ঢাকা ০৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৃষ্টিজগতের অণু-পরমাণুতে জেকেরের ধ্বণি শ্রবণ

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ১২:১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৩৯৮ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

তরিকা নেয়ার আগেও আমি আমার মায়ের উৎসাহে আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনা করতাম। কিন্তু গাছপালা, তরুলতাও যে আল্লাহর জিকির করে এ বিষয়টি আমার বুঝে আসতোনা। এক পর্যায়ে আমি হযরত পীর কেবলাজান হুজুর খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের কাছে তরিকা নিলাম। ইতোমধ্যেই আমি সাংসারিক এবং পেশাগত ঝামেলায় পূর্ব জীবনের সেই সব কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। তরিকা নেয়ার পর একদিন পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে আবারো সেই পুরনো প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম।

 

আমি তখন রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে কর্মরত। একদিন আমি রাজশাহী শহরে আমার এক সহকর্মীর আত্মীয়ের জানাজা ও দাফনে শরীক হই। নানা কারণে বিলম্ব হওয়াতে রাত ১টার দিকে লাশ কবরে নামিয়ে, দাফনের কাজ সম্পন্ন করে হেলেনাবাদ গোরস্থান থেকে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। সঙ্গী-সাথীরা কিছুদূর এসে যার যার বাড়ীর দিকে চলে গেলেন। আমি একা একা এক জঙ্গলাকীর্ণ পথে ঝোপঝাড় পার হয়ে এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। একেতো গভীর অন্ধকার, তার উপর নাম না জানা নানা ধরণের বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ এবং ঝিঁ ঝি পোকার একটানা বিকট সুর। আমি এমনিতেই গভীর রাতে একা একা পথ চলতে ভয় পেতাম। তখন এ অবস্থায়, বিশেষ করে লাশ দাফন করে এসে কিছুটা ভয় পাব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, একটি পুরাতন খৃষ্টান গির্জার মোড় ঘুরে নির্জন সরু পথে পা রাখতেই আমি এক অভাবনীয় ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম। হঠাৎ দেখি একটি মৃতদেহ আমার কাঁধ বরাবর সমান্তরালে একেবারে গা ঘেসে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলেছে। ঠিক জীবিত মানুষ যেভাবে চিৎ হয়ে সাঁতার কাটে সেই রকম। মনের ভয় কিংবা চোখের ধাঁধাঁ কিনা পরীক্ষা করার জন্য সাহসে ভর করে আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু না, একেবারে গোটা মৃতদেহটি আমার সাথে সাথে আগের মতোই এগিয়ে চলেছে। আমি থামলে সেটিও থেমে যায়, আমি চলতে শুরু করলে সেটিও চলতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, একেবারে তাজা লোবান বা আগরবাতির গন্ধে চারপাশ ভুরভুর করছে।

 

এহেন অবস্থায় আমি সম্ভাব্য সকল বিপদ কাটিয়ে উঠার জন্য আপন মুর্শিদের ওসিলা ধরে “আল্লাহ আল্লাহ” জিকির আরম্ভ করি। সেই জিকিরের হাল এক সময় এমন পর্যায়ে পৌছায় যে চারপাশের গাছপালা, বৃক্ষলতা, কীটপতঙ্গ এমনকি পাতার ফাঁক দিয়ে দৃশ্যমান আকাশের তারাগুলোও সশব্দে কোটি কণ্ঠে জিকির করছে এ শব্দ আমি নিজ কানে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই শুনতে পারছিলাম। জিকিরের তালে তালে চারপাশের বৃক্ষলতা, গাছপালা, পায়ের তলার মাটি এবং মাথার উপরের আকাশ সবই প্রচন্ড দোলায় দুলছে। সেই মুহুর্তে আমার মনে এক অভুতপূর্ব নতুন ভাবের উদয় হলো। মনে হলো, এ সমস্ত গাছপালা, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ সবাই যেন আমার জাকের ভাই, সবাই আমার একান্ত কাছের পরমাত্মীয়। তাই এদের প্রত্যেককে জড়িয়ে ধরে আবেগাপুত মমতায় চুমো খেতে ইচ্ছে করছিল। এমনি অবস্থায় এক সময় সহসাই মৃতদেহটি অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু লোবানের ভুরভুর গন্ধ আমার বাড়ীর আঙ্গীনায় পৌছানোর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত আগের মতোই বহাল ছিল। সেদিন থেকে “ইয়্যু সাব্বিহু লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদি”- এ বাণীর পবিত্র মর্মার্থ আমার মনে প্রোজ্জল ও বদ্ধমূল হয়ে গেল।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

সৃষ্টিজগতের অণু-পরমাণুতে জেকেরের ধ্বণি শ্রবণ

আপডেট সময় : ১২:১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪

 

তরিকা নেয়ার আগেও আমি আমার মায়ের উৎসাহে আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনা করতাম। কিন্তু গাছপালা, তরুলতাও যে আল্লাহর জিকির করে এ বিষয়টি আমার বুঝে আসতোনা। এক পর্যায়ে আমি হযরত পীর কেবলাজান হুজুর খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের কাছে তরিকা নিলাম। ইতোমধ্যেই আমি সাংসারিক এবং পেশাগত ঝামেলায় পূর্ব জীবনের সেই সব কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। তরিকা নেয়ার পর একদিন পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে আবারো সেই পুরনো প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম।

 

আমি তখন রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে কর্মরত। একদিন আমি রাজশাহী শহরে আমার এক সহকর্মীর আত্মীয়ের জানাজা ও দাফনে শরীক হই। নানা কারণে বিলম্ব হওয়াতে রাত ১টার দিকে লাশ কবরে নামিয়ে, দাফনের কাজ সম্পন্ন করে হেলেনাবাদ গোরস্থান থেকে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। সঙ্গী-সাথীরা কিছুদূর এসে যার যার বাড়ীর দিকে চলে গেলেন। আমি একা একা এক জঙ্গলাকীর্ণ পথে ঝোপঝাড় পার হয়ে এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। একেতো গভীর অন্ধকার, তার উপর নাম না জানা নানা ধরণের বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ এবং ঝিঁ ঝি পোকার একটানা বিকট সুর। আমি এমনিতেই গভীর রাতে একা একা পথ চলতে ভয় পেতাম। তখন এ অবস্থায়, বিশেষ করে লাশ দাফন করে এসে কিছুটা ভয় পাব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, একটি পুরাতন খৃষ্টান গির্জার মোড় ঘুরে নির্জন সরু পথে পা রাখতেই আমি এক অভাবনীয় ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম। হঠাৎ দেখি একটি মৃতদেহ আমার কাঁধ বরাবর সমান্তরালে একেবারে গা ঘেসে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলেছে। ঠিক জীবিত মানুষ যেভাবে চিৎ হয়ে সাঁতার কাটে সেই রকম। মনের ভয় কিংবা চোখের ধাঁধাঁ কিনা পরীক্ষা করার জন্য সাহসে ভর করে আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু না, একেবারে গোটা মৃতদেহটি আমার সাথে সাথে আগের মতোই এগিয়ে চলেছে। আমি থামলে সেটিও থেমে যায়, আমি চলতে শুরু করলে সেটিও চলতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, একেবারে তাজা লোবান বা আগরবাতির গন্ধে চারপাশ ভুরভুর করছে।

 

এহেন অবস্থায় আমি সম্ভাব্য সকল বিপদ কাটিয়ে উঠার জন্য আপন মুর্শিদের ওসিলা ধরে “আল্লাহ আল্লাহ” জিকির আরম্ভ করি। সেই জিকিরের হাল এক সময় এমন পর্যায়ে পৌছায় যে চারপাশের গাছপালা, বৃক্ষলতা, কীটপতঙ্গ এমনকি পাতার ফাঁক দিয়ে দৃশ্যমান আকাশের তারাগুলোও সশব্দে কোটি কণ্ঠে জিকির করছে এ শব্দ আমি নিজ কানে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই শুনতে পারছিলাম। জিকিরের তালে তালে চারপাশের বৃক্ষলতা, গাছপালা, পায়ের তলার মাটি এবং মাথার উপরের আকাশ সবই প্রচন্ড দোলায় দুলছে। সেই মুহুর্তে আমার মনে এক অভুতপূর্ব নতুন ভাবের উদয় হলো। মনে হলো, এ সমস্ত গাছপালা, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ সবাই যেন আমার জাকের ভাই, সবাই আমার একান্ত কাছের পরমাত্মীয়। তাই এদের প্রত্যেককে জড়িয়ে ধরে আবেগাপুত মমতায় চুমো খেতে ইচ্ছে করছিল। এমনি অবস্থায় এক সময় সহসাই মৃতদেহটি অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু লোবানের ভুরভুর গন্ধ আমার বাড়ীর আঙ্গীনায় পৌছানোর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত আগের মতোই বহাল ছিল। সেদিন থেকে “ইয়্যু সাব্বিহু লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদি”- এ বাণীর পবিত্র মর্মার্থ আমার মনে প্রোজ্জল ও বদ্ধমূল হয়ে গেল।