ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়াম ১ম পর্ব

ঈদে মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ কী

এডিটর
  • আপডেট সময় : ০৫:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ২৫৫৬ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দের অর্থ

 

প্রথমেই আলোচনা করব ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ সম্পর্কে।

ঈদ (عيد) শব্দের বাংলা অর্থ হলো আনন্দ, খুশি ইত্যাদি।

মিলাদ (ميلاد) শব্দের বাংলা অর্থ হলো জন্মকাল, জন্মের সময়, আগমনের সময় ইত্যাদি। এখানে মিলাদ শব্দটি কালবাচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

সুতরাং মিলাদুন্নবী (ميلاد النبي) অর্থ দাঁড়ায় নবী করিম (সা.)-এর জন্ম বা আগমনের সময়। সহজভাবে বলা যায়, মিলাদুন্নবী অর্থ হলো নবীজির (সা.) জন্ম বা শুভাগমন।

 

পরিভাষায় বলা যায়, নবীজির (সা.) জন্মদিন তথা তাঁর আগমন উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে শরিয়তসম্মতভাবে খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করাই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।

 

অনেকে দাবি করেন, মিলাদ (ميلاد) শব্দটি ‘اسم آلة’ বা যন্ত্রবাচক বিশেষ্য। কিন্তু এ দাবি যথার্থ নয়। কারণ, পূর্ববর্তী ইমামগণ কেউই এই অর্থ গ্রহণ করেননি। হাদিস শরিফেও মিলাদ শব্দটি জন্মদিন বা জন্মকাল অর্থে, অর্থাৎ ‘ইসমে জারফ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

উদাহরণস্বরূপ, হাদিসে এসেছে:

“قَدَّمْنَاهُ فِي الْمِيْلَادِ”

অর্থ: “আমরা তাঁকে জন্মের সময় অগ্রাধিকার দিয়েছি।”

 

এখানে মিলাদ শব্দটি ‘ইসমে জারফ’ বা সময়বাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

নিম্নে আরব বিশ্বের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও ইমামদের উদ্ধৃতি দেওয়া হলো:

 

১. আল্লামা ইবনে মুনজিম আফ্রিকী (রহ.) বলেন:

“ميلاد الرجل اسم الوقت الذي ولد فيه”

অর্থ: “কারো মিলাদ হলো সেই সময়, যখন সে জন্মগ্রহণ করেছে।”

(লিসানুল আরব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৬৭, দারুস সাদার, বৈরুত)

 

 

২. আল্লামা ইবনে আবী বাকর রাজী (রহ.) বলেন:

“ميلاد الرجل اسم الوقت الذي ولد فيه”

অর্থ: “ব্যক্তির জন্মগ্রহণের সময়কে বলা হয় মিলাদ।”

(মুখতারুস ছিহাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৪০)

 

 

৩. আল্লামা জাওহারী (রহ.) বলেন:

“ميلاد: اسم الوقت الذي ولد فيه الرجل”

অর্থ: “ব্যক্তি যে সময় জন্মগ্রহণ করে, সেটিকে বলা হয় মিলাদ।”

(ছিহাহ তাজুল লুগাত, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৯)

 

আরো পড়ুন:ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিতে কদমবুছি

 

৪. আল্লামা যুবাইদী (রহ.) বলেন:

“الميلاد: الوقت”

অর্থ: “মিলাদ হলো সময়।”

(তাজুল আরুস, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৫৩)

 

 

৫. আল্লামা আবু ইব্রাহিম ফারাভী (রহ.) বলেন:

“الميلاد: اسم الوقت الذي ولد فيه الرجل”

অর্থ: “ব্যক্তি যে সময় জন্মগ্রহণ করে, সেটিই তার মিলাদ।”

(দিওয়ানুল আদাব)

 

 

৬. ফরহাঙ্গে জাদিদ অভিধানে লেখা আছে:

“ميلاد” অর্থ জন্ম, জন্মদিন।

(ফরহাঙ্গে জাদিদ, পৃষ্ঠা ৭৯৪)

 

আরো পড়ুন: রাসূল (সাঃ) কখন নবুয়্যত লাভ করেন?

 

এছাড়া হাদিস শরিফেও “মিলাদুন্নবী” শব্দটি নবীজির (সা.) জন্মকাল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:

 

ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ জামে তিরমিজি-তে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন:

“باب ما جاء في ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم”

অর্থ: “পাক নবী (সা.)-এর জন্মসংক্রান্ত বর্ণনার অধ্যায়।”

(তিরমিজি শরিফ, পৃষ্ঠা ২০৩)

 

অতএব, মিলাদ শব্দটি কোনো ইমাম ‘اسم آلة’ (যন্ত্রবাচক বিশেষ্য) অর্থে গ্রহণ করেননি। বরং সবাই একবাক্যে একে নবীজির জন্মকাল বা জন্মদিন অর্থে গ্রহণ করেছেন।

 

এ বিষয়টি উপলব্ধি করে হিজরি নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন সুতী (রহ.) বলেন:

 

“قال الإمام السيوطي قدس سره: فيستحب لنا أيضا إظهار الشكر بمولده بالاجتماع وإطعام الطعام ونحو ذلك”

অর্থ:

“ইমাম সুতী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর জন্ম উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, মানুষ জমায়েত করা, খাবার পরিবেশন করা এবং এ জাতীয় উত্তম কাজ করা মুস্তাহাব।”

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কোরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়াম ১ম পর্ব

ঈদে মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ কী

আপডেট সময় : ০৫:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দের অর্থ

 

প্রথমেই আলোচনা করব ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ সম্পর্কে।

ঈদ (عيد) শব্দের বাংলা অর্থ হলো আনন্দ, খুশি ইত্যাদি।

মিলাদ (ميلاد) শব্দের বাংলা অর্থ হলো জন্মকাল, জন্মের সময়, আগমনের সময় ইত্যাদি। এখানে মিলাদ শব্দটি কালবাচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

সুতরাং মিলাদুন্নবী (ميلاد النبي) অর্থ দাঁড়ায় নবী করিম (সা.)-এর জন্ম বা আগমনের সময়। সহজভাবে বলা যায়, মিলাদুন্নবী অর্থ হলো নবীজির (সা.) জন্ম বা শুভাগমন।

 

পরিভাষায় বলা যায়, নবীজির (সা.) জন্মদিন তথা তাঁর আগমন উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে শরিয়তসম্মতভাবে খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করাই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।

 

অনেকে দাবি করেন, মিলাদ (ميلاد) শব্দটি ‘اسم آلة’ বা যন্ত্রবাচক বিশেষ্য। কিন্তু এ দাবি যথার্থ নয়। কারণ, পূর্ববর্তী ইমামগণ কেউই এই অর্থ গ্রহণ করেননি। হাদিস শরিফেও মিলাদ শব্দটি জন্মদিন বা জন্মকাল অর্থে, অর্থাৎ ‘ইসমে জারফ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

উদাহরণস্বরূপ, হাদিসে এসেছে:

“قَدَّمْنَاهُ فِي الْمِيْلَادِ”

অর্থ: “আমরা তাঁকে জন্মের সময় অগ্রাধিকার দিয়েছি।”

 

এখানে মিলাদ শব্দটি ‘ইসমে জারফ’ বা সময়বাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

নিম্নে আরব বিশ্বের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ও ইমামদের উদ্ধৃতি দেওয়া হলো:

 

১. আল্লামা ইবনে মুনজিম আফ্রিকী (রহ.) বলেন:

“ميلاد الرجل اسم الوقت الذي ولد فيه”

অর্থ: “কারো মিলাদ হলো সেই সময়, যখন সে জন্মগ্রহণ করেছে।”

(লিসানুল আরব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৬৭, দারুস সাদার, বৈরুত)

 

 

২. আল্লামা ইবনে আবী বাকর রাজী (রহ.) বলেন:

“ميلاد الرجل اسم الوقت الذي ولد فيه”

অর্থ: “ব্যক্তির জন্মগ্রহণের সময়কে বলা হয় মিলাদ।”

(মুখতারুস ছিহাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৪০)

 

 

৩. আল্লামা জাওহারী (রহ.) বলেন:

“ميلاد: اسم الوقت الذي ولد فيه الرجل”

অর্থ: “ব্যক্তি যে সময় জন্মগ্রহণ করে, সেটিকে বলা হয় মিলাদ।”

(ছিহাহ তাজুল লুগাত, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৯)

 

আরো পড়ুন:ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিতে কদমবুছি

 

৪. আল্লামা যুবাইদী (রহ.) বলেন:

“الميلاد: الوقت”

অর্থ: “মিলাদ হলো সময়।”

(তাজুল আরুস, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৫৩)

 

 

৫. আল্লামা আবু ইব্রাহিম ফারাভী (রহ.) বলেন:

“الميلاد: اسم الوقت الذي ولد فيه الرجل”

অর্থ: “ব্যক্তি যে সময় জন্মগ্রহণ করে, সেটিই তার মিলাদ।”

(দিওয়ানুল আদাব)

 

 

৬. ফরহাঙ্গে জাদিদ অভিধানে লেখা আছে:

“ميلاد” অর্থ জন্ম, জন্মদিন।

(ফরহাঙ্গে জাদিদ, পৃষ্ঠা ৭৯৪)

 

আরো পড়ুন: রাসূল (সাঃ) কখন নবুয়্যত লাভ করেন?

 

এছাড়া হাদিস শরিফেও “মিলাদুন্নবী” শব্দটি নবীজির (সা.) জন্মকাল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:

 

ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ জামে তিরমিজি-তে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন:

“باب ما جاء في ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم”

অর্থ: “পাক নবী (সা.)-এর জন্মসংক্রান্ত বর্ণনার অধ্যায়।”

(তিরমিজি শরিফ, পৃষ্ঠা ২০৩)

 

অতএব, মিলাদ শব্দটি কোনো ইমাম ‘اسم آلة’ (যন্ত্রবাচক বিশেষ্য) অর্থে গ্রহণ করেননি। বরং সবাই একবাক্যে একে নবীজির জন্মকাল বা জন্মদিন অর্থে গ্রহণ করেছেন।

 

এ বিষয়টি উপলব্ধি করে হিজরি নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন সুতী (রহ.) বলেন:

 

“قال الإمام السيوطي قدس سره: فيستحب لنا أيضا إظهار الشكر بمولده بالاجتماع وإطعام الطعام ونحو ذلك”

অর্থ:

“ইমাম সুতী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর জন্ম উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, মানুষ জমায়েত করা, খাবার পরিবেশন করা এবং এ জাতীয় উত্তম কাজ করা মুস্তাহাব।”