বিদেশে মহাসংকটে আপন পীরের মদদ লাভ
- আপডেট সময় : ১২:১৬:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ২৪৮৭ বার পড়া হয়েছে
১৯৯৭ইং সনে বেতার-টেলিভিশনের স্বায়ত্বশাসন প্রদানকল্পে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিভাবে কাজ হয় তা সরেজমিনে দেখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক মিশন বা ডেলিগেশন টিমের সদস্য হয়ে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা গিয়েছিলাম। ডেলিগেশনে আরো যারা যারা ছিলেন তারা সবাই এক একজন ডাকসাইটে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কিংবা আরো উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। কিন্তু সাতদিনব্যাপী সফরকালে সর্বত্রই আমাকে অপ্রত্যাশিতভাবে সর্বাধিক সম্মান ও সহযোগীতা দিয়ে স্বাগতিক দেশের কর্মকর্তারা যেন কিছুটা বাড়াবাড়িই করে ফেললেন। এতে করে সঙ্গী-সাথীরাও আমার প্রতি বেশ কিছুটা মনক্ষুন্ন বলে মনে হলো। ফলে সফর শেষে ফিরতি পথে সঙ্গী-সাথীরা কেমন যেন ছাড়াছাড়া ভাব নিয়ে আমার কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করলো। শুধু তাই নয়, আমি একজন বিশ্বখ্যাত পীর সাহেবের মুরিদ একথা জানার পর তাদের মধ্যে একজনতো রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়েইছিলেন। কাজেই ব্যাংককে একরাত যাত্রা বিরতির পর ঢাকার উদ্দেশ্যে পরের দিন বিমান বন্দরে গিয়েই যে যার যার মত বোর্ডিং কার্ড নিয়ে সঙ্গীরা সবাই একেবারে ভিতরে টারমাক সংলগ্ন ওয়েটিংরুমে চলে গেলেন। আমার খবরও নিলেননা। এদিকে আমার কাছে ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়ার মতো থাই মুদ্রা ছিলনা বিধায় আমি উদ্বেগের সাথে ডলার ভাঙ্গানোর জন্য লাউঞ্জ সংলগ্ন ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের বিভিন্ন কাউন্টারে ধর্ণা দিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বারবার প্রতিটি কাউন্টার থেকেই ট্রাভেল চেক (ইউ.এস. ডলার) গ্রহনে অসম্মতি জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হলো। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিমান ছাড়ার আর মাত্র ৩৫মিনিট বাকী ছিল। কাজ এখনো অনেক বাকী। ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া, বোর্ডিং কার্ড নেয়া এবং অনেক দুর পায়ে হেঁটে গিয়ে চলন্ত সিড়ি দিয়ে উঠে তারপর বিমানে আরোহন। বেশ ভারী দুটি স্যুটকেস হাতে ছুটতে ছুটতে আমি ইতোমধ্যেই ক্লান্ত, প্রায় অবসন্ন হয়ে পড়েছি। সর্বোপরি বিমান ফেল করার আশংকা। এ যে আমার জন্য কত বড় লজ্জা ও বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করবে বিশেষ করে দেশে ফেরার পর, একথা ভেবে আমি উদ্বেগ আশংকায় একেবারে ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম, হন্যে হয়ে ফিরে গেলাম আগের একটি কাউন্টারে। অ্যাটেনডেন্ট একজন মধ্যবয়সী থাই মহিলা, একটু আগেই যিনি বৈধ ইউ.এস. ডলার সত্ত্বেও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এবারও একই জবাব, এ ট্রাভেল চেক তারা নিবেননা। বিমান ছাড়ার সময় যতোই এগিয়ে আসছে, আমার ততোই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ক্রমশঃ শরীর অবশ হয়ে আসছে, পা কাঁপছে।
ঠিক সেই সময় আমি আমার দয়াল পীর কেবলাজানকে স্মরণ করে মনে মনে আপন বিপদের কথা বলতে লাগলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার দয়াল মুর্শিদের নুরানী চেহারা মোবারক আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আর সাথে সাথে আমাকে অবাক করে দিয়ে কাউন্টারের সেই মহিলাটি ঝড়ের গতিতে হাত বাড়িয়ে আমার হাত থেকে পাসপোর্ট ও ডলারের চেকটি ছিনিয়ে নিলেন, কার সাথে যেন কথা বললেন এবং ১৫ থেকে ২০সেকেন্ডের মধ্যেই অনুমতি নিয়ে চেকটি ভাঙ্গিয়ে দিলেন। এভাবে বিদেশ বিভুঁইয়ে এক মহাসংকটের মুহুর্তে কেবলাজান হুজুরের প্রত্যক্ষ তায়ীদ ও মদদ লাভ করে আমি আনন্দ ও আবেগে শিশুর মত কেঁদে ফেললাম। ইতোমধ্যে সঙ্গী-সাথীরা বিমানে আরোহনের পূর্বমুহুর্তে আমাকে না দেখে বেশ উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। যাইহোক, অত্যন্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ব্যস্ততার মধ্যে আমি যখন গলদঘর্ম হয়ে বিমানের বোর্ডিং গেটে গেলাম তখন সর্বশেষ টিকেট চেকার আমাকে জানালেন, “অনিবার্য কারণে থাই বিমানের নির্ধারিত ফ্লাইট আরো ৩০মিনিট বিলম্বে ছাড়বে। আপনি ইচ্ছা করলে কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে কিংবা কেনাকাটা করে আসতে পারেন।”
যথাসময়ে আমি আকাশপথে পাড়ি দেয়ার সময়, আবেগাপ্লুত অশ্রুসিক্ত হৃদয়ের কোটি কোটি কদমবুচি আরজ করলাম আমার মুর্শিদের পবিত্র কদম মুবারকে। কয়েক ঘন্টা আগে পাড়ি দিয়ে আসা প্রশান্ত মহাসাগর ও চীন সাগরের নীল জলরাশি আর আকাশের নীল একাকার হয়ে আমার হৃদয়বীণায় তখন ছড়িয়ে দিচ্ছিল গজলের সুর মুর্ছনাঃ
“খোদা প্রিয় পীর মোদের খাজাবাবা এ ধরায় স্বর্গ মর্ত্য সুরুযেতে যার তাজাল্লি ঢেউ খেলায়। সেই সাধুর প্রেম সুধার আছে যে জন পিপাসায় ফয়েজ বিজলীতে তার ইলমে লাদুন্নী শিক্ষা হয়”
যামানার মহা ইমাম, আখেরী মুর্শেদ, জিন্দাবাবা, বিশ্বওলী হযরত শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের ভক্ত মুরীদানদের অনেকের জীবনেই এমন অনেক ঘটনা বা অভিজ্ঞতা রয়েছে।