ঢাকা ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আটরশির কাফেলা

বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সংকট হলো মানবতা হারিয়ে ফেলা

শেখ আলহাজ্ব উদ্দিন
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৫৩৫ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান,

“বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সংকট হলো মানবতা হারিয়ে ফেলা। মানবতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহ রাসূলের পথে দূরে সরে গিয়েছি। এই জন্য আপদ-বিপদ-কলহ বালা মুসিবত তকদীরের বুরায়ী ইত্যাদির সম্মুখীন আমরা হয়েছি। আল্লাহকে ছেড়ে আমরা বহুদূর চলে আসছি। যে মহা প্রতিপালক আমাদের যত্ন করে প্রতিপালন করেছেন তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা কতটুকু?

 

আপনিতো মাঠে কেবল চারটে ধান ছিটিয়ে চলে আসেন। আর বাকী কাজগুলো আল্লাহই করেন। তিনিই পানি দেন, তাপ দেন, হাওয়া দেন, মাটি দেন, আপনার ধান গাছগুলি অংকুরিত করে দেন। গাছগুলিকে বড় করে দেন। ধানের শীষ তৈরী করেন। তার ভেতর ধান দেন। পরে আপনি ধান কেটে নিয়ে আসেন। আমাদের কর্ম শুধু লাগান আর কেটে এনে খাওয়া।

 

এই জন্য মহাকবি হাফেজ বলেছেনঃ

 

“যে দিল করুনা করে যুগল নয়ন

উচিত কি নয় তার রুপ দর্শন”

 

(একটা চোখের পরিবর্তে যিনি দুটো চোখ তোমাকে দিলেন সেই চোখ দিয়ে কি সৃষ্টি কর্তাকে দেখতে চাওয়া তোমার উচিত নয়)

 

“যে দিল করুনা করে রসনা ললিত

কেনরে না গাও তার মহিমার গীত”

 

(এত সুন্দর জিবহা বা জবান তিনি তোমাকে দিয়েছেন। সেই জবান দিয়ে তুমি কেন তাকে ডাকো না।)

 

“হাফিজ করিবে যদি মহত্ব প্রলাপ

তরুর মত কর আপন স্বভাব”

 

মহাকবি হাফিজ বলেন, তোমরা গাছের দিকে তাকিয়ে দেখ। গাছ যখন ফলবান হয়, তখন ডালগুলি নীচের দিকে নেমে আসে। তোমরা শিঁর উঁচু অহংকারের সাথে কেন চল?”

 

কাজেই আমাদের মাঝে অহংকার থেকে অমানবতা, অশিষ্টতা-অনিয়ম, ধর্মদ্রোহীতা এসে যোগ দিয়েছে। আমরা তাই শরিয়তের বিধানের বাইরে কাজ করছি। এর ভেতরে দিয়েই আমাদের মাঝে দানবতার সৃষ্টি হয়েছে-মানবতার দিন দিনই বিনষ্ট হচ্ছে।

 

কিন্তু এটাতো হবার নয়। মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের নীতিতো এটা নয়। ইসলামের ফেতরাত হলো, আদর্শ হলো-ঐ যে বললাম-ধর্ম নির্বিশেষে শিশুকে সবাই ভালোবাসে কারন সে কাম-ক্রোধ-লোভ-মদ-মাৎসর্য সব কিছুর উর্ধ্বে।

তাই সবাই-ই তাকে কোলে নিয়ে আদর করে। এই যে কলুষ মৃক্ততা সেটাই ইসলামী ফেতরাত। আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) এই ইসলামী ফেতরাতে ছিলেন। সমস্ত অলি-আল্লাহ ইসলামী ফেতরাতে ছিলেন আজ সেগুলো হারা হয়ে মণিহারা ফণির মত আমরা ঘুরছি। এখন আমাদের গাছে ফল হয় না, জমিনে ফসল হয় না। পানিতে মাছ হয় না, পরের দেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে আমাদের চলতে হয় এবং আমাদের ভেতরে যে একতা বা ইত্তেফাক তাও নেই। এক ভাই আর এক ভাইকে হত্যা করতেও আমরা দ্বিধা করি না এবং হত্যা করেও আমরা বেজার বা অনুতপ্ত হইনা। খুশিই হই মানুষ খুন করে অহংকারও করি। এতে কি করে আল্লাহতায়ালার রহমত কামনা আশা করা যায়?

