গর্ভস্থ মৃত সন্তানের জীবন লাভ
- আপডেট সময় : ০৪:৫৫:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
- / ২৪৩৬ বার পড়া হয়েছে
গর্ভস্থ মৃত সন্তানের জীবন লাভ
সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একজন মৌলভী সাহেব একটি গুরুতর নালিশ নিয়ে দরবার শরীফে এলেন। তার নালিশ (সমস্যার কথা) ছিল এ রকম- মৌলভী সাহেবের পরমা সুন্দরী স্ত্রী তখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দু’জনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা। আর মৌলভী সাহেবও দেখতে খুবই সুদর্শন। তাই প্রথম বাসরের শুভলগ্ন থেকেই তারা পরস্পরের প্রতি ছিলেন গভীর প্রেমাসক্ত। তারা যখন গভীর আগ্রহে দিন গুনছেন সংসারের নতুন অতিথির আগমন প্রতীক্ষায়, ঠিক তখনই এক দুঃসহ দুঃসংবাদ তাদের সব আশা, সব সুখ ও মধুর স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী একদিন অসাবধানতাবশতঃ পড়ে গেলে তার পেটের সন্তানটি উল্টে যায়, আর সাথে সাথেই শুরু হয় গর্ভবতী মায়ের পেটে অসহনীয় যন্ত্রনা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো হলো। মেডিকেল পরীক্ষায় জানা গেলো, পেটের বাচ্চাটি অনেক আগেই মরে গেছে, এখন সেটি পেটে থেকে পঁচতে শুরু করেছে বা শিঘ্রই পঁচবে বলে মৌলভী সাহেবকে জানিয়ে দেয়া হলো। কাজেই প্রেমময় স্ত্রীর জীবনাশংকা দেখা দেয়ায় তাকে বাঁচানোই প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব বলে সবাই মত প্রকাশ করলেন। কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মত হচ্ছে অবিলম্বে অপারেশন করে মরা বাচ্চা ফেলে না দিলে তার স্ত্রীকে বাঁচানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেসময় এখনকার মতো উন্নত সার্জিকেল ব্যবস্থা ছিলনা। তাই বাচ্চাটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে বের করে আনতে হবে। এই বিভীষিকাময় ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করে বিশেষ করে গর্ভস্থ প্রথম সন্তানের অপমৃত্যু এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর জীবনাশংকার কথা ভেবে মৌলভী সাহেব পাগলের মতো অস্থির ও চঞ্চল হয়ে গেলেন। ইতোমধ্যেই যত রকমের চিকিৎসা সম্ভব তাই করা হলো। কিন্তু সব রকমের চেষ্টা তদবীরই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।
অবশেষে একজনের পরামর্শে আটরশিতে হযরত মাওলানা শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের কাছে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি ও অনুনয় বিনয়সহ পুরো সমস্যাটির কথা ব্যক্ত করলে হযরত কেবলাজান হুজুর বললেন, “বাবা, রাখে আলাহ মারে কে? হায়াৎ মউততো আলাহর হাতে। আপনি বাড়ীতে যান। গিয়ে আপনার স্ত্রীকে এক পোয়া পরিমাণ খুব গরম দুধ খাওয়াইয়া দিবেন। আর দু’জনেই বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়তে থাকবেন। বাবা, দয়াল নবীর মহব্বতে আলাহকে রাজী খুশী করা যায়, অসম্ভব সম্ভব হয়ে পড়ে।” পীর কেবলাজান হুজুর এই পরামর্শ দিয়ে মৌলভী সাহেবকে বিদায় দিলেন। বাড়ী ফিরে স্ত্রীকে এক পোয়া কড়া গরম দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথেই দুর্নিবার মরণ যন্ত্রনার মতো পেটের ব্যাথা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলো। এ বিস্ময়কর ঘটনায় মৌলভী সাহেবের স্ত্রী জজবার হালে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “আমার এ আগুন কে নিভাইল। তাঁর কাছে আমারে নিয়া যান।”
মৌলভী সাহেব পীর কেবলাজানের নির্দেশানুযায়ী স্ত্রীকে বেশি বেশি করে দরুদ শরীফ পড়ার পরামর্শ দিলেন এবং নিজেও তদানুযায়ী আমল শুরু করলেন। এদিকে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক অকল্পনীয় মহা বিস্ময়! স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে মাত্র কয়েক শতবার দরুদ শরীফ পড়ার পরই পেটের বাচ্চা নড়ে উঠল। এরপর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্ত্রী অত্যন্ত সুস্থ্য সবল ও নয়নমুগ্ধকর সুদর্শন একটি বাচ্চা প্রসব করলেন। ঐ সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক লোক বাচ্চাটিকে একনজর দেখার জন্য ভীড় জমাতে শুরু করল। মৌলভী সাহেব ও তার স্ত্রী অত্যন্ত খুশী হয়ে পরম করুণাময় আলাহ পাকের দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া আদায় করলেন এবং যার দোয়া ও দয়ায় এ অসম্ভব সম্ভব হলো সেই মহাওলী, যামানার মহা ইমাম, মহান মুজাদ্দেদ, আখেরী মুর্শিদ, বিশ্বওলী হযরত শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাক দরবারে গিয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আনন্দের আতিশয্যে অশ্রুবিহবল ভালোবাসায় তদীয় পবিত্র কদম মুবারকে বারবার কদমবুচি আরজ করলেন। পরবর্তী মহা পবিত্র উরস শরীফের সময় তিনি খাসি, মুরগী, মাছ, মিষ্টি ও নানারকম উপহার সামগ্রী নিয়ে গিয়ে মহাসমারোহে শরীক হলেন।