ঢাকা ০১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ৭ম পর্ব

খাজাবাবার প্রশিক্ষণমত এই নামাজ কায়েমের কাইফিয়াত

শেখ আলহাজ্ব উদ্দিন
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৪৪৮ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

এতক্ষণ পর্যন্ত থিউরী, বিধান, রীতি নীতি ও ফলাফল বলা হয়। এখন অবশ্যই জানতে ইচ্ছা হচ্ছে, এই নামাজ কায়েম করার বাহ্যিক বাস্তবতা ও কাইফিয়াত কি রকম। এই কাইফিয়াতের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর। খাজাবাবার নামাজের প্রারম্ভিকা নিম্নরূপ।

 

‘সকলেই কাতার সোজা করে দাঁড়ান। খেয়াল আপন আপন আপন জ্বলবে ডুবান”। অর্থাৎ কাতার বন্দি হয়ে নামাজে দন্ডায়মান হওয়ার সাথে সাথে দুনিয়ার সকল চিন্তার অবসান হতে হবে। একমাত্র আল্লাহর ধ্যান খেয়াল মনে আনয়ন করতে হবে। বাইরের কোন চিন্তা মনে আসতে পারবে না। কারণ খাজাবাবা বলেছেন: ‘খেয়াল জ্বলবে, কূলব আল্লাহর দিক। আল্লাহ দেখিতেছেন সকলের দিলের হাল। খেয়াল জ্বলবে ডুবাইয়া রাখিলেই নামাজে আল্লাহ মনে থাকে।’ অর্থাৎ বাইরের চিন্তা মুক্ত জ্বলবের মধ্যে আল্লাহ বিরাজ করেন। কারণ নামাজের মধ্যে অন্য খেয়াল আসলে যার উদ্দেশ্যে যাকে রাজীখশি করার জন্য ও যার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নামাজে দন্ডায়মান, সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। উদ্দেশ্যহীন আপন খেয়াল শূণ্য নামাজ কবুলিয়াতের যোগ্যতা রাখেনা। তাই উাজাবাবা বলছেনঃ ‘যেই মাত্র খেয়াল ক্বলব থেকে বাহির হইয়া যাইবে, তদাই খাজাজে আল্লাহ ভুল হইয়া যাইবে। নামাজে যদি আল্লাহ-ই ভুল হইয়া যায়, তাহা হইলে কাহাকে সেজদা করিবেন নিজেই মনে মনে চিন্তা করিয়া বুঝেন। মুখে আল্লাহর নাম আর দিলে দুরিয়ার জল্পনা-কল্পনা, এমন নামাজে কি ফলং তাই দয়াল নবী রাসূলে পাক এরশাদ ফরমান:

 

‎‫لَا صَلُوةَ إِلَّا بِحُضُورِ الْقَلْبِ ) नाছালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব)। অর্থাৎ, ‘নামাজ নয় