ঢাকা ০৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনৈক জাকেরের নজরানার আমের ঘটনা

Sheikh Alhaz Uddin
  • আপডেট সময় : ১০:০৮:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৪৮২ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

একদিন দক্ষিণ হুজরা শরীফে জাকেরানদের সাথে সাক্ষাতের সময় জনৈক অপরিচিত নতুন জাকের একটি ছোট্ট পুটলিতে করে নিজের গাছের কয়েকটি আম হুজুর পাকের জন্য নিয়ে গেলেন। কাইয়্যুম ভাই হুজুর পাকের কদম মুবারকের খেদমতেই ছিলেন। তিনি সাধারণতঃ বড় প্যাকেট বা ঝাঁকা ভর্তি ফল-ফলাদি ও অন্যান্য খেদমত হুজুর পাককে দেখিয়ে নির্দেশানুযায়ী বিভিন্ন ভান্ডারে বা পাকশালায় পাঠিয়ে দিতেন। এসবের মধ্যে কোন কোনটা হয়তো বাড়ীর ভিতরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য হুজুর পাক নির্দেশ দিতেন। আর ছোট ছোট পুটলিতে আনা খেদমতের ফল-ফলাদি না দেখিয়েই বা না খুলেই পুটলিসহ কাইয়্যুম ভাই খাট মুবারকের নীচে রেখে দিতেন। পরে অনেক পুটলি জমা হলে সেগুলো যথাস্থানে রেখে দিতেন। সেদিনও তাই করলেন। জাকের ভাইয়ের আনা আমের পুটলিটা হুজুর পাককে না দেখিয়েই নীচে এক কোণায় রেখে দিলেন।

 

এরই মধ্যে তৎকালীন প্রবীণ ও প্রভাবশালী খাদেম লাতু চৌধুরী সাহেব কাইয়্যুম ভাইয়ের কাছে একটি আম চাইলে কাইয়্যুম ভাই বললেন, আম আছে। তবে সেগুলো এখনো হুজুর পাককে দেখানো হয়নি। কোথায় বা কাকে দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। কাজেই আর দু’এক দিন অপেক্ষা করতে বললেন লাতু চৌধুরীকে। কিন্তু হুজুর পাকের আম খাওয়ার জন্য লাতু চৌধুরী একেবারে নাছোড়বান্দার মতো কাইয়্যুম ভাইয়ের পিছনে লেগে আছেন। কারণ জাকেরানরাতো বাজারের সেরা ফল-ফলাদিগুলোই হুজুর পাকের জন্য নিয়ে আসেন। এমতাবস্থায় কাইয়্যুম ভাই একদিন আর না করতে পারলেননা। সেই অজ্ঞাত জাকের ভাইয়ের ছোট পুটলিটা খুলে তিনটা আম পেলেন। খুবই মিষ্টি স্বাদের সুগন্ধী আম বলে মনে হলো। তিনি সেখান থেকে একটি আম লাতু চৌধুরীকে দিয়ে দিলেন। ভাবলেন, বেশ ক’টা দিন হয়ে গেছে; আমগুলোতো পড়েই আছে। হুজুর পাকতো আর এগুলোর খোঁজ নিতে আসবেননা।

 

সে সময় হুজুর পাকের শ্বশুর পক্ষের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়, জাকের ভাইদের প্রিয় খবির নানা প্রায় প্রতিদিনই হুজুর পাকের কাছে আসতেন। হুজুর পাকও তাঁকে পছন্দ করতেন এবং অনেক সময় ধরে নানা গল্প শোনাতেন, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক গল্প শোনাতেন একের পর এক। আর মাঝে মাঝে চা এবং এটা-সেটা বাড়ীর ভিতর থেকে এনে খাওয়াতেন। ঘটনাক্রমে কাইয়্যুম ভাই যেদিন লাতু চৌধুরীকে আম দিলেন, সেদিন খবির নানাও এলেন হুজুর পাকের সাথে গল্প করতে। সাথে নিয়ে এলেন যুবক বয়সের আরো একজনকে।

 

গল্পের মাঝখানে এক পর্যায়ে হুজুর কেবলাজান খবির নানাকে আম-দুধ দিয়ে ভাত খাওয়াতে চাইলেন এবং বাড়ীর ভিতর থেকে তিনটি আম আনার জন্য একজন খাদেমকে পাঠালেন। কিন্তু ভিতরে কোন আম নেই পীর আম্মাজান এ খবর পাঠালে হুজুর পাক সেই খাদেমকে দক্ষিণ হুজরা শরীফে কাইয়্যুম ভাইয়ের কাছ থেকে আম আনতে বললেন। খাদেম যথানির্দেশিতভাবে কাইয়্যুম ভাইকে আম দিতে বললে তিনি বজ্রাহতের মতো “থ” হয়ে গেলেন। বললেন, এখানে মাত্র দু’টি আম আছে, তাই নিয়ে যান। খাদেম আম নিয়ে গেলে হুজুর পাক জিজ্ঞাসা করলেন, “আমতো ছিল তিনটা, আরেকটা আম কই?” কাইয়্যুম ভাইকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সব কথা খুলে বললেন এবং হুজুর পাকের বিনা অনুমতিতে আম দিয়ে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেন। তিনি এও বুঝলেন যে, কামেল ওলীর জাহেরী চোখ না দেখলেও তার বাতেনী চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জনৈক জাকেরের নজরানার আমের ঘটনা

আপডেট সময় : ১০:০৮:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

 

একদিন দক্ষিণ হুজরা শরীফে জাকেরানদের সাথে সাক্ষাতের সময় জনৈক অপরিচিত নতুন জাকের একটি ছোট্ট পুটলিতে করে নিজের গাছের কয়েকটি আম হুজুর পাকের জন্য নিয়ে গেলেন। কাইয়্যুম ভাই হুজুর পাকের কদম মুবারকের খেদমতেই ছিলেন। তিনি সাধারণতঃ বড় প্যাকেট বা ঝাঁকা ভর্তি ফল-ফলাদি ও অন্যান্য খেদমত হুজুর পাককে দেখিয়ে নির্দেশানুযায়ী বিভিন্ন ভান্ডারে বা পাকশালায় পাঠিয়ে দিতেন। এসবের মধ্যে কোন কোনটা হয়তো বাড়ীর ভিতরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য হুজুর পাক নির্দেশ দিতেন। আর ছোট ছোট পুটলিতে আনা খেদমতের ফল-ফলাদি না দেখিয়েই বা না খুলেই পুটলিসহ কাইয়্যুম ভাই খাট মুবারকের নীচে রেখে দিতেন। পরে অনেক পুটলি জমা হলে সেগুলো যথাস্থানে রেখে দিতেন। সেদিনও তাই করলেন। জাকের ভাইয়ের আনা আমের পুটলিটা হুজুর পাককে না দেখিয়েই নীচে এক কোণায় রেখে দিলেন।

 

এরই মধ্যে তৎকালীন প্রবীণ ও প্রভাবশালী খাদেম লাতু চৌধুরী সাহেব কাইয়্যুম ভাইয়ের কাছে একটি আম চাইলে কাইয়্যুম ভাই বললেন, আম আছে। তবে সেগুলো এখনো হুজুর পাককে দেখানো হয়নি। কোথায় বা কাকে দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। কাজেই আর দু’এক দিন অপেক্ষা করতে বললেন লাতু চৌধুরীকে। কিন্তু হুজুর পাকের আম খাওয়ার জন্য লাতু চৌধুরী একেবারে নাছোড়বান্দার মতো কাইয়্যুম ভাইয়ের পিছনে লেগে আছেন। কারণ জাকেরানরাতো বাজারের সেরা ফল-ফলাদিগুলোই হুজুর পাকের জন্য নিয়ে আসেন। এমতাবস্থায় কাইয়্যুম ভাই একদিন আর না করতে পারলেননা। সেই অজ্ঞাত জাকের ভাইয়ের ছোট পুটলিটা খুলে তিনটা আম পেলেন। খুবই মিষ্টি স্বাদের সুগন্ধী আম বলে মনে হলো। তিনি সেখান থেকে একটি আম লাতু চৌধুরীকে দিয়ে দিলেন। ভাবলেন, বেশ ক’টা দিন হয়ে গেছে; আমগুলোতো পড়েই আছে। হুজুর পাকতো আর এগুলোর খোঁজ নিতে আসবেননা।

 

সে সময় হুজুর পাকের শ্বশুর পক্ষের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়, জাকের ভাইদের প্রিয় খবির নানা প্রায় প্রতিদিনই হুজুর পাকের কাছে আসতেন। হুজুর পাকও তাঁকে পছন্দ করতেন এবং অনেক সময় ধরে নানা গল্প শোনাতেন, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক গল্প শোনাতেন একের পর এক। আর মাঝে মাঝে চা এবং এটা-সেটা বাড়ীর ভিতর থেকে এনে খাওয়াতেন। ঘটনাক্রমে কাইয়্যুম ভাই যেদিন লাতু চৌধুরীকে আম দিলেন, সেদিন খবির নানাও এলেন হুজুর পাকের সাথে গল্প করতে। সাথে নিয়ে এলেন যুবক বয়সের আরো একজনকে।

 

গল্পের মাঝখানে এক পর্যায়ে হুজুর কেবলাজান খবির নানাকে আম-দুধ দিয়ে ভাত খাওয়াতে চাইলেন এবং বাড়ীর ভিতর থেকে তিনটি আম আনার জন্য একজন খাদেমকে পাঠালেন। কিন্তু ভিতরে কোন আম নেই পীর আম্মাজান এ খবর পাঠালে হুজুর পাক সেই খাদেমকে দক্ষিণ হুজরা শরীফে কাইয়্যুম ভাইয়ের কাছ থেকে আম আনতে বললেন। খাদেম যথানির্দেশিতভাবে কাইয়্যুম ভাইকে আম দিতে বললে তিনি বজ্রাহতের মতো “থ” হয়ে গেলেন। বললেন, এখানে মাত্র দু’টি আম আছে, তাই নিয়ে যান। খাদেম আম নিয়ে গেলে হুজুর পাক জিজ্ঞাসা করলেন, “আমতো ছিল তিনটা, আরেকটা আম কই?” কাইয়্যুম ভাইকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সব কথা খুলে বললেন এবং হুজুর পাকের বিনা অনুমতিতে আম দিয়ে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেন। তিনি এও বুঝলেন যে, কামেল ওলীর জাহেরী চোখ না দেখলেও তার বাতেনী চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়।