ঢাকা ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামে ফেতরাত: একটি পর্যালোচনা

  • আপডেট সময় : ০২:২৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪১২ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসলামে “ফেতরাত” (Fitrah) শব্দটি একটি গভীর অর্থ ধারণ করে। এই শব্দটি মূলত মানুষের প্রাথমিক, প্রকৃত বা প্রাকৃতিক অবস্থাকে নির্দেশ করে, যা আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর সৃষ্টির সময়ে নির্দিষ্টভাবে প্রদান করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে, ফেতরাত হলো মানুষের স্বাভাবিক ধর্মীয় প্রবণতা, যা তার জন্মগত অধিকার এবং প্রকৃতির মধ্যে নিহিত। এই ধারণা মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

ফেতরাতের সংজ্ঞা

ফেতরাত আরবি শব্দ “ফাত্র” থেকে উদ্ভূত, যার মানে “সৃষ্টি” বা “প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি করা”। ইসলামী স্কলারদের মতে, ফেতরাত হলো মানুষের মধ্যে এমন একটি সহজাত ধর্মীয় প্রবণতা, যা তাকে আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থা, যা সমস্ত মানুষ জন্মের সময় একে অপরের মধ্যে শেয়ার করে থাকে।

 

এটি একটি স্বাভাবিক ধর্মীয় অনুভূতি, যা মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি সৃষ্টিগত একত্ব এবং তাঁর আদেশ অনুসরণ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়। তবে, সমাজ, পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মানুষকে এ ফেতরাত থেকে বিচ্যুত করতে পারে। এ কারণে, ইসলাম বিশ্বাস করে যে, ধর্মীয় শিক্ষা ও সহায়তা মানুষের ফেতরাতকে পুনঃস্থাপন করতে সহায়ক হতে পারে।

 

ফেতরাতের বৈশিষ্ট্য:

ইসলামে ফেতরাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

 

১. ইবাদতের প্রাকৃতিক প্রবণতা: ফেতরাত মানুষের মধ্যে আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর প্রবণতা তৈরি করে।

 

২. অন্তর্জগতের নিষ্কলুষতা: মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে যে শুদ্ধ এবং নিষ্কলুষ চিত্ত থাকে, তা ফেতরাতের মূল বৈশিষ্ট্য।

 

৩. ধর্মীয় অবস্থা: ফেতরাতের মাধ্যমে একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় নৈতিকতা, ভালবাসা ও দয়া ইত্যাদি ধারণা গ্রহণ করে।

 

৪. প্রকৃতিগত দৃষ্টি: ফেতরাত মানুষকে প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টির ছাপ দেখতে এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে সহায়তা করে।

 

 

 

ফেতরাত ও ইসলাম

ইসলামে ফেতরাতের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের অন্তরে এক ধরনের ফেতরাত থাকে, যা তাকে একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি মানুষের শুদ্ধতা, ন্যায় এবং সদাচরণের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

 

আরো পড়ুন:সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

হাদিসে এসেছে: “প্রত্যেক সন্তান ফেতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে, তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান বা মজুসী করে তোলে।” (সহীহ বুখারী)

 

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্মগত প্রকৃতি বা ফেতরাত কখনোই মন্দ নয়। পরিবেশ, সংস্কৃতি, বা পারিবারিক প্রভাবই একজন মানুষকে তার প্রকৃত ধর্মীয় পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, মানুষ তার স্বাভাবিক ধর্মীয় প্রবণতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইসলামের দিকে ফিরে আসতে পারে এবং আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও ইবাদত পালন করতে পারে।

 

ফেতরাত ও সামাজিক জীবন

ফেতরাত শুধু ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং এটি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি সমাজের প্রতিটি সদস্য তার ফেতরাত অনুসারে জীবনযাপন করে, তবে সমাজে শান্তি, সুবিচার, সদাচরণ এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পাবে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, সমাজের মানুষ আল্লাহর একত্ব ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক।

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

 

ফেতরাত হলো ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা মানবজাতির মধ্যে জন্মগতভাবে থাকা একটি ধর্মীয় প্রবণতা। এটি মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর বিধান অনুসরণের প্রবণতা সৃষ্টি করে। ইসলাম বিশ্বাস করে যে, প্রতিটি মানুষ তার ফেতরাত অনুসারে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে এবং তার জীবনকে নৈতিকতা, সদাচরণ এবং শান্তির পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই ফেতরাতের গুরুত্ব কেবল ব্যক্তি জীবনেই নয়, বরং সমগ্র সমাজের শান্তি ও উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসলামে ফেতরাত: একটি পর্যালোচনা

আপডেট সময় : ০২:২৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

ইসলামে “ফেতরাত” (Fitrah) শব্দটি একটি গভীর অর্থ ধারণ করে। এই শব্দটি মূলত মানুষের প্রাথমিক, প্রকৃত বা প্রাকৃতিক অবস্থাকে নির্দেশ করে, যা আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর সৃষ্টির সময়ে নির্দিষ্টভাবে প্রদান করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে, ফেতরাত হলো মানুষের স্বাভাবিক ধর্মীয় প্রবণতা, যা তার জন্মগত অধিকার এবং প্রকৃতির মধ্যে নিহিত। এই ধারণা মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

ফেতরাতের সংজ্ঞা

ফেতরাত আরবি শব্দ “ফাত্র” থেকে উদ্ভূত, যার মানে “সৃষ্টি” বা “প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি করা”। ইসলামী স্কলারদের মতে, ফেতরাত হলো মানুষের মধ্যে এমন একটি সহজাত ধর্মীয় প্রবণতা, যা তাকে আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থা, যা সমস্ত মানুষ জন্মের সময় একে অপরের মধ্যে শেয়ার করে থাকে।

 

এটি একটি স্বাভাবিক ধর্মীয় অনুভূতি, যা মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি সৃষ্টিগত একত্ব এবং তাঁর আদেশ অনুসরণ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়। তবে, সমাজ, পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মানুষকে এ ফেতরাত থেকে বিচ্যুত করতে পারে। এ কারণে, ইসলাম বিশ্বাস করে যে, ধর্মীয় শিক্ষা ও সহায়তা মানুষের ফেতরাতকে পুনঃস্থাপন করতে সহায়ক হতে পারে।

 

ফেতরাতের বৈশিষ্ট্য:

ইসলামে ফেতরাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

 

১. ইবাদতের প্রাকৃতিক প্রবণতা: ফেতরাত মানুষের মধ্যে আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর প্রবণতা তৈরি করে।

 

২. অন্তর্জগতের নিষ্কলুষতা: মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে যে শুদ্ধ এবং নিষ্কলুষ চিত্ত থাকে, তা ফেতরাতের মূল বৈশিষ্ট্য।

 

৩. ধর্মীয় অবস্থা: ফেতরাতের মাধ্যমে একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় নৈতিকতা, ভালবাসা ও দয়া ইত্যাদি ধারণা গ্রহণ করে।

 

৪. প্রকৃতিগত দৃষ্টি: ফেতরাত মানুষকে প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টির ছাপ দেখতে এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে সহায়তা করে।

 

 

 

ফেতরাত ও ইসলাম

ইসলামে ফেতরাতের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের অন্তরে এক ধরনের ফেতরাত থাকে, যা তাকে একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি মানুষের শুদ্ধতা, ন্যায় এবং সদাচরণের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

 

আরো পড়ুন:সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

হাদিসে এসেছে: “প্রত্যেক সন্তান ফেতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে, তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান বা মজুসী করে তোলে।” (সহীহ বুখারী)

 

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্মগত প্রকৃতি বা ফেতরাত কখনোই মন্দ নয়। পরিবেশ, সংস্কৃতি, বা পারিবারিক প্রভাবই একজন মানুষকে তার প্রকৃত ধর্মীয় পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, মানুষ তার স্বাভাবিক ধর্মীয় প্রবণতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইসলামের দিকে ফিরে আসতে পারে এবং আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও ইবাদত পালন করতে পারে।

 

ফেতরাত ও সামাজিক জীবন

ফেতরাত শুধু ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং এটি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি সমাজের প্রতিটি সদস্য তার ফেতরাত অনুসারে জীবনযাপন করে, তবে সমাজে শান্তি, সুবিচার, সদাচরণ এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পাবে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, সমাজের মানুষ আল্লাহর একত্ব ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক।

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

 

ফেতরাত হলো ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা মানবজাতির মধ্যে জন্মগতভাবে থাকা একটি ধর্মীয় প্রবণতা। এটি মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর বিধান অনুসরণের প্রবণতা সৃষ্টি করে। ইসলাম বিশ্বাস করে যে, প্রতিটি মানুষ তার ফেতরাত অনুসারে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে এবং তার জীবনকে নৈতিকতা, সদাচরণ এবং শান্তির পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই ফেতরাতের গুরুত্ব কেবল ব্যক্তি জীবনেই নয়, বরং সমগ্র সমাজের শান্তি ও উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।