ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অথৈ সাগরে জোয়ার ভাটা নিয়ন্ত্রন

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৪৪৯ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আশির দশকের প্রথম দিকে হযরত কেবলাজান হুজুর হাফেজ গণিকে ডেকে বললেন, “বাবা, ডালচর যাওয়া লাগে।” হাফেজ গণি সবিনয়ে উত্তর দিলেন,

“হুজুর যাবো।” পীর কেবলাজান এবার হাফেজ গণিকে অবাক করে দিয়ে বললেন, “যাবো বললেই হলো? ডালচর কোথায়, জানো? ডালচর হচ্ছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার একটি চর।” খোদ ভোলা জেলারই হাফেজ গণি, তাই প্রথমে কিছুটা থতমত খেয়ে বললেন, “ডালচর যাওয়া যাবে।” এবারে পীর

কেবলাজান বললেন, “ডালচর যাওয়া লাগে সমুদ্র পাড়ি দিয়া।” বস্তুতঃ পীর কেবলাজানের এসব কথার অর্থ ও উদ্দেশ্য কোনটাই হাফেজ আব্দুল গণির মাথায় ঢুকছিলনা। আসলে ভোলা জেলার অধিবাসী হলেও হাফেজ আব্দুল গণি কোনদিনই ডালচর যাননি। এখন কেবলাজান হুজুরের নির্দেশ পেয়ে লোকজনের মাধ্যমে এলাকায় খবর পাঠিয়ে ডালচরে জলছা/মিটিং এর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করলেন। অতঃপর জলছার আগের দিন মুল ভূখন্ড থেকে ট্রলার ভাড়া করে ডালচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন রাত ১০টায়। ট্রলারের চালককে আগেই বলা হয়েছিল যেন খাড়ির মধ্যে না ঢোকে। কিন্তু চালক এক পর্যায়ে ট্রলারটিকে

 

খাড়িপথেই নিয়ে গেলো। ফলে ভাটার টানে পানি শুকিয়ে গেলে ট্রলারটি খাড়িতেই আটকে পড়ল। এদিকে ট্রলারের চালক ও অভিজ্ঞ সহযাত্রীরা তাকে জানালেন যে, পরের দিন ১০টার আগে আর জোয়ার আসবেনা, কাজেই যথাসময়ে ডালচর পৌছানোও সম্ভব হবেনা। অতএব, গভীর রাতের অলস প্রতিক্ষায় বসে না থেকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন।

কিন্তু হাফেজ গণির চোখে ঘুম নেই, বিশ্রামেরও অবকাশ নেই। তবে দীর্ঘ ভ্রমনজনিত ক্লান্তি এবং যথাসময়ে ডালচর পৌছানোর চিন্তায় কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তার চিন্তা ও উদ্বেগের কারণ একটাই, পীর কেবলাজানের পাক জবান মুবারকের নির্দেশ যদি যথাযথ ভাবে পালন করা সম্ভব না হয় তাহলে সব চেষ্টা, শ্রম ও আয়োজন মূল্যহীন হয়ে যাবে। এমনি চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে রাত দু’টোর দিকে হঠাৎ ট্রলারটি নড়েচড়ে উঠলো। হাফেজ গণি চমকে উঠে লক্ষ্য করলেন, জোয়ার ভাটার চিরাচরিত নিয়ম ভঙ্গ করে সেই রাত দু’টোর সময়ই খাড়িতে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। তাই তিনি অবাক বিস্ময়ে, আশা ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ট্রলারের চালককে ডেকে তুললেন। চালক কিছুটা বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে, ডাকলেন কেন?” হাফেজ আব্দুল গণি বললেন, “খাড়িতে জোয়ার শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, ভালো করে দেখেনতো ট্রলার নড়ছে কেন।” সত্যি সত্যি প্রচন্ড জোয়ারের বেগে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই খাড়িতে বুক সমান পানি হয়ে গেলো। ট্রলার চালক তার সারাজীবনে এই প্রথম এমন অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে গেলো। হাফেজ আব্দুল গণির মনে পড়ে গেলো পীর কেবলাজান প্রায়শঃই কথা প্রসঙ্গে বলতেন, “কামেল পীর শুকনা চরে পানি আনতে পারেন।”

 

অতঃপর সবাই নবউদ্যমে উৎসাহিত হয়ে দ্রুত বেগে ট্রলার চালিয়ে সাগর পাড়ি দিলেন এবং ফজরের আজানের সময় ডালচর গিয়ে পৌছলেন’। নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ ও মিটিং সেরে দরবার শরীফে গিয়ে হযরত পীর কেবলাজানকে সব কথা খুলে বললে তিনি সেই কথারই পুনরুক্তি করেন, “বাবা, কামেল পীরের ওসিলায় শুকনা চরেও পানি আসে।” হাফেজ আব্দুল গণি বিনীত উচ্ছ্বাস ও কৃতজ্ঞতায় প্রিয় মুর্শিদের কদমবুচি করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অথৈ সাগরে জোয়ার ভাটা নিয়ন্ত্রন

আপডেট সময় : ১১:৫৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪

আশির দশকের প্রথম দিকে হযরত কেবলাজান হুজুর হাফেজ গণিকে ডেকে বললেন, “বাবা, ডালচর যাওয়া লাগে।” হাফেজ গণি সবিনয়ে উত্তর দিলেন,

“হুজুর যাবো।” পীর কেবলাজান এবার হাফেজ গণিকে অবাক করে দিয়ে বললেন, “যাবো বললেই হলো? ডালচর কোথায়, জানো? ডালচর হচ্ছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার একটি চর।” খোদ ভোলা জেলারই হাফেজ গণি, তাই প্রথমে কিছুটা থতমত খেয়ে বললেন, “ডালচর যাওয়া যাবে।” এবারে পীর

কেবলাজান বললেন, “ডালচর যাওয়া লাগে সমুদ্র পাড়ি দিয়া।” বস্তুতঃ পীর কেবলাজানের এসব কথার অর্থ ও উদ্দেশ্য কোনটাই হাফেজ আব্দুল গণির মাথায় ঢুকছিলনা। আসলে ভোলা জেলার অধিবাসী হলেও হাফেজ আব্দুল গণি কোনদিনই ডালচর যাননি। এখন কেবলাজান হুজুরের নির্দেশ পেয়ে লোকজনের মাধ্যমে এলাকায় খবর পাঠিয়ে ডালচরে জলছা/মিটিং এর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করলেন। অতঃপর জলছার আগের দিন মুল ভূখন্ড থেকে ট্রলার ভাড়া করে ডালচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন রাত ১০টায়। ট্রলারের চালককে আগেই বলা হয়েছিল যেন খাড়ির মধ্যে না ঢোকে। কিন্তু চালক এক পর্যায়ে ট্রলারটিকে

 

খাড়িপথেই নিয়ে গেলো। ফলে ভাটার টানে পানি শুকিয়ে গেলে ট্রলারটি খাড়িতেই আটকে পড়ল। এদিকে ট্রলারের চালক ও অভিজ্ঞ সহযাত্রীরা তাকে জানালেন যে, পরের দিন ১০টার আগে আর জোয়ার আসবেনা, কাজেই যথাসময়ে ডালচর পৌছানোও সম্ভব হবেনা। অতএব, গভীর রাতের অলস প্রতিক্ষায় বসে না থেকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন।

কিন্তু হাফেজ গণির চোখে ঘুম নেই, বিশ্রামেরও অবকাশ নেই। তবে দীর্ঘ ভ্রমনজনিত ক্লান্তি এবং যথাসময়ে ডালচর পৌছানোর চিন্তায় কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তার চিন্তা ও উদ্বেগের কারণ একটাই, পীর কেবলাজানের পাক জবান মুবারকের নির্দেশ যদি যথাযথ ভাবে পালন করা সম্ভব না হয় তাহলে সব চেষ্টা, শ্রম ও আয়োজন মূল্যহীন হয়ে যাবে। এমনি চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে রাত দু’টোর দিকে হঠাৎ ট্রলারটি নড়েচড়ে উঠলো। হাফেজ গণি চমকে উঠে লক্ষ্য করলেন, জোয়ার ভাটার চিরাচরিত নিয়ম ভঙ্গ করে সেই রাত দু’টোর সময়ই খাড়িতে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। তাই তিনি অবাক বিস্ময়ে, আশা ও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ট্রলারের চালককে ডেকে তুললেন। চালক কিছুটা বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে, ডাকলেন কেন?” হাফেজ আব্দুল গণি বললেন, “খাড়িতে জোয়ার শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, ভালো করে দেখেনতো ট্রলার নড়ছে কেন।” সত্যি সত্যি প্রচন্ড জোয়ারের বেগে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই খাড়িতে বুক সমান পানি হয়ে গেলো। ট্রলার চালক তার সারাজীবনে এই প্রথম এমন অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে গেলো। হাফেজ আব্দুল গণির মনে পড়ে গেলো পীর কেবলাজান প্রায়শঃই কথা প্রসঙ্গে বলতেন, “কামেল পীর শুকনা চরে পানি আনতে পারেন।”

 

অতঃপর সবাই নবউদ্যমে উৎসাহিত হয়ে দ্রুত বেগে ট্রলার চালিয়ে সাগর পাড়ি দিলেন এবং ফজরের আজানের সময় ডালচর গিয়ে পৌছলেন’। নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ ও মিটিং সেরে দরবার শরীফে গিয়ে হযরত পীর কেবলাজানকে সব কথা খুলে বললে তিনি সেই কথারই পুনরুক্তি করেন, “বাবা, কামেল পীরের ওসিলায় শুকনা চরেও পানি আসে।” হাফেজ আব্দুল গণি বিনীত উচ্ছ্বাস ও কৃতজ্ঞতায় প্রিয় মুর্শিদের কদমবুচি করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।