ঢাকা ০৪:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তান থেকে নজরানার উট নিয়ে আসার ঘটনা

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৩৯৪ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৯৮১ইং সনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে অনুষ্ঠেয় মহা পবিত্র উরস শরীফের জন্য প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে বসবাসরত জাকেরান আশেকান তথা খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাকিস্তানী মুরীদগণ ২৫টি উট হযরত কেবলাজান হুজুরের খেদমতে নজরানা হিসেবে প্রেরণের জন্য আবেদন পেশ করেন। হুজুর পাকের সদয় অনুমতি এবং সরকারী নিয়মকানুন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যথারীতি উট আনার জন্য চারজন করিৎকর্মা ও সাহসী জাকেরকে দায়িত্ব দিয়ে পাকিস্তানে পাঠানো হলো। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক। বাকী তিনজন হলেন মেজর (অবঃ) হাসান, আব্দুর রশিদ এবং বাচ্চু ভাই।

 

তারা প্রথমে করাচী এবং পরে হায়দ্রাবাদ গিয়ে ২৫টি উট নিয়ে করাচীতে ফিরে আসেন। উটগুলোকে তারা করাচী বন্দরের জাহাজ ঘাটের ইস্ট উইংয়ে বেঁধে রাখেন। কিন্তু জাহাজ সাধারণতঃ ভীড়ে থাকে করাচী বন্দরের ওয়েস্ট উইংয়ে। তাই কাজ আরও বেড়ে গেল। এদিকে ডেক ভাড়া করা নির্ধারিত বাংলাদেশী কার্গো জাহাজ “বাংলার কল্লোল” তখনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানের বন্দরে পৌঁছেনি। ইতোমধ্যে করাচী বন্দরে অপেক্ষমান জাহাজের ক্যাপ্টেন জানতে চাইলেন উটের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন বা রাখালেরা কিভাবে যাবেন। কারণ, বিধি অনুযায়ী জাহাজের ক্রু বা নাবিক ছাড়া অতিরিক্ত লোক নেবার কোন অনুমতি ছিলনা। কিন্তু নির্ধারিত কার্গো জাহাজ করাচী বন্দরে ভিড়ার পর জানা গেল যে, তাদের ৪ জন ক্রু যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক বন্দরে নেমে গিয়ে আর জাহাজে ফিরে আসেনি। অতএব, আব্দুর রাজ্জাকসহ ৪জন রাখাল বা তত্ত্বাবধায়কের একই জাহাজে উটের সাথেই আসবার ব্যবস্থা হলো।

 

উল্লেখ্য যে, বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পীর কেবলাজান হুজুরের খেদমতে পাঠানো সব নজরানার পশু দেখাশোনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদেরকেই তরিকতের ভাষায় রাখাল বলা হয়ে থাকে। রাখালদের মধ্যে অনেক উচ্চশিক্ষিত এমনকি ডক্টরেট ডিগ্রীধারী শিক্ষাবিদ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মর্যাদাবান ও সম্মানিত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিরাও স্বতঃস্ফুর্তভাবে কাফেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিজেদের ধন্য মনে করে থাকেন। কাজেই প্রচলিত অর্থে সাধারণ রাখাল আর বিশ্বওলীর নজরানার গরু বা উটের রাখাল এক কথা নয়।

 

যাই হোক, এবার আসল কথায় ফিরে আসা যাক। করাচী বন্দরে “বাংলার কল্লোল” লোডিং-আনলোডিং এর জন্য মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য নোঙ্গর করা হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুক করা সমস্ত মালামাল অবশ্যই জাহাজে তুলে দিতে হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল উট নিয়ে। বন্দরের ইস্ট উইং থেকে অত্যন্ত সরু পথ দিয়ে অসংখ্য যানবাহনের ভীড় ঠেলে এতগুলো উট ওয়েস্ট উইংয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো। কারণ ৪জন মাত্র রাখালের পক্ষে একটি একটি করে উট নিয়ে গিয়ে ক্রেনের সাহায্যে জাহাজে তোলা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং অনেক সময় সাপেক্ষ, যা তাদের হাতে ছিলনা। অবশেষে ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক অনেক ভেবেচিন্তে একটি কৌশল বের করলেন। তিনি ৫টি করে উট একসাথে নিয়ে একটির লেজের সাথে অপরটির গলার রশি বেঁধে ২৫টি উটকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করলেন। মহা পবিত্র উরস শরীফের উট দেখতে আসা লোকজনের মধ্য থেকে একজন প্রবাসী বাংলাদেশীর সাহায্য নিলেন।

 

এভাবে ৫জন মিলে ২৫টি উটকে ওয়েস্ট উইংয়ে এনে জাহাজে তুলতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে জাহাজের সার্ভেয়ার আপত্তি জানিয়ে বললেন যে, খালি ডেকে উট রাখা যাবেনা। কারণ উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় দোদুল্যমান জাহাজের পিচ্ছিল ডেকে উটগুলো এক জায়গায় স্থির থাকতে পারবেনা; এদিক সেদিক পড়ে গিয়ে আহত হবে কিংবা অন্য যেকোন দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। কাজেই উট ওঠানোর আগেই জাহাজে খড় জাতীয় কিছু বিছিয়ে দিতে হবে। সার্ভেয়ারের পরামর্শ মতে আব্দুর রাজ্জাক কাছাকাছি একটি বাজার থেকে এক ট্রাক গমের খড় কিনে আনলেন, কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া এক ঘন্টা সময়সীমার মধ্যেই।

 

কিন্তু এবার হলো অন্য সমস্যা। সব মালামাল ইতিমধ্যেই ভিতরে প্রবেশ করেছে জেনে সংশ্লিষ্ট ক্লিয়ারিং এজেন্ট খাতা ক্লোজ করে চলে গেছেন। কাজেই ক্লিয়ারিংয়ের তালিকাভুক্ত নয় এমন একটি পণ্য অর্থাৎ গমের খড় বহনকারী ট্রাকটিকে সিকিউরিটি অফিসার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে ঢুকতে দিতে অপারগতা জানায়। এদিকে সঙ্গী বাকী ৩ জন রাখাল অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য বাইরে গেছেন। কাজেই একাকী আব্দুর রাজ্জাক তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলে সিকিউরিটি অফিসার আব্দুর রাজ্জাককেই সেখান থেকে বের করে দিলেন। আব্দুর রাজ্জাক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নির্দেশমত গেটের বাইরে চলে গেলেন। তিনি একটি নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপন মুর্শিদের পবিত্র চেহারা মোবারক স্মরণ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি সুস্পষ্টভাবে হযরত পীর কেবলাজান হুজুরের কন্ঠের অভয়বাণী শুনতে পেলেন, “তোদের কোন ভয় নেই, আমিতো সঙ্গেই আছি”। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে করাচী সমুদ্র বন্দরে দাঁড়িয়ে বিপন্ন জাকের ভাই আব্দুর রাজ্জাক হযরত পীর কেবলাজানের অভয়বাণী শোনার সাথে সাথেই উপরোল্লোখিত সার্ভেয়ার ও সিকিউরিটি অফিসারের মধ্যে এক বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হলো। তারা দু’জনেই অতিব্যস্ত হয়ে আব্দুর রাজ্জাককে খুজতে লাগলেন এবং উর্দু ভাষায় চেঁচিয়ে বললেন, “আব্দুর রাজ্জাক, কিধার গ্যায়ী? জলদি জলদি আপকা ট্রাক বন্দরছে লে আইয়্যে, জাহাজ পার সামান উঠাইয়্যে”। তাদের হৈ চৈ ও তাগিদ দেখে বিস্মিত আব্দুর রাজ্জাক চোখের পানিতে বুক ভাসাতে ভাসাতে উটসহ জাহাজে উঠলেন। আরব সাগরের উত্তাল তরঙ্গ ভঙ্গে দোলায়িত স্বপ্নের বন্দর ছেড়ে ২৫টি উটসহ ক্রমাগত ৮দিন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছালেন।

 

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে, বিদেশ বিভুঁয়ে না জেনে সংগ্রহ করা জঙ্গলের উটগুলো ছিল অত্যন্ত রাগী ও উগ্র মেজাজের। কিন্তু সমুদ্র পথে এই সুদীর্ঘ যাত্রায় উটগুলো কোন রকম গোলমাল করেনি, কোন বিঘ্নও ঘটায়নি। শুধু তাই নয়, যে বিষয়টি তাৎপর্যের সাথে লক্ষণীয় তা হচ্ছে করাচী বন্দরের জেটি থেকে জাহাজে উঠার পূর্ব মুহুর্তে সবগুলো উটের মাথা নত করে বিশেষ ভঙ্গীতে শ্রদ্ধা জানানো এ দৃশ্য যারা স্বচক্ষে দেখেছেন তারাই বুঝতে পেরেছিলেন যে, নির্বাক এই মরুভূমির প্রাণীগুলো কোন গোপন ঈঙ্গিতে আল্লাহর প্রিয়বন্ধু, যামানার মহা ইমাম, মুজাদ্দেদে যামান, বিশ্বওলী হযরত মাওলানা শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃছেঃআঃ) পূণ্যভূমি বাংলাদেশের পথে যাত্রার প্রাক্কালে তাঁরই উদ্দেশ্যে এভাবে আনত মস্তকে বিশেষ ভঙ্গীমায় সশ্রদ্ধ সালাম বা রাজকীয় কুর্ণিশ জ্ঞাপন করেছিল। অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নেয়ার পথে উটগুলো জঙ্গীরূপ ধারণ করলেও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে পৌছানোর সাথে সাথেই সেগুলো অনেক দিনের পোষা প্রাণীর মতো শান্ত এবং ভদ্র হয়ে গেল। কেবলাজান হুজুর বিশ্বওলী হযরত শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের এটিও একটি তাৎপর্যপূর্ণ কারামত।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

পাকিস্তান থেকে নজরানার উট নিয়ে আসার ঘটনা

আপডেট সময় : ০৯:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

১৯৮১ইং সনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে অনুষ্ঠেয় মহা পবিত্র উরস শরীফের জন্য প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে বসবাসরত জাকেরান আশেকান তথা খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের পাকিস্তানী মুরীদগণ ২৫টি উট হযরত কেবলাজান হুজুরের খেদমতে নজরানা হিসেবে প্রেরণের জন্য আবেদন পেশ করেন। হুজুর পাকের সদয় অনুমতি এবং সরকারী নিয়মকানুন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যথারীতি উট আনার জন্য চারজন করিৎকর্মা ও সাহসী জাকেরকে দায়িত্ব দিয়ে পাকিস্তানে পাঠানো হলো। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক। বাকী তিনজন হলেন মেজর (অবঃ) হাসান, আব্দুর রশিদ এবং বাচ্চু ভাই।

 

তারা প্রথমে করাচী এবং পরে হায়দ্রাবাদ গিয়ে ২৫টি উট নিয়ে করাচীতে ফিরে আসেন। উটগুলোকে তারা করাচী বন্দরের জাহাজ ঘাটের ইস্ট উইংয়ে বেঁধে রাখেন। কিন্তু জাহাজ সাধারণতঃ ভীড়ে থাকে করাচী বন্দরের ওয়েস্ট উইংয়ে। তাই কাজ আরও বেড়ে গেল। এদিকে ডেক ভাড়া করা নির্ধারিত বাংলাদেশী কার্গো জাহাজ “বাংলার কল্লোল” তখনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানের বন্দরে পৌঁছেনি। ইতোমধ্যে করাচী বন্দরে অপেক্ষমান জাহাজের ক্যাপ্টেন জানতে চাইলেন উটের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন বা রাখালেরা কিভাবে যাবেন। কারণ, বিধি অনুযায়ী জাহাজের ক্রু বা নাবিক ছাড়া অতিরিক্ত লোক নেবার কোন অনুমতি ছিলনা। কিন্তু নির্ধারিত কার্গো জাহাজ করাচী বন্দরে ভিড়ার পর জানা গেল যে, তাদের ৪ জন ক্রু যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক বন্দরে নেমে গিয়ে আর জাহাজে ফিরে আসেনি। অতএব, আব্দুর রাজ্জাকসহ ৪জন রাখাল বা তত্ত্বাবধায়কের একই জাহাজে উটের সাথেই আসবার ব্যবস্থা হলো।

 

উল্লেখ্য যে, বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পীর কেবলাজান হুজুরের খেদমতে পাঠানো সব নজরানার পশু দেখাশোনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদেরকেই তরিকতের ভাষায় রাখাল বলা হয়ে থাকে। রাখালদের মধ্যে অনেক উচ্চশিক্ষিত এমনকি ডক্টরেট ডিগ্রীধারী শিক্ষাবিদ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মর্যাদাবান ও সম্মানিত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিরাও স্বতঃস্ফুর্তভাবে কাফেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিজেদের ধন্য মনে করে থাকেন। কাজেই প্রচলিত অর্থে সাধারণ রাখাল আর বিশ্বওলীর নজরানার গরু বা উটের রাখাল এক কথা নয়।

 

যাই হোক, এবার আসল কথায় ফিরে আসা যাক। করাচী বন্দরে “বাংলার কল্লোল” লোডিং-আনলোডিং এর জন্য মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য নোঙ্গর করা হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুক করা সমস্ত মালামাল অবশ্যই জাহাজে তুলে দিতে হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল উট নিয়ে। বন্দরের ইস্ট উইং থেকে অত্যন্ত সরু পথ দিয়ে অসংখ্য যানবাহনের ভীড় ঠেলে এতগুলো উট ওয়েস্ট উইংয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো। কারণ ৪জন মাত্র রাখালের পক্ষে একটি একটি করে উট নিয়ে গিয়ে ক্রেনের সাহায্যে জাহাজে তোলা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং অনেক সময় সাপেক্ষ, যা তাদের হাতে ছিলনা। অবশেষে ড্রাইভার আব্দুর রাজ্জাক অনেক ভেবেচিন্তে একটি কৌশল বের করলেন। তিনি ৫টি করে উট একসাথে নিয়ে একটির লেজের সাথে অপরটির গলার রশি বেঁধে ২৫টি উটকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করলেন। মহা পবিত্র উরস শরীফের উট দেখতে আসা লোকজনের মধ্য থেকে একজন প্রবাসী বাংলাদেশীর সাহায্য নিলেন।

 

এভাবে ৫জন মিলে ২৫টি উটকে ওয়েস্ট উইংয়ে এনে জাহাজে তুলতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে জাহাজের সার্ভেয়ার আপত্তি জানিয়ে বললেন যে, খালি ডেকে উট রাখা যাবেনা। কারণ উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় দোদুল্যমান জাহাজের পিচ্ছিল ডেকে উটগুলো এক জায়গায় স্থির থাকতে পারবেনা; এদিক সেদিক পড়ে গিয়ে আহত হবে কিংবা অন্য যেকোন দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। কাজেই উট ওঠানোর আগেই জাহাজে খড় জাতীয় কিছু বিছিয়ে দিতে হবে। সার্ভেয়ারের পরামর্শ মতে আব্দুর রাজ্জাক কাছাকাছি একটি বাজার থেকে এক ট্রাক গমের খড় কিনে আনলেন, কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া এক ঘন্টা সময়সীমার মধ্যেই।

 

কিন্তু এবার হলো অন্য সমস্যা। সব মালামাল ইতিমধ্যেই ভিতরে প্রবেশ করেছে জেনে সংশ্লিষ্ট ক্লিয়ারিং এজেন্ট খাতা ক্লোজ করে চলে গেছেন। কাজেই ক্লিয়ারিংয়ের তালিকাভুক্ত নয় এমন একটি পণ্য অর্থাৎ গমের খড় বহনকারী ট্রাকটিকে সিকিউরিটি অফিসার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে ঢুকতে দিতে অপারগতা জানায়। এদিকে সঙ্গী বাকী ৩ জন রাখাল অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য বাইরে গেছেন। কাজেই একাকী আব্দুর রাজ্জাক তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলে সিকিউরিটি অফিসার আব্দুর রাজ্জাককেই সেখান থেকে বের করে দিলেন। আব্দুর রাজ্জাক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নির্দেশমত গেটের বাইরে চলে গেলেন। তিনি একটি নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপন মুর্শিদের পবিত্র চেহারা মোবারক স্মরণ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি সুস্পষ্টভাবে হযরত পীর কেবলাজান হুজুরের কন্ঠের অভয়বাণী শুনতে পেলেন, “তোদের কোন ভয় নেই, আমিতো সঙ্গেই আছি”। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে করাচী সমুদ্র বন্দরে দাঁড়িয়ে বিপন্ন জাকের ভাই আব্দুর রাজ্জাক হযরত পীর কেবলাজানের অভয়বাণী শোনার সাথে সাথেই উপরোল্লোখিত সার্ভেয়ার ও সিকিউরিটি অফিসারের মধ্যে এক বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হলো। তারা দু’জনেই অতিব্যস্ত হয়ে আব্দুর রাজ্জাককে খুজতে লাগলেন এবং উর্দু ভাষায় চেঁচিয়ে বললেন, “আব্দুর রাজ্জাক, কিধার গ্যায়ী? জলদি জলদি আপকা ট্রাক বন্দরছে লে আইয়্যে, জাহাজ পার সামান উঠাইয়্যে”। তাদের হৈ চৈ ও তাগিদ দেখে বিস্মিত আব্দুর রাজ্জাক চোখের পানিতে বুক ভাসাতে ভাসাতে উটসহ জাহাজে উঠলেন। আরব সাগরের উত্তাল তরঙ্গ ভঙ্গে দোলায়িত স্বপ্নের বন্দর ছেড়ে ২৫টি উটসহ ক্রমাগত ৮দিন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছালেন।

 

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে, বিদেশ বিভুঁয়ে না জেনে সংগ্রহ করা জঙ্গলের উটগুলো ছিল অত্যন্ত রাগী ও উগ্র মেজাজের। কিন্তু সমুদ্র পথে এই সুদীর্ঘ যাত্রায় উটগুলো কোন রকম গোলমাল করেনি, কোন বিঘ্নও ঘটায়নি। শুধু তাই নয়, যে বিষয়টি তাৎপর্যের সাথে লক্ষণীয় তা হচ্ছে করাচী বন্দরের জেটি থেকে জাহাজে উঠার পূর্ব মুহুর্তে সবগুলো উটের মাথা নত করে বিশেষ ভঙ্গীতে শ্রদ্ধা জানানো এ দৃশ্য যারা স্বচক্ষে দেখেছেন তারাই বুঝতে পেরেছিলেন যে, নির্বাক এই মরুভূমির প্রাণীগুলো কোন গোপন ঈঙ্গিতে আল্লাহর প্রিয়বন্ধু, যামানার মহা ইমাম, মুজাদ্দেদে যামান, বিশ্বওলী হযরত মাওলানা শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃছেঃআঃ) পূণ্যভূমি বাংলাদেশের পথে যাত্রার প্রাক্কালে তাঁরই উদ্দেশ্যে এভাবে আনত মস্তকে বিশেষ ভঙ্গীমায় সশ্রদ্ধ সালাম বা রাজকীয় কুর্ণিশ জ্ঞাপন করেছিল। অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নেয়ার পথে উটগুলো জঙ্গীরূপ ধারণ করলেও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে পৌছানোর সাথে সাথেই সেগুলো অনেক দিনের পোষা প্রাণীর মতো শান্ত এবং ভদ্র হয়ে গেল। কেবলাজান হুজুর বিশ্বওলী হযরত শাহসুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের এটিও একটি তাৎপর্যপূর্ণ কারামত।