বিমানে উড়ে এলো নজরানার উট
- আপডেট সময় : ১২:২১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ২৩৯৩ বার পড়া হয়েছে
নব্বই দশকের প্রথম দিকে, সম্ভবতঃ ১৯৯৩ইং সনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত মহা পবিত্র উরস শরীফ উপলক্ষে সর্বশেষ বড় উটের বহর আনা হয় পাকিস্তান থেকে। বিশ্বওলী হযরত শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাকিস্তানী মুরিদগণ সেই বিশাল খেদমতের আঞ্জাম দেন। নেতৃত্বে ছিলেন করাচীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তরুন জাকের আসলাম। এদিকে বাংলাদেশ বেতারের এ.কে.এম. আমজাদ হোসেন, চট্টগ্রামের নজরুল ইসলাম আকন্দ ওরফে শিবলী ভাইজান, আর ঢাকার তেজগাঁওয়ের কাওছার আহমেদ এই তিনজন মিলে পাকিস্তান ছুটলেন একেবারে শেষ মুহুর্তে। পাকিস্তানের এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশ, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় তারা চষে বেড়ালেন প্রায় ১০দিন ধরে। বিভিন্ন স্থান ঘুরে অবশেষে পছন্দমত খুবই সুন্দর মোটাতাজা দেখে ২৫টি উট আর ৪০টি দুম্বা-খাসী কিনে ফেললেন।
এখন কেনাকাটাতো শেষ। কিন্তু জটিল সমস্যা দেখা দিল পরিবহন নিয়ে। মহা পবিত্র উরস শরীফের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী থাকলেও তখনও পর্যন্ত কোন পরিবহন ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ২৫টি উট ও ৪০টি দুম্বা-খাসী পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ বয়ে আনার জন্য কোন প্রকার পরিবহনই পাওয়া যাচ্ছেনা। আর এত অল্প সময়ে সমুদ্রপথে আনারতো কোন প্রশ্নই উঠেনা। ইতোমধ্যেই কাওছার ভাইকে পাকিস্তানে রেখে আমজাদ ভাইজান ও শিবলী ভাইজান দেশে ফিরে আসেন। বেচারা কাওছার ভাইজান বিমান বন্দরে উট ও দুম্বা-খাসীর দেখাশোনা করে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে সময় কাটাচ্ছেন।
এদিকে আমরা যারা বাংলাদেশে বসে উটের প্রতীক্ষায় দিন গুনছি, তাদেরও উদ্বেগ উৎকণ্ঠার শেষ নেই। মহা পবিত্র উরস শরীফের যখন আর মাত্র তিনদিন বাকী অথচ উট রয়েছে পাকিস্তানে তখন একজনকে পাঠানো হলো আটরশিতে হযরত কেবলাজান হুজুরকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে এবং তদীয় তায়ীদ ও মদদ চেয়ে নালিশ জানাতে। সব শুনে পীর কেবলাজান হুজুর অত্যন্ত জোশের সাথে বললেন, “পাহাড়-পর্বত ডিঙ্গিয়ে উট আসছে, চিন্তার কোন কারণই নাই। যান, ঢাকায় গিয়ে প্রস্তুতি নেন।” হঠাৎ করে সংবাদ পাওয়া গেল যে, পাকিস্তান এয়ার লাইন্স (পি.আই.এ.) কর্তৃপক্ষ একটি কার্গো বিমান ভাড়ায় দিতে রাজী হয়েছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য সকল বিমান সংস্থাই উট পরিবহনে অপারগতা জানায়।
অবশেষে সারা দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে বিমানে চড়ে উট এলো। একটি নয়, দুটি নয়, মোট পঁচিশটি, সাথে এলো অন্যান্য প্রাণীও। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে এতগুলো শক্তিশালী জ্যান্ত পশুকে আকাশ পথে উড়িয়ে আনা হলো। কিন্তু রাজধানীতে উটের ক্যাম্প নিয়ে জাকেরানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে হঠাৎ করেই শেরে বাংলা নগরস্থ আগারগাঁওয়ে মান্নান ভাইয়ের ক্যাম্পে উট রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। অথচ এজন্য সেখানে কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিলনা। মান্নান ভাই অত্যন্ত সুকৌশলে তার সঙ্গী-সাথী জাকের ভাইদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও তৎপরতার মাধ্যমে অল্পক্ষণের মধ্যেই স্বল্প পরিসরের সেই স্থানটিকে ২৫টি উট ও ৪০টি দুম্বা-খাসী রাখার উপযোগী করে তৈরী করে ফেললেন। উট রাখা হলো সেখানে। দিনরাত হাজার হাজার কৌতুহলী নারী-পুরুষ এই প্রাণীগুলোকে দেখার জন্য ভীড় জমাতে শুরু করে।
অতঃপর এই বিশাল উটের কাফেলাকে সমগ্র ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত করে আটরশির পথে যাত্রা শুরু হলো। একদল আরিচা হয়ে, আর অন্যদল মাওয়া হয়ে গন্তব্যস্থলে পৌছল টানা একদিন একরাত পথ চলার পর। পথে পথে কৌতূহলী মানুষের ভীড় ও কাফেলাকে স্বাগত জানানোর সেই অভুতপূর্ব দৃশ্য সকলের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।
ওদিকে সন্ধ্যা নাগাদ যখন বিশাল উটের কাফেলা নিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জাকের ভাইয়েরা দরবার শরীফে গিয়ে পৌছলেন, তখন সবাই মিলে আপন মুর্শিদের নেক নজর ও দয়া ভিক্ষা চেয়ে গজলের তালে তালে জিকির করতে করতে জজবার হালে গাইতে থাকেন-
“আজব দর্শন টেলিভিশন, দেখবি যদি আয়রে আয় সেথায় খোদ মহাজন সাঁই নিরঞ্জন, সদাই করে অভিনয়। ও তার প্রচার কেন্দ্র আরশেতে, রীলে হয় মদীনা হতে স্যুইচ থাকে মুর্শিদের হাতে, সেন্টার ধরা সহজ নয়”