 

গ্রন্থসূত্রঃ আটরশির কাফেলা (২য় খন্ড)

১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭ইং

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

আটরশির কাফেলা

বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সংকট হলো মানবতা হারিয়ে ফেলা

আপডেট সময় : ০৭:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান,

“বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সংকট হলো মানবতা হারিয়ে ফেলা। মানবতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহ রাসূলের পথে দূরে সরে গিয়েছি। এই জন্য আপদ-বিপদ-কলহ বালা মুসিবত তকদীরের বুরায়ী ইত্যাদির সম্মুখীন আমরা হয়েছি। আল্লাহকে ছেড়ে আমরা বহুদূর চলে আসছি। যে মহা প্রতিপালক আমাদের যত্ন করে প্রতিপালন করেছেন তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা কতটুকু?

 

আপনিতো মাঠে কেবল চারটে ধান ছিটিয়ে চলে আসেন। আর বাকী কাজগুলো আল্লাহই করেন। তিনিই পানি দেন, তাপ দেন, হাওয়া দেন, মাটি দেন, আপনার ধান গাছগুলি অংকুরিত করে দেন। গাছগুলিকে বড় করে দেন। ধানের শীষ তৈরী করেন। তার ভেতর ধান দেন। পরে আপনি ধান কেটে নিয়ে আসেন। আমাদের কর্ম শুধু লাগান আর কেটে এনে খাওয়া।

 

এই জন্য মহাকবি হাফেজ বলেছেনঃ

 

“যে দিল করুনা করে যুগল নয়ন

উচিত কি নয় তার রুপ দর্শন”

 

(একটা চোখের পরিবর্তে যিনি দুটো চোখ তোমাকে দিলেন সেই চোখ দিয়ে কি সৃষ্টি কর্তাকে দেখতে চাওয়া তোমার উচিত নয়)

 

“যে দিল করুনা করে রসনা ললিত

কেনরে না গাও তার মহিমার গীত”

 

(এত সুন্দর জিবহা বা জবান তিনি তোমাকে দিয়েছেন। সেই জবান দিয়ে তুমি কেন তাকে ডাকো না।)

 

“হাফিজ করিবে যদি মহত্ব প্রলাপ

তরুর মত কর আপন স্বভাব”

 

মহাকবি হাফিজ বলেন, তোমরা গাছের দিকে তাকিয়ে দেখ। গাছ যখন ফলবান হয়, তখন ডালগুলি নীচের দিকে নেমে আসে। তোমরা শিঁর উঁচু অহংকারের সাথে কেন চল?”

 

কাজেই আমাদের মাঝে অহংকার থেকে অমানবতা, অশিষ্টতা-অনিয়ম, ধর্মদ্রোহীতা এসে যোগ দিয়েছে। আমরা তাই শরিয়তের বিধানের বাইরে কাজ করছি। এর ভেতরে দিয়েই আমাদের মাঝে দানবতার সৃষ্টি হয়েছে-মানবতার দিন দিনই বিনষ্ট হচ্ছে।

 

কিন্তু এটাতো হবার নয়। মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের নীতিতো এটা নয়। ইসলামের ফেতরাত হলো, আদর্শ হলো-ঐ যে বললাম-ধর্ম নির্বিশেষে শিশুকে সবাই ভালোবাসে কারন সে কাম-ক্রোধ-লোভ-মদ-মাৎসর্য সব কিছুর উর্ধ্বে।

তাই সবাই-ই তাকে কোলে নিয়ে আদর করে। এই যে কলুষ মৃক্ততা সেটাই ইসলামী ফেতরাত। আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) এই ইসলামী ফেতরাতে ছিলেন। সমস্ত অলি-আল্লাহ ইসলামী ফেতরাতে ছিলেন আজ সেগুলো হারা হয়ে মণিহারা ফণির মত আমরা ঘুরছি। এখন আমাদের গাছে ফল হয় না, জমিনে ফসল হয় না। পানিতে মাছ হয় না, পরের দেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে আমাদের চলতে হয় এবং আমাদের ভেতরে যে একতা বা ইত্তেফাক তাও নেই। এক ভাই আর এক ভাইকে হত্যা করতেও আমরা দ্বিধা করি না এবং হত্যা করেও আমরা বেজার বা অনুতপ্ত হইনা। খুশিই হই মানুষ খুন করে অহংকারও করি। এতে কি করে আল্লাহতায়ালার রহমত কামনা আশা করা যায়?

 

গ্রন্থসূত্রঃ আটরশির কাফেলা (২য় খন্ড)

১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭ইং