ঢাকা ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুজাদ্দেদ সাহেবের চালের কুড়া

  • আপডেট সময় : ১০:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৩৯৬ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

উত্তরবঙ্গের এক জাকের ভাই অনেক টাকা ব্যয় করে পুকুরে মাছের চাষ করলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে হঠাৎ তার পুকুরের মাছ ব্যাপক হারে মরতে শুরু করলো। যত্নের কোন ত্রুটি নেই, মাছের কোন মড়কও লাগেনি এলাকার কোন পুকুর বা নদীতে। সম্পূর্ণ সুস্থ্য মাছ হঠাৎ করে মরে ভেসে উঠছে। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকজনের সাথে আলাপ করেও কোন ফল হলোনা। কেউ কোন সমাধান দিতে পারলোনা।

 

অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে উক্ত জাকের ভাই বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গিয়ে পীর কেবলাজানের কাছে নালিশ পেশ করলেন, “হুজুর, আমি অনেক টাকা খরচ করে পুকুরে মাছের চাষ করেছিলাম। কিন্তু কোনরকম রোগ-ব্যাধী ছাড়াই পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। হুজুর, আমার ভুল বেয়াদবি মাফ চাই। দয়া করে আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচান”। সব শুনে কেবলাজান হুজুর তাকে সত্যি কথা বলার জন্য ইংগিত বুঝিয়ে দিয়ে প্রশ্ন রাখলেন, “বাবা, আপনার পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে! আপনি কি করেছিলেন, খুলে বলেন।” এবার জাকের ভাই দ্বিধাজড়িত কন্ঠে বিনয়ের সাথে বললেন, “হুজুর, প্রতি বছর মহা পবিত্র উরস শরীফের সময় আমার বাড়ীতে বিশেষ ক্যাম্প হয়, এবারও হয়েছে। আমি সাধ্যমতো নজরানার গরু এবং রাখাল ভাইদের আদর যত্ন করি। এবারও সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কাফেলার অপেক্ষায় ছিলাম। এমনি এক পর্যায়ে আমার পুকুরের মাছের খাদ্য ফুরিয়ে গেল। খুবই জরুরী মনে করে আমি মহা পবিত্র উরস শরীফের নজরানার গরুর জন্য কিনে রাখা চালের কুড়া মাছের আহারের জন্য পুকুরে ঢেলে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে, কুড়াতো আমার টাকা দিয়েই কেনা, তাই জরুরী পরিস্থিতিতে এই কুড়া থেকেই কিছু পরিমাণ কুড়া পুকুরে দিয়ে দেই, নজরানার গরু আসার আগেই আবার কুড়া কিনে রাখবো। কিন্তু এই কুড়া পুকুরে দেবার পর থেকেই মাছগুলো সেই কুড়া খেয়ে মরে যাচ্ছে আর সাথে সাথে ফুলে ভেসে উঠছে। হুজুর, আমি ক্ষমা ভিক্ষা চাই। আমি না বুঝে ভুল করে ফেলেছি।”

 

হযরত কেবলাজান হুজুর গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “বাবা, আপনি মুজাদ্দেদ সাহেবের কুড়া পুকুরের মাছকে খাওয়ালেন। কাজেই পুকুরের সব মাছইতো মরে যাওয়ার কথা।” জাকের ভাই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে বারবার করজোড়ে ক্ষমা ও দয়া ভিক্ষা চাইলে পীর কেবলাজান হুজুর তাকে বলে দিলেন, “যান বাবা, এমনটি আর করবেননা।” এরপর তার পুকুরের আর কোন মাছ মরেনি।

 

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

মুজাদ্দেদ সাহেবের চালের কুড়া

আপডেট সময় : ১০:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

 

উত্তরবঙ্গের এক জাকের ভাই অনেক টাকা ব্যয় করে পুকুরে মাছের চাষ করলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে হঠাৎ তার পুকুরের মাছ ব্যাপক হারে মরতে শুরু করলো। যত্নের কোন ত্রুটি নেই, মাছের কোন মড়কও লাগেনি এলাকার কোন পুকুর বা নদীতে। সম্পূর্ণ সুস্থ্য মাছ হঠাৎ করে মরে ভেসে উঠছে। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকজনের সাথে আলাপ করেও কোন ফল হলোনা। কেউ কোন সমাধান দিতে পারলোনা।

 

অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে উক্ত জাকের ভাই বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গিয়ে পীর কেবলাজানের কাছে নালিশ পেশ করলেন, “হুজুর, আমি অনেক টাকা খরচ করে পুকুরে মাছের চাষ করেছিলাম। কিন্তু কোনরকম রোগ-ব্যাধী ছাড়াই পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। হুজুর, আমার ভুল বেয়াদবি মাফ চাই। দয়া করে আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচান”। সব শুনে কেবলাজান হুজুর তাকে সত্যি কথা বলার জন্য ইংগিত বুঝিয়ে দিয়ে প্রশ্ন রাখলেন, “বাবা, আপনার পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে! আপনি কি করেছিলেন, খুলে বলেন।” এবার জাকের ভাই দ্বিধাজড়িত কন্ঠে বিনয়ের সাথে বললেন, “হুজুর, প্রতি বছর মহা পবিত্র উরস শরীফের সময় আমার বাড়ীতে বিশেষ ক্যাম্প হয়, এবারও হয়েছে। আমি সাধ্যমতো নজরানার গরু এবং রাখাল ভাইদের আদর যত্ন করি। এবারও সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কাফেলার অপেক্ষায় ছিলাম। এমনি এক পর্যায়ে আমার পুকুরের মাছের খাদ্য ফুরিয়ে গেল। খুবই জরুরী মনে করে আমি মহা পবিত্র উরস শরীফের নজরানার গরুর জন্য কিনে রাখা চালের কুড়া মাছের আহারের জন্য পুকুরে ঢেলে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে, কুড়াতো আমার টাকা দিয়েই কেনা, তাই জরুরী পরিস্থিতিতে এই কুড়া থেকেই কিছু পরিমাণ কুড়া পুকুরে দিয়ে দেই, নজরানার গরু আসার আগেই আবার কুড়া কিনে রাখবো। কিন্তু এই কুড়া পুকুরে দেবার পর থেকেই মাছগুলো সেই কুড়া খেয়ে মরে যাচ্ছে আর সাথে সাথে ফুলে ভেসে উঠছে। হুজুর, আমি ক্ষমা ভিক্ষা চাই। আমি না বুঝে ভুল করে ফেলেছি।”

 

হযরত কেবলাজান হুজুর গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “বাবা, আপনি মুজাদ্দেদ সাহেবের কুড়া পুকুরের মাছকে খাওয়ালেন। কাজেই পুকুরের সব মাছইতো মরে যাওয়ার কথা।” জাকের ভাই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে বারবার করজোড়ে ক্ষমা ও দয়া ভিক্ষা চাইলে পীর কেবলাজান হুজুর তাকে বলে দিলেন, “যান বাবা, এমনটি আর করবেননা।” এরপর তার পুকুরের আর কোন মাছ মরেনি।