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্,আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না; তবে এ সম্পর্কে এতটুকু বলতে পারি,চতুর্থ আসমানে একটি সিতারা (নক্ষত্র) আছে,যা ৭০ হাজার বছর পরপর উদিত হয়,আমি এ যাবৎ ওই সিতারাটি ৭২ হাজার বার দেখেছি।’’ এটা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘‘হে জিব্রাঈল,শপথ মহান আল্লাহর,আঁমিই সেই সিতারা।’’
[হাদিসটি জাল নয়]
প্রথম হাদীসটি যে জাল নয় বরং এর পক্ষে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে তা নিম্নোক্ত প্রদত্ত হলোঃ
★(ক.) মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবার ১২৮ নং আয়াতে ইরশাদ করেন
لَقَدْ جَاءَ كُمْ رَسُوْلٌ
অর্থাৎ- “তোমাদের নিকট এক মহান রাসুলের আগমন হয়েছে।”
[সুরা তাওবা,আয়াত নং ১২৮]
এই আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইসমাইল হাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাফসীরে রুহুল বায়ানের ৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ৫৪৩-এ বর্ণিত হয়েছে-নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথা থেকে আসলেন সে সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে নিন্মোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন:
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ يَا جِبْرَائِيْلُ كَمْ عُمْرُكَ مِنَ السِّنِيْنَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَسْتُ اَعْلَمْ غَيْرَ اَنَّ فِي الْحِجَابِ الرَّبِعِ نَجْمًا يَّطْلَعُ فِي كُلِّ سَبْعِيْنَ اَلْفَ سَنَتٍ مَّرَّةً رَأَيْتُهُ اِثْنَيْنِ وَسَبْعِيْنَ اَلْفَ مَرَّةً فَقَالَ يَا جِبْرَائِيْلُ وَعِزَّةِ رَبِّي اَنَا ذلِكَ الْكَوْكَبُ
অর্থাৎ- “একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা প্রসঙ্গে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে তার বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন-হে জিবরাঈল তোমার বয়স কত? তদুত্তরে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন-আমি জানি না,তবে আমি শুধু এতটুকু জানি যে,নূরের চতুর্থ হিজাবে একটি উজ্জল তারকা ৭০ হাজার বছর পরপর একবার উদিত হতো।(অর্থাৎ সত্তর হাজার বৎসর উদিত অবস্থায় এবং সত্তর হাজার বৎসর অস্তমিত অবস্থায় ঐ তারকাটি বিরাজমান থাকত)।আমি ঐ তারকাটিকে ৭২ হাজার বার উদিত হতে দেখেছি।তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-খোদার শপথ আঁমি ছিলাম ঐ তারকা।”
★এই হাদীসখানা আল্লামা বোরহানুদ্দিন হালভীর “সিরাতে হালভীয়্যাতে” এবং আল্লামা ইউসুফ নাবহানীর “জাওয়াহিরুল বিহারেও” উল্লেখ করা হয়েছে।
হিসাব করলে দেখা যায় যে,ঐ তারকাটি পাঁচশত চার কোটি বছর উদীয়মান অবস্থায় এবং পাঁচশত চার কোটি বছর অস্তমিত অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ মোট এক হাজার আট কোটি বছর নূরে মোহাম্মদী তারকারুপে ছিল।এবং তা অবলোকন করেছিলেন স্বয়ং জিবরাঈল আলাইহিস সালাম।উক্ত হাদীসের আলোকে নবী পাকের মহান শান ও মানের ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে।
*১. জিবরাঈল ফেরেশতা সৃষ্টির বহু আগেই নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টি হয়েছিলো।
*২. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে শুভ আগমনের পূর্বের অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত।অথচ আমরা দুনিয়ায় আসার আগে কী অবস্থায় ছিলাম তার কিছুই জানি না।তাহলে নবীজি কী করে আমাদের মতো হলেন?
*৩. নবীজি এমন অনেক কিছু জানেন যা জিবরাঈল ফেরেশতা জানেন না।অতএব, যারা দাবী করেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নবীজির শিক্ষক,তাদের দাবী ভুল।
আবার এভাবেও বলা যেতে পারে
عَن اَبِى هُرَيرَةَ رَضِىَ اَللَّهُ تَعَلى عَنهُ آَنَّ رَسُولَ اللَّهٌ عَلَيهِ وَسَلَّمَ سّآَلَ جِبرِبلَ عَلَيهِ السَّلاَمُ فَقَالَ يَا جِبرَايلُ كَم عُمُرَكَ مِنَ السِّنِينَ؟ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ لَستُ آَعلَمُ غَيرِ أَنَّ فِى الحِجُابِ الرَّابِعَ نَجمًا يَّطلَعُ فِي كُلِّ سَبعِينَ آَلفِ سَنَةٍ مَرَّةً رَأَيتُهُ اِثنَينِ وَ سَبعِينَ اَلفِ مَرَّةٍ فَقَالَ يَا جِبرَيِلُ َو عِزَّةُ رَبِّى جَلَّ جَلَا لُه‘ اَنَا ذَالِكَ الكَوكَبُ-
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জিবারঈল আলায়হিস সালামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রাঈল! তোমার বয়স কত? উত্তরে জিব্রাঈল বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো সঠিক জানি না। তবে আল্লাহ’র কসম! এতটুকু বলতে পারি (সৃষ্টি জগত সৃষ্টির পূর্বে) আল্লাহ তায়‘লা নূরানী আযমতের পর্দা সমূহের চতুর্থ পর্দায় একটি নূরানী তারকা (সিতারা) সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হত।আমি আমার জীবনে সেই নূরানী তারকা (সিতারা) বাহাত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছি।অতঃপর নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন মহান রাববুল আলামীনের ইজ্জতের কসম করে বলছি, সেই অত্যুজ্জ্বল নূরানী তারকা (সিতারা) আঁমিই ছিলাম।
[সীরাতে হালাভীয়া পৃষ্ঠা ৪৯,তাফসীরে রুহুল বয়ান,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৪৩,আল্লামা ইউসূফ নাবহানী,জাওয়াহিরুল বিহার: ৭৭৬]
★(খ.) সীরাত বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘ইনসানুল ‘উয়ূন ফী সীরাতিল আমীনি ওয়াল মা’মূন’ প্রকাশ সীরাতে হালাবিয়া: ৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
عَنْ اَبِیْ هُرَیْرَۃَ رَضِیَ اللہُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللہُ ﷺ سَأَلَ جِبْرَیِلَ عَلَیْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ یَا جِبْرِیْلُ کَمْ عُمْرُکَ مِنَ السِّنِیْنَ فَقَالَ یَا رَسُوْلَ اللہِ لَسْتُ اَعْلَمُ غَیْرَ اَنَّ فِی الْحِجَابِ الرَّابِعِ نَجْمٌ یَطْلَعُ فِیْ کُلِّ سَبْعِیْنَ اَلْفَ سَنَةٍ مَرَّۃً رَأَیْتُهٗ اِثْنَیْنِ وَسَبْعِیْنَ اَلْفَ مَرَّۃٍ فَقَالَ یَا جِبْرِیْلُ وَعِزَّۃِ رَبِّیْ جَلَّ جَلاَ لُهٗ اَنَا ذٰلِکَ الْکَوْکَبُ ـ
অর্থাৎ: হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জিব্রাইল আলায়হিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার বয়স কত? তিনি বললেন, ‘‘আমি জানি না; তবে এতটুকু বলতে পারি যে, চতুর্থ হিজাবে একটি তারকা আছে, যা সত্তর হাজার বছর পরপর উদিত হয়। আমি এ যাবৎ তারকাটি বাহাত্তর হাজার বার দেখেছি।’’ তখন রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘আমার মহামহিম রবের শপথ, আমিই হলাম ওই তারকা।’’
[সীরাতে হালাবিয়া-১ম খণ্ড,পৃ.৩৬, মাতবা‘আহ্-এ মোস্তফা মুহাম্মদ, মাকতাবাতু তেজারিয়াতিল কুবরা, মোহাম্মদ আলী সড়ক,মিশর]
এ কিতাবের ভূমিকায় সংকলক আল্লামা আলী ইবনে বুরহান উদ্দীন আল হালাবী আশ্শাফে‘ঈ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি (ওফাত ১০৪৪হি.) বলেন-
وَلاَ یَخْفٰی اَنَّ السِّیَرَ تَجْمَعُ الصَّحِیْحَ وَالسَّقِیْمَ وَالضَّعِیْفَ وَالْبَلاَغَ وَالْمُرْسَلَ وَالْمُنْقَطِعَ وَالْمَعْضَلَ دُوْنَ الْمَوْضُوْعِ
অর্থাৎ- সীরাত গ্রন্থসমূহে সহীহ্,সাক্বীম, দ্বা‘ঈফ, বালাগ, মুরসাল, মুনক্বাতি’ ও মু’দ্বাল হাদিসসমূহ সংকলন করা হয়; তবে ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হাদীস নয়।’’
[সীরাতে হালাবিয়া:১ম খণ্ড,পৃ. ২]
সুতরাং বুঝা গেলো যে,তিনি তাঁর এ সীরাত গ্রন্থে কোন ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হাদীস বর্ণনা করেননি।সুতরাং আর যাই হোক, অন্তত বর্ণিত হাদিসটি ‘মাউদ্বূ’ বা জাল হতে পারে না।অতঃপর পরবর্তী নির্ভরযোগ্য আলিমগণ বিশুদ্ধ সীরাত গ্রন্থসমূহের তালিকায়ও ‘‘সীরাতে হালাবিয়াকে’’ স্থান দিয়েছেন।যেমন-এক সময়ের হারাম শরীফের অন্যতম শিক্ষক মক্কা শরীফে শাফে‘ঈ মাযহাবের অন্যতম মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ আহমদ (প্রকাশ দাহ্লান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি,ওফাত- ১৩০৪হি.) বলেন-
اِنَّهٗ لَمَّا مَنَّ اللہُ تَعَالٰی عَلَی بِقِرَأَۃِ الشِّفَا فِیْ حُقُوْقِ النَّبِیّ الْمُصْطَفٰی ﷺ وَکَانَ ذٰلِکَ بِمَدِیْنَةِ الْمُنَوَّرَۃِ فِی الْعَامِّ الثَّامِنِ وَالسَّبْعِیْنَ بَعْدَ الْمِاءَتَیْنِ وَالْاَلْفِ یَسَّرَ اللہُ لِیْ مُطَالَعَةَ جُمْلَةٍ مِنْ شُرُوْعِ الشِّفَا مَعَ مُرَاجَعَةِ الْمَوَاهِبِ وَشَرْحِهَا لِلْعَلاَّمَةِ الزَّرْقَانِیِّ وَمَعَ مُرَاجَعَةِ شَئٍ مِّنْ کُتُبِ السِّیَرِ کَسِیْرَۃٍ اِبْنِ سَیَّدِ النَّاسِ وَسِیْرَۃٍ اِبْنِ هِشَامٍ وَالسِّیْرَۃِ الشَّامِیَّةِ وَالسِّیْرَۃِ الْحَلَبِیَّةِ وَهٰذِہِ الْکُتْبُ هِیَ اَصَحُّ الْکُتُبِ الْمُؤَلَّفَةِ فِیْ هَذَا الشَّأْنِ
অর্থাৎ-যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আমার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করলেন,তখন আমি ১২৭৮ হিজরীতে মদীনা মুনাওয়ারায় (ইমাম ক্বাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রচিত) ‘আশ্শেফা’ ফী হুক্বূক্বিন্ নবিয়্যিল মোস্তফা’-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহ সহকারে পাঠ করি। সাথে সাথে ‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’ ও এর ইমাম যারক্বানী রচিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং অন্যান্য ‘সীরাত গ্রন্থ’, যেমন ‘সীরাতে ইবনে সাইয়্যেদিন্নাস, ‘সীরাতে ইবনে হিশাম’, ‘সীরাতে শামিয়া’ ও ‘সীরাতে হালাবিয়া’ পাঠ করি। এ কিতাবগুলো হচ্ছে ‘সীরাত’ (জীবনী) বিষয়ে বিশুদ্ধতম কিতাবাদির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। [আস্সীরাতুন্ নবভিয়্যাহ্ ওয়াল আ-সারুল মুহাম্মাদিয়া-এর ভূমিকা-এটি সীরাতে হালাবিয়ার সাথে মুদ্রিত।]
★এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘সীরাতে হালাবিয়া’ একটি নির্ভরযোগ্য সীরাতগ্রন্থ।
অপরদিকে, (আরবি = নাজম) মানে হল তারকা যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর অন্যতম নাম মোবারক।অনেক তাফসীরকারকগন কুরআন পাকের সুরা “”ওয়ান্নাজম”” এর মধ্যে “”আন-নাজম”” বলতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বুঝিয়েছেন। যা উক্ত হাদিসের মধ্যে এক শক্তিশালী যুগসুত্রও স্থাপন করে।ইমাম জাফর সাদেক (রহ:) বলেন,আন-নাজম বলতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বুঝানো হয়েছে।
দলিল
*(ক.) ইমাম কুরতুবী: জামিউল আহকামুল কুরআন: ১৭/৮৩ পৃ:
*(খ.) ইমাম বাগভী: মুয়ালিমুত তানযিল : ৭/৪০০ পৃ:
*(গ.) ইমাম আলুসী: তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী : ১৪/৪৪ পৃ:
*(ঘ.) কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী: তাফসীরে মাযহারী: ৯/১০৩ পৃ:
*(ঙ.) ইমাম সাভী: তাফসীরে সাভী,৪/১২৯ পৃ:
*(চ.) ইমাম খাযেন:তাফসীরে খাযেন,৪/২০৩ পৃ:
*(ছ.) ইমাম ইসমাইল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বয়ান: ৯/২০৮ পৃ:
★১২. নূরে মোহাম্মদীর সৃষ্টির রহস্য:
মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সর্বপ্রথম যে মাখলুক সৃষ্টি করেছিলেন,তা ছিলো মহা-সম্মানী একখানা নূর মোবারক এবং সেই নূর মোবারকের নামকরণ করেছিলেন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আর এ আজিমুশশান নূর মোবারককেই বলা হয় নূরে মোহাম্মদী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টির পূর্বে যেহেতু আর কোনো মাখলুক ছিল না, সেহেতু মহান আল্লাহ তা’য়ালা হেকমতে কামেলা দ্বারা তাঁর প্রিয় হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছিলেন।কোনো ধাতু ছাড়াই কীভাবে যে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করলেন,তা কেউ বলতে পারে না।নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টির এই অজানা রহস্যকেই বলা হয় নূরে মোহাম্মদীর হাকীকত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর প্রকৃত সত্ত্বা কি,তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।যেমন: হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূল (সাঃ) একদা আমাকে লক্ষ্য করে বলেছেন-
