নিশির শেষ ভাগে “ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু” বলে ডাকার অসীম ফজিলত

- আপডেট সময় : ০৭:২৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
- / ২৪০০ বার পড়া হয়েছে
ইসলামে রাতের শেষ ভাগ, বিশেষত তাহাজ্জুদের সময়, অত্যন্ত বরকতময় ও দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (রাহঃ) ছাহেবের শিক্ষা অনুযায়ী, এই সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার তিনটি বিশেষ নাম— “ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু”— উচ্চারণ করে দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও কল্যাণকর।
এ প্রসঙ্গে তাফসির গ্রন্থ “রুহুল বয়ান”-এ উল্লেখ রয়েছে যে, মহান আল্লাহ তায়ালার ৩,০০০ নাম রয়েছে, যার মধ্যে এক বিশেষ নাম “ইসমে আযম” নামে পরিচিত। এই নাম নবী-রাসূলগণ ছাড়া অন্য কেউ জানে না, এবং এই নামের দ্বারা দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা কবুল করেন।
আরো পড়ুন:পবিত্র মাহে রমজান: রহমত ও বরকতের মাস
তাফসিরে রুহুল বয়ানে আরও বলা হয়েছে—”যে ব্যক্তি একবার ‘ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু’ বলে আল্লাহকে ডাকবে, তার আমলনামায় ৩,০০০ নামের সওয়াব লেখা হবে। সেই সঙ্গে, এই তিন নামের মধ্যে ইসমে আযম থাকার কারণে, যে কিছু চাইবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করবেন।”
এই দোয়ার তাৎপর্য ও ফজিলত
১. আল্লাহর ৩,০০০ নামের সওয়াব লাভ
“ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু” উচ্চারণ করার মাধ্যমে একজন মুসলিম একবারেই আল্লাহ তায়ালার ৩,০০০ নামের বরকত ও সওয়াব লাভ করতে পারেন। এটি অত্যন্ত বড় নিয়ামত, যা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে।
২. ইসমে আযমের শক্তি ও দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা
যেহেতু এই তিন নামের মধ্যে ইসমে আযম রয়েছে, তাই এই দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে যেকোনো হালাল ও কল্যাণকর জিনিস চাইলে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন। এটি দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
৩. আল্লাহর দয়ার ছায়া লাভ
“ইয়া আল্লাহু”— এটি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম, যা সমস্ত গুণের উৎস।
“ইয়া রাহমানু”— আল্লাহর অসীম দয়ার প্রকাশক নাম, যা সমস্ত সৃষ্টির প্রতি প্রসারিত।
“ইয়া রাহীমু”— বিশেষত মুমিনদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ প্রকাশকারী নাম।
এই তিনটি নাম দ্বারা আল্লাহকে ডাকলে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দ্রুত নাজিল হয়।
৪. গুনাহ মাফ ও মানসিক প্রশান্তি লাভ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—”রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ নিজ আরশ থেকে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করেন— কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। কে আছো, যে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দান করব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৫)
অতএব, এই সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়।
৫. তাহাজ্জুদের বরকত ও সফলতা অর্জন
এই দোয়া বিশেষত তাহাজ্জুদের সময় করলে এর প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পর “ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু” বলে দোয়া করলে ইহকাল ও পরকালের সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
কিভাবে আমল করবেন?
১. রাতে উঠে ওজু করে দুই বা চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন।
২. নামাজ শেষে আন্তরিকভাবে আল্লাহকে “ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু” বলে ডাকুন।
৩. নিজের প্রয়োজন, পাপমুক্তি, রিজিক বৃদ্ধি, শান্তি ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করুন।
৪. প্রতিদিন বা নিয়মিত এই আমল করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন সম্ভব।
আরো পড়ুন:রাসূল তোমারই কারণে বিশাল এ ভুবনে আল্লাহ জ্বিরও পরিচয়
বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (রাহঃ) ছাহেবের শিক্ষা এবং তাফসিরে রুহুল বয়ানের আলোকে বলা যায়— “ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীমু” নামগুলো দ্বারা আল্লাহকে ডাকলে একদিকে ৩,০০০ নামের সওয়াব পাওয়া যায়, অন্যদিকে ইসমে আযমের কারণে দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা মেলে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বরকতময় দোয়া করার তাওফিক দান করুন এবং তাঁর রহমতে পরিপূর্ণ করুন। আমিন।