يَا اَبَا بَكْر وَالَّذِى بَعَثْنِى بِالْحَقِّ لَمْ يَعْلَمْنِىْ حَقِيْقَةِ غَيْرِ رَبِّى-
‘হে আবু বকর, ঐ সত্ত্বার কসম! যিঁনি আঁমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন,আঁমার হাকীকত (আঁমার প্রকৃত জাত-جنس এবং সত্ত্বা-ذات) আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
দলিল*
*(ক.) ইমাম মাহদী আল-ফাসী: মাতালেউল মাসাররাত: ১২৯ পৃ.
*(খ.) আল্লামা ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৬৭ পৃ.
*(গ.) আল্লামা ইউসুফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/২৫৫ পৃ.
*(ঘ.) আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/১৫ পৃ.
*(ঙ.) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী: শরহুল ফতহুল গায়ব: ১/৩৪০ পৃ:
*(চ.) আ‘লা হযরত,সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা: ৯
এ হাদিস শরীফের মর্ম অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে:
ﻣﺤﻤﺪ ﺳﺮ ﻗﺪﺭﺕ ﮨﮯ – ﮐﻮﺉ ﺭﻣﻮﺯ ﺍﺱ ﮐﺎ ﮐﯿﺎ ﺟﺎﻧﮯ ﺷﺮﯾﻌﺖ ﻣﯿﮟ ﺗﻮ ﺑﻨﺪﮦ ﮨﮯ- ﺣﻘﯿﻘﺖ ﻣﯿﮟ ﺧﺪﺍ ﺟﺎﻧﮯ
অর্থাৎ, ‘আল্লাহর হাবিব মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুদরতে এলাহির এক গোপনীয় সুক্ষ্ম রহস্য,যার ভেদ কেউ জানতে পারে নাই।শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তিঁনিতো আল্লাহর একজন বান্দা,কিন্তু তাঁর মূল হাকীকত কী,তা জানেন একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালাই।’
আজ পর্যন্ত কোন মুহাদ্দিস উক্ত হাদিস সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেন নি।তবে এটির কোন সনদ সূত্র আমি খুঁজে পাইনি,তবে থাকতে পারে,খুঁজে পেলে পরবর্তী সংস্করণে সংযোগ করা হবে।
অপরদিকে উক্ত হাদিসের সমর্থনে আরেফীনকুল সম্রাট হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (رضي الله عنه)-এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়, যে তিনি বলেছেন-
غصت لجة المعارف طالبا للوقوف على عين حقيقة النبى صلى الله عليه وسلم : فإذا بينى وبينها ألف حجاب من نور، لو دنوت من الحجاب الأول لاحترقت به كما تحترق الشعرة إذا القيت فى النار-
‘‘আল্লাহর মারেফাতের (পরিচয়ের) সমুদ্রে আমি ডুব দিয়ে ছিলাম,তার কারণ হলো আমি যাতে রাসূল (সাঃ) এর হাকীকতের পরিচয় পেতে পারি। কী আশ্চর্য! আমি এ হাকীকতের মধ্যখানে আমার এবং রাসূল (সাঃ) এঁর মাঝে এক হাজার নূরের পর্দা প্রতিবন্ধক হয়ে গেল।যদি আমি এই নূরের পর্দা সমূহের প্রথম পর্দার নিকটে যাই তাহলে আমি জ্বলে ছাই হয়ে যাব, যেমনিভাবে একটি চুল আগুনের নিকট গেলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৬৭ পৃ:]
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান(রহঃ) বলেন:
ﻋﺎﻟﻢ ﻣﯿﮟ ﺫﺍﺕ ﺭﺳﻮﻝ ﮐﻮ ﺗﻮ ﮐﻮئى ﭘﮩﭽﺎﻧﺘﺎ ﻧﮩﯿﮟ
‘সৃষ্টিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সত্ত্বা বা যাতকে তো কেউই চিনে না।’
[আ‘লা হযরত,সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা]
তিনি আরও বলেন:
ﺍﺱ ﺗﺨﻠﯿﻖ ﮐﮯ ﺍﺻﻞ ﻣﻌﻨﯽ ﺗﻮ ﺍﻟﻠﮧ ﻭﺭﺳﻮﻝ ﺟﺎﻧﯿﮟ ﺟﻞ ﻭﻋﻠﯽ ﻭﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ
অর্থাৎ, ‘মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র সৃষ্টির মূল রহস্য একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল-ই জানেন।’
তিনি অন্যত্র বলেন-
ﮐﮧ ﻧﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪﯼ ﺟﺐ ﻗﺪﯾﻢ ﺍﻭﺭ ﺍﺯﻟﯽ ﻧﻮﺭ ﮐﯽ ﭘﮩﻠﯽ ﺗﺠﻠﯽ ﮨﮯ ﺗﻮ ﮐﺎﺋﻨﺎﺕ ﻣﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﮯ ﻭﺟﻮﺩ ﮐﺎ ﻭﮬﯽ ﺳﺐ ﺳﮯ ﭘﮩﻠﮧ ﻣﻈﮭﺮ ﮨﮯ
অর্থাৎ, ‘নূরে মোহাম্মদী যখন নূরে কাদীম ও নূরে আজলি, অর্থাৎ, আল্লাহ তা’য়ালার জাতের প্রথম তাজাল্লি,তাতে প্রমাণিত হয় সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তিনি-ই আল্লাহ তা’য়ালার অজুদ বা অস্তিত্বের প্রথম প্রকাশক।’
আ’লা হযরত (রহ:) আরো বলেন:
ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻧﮯ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﯽ ﺫ ﺍﺕ ﭘﺎﮎ ﮐﻮ ﺍﭘﻨﯽ ﺫﺍﺕ ﮐﺮﯾﻢ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍﮐﯿﺎ ﯾﻌﻨﯽ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ ﮐﯽ ﺗﺠﻠﯽ ﺑﻼ ﻭﺍﺳﻄﮧ ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮨﯿﮟ ﺑﺎﻗﯽ ﺳﺐ ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮐﮯ ﻧﻮﺭ ﻭﻇﮭﻮﺭ ﮨﯿﮟ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ
অর্থাৎ, ‘আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সত্তাকে আল্লাহর জাতে পাকের স্বীয়জাতে করিম কর্তৃক সৃষ্টি করেছেন; অর্থাৎ,আমাদের হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ তা’য়ালার জাতের তাজাল্লি, আর বাকি কুল-কায়েনাত আমাদের নূর নবীর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।’
আবার তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছে “নিশ্চয় প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) হলেন সমস্ত সৃষ্টি জগতের মূল এ জন্যেই মহান আল্লাহ্ হাদিসে কুদসিতে বলেন,হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না
[সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং ৮৫ এর তাফসির; ৫/১৯৯পৃষ্ঠা]
আরও বর্নিত আছে “রাসূল (সাঃ) বলেন, আঁমি আল্লাহ্ হতে আর মু’মিনগণ আঁমার নূরের ফায়েজ হতে সৃষ্টি…….মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সম্পর্কে বলেন, হে হাবিব, আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।
[সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ২১ এর তাফসীর; ৫/৫২৯পৃষ্ঠা।]
ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহ:) বলেন: আল্লাহ পাক নুর তবে অন্যান্য নুরের মত নন। আর নবী করিম(সাঃ) এঁর রুহ মুবারক হচ্ছে তাঁর (আল্লাহর) নুরের ঝলক। আর ফেরেশতাগন হচ্ছেন তাঁর (রাসুলের) নুরের শিখা। যেমন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নুর সৃষ্টি করেছেন আর আঁমার নুর থেকে আল্লাহ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।
[ইমাম মাহদী আল ফার্সী: মাতালিউল মুসাররাত: ২১ পৃ:]
হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী (রহ:) বলেন,পরম গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত আল্লাহ পাক বলেছেন, আঁমি আঁমার নিঁজ জাতের কুদরতী জামালের নুর হতে মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর রুহ সৃষ্টি করেছি।এর প্রমান হল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর হাদিস আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমার নুর মুবারক।
[ইমাম শাতনুফী: বাহজাতুল আসরার: ১২ পৃ]
আর “বাহজাতুল আসরার” সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া বলেন-আল্লামা সাতনুফি (রহঃ) [৭১৩হিজরি/১৩১৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল] লিখিত “বাহজাতুল আসরার” কিতাবে হযরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) সম্পাদিত এমন অনেক কারামতের বিবরণ আছে যা বহু সাক্ষী পরম্পরা দ্বারা সমর্থিত।তদ্দর্শনে ইবনে তাইমিয়া (মৃত্যু-৭২৮হিজরি/১৩২৮খৃঃ)ঘোষণা করেন যে,বিশ্বাস যোগ্যতা প্রমাণের জন্য যা দরকার এ বর্ণনাগুলোতে তার সবই আছে।
[সূত্র:ইসলামী বিশ্বকোষ]
★১৩. রাসূল (সাঃ) এঁর নবূয়াত অবধারিত ছিল।কাহাকেও কোন পদে নিযুক্তির তিনটি পর্যায় আছে।যেমন চাকুরীর জন্য
(১) বাছাই করা।
(২) চাকুরী প্রদান করা।
(৩) কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করা।
কোন সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়দ্বয় এক সঙ্গেই হয়, আর কোন সময় উভয়ের মধ্যে ব্যবধান হইয়া থাকে।সকল নবীরই নবুয়তের জন্য নির্বাচন ও বাছাই করা আদিকালে আল্লাহ তাআলার নিকট সম্পন্ন করা হইয়াছিল, কিন্তু তাহা শুধু প্রথম পর্যায়ের ছিল। অতঃপর হযরত মোহাম্মদ(সাঃ) ছাড়া অন্য সকল নবীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়দ্বয় একই সঙ্গে তাঁহাদের আবির্ভাবকালে সম্পন্ন হইয়াছে।পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এঁর ক্ষেত্রে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়া ছিলেন এবং উহা তাঁহার জন্য এক অসাধারণ গৌরব ও বৈশিষ্ট্য ছিল।তাঁহার বেলায় তৃতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান তাঁহার আবির্ভাবকালে হইয়াছিল কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান বহু বহু পূর্বে,এমনকি সারা বিশ্ব ও বিশ্বের আদি পিতা আদম (আঃ)ও সৃষ্টির পূর্বে সম্পন্ন হইয়াছিল। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এঁর এই বিশ্ব-ভূবন এবং হযরত আদমেরও সৃষ্টির পূর্বে ঊর্ধ্ব জগতে নবীরূপে বিঘোষিত ছিলেন।রাসুলুলাহ (সাঃ) এঁর একক বৈশিষ্ট্য নিম্ন হাদীসে সুষ্পষ্টরূপে বর্ণিত রহিয়াছে।
**১.আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন।সাহাবীগন জিজ্ঞাসা করিলেন,ইয়া রাসূলুলাহ! কোন সময় নিশ্চিতরূপে আঁপনার নবুয়ত লাভ হইয়াছিল? রাসূল(সাঃ) বলিলেন,যে সময় আদম তাঁহার আত্মা ও দেহের সম্মিলনে পয়দাও হইয়াছিলেন না।অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পূর্বে। এই তথ্যটি আরও কতিপয় হাদীসে বর্ণিত রহিয়াছে। যথা-ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এবং মায়সারা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে।
[সূত্র: যোরকানী,১-৩৮; নশরুত্তীব,৬নং টীকা (উক্ত টীকাটি মূল কিতাবের সংকলক মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নিজস্ব); বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃ:৬, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
**২. আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কখন আঁপনার নবূয়াত অবধারিত হয়েছে? তিঁনি বলেনঃ যখন আদম আলাইহিস সালামের দেহ ও আত্মা সৃষ্টি হচ্ছিল।
[সূত্র: জামে আত তিরমিযী,৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৭,হাদীসঃ ৩৫৪৮, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৯৯৮]
**৩. হযরত আদম (আঃ)-এঁর সৃষ্টিরও পূর্বে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হইয়াছিলেন,এমনকি তাঁহার নাম এবং তিঁনি যে আল্লাহ তাআলার রাসূল তাহা ঊর্ধ্ব জগতের সর্বত্র বিঘোষিত হইতেছিল এবং মহান আরশের গায়ে তাঁহার নাম পরিচয় এবং ‘রাসূলুল্লাহ’ খেতাব লিখিত ছিল।
[সূত্র: যোরকানী, ১-৬২; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৭, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ
**৪. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহতাআলা ঈসার (আঃ) নিকট ওহী মারফত আদেশ পাঠাইয়া ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর প্রতি আঁপনি ঈমান গ্রহন করিবেন স্বীয় উম্মতকে আদেশ করিবেন, তাহারা যেন (বর্তমানে আঁপনার মুখে শুনিয়া এবং পরবর্তীতে তাঁহার আবির্ভাব হইলে) তাঁহার প্রতি ঈমান আনে। মুহাম্মদ (এর বিকাশ সাধন ইচ্ছা) না হইলে আদমকেই সৃষ্টি করিতাম না,বেহেশতও সৃষ্টি করিতাম না,দোযখও সৃষ্টি করিতাম না।
[সূত্র: যোরকানী, ১-৪৪; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ, ৬৫, চক সারকুলার রোড, ঢাকা-১২১১]
★আবার যখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর জাহিরী ভাবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগেকার সংবাদ জানতে চাওয়া হলো,তখন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন:
قالوا يارسول الله صلي الله عليه و سلم متي و جبت لك انبوة قال وادم الروح و الجسد
অর্থ: ইয়া রাসূল্লাল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনি কখন থেকে নবী ? হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।”
দলিল
*(ক.) তিরমীযি শরীফ ,হাদীস ৩৬০৯
*(খ.) মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৩৬২০
*(গ.) মুসতাদরেকে হাকীম, হাদীস ৪২০৯
*(ঘ.) আবী শায়বা ৩৬৫৫৩
*(ঙ.) তারীখে কবীর লি ইমাম বুখারী ৭/৩৭৪
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “আঁমি তখনো নবী,যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি রূহ মুবারক ও মাটিতে ছিলেন।”
[ইবনে সা’দ,কানযুল উম্মাল ৩২১১২]
রাসূল (সাঃ) বলেন “আঁমি তখনো নবী ছিলাম,যখন পানিও ছিল না, মাটিও ছিল না।”
[মিরকাত শরীফ ১১/৫৮]
রাসূল (সাঃ) বলেন “আঁমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম পানি ও মাটিতে ছিলেন।”
[মিরকাত শরীফ ১১/৫৮]
আব্দুল্লাহ বিন শাকিক থেকে বর্ণিত।রাসূল (সাঃ) কে এক লোক প্রশ্ন করল-আঁপনি কখন থেকে নবী? তিঁনি বললেন-আঁমি তখন থেকেই নবী যখন হযরত আদম (আঃ) রুহ ও শরীরের মাঝামাঝি ছিলেন।
দলিল
*(ক.) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭০৮
*(খ.) মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৫২২২
*(গ.) কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
*(ঘ.) আফআল, হাদীস নং-৩১৯১৭
*(ঙ.) জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১৫৮৩৫
*৮. হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে,তিঁনি বলেছেন-নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম (আঃ) মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। অপর সহিহ বর্ননায় আছে, যখন হযরত আদম (আঃ) রুহ ও দেহের মধ্যে ছিলেন।
দলিল*
*(ক.) সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৪০৪
*(খ.) মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩
*(গ). মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯
*(ঘ.) মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫
*(ঙ.) শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২
*(চ.) মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯
*(ছ.) আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৩১
**৯. আঁমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ:) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত এ ব্যাপারে ওহাবীদের আপত্তির জবাব ইন-শা-আল্লাহ তুলে ধরার চেষ্টা করবো:
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস গ্রন্থের ৫৭ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কোন দলীল উল্লেখ করেন নি,দলীল না দিয়ে মুখের জোরে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা করেছেন।আর অপরদিকে জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব আহলে হাদিসের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দলীল দিয়ে তা জোর হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
★উক্ত হাদিস সম্পর্কে শুধুমাত্র ইমাম আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বিরূপ মন্তব্য করে বলেন-
قَالَ السَّخَاوِيُّ لَمْ أَقِفْ عَلَيْهِ بِهَذَا اللَّفْظِ
‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله) উপরোক্ত শব্দের সাথে বর্ণিত হাদিসের উপর আমি অবগত বা পরিচিত নই।’’
*(ক). ইমাম সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা: ৫২১ পৃ : হা/৮৪০, ৮৩৫
*(খ). আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ,২৭১ পৃ. হা/৩৫২
★কিন্তু আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-
قوله كنت نبيا وآدم بين الماء والطين وفي رواية وآدم منجدل في طينته
‘‘রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,আঁমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।অন্য বর্ণনায় এসেছে, আদম (আ.) যখন মাটির খামিরে ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী,শরহে শিফা, ১/৯৭ পৃ.]
অপরদিকে আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন-
لكن قال العلقمي في شرح الجامع الصغير حديث صحيح.
‘‘তবে শরহে জামেউস সগীর গ্রন্থে আল্লামা আলকামা (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি সহীহ বা বিশুদ্ধ।’’
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ২/১২০ পৃ. হা/২০১৫, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।]
★দেখুন সাখাভী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের শব্দ নিয়ে মন্তব্য করেছেন উক্ত হাদিসের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে নয় এ হল তার একক মতামত। মূল শব্দ হলো-
كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ الطِّينِ
উক্ত হাদিসের দুটি শব্দ الْمَاءِ الطِّينِ নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মন্তব্য করেছেন কিন্তু الطين মাটি শব্দের সমর্থনে নির্ভরযোগ্য সূত্রে হাদিস পাওয়া যায় যেমন,
ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنِ الصُّنَابِحِيِّ قَالَ: قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى جُعِلْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ مُنْجَدِلٌ فِي الطِّينِ
‘‘তাবেয়ী ছুনাবেহী (رحمة الله) হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূল (সাঃ)-এঁর কাছে জানতে চাওয়া হল আপনি কখন নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন? রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করলেন: আদম (আ.) যখন মাটি ও দেহের খামিরে ছিলেন।’’
দলিল
*(ক.) ইমাম আবু নুয়াইম: হিলইয়াতুল আউলিয়া: ৭/১২২ ও ৯৫৩ পৃ.
*(খ.) ইমাম তাবরানী: মুজামুল কাবীর: ২২/৩৩৩ পৃ: হা/৮৩৫
*(গ.) ইবনে কাসীর: বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ২/৩০৭ ও ২/৩২০ পৃ.
*(ঘ.) সূয়তী: খাসায়েসুল কোবরা: ১/৮ পৃ. এবং আল-হাভী লিল ফাতওয়া: ২/১০০ পৃ.
*(ঙ.) ইমাম তাবরানী,মুসনাদেশ শামীয়্যীন: ২/৯৮-৯৯ পৃ হা/৯৮৪
*(চ.) ইবনে কাসির,সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/৩১৭ পৃ.
*(ছ.) ইমাম মুকরিযী,ইমতাউল আসমা, ৩/১৬৯ পৃ.
*(জ.) ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০/২৭৪ পৃ.
পর্যালোচনা
★ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি (مُرْسل) মুরসাল শক্তিশালী, তার কারণ হলো তাবেয়ী ছুনাবেহী (رحمة الله)-এর সাথে হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর সাক্ষাত ঘটেনি।
★ইমাম আবুল কাসেম জুনায়েদ বাজলী (ওফাত. ৪১৪ হি.) সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ مُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ
‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আঁপনি কখন থেকে নবী? তখন তিঁনি বললেন,যখন আদম (আ.) মাটির খামিরে অবস্থান করছিল।’’
[আল-ফাওয়াইদ, ১/২৪০ পৃ. হা/৫৮০]
★ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) সংকলন করেন-
قَالَ: أَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ. أَخْبَرَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ أَنَّ رَجُلا سأل رسول الله. ص: مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: بَيْنَ الرُّوحِ وَالطِّينِ مِنْ آدَمَ
‘‘তাবেয়ী মুতাররিফ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে সাখ্খাইরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলো,ইয়া রাসূলুল্লাহ! আঁপনি কখন নবী হয়েছেন? তিনি বলেন,যখন হযরত আদম (আ.) মাটির খামির এবং রূহের মাঝা-মাঝি অবস্থায় ছিলেন।’’
★ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১১৮ পৃ.,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
★মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল, ১১/৪৫০ পৃ. হা/৩২১১৫
★ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/২৯০ পৃ.
★ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/২৯৩ পৃ.
এ হাদিসটিও মুরসাল শক্তিশালী।তবে অনেকে ‘আবূ হেলাল’ কে অনেকে যঈফ বলতে চান,আমি বলবো-
তার মূল নাম (محمد ابن سليم), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেছেন- وهو صدوق -‘‘তিনি সত্যবাদী ছিলেন।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৮১ পৃ. ক্রমিক.৫৯২৩]
ইমাম বায়হাকী ও ইমাম হাকেম (رحمة الله) সংকলন করেন-
عن عرباض ابن سَارِيَةَ صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ – ﷺ – قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ – ﷺ يَقُولُ: إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ
‘‘হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন, আমি তখনই আল্লাহর দরবারে সর্বশেষ নবী হিসেবে ছিলাম যখন হযরত আদম (আ.) মাটির দেহের খামিরে ছিলেন।’’
[ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১১৮ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/৭ পৃ.]
অনুরূপ উক্ত শব্দের কাছাকাছি আরও হাদিস পাওয়া যায়-
عن جابر رضى الله عنه قال: أَنَّ رَجُلا سأل رسول الله. ص: مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: بَيْنَ الرُّوحِ وَالطِّينِ مِنْ آدَمَ
‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে জানিতে চাইলেন,আঁপনি কখন হতে নবী হিসেবে মনোনীত? রাসূল (সাঃ) বলেন,আদম যখন রুহ এবং মাটির মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন।’’
[ইমাম ইবনে সাদ: আত্-তবকাতুল কোবরা: ১/১৪৮ পৃ., ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী: তাজীমে মুনতাহা: ১৫ পৃ.]সুতরাং উক্ত হাদিস দ্বারা الطِّينِ শব্দের প্রমাণ পাওয়া গেল এখন বাকী রইলো الماء শব্দের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের ব্যাখ্যা।
আল্লামা দিয়ার বকরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
قال عليه الصلاة والسلام كنت نبيا وآدم بين الماء والطين
‘‘রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন,আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।’’
[আল্লামা দিয়ার বকরী,তারিখুল খামিস, ১/১৯ পৃ.]
★ইমাম মুকরিযী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وقال صلى اللَّه عليه وسلّم: كنت نبيا وآدم بين الماء والطين
‘‘রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।’’
[ইমাম মিকরিযি, ইমতাউল আসমা, ৩/১১৯ পৃ.]
**১০. ওলামায়ে দেওবন্দ-এর তাফসীরক,যেমন-আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানী বলেন-
عموما مفسرین وانا اول المسلمین کا مطلب یہ لیتے ہیں کہ اس امت محمدیہ کے اعتبار سے آپ اول المسلمین ہیں لیکن جب جامع ترمذی کی حدیث ’’کنت نبیاو آدم بین الروح والجسدکے موافق آپ اولا الانبیا ء ہیں تو اول المسلمین ہونے میں کیا شبہ ہوسکتاہے
অর্থাৎ- সাধারণত তাফসীরকারকগণ ‘আঁমি সর্বপ্রথম মুসলিম’-এর ব্যাখ্যা এভাবেই করে থাকেন যে,তিঁনি উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার তুলনায় সর্বপ্রথম মুসলিম; কিন্তু জামে’ তিরমিযীর হাদীস ‘‘আঁমি তখন নবী ছিলাম,যখন আদম রূহ ও দেহের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।’’ (অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টি হয়নি) এর আলোকে যেহেতু তিঁনি সর্বপ্রথম নবী,অতএব, তিঁনি প্রকৃত অর্থে সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়াতে কি সন্দেহ থাকতে পারে? (অর্থাৎ তিঁনি নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম মুসলিম।)
[তরজমায়ে ক্বোরআন কৃত. মৌং মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, হাশিয়া বা পাদটিকা,মৌং শাব্বির আহমদ ওসমানী। পাদটিকা নম্বর-২, পৃ. ১৯৪, মদীনা প্রেস-বিজনুর,ইউ,পি, ইন্ডিয়া থেকে মুদ্রিত]
**১১. অনেকেই বলে থাকেন আদম (عليه السلام) যেহেতু প্রথম সৃষ্টি মানুষ সেহেতু রাসূল (সাঃ) তারপরে আগমন করেছেন তাই তিনিও তাঁর সন্তান হিসেবে মাটির তৈরী।এ ধারণাটি চরম মিথ্যা।
ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) {ওফাত. ২০৭হি.} একটি হাদিস সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
★সুন্নী, ওহাবী,আহলে হাদিস সর্বজনের গ্রহণযোগ্য ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) {ওফাত. ৭৭৪হি.} একটি হাদিস সংকলন করে লিখেন-
وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ –
‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’
★তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (সাঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
**১২. আর যখন দুনিয়াই তাশরীফ আনেবেন তখন তিঁনি বলেন-
بعثت الي اناس عامة
অর্থ: আঁমি সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরীত হয়েছি।”
দলিল*
*(ক.) বুখারী হাদীস নং ৩৩৫
*(খ.) মুসলিম শরীফ ৫২৩
নবিজি আরও ইরশাদ করেন
ارسلت الي الخق كافة
অর্থ: আঁমাকে সকল মাখলুকাতের জন্য প্রেরন করা হয়েছে ।”
দলিল
*(ক.) মুসলিম শরীফ,হাদিস নং ৫২৩
*(খ.) তিরমীযি শরীফ,হাদিস নং ১৫৫৩
*(গ.) মুসনাদে আহমদ,২৭৪৯৬
**১৩. হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে:
عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه
و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি।কিন্তু আঁমি প্রেরিত হয়েছি (যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।”
দলিল
*(ক.) তাফসীরে বাগবী ৫/২০২
*(খ.) দূররে মানছুর ৫/১৮৪
*(গ.) শেফা শরীফ ১/৪৬৬
*(ঘ.) মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬
*(ঙ.) কানযুল উম্মাল, ৩১৯১৬
*(চ.) ইমাম দায়লামী,আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২
*(ছ.) ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫
*(জ.) ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০
*(ঝ.) ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩
*(ঞ.) তাফসীরে রুহুল মায়ানী ২১/১৫৪
*(ট.) জাওয়াহিরুল বিহার ৪/২৩৪
*(ঠ.) সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১
**১৪. হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টির ব্যপারে ফেরেস্তাদের মতামত:আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲ ﺟَﺎﻋِﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﺗَﺠْﻌَﻞُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﻦْ ﻳُﻔْﺴِﺪُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻳَﺴْﻔِﻚُ ﺍﻟﺪِّﻣَﺎﺀَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧُﺴَﺒِّﺢُ ﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﻭَﻧُﻘَﺪِّﺱُ ﻟَﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥ
(হে নবী) স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আঁপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয়ই আঁমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো,তারা বললো আঁপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আমরা তো আঁপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।তিঁনি বললেন,আঁমি যা জানি, তোমরা তা জান না।”
[সুরা বাকারাহ,আয়াত নং ৩০]
বিঃদ্রঃ অত্র আয়াতে লক্ষ্য করুন রাসুল (সাঃ) কে ফেরেস্তাদের ঘটনা স্মরণ করতে বলছেন।তার মানে তিঁনি (নবীজি) তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নবীজি (সাঃ); হযরত আদম (আ:) এঁর সৃষ্টি অবলোকন করেছেন কারণ তিঁনি তখনো নবী ছিলেন- এ ব্যপারে তাফসীরে রুহুল বয়ানে বর্নিত হয়েছে :
ﻓﺸﺎﻫﺪ ﺧﻠﻘﻪ ﻭﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺧﺮﺍﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺴﺒﺐ ﺍﻟﻤﺨﺎﻟﻔﺔ ﻭﻣﺎ ﺗﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻲ ﺍﺧﺮ ﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺷﺎﺧﺪ ﺧﻠﻖ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﻭﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﻋﻠﻴﻪ
তিঁনি দেখেছেন হযরত আদম (আঃ) এঁর সৃষ্টি,তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন,ভুলের কারণে বেহেশত থেকে তার অপসারণ এবং পরে তার তওবা গৃহীত হওয়ার যাবতীয় ঘটনাবলী।শেষ পর্যন্ত সেই আদম (আঃ) কে কেন্দ্র করে যা কিছু আবর্তিত হয়েছে,সবই তিঁনি (সাঃ) দেখেছেন। তিঁনি আরো দেখেছেন শয়তানের সৃষ্টি এবং যা কিছু তাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
[তাফসীরে রুহুল বয়ান,পারা ২৬, সুরা ফাত্হ এর ইন্না আরসালনাকা শাহিদান আয়াতের তাফসীর]
অতঃপর নবীজির আকৃতিতে আদম (আঃ) কে সৃজন করলেন মুহাম্মদ শব্দের মধ্যে মীম, হা ,মীম,দাল, মীম (মাথা),হা (হস্ত ও পৃষ্ট) , মীম (কোমর),দাল (পায়ের অংশ)।এ আকৃতিতে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হল।এজন্যই মানুষ ( মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর আকৃতিতে জান্নাতে যাবে।কিন্তু যারা জাহান্নামে যাবে তাদের আকৃতি (মুহাম্মদ) থাকবে না। বরং কুকুর -শুকরের আকৃতি ধারণ করবে।
হাদিসে কুদসীতে নবী করিম (সাঃ)এরশাদ করেছেন
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺁﺩَﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺻُﻮﺭَﺗِﻪِ ﻃُﻮﻟُﻪُ ﺳِﺘُّﻮﻥَ ﺫِﺭَﺍﻋًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻘَﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺴَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ
ﺍﻟﻨَّﻔَﺮِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻊْ ﻣَﺎ ﻳُﺤَﻴُّﻮﻧَﻚَ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺤِﻴَّﺘُﻚَ ﻭَﺗَﺤِﻴَّﺔُ ﺫُﺭِّﻳَّﺘِﻚَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺰَﺍﺩُﻭﻩُ
ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻜُﻞُّ ﻣَﻦْ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻋَﻠَﻰ ﺻُﻮﺭَﺓِ ﺁﺩَﻡَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖُ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺑَﻌْﺪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻵﻥ
“আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তার (নবীজির) আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন,তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত,তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও ঐখানে বসে থাকা ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, এবং শ্রবণ কর তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়,কারণ তা-ই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন।তিনি বললেনঃ
ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ
তারা বলল
: ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
তারা বাড়িয়ে বলল “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” َসুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে,আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”।
দলিল
*(ক.) সহীহ বুখারি ৬২২৭
*(খ.) সহীহ মুসলিম ২৮৪১
*১৫. এবার দেখুন! সায়্যিদুনা আবূ যার গিফারী (رضي الله عنه)’র) আক্বিদা হল নবিজি সমস্ত জাহান থেকে উত্তম ও মর্যাদাবানঃ ইমাম দারিমী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ عَلِمْتَ أَنَّكَ نَبِيٌّ حَتَّى اسْتَيْقَنْتَ؟ فَقَالَ: يَا أَبَا ذَرٍّ أَتَانِي مَلَكَانِ وَأَنَا بِبَعْضِ بَطْحَاءِ مَكَّةَ فَوَقَعَ أَحَدُهُمَا عَلَى الْأَرْضِ، وَكَانَ الْآخَرُ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: أَهُوَ هُوَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ زِنْهُ بِرَجُلٍ، فَوُزِنْتُ بِهِ فَرْجَتُتهُ، ثُمَّ قَالَ: فَزِنْهُ بِعَشَرَةٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ، ثُمَّ قَالَ: زِنْهُ بِمِائَةٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ ثُمَّ قَالَ: زِنْهُ بِأَلْفٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَنْتَثِرُونَ عَلَيَّ مِنْ خِفَّةِ الْمِيزَانِ، قَالَ: فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: لَوْ وَزَنْتَهُ بِأُمَّتِهِ لَرَجَحَهَا
সায়্যিদুনা আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (সাঃ) কে আরয করলাম যে,আঁপনি কীভাবে এবং কখন দৃঢ়ভাবে অবগত হলেন যে, আপনি আল্লাহর নবী (সাঃ)?
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদ্দিসগণ বলেছেন হাদিসের মমার্থ হলো যে কখন আপনার একিন হলো আঁপনি নবুয়ত প্রচারের সময় হচ্ছে বা আসছে।ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করলে অনেক সহীহ হাদিসের মুখালেফ হবে।ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتٰى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,সাহাবায়ে কিরাম বললেন,কখন আপনার উপর নাবুয়ত নির্ধারিত হয়? তিনি বলেন,আদম (عليه السلام) এর রুহ এক জায়গায় আর দেহ আরেক যায়গায় ছিল।’’
[ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৮৫ পৃ. হা/৩৬০৯, ইমাম তিরমিযি একে হাসান বলেছেন, আর আহলে হাদিস আলবানী একে সহীহ বলে তাহকীক করেছেন।]
★ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ مَيْسَرَةَ الْفَخْرِ، قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَتَى كُنْتُ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ
‘‘হযরত মায়সারা আল-ফাজর (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) এর কাছে জানতে চাইলেন যে,আঁপনি কখন নাবী হয়েছেন? তিনি বলেন, আদম (عليه السلام) যখন রুহ এবং দেহ আলাদা অবস্থানে ছিল।’’
[ইমাম হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৬৫ পৃ. হা/৪২০৯, ২০/৩৫৩ পৃ. হা/৮৩৪]
তিনি (ﷺ) বললেন, হে আবু যার,আঁমি মক্কা মুকাররমার একটি উপত্যাকার মধ্যে ছিলাম। দুুজন ফেরেশতা আসলেন, একজন যমিনে অবতরণ করলেন আর অন্যজন আসমান ও জমীনের মাঝখানে ছিলেন।তাদের মধ্য হতে একজন বললেন, ওঁনিই তিঁনি? দ্বিতীয় জন বললেন, হ্যাঁ।এক ফেরেশতা বললেন, তাঁকে একজন মানুষের সাথে ওযন (পরিমাপ) করুন।
যখন আমাকে একজন মানুষের সাথে ওযন করা হল,আঁমার ওযন ভারী হল, ফেরেশতা বললেন,তাকে দশজনের সাথে ওযন করুন, তখন আঁমার ওযন ভারী হল।ফেরেশতা বললেন, তাঁকে একশত জনের সাথে ওযন করুন, তখনও আঁমার ওজন ভারী হল।ফেরেশতা পুনরায় বললেন,তাঁকে এক হাজার জনের সাথে ওযন করুন, তখনও আঁমার ওযন ভারী হল।
ফেরেশতা এই অবস্থা দেখে খুশি হলেন। এরপর উপরের ফেরেশতা বললেন,তাঁকে ওযন করা হতে বিরত থাক,কেননা, তা্কে যদি তাঁর সমস্ত উম্মতের সাথেও পরিমাপ করো তবেও তিঁনি ভারী হবে।
[খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৬০৮পৃ: হা/৫৭৭৪, সুনানে দারমী, ১ম খণ্ড, ১৬৪ পৃ. হা/১৪, ইমাম হাইসামী, মাজমামউয যাওয়ায়েদ, ৮/২৫৬ পৃ., হা/১৩৯৩১। এ হাদিসটির সনদ সহীহ।]
★ইমাম হাইছামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ جَعْفَرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ كَبِيرٍ، وَثَّقَهُ أَبُو حَاتِمٍ الرَّازِيُّ وَابْنُ حِبَّانَ وَتَكَلَّمَ فِيهِ الْعُقَيْلِيُّ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ رِجَالُ الصَّحِيحِ.
‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) সনদটি সংকলন করেছেন আর সনদে ‘জাফার ইবনে আব্দুল্লাহ বিন উসমান বিন কাবীর’ রয়েছেন; আর তাকে ইমাম আবু হাতেম, ইমাম ইবনে হিব্বান সিকাহ বলেছেন। ইমাম উকাইলী (رحمة الله) তার বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন। এছাড়া সনদের বাকি রাবীগণ সহীহ বুখারীর রাবী।’’ তাই বলা যায় এই হাদিসের সনদ সহীহ।}
কবি বলেন-
وہر ميں سے تو بڑا تجہ سے بڑى خدا كى ذات
قائم ہے تيرى ذات سے سارا نظام كائنات
‘আর সকলের মধ্যে তুমিই বড়,আর তোমার থেকে বড় হলেন আল্লাহর পবিত্র সত্তা,গোটা দুনিয়ার সকল নিয়ম কানুন তোমার সত্তার বদৌলতেই বিদ্যমান।’
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে, এ বিষয় বস্তুটি সঠিক এবং শাওয়াহেদ থাকায় বিষয়টি শক্তিশালী বলে বুঝা যায়।নবী পাক (ﷺ) সমস্ত জাহান থেকে উত্তম ও মর্যাদাবান।তাঁর বরাবর কেউ নেই।যে সব মানুষ সাদৃশ্যের দাবি করে স্পষ্টত তারা বাতিল আক্বিদার উপর।রাসূল (ﷺ) এঁর নবূয়াত অবধারিত ছিল।শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর নবুয়্যত দুনিয়ায় প্রকাশ করেছেন ৪০ বছর বয়সে তার মানে এটা নয় যে, ৪০ বছরের পূর্বে তিঁনি নবী ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ!) সাবধান ঈমান চলে যাবে! আমাদের সকলকে রাসূল (ﷺ)-এঁর হাকীকতের উপর পরিপূর্ণ ঈমান রাখার তৌফিক দান করুন,আমিন।
আরো পড়ুনঃ
- কবর কাকে বলে ? বারযাখ এর জীবন কেমন হবে ?
- শয়তান: ইতিহাসের প্রথম একপাক্ষিক তাওহীদবাদী
- পীর কী ও কেন? সুফিবাদে পীরের গুরুত্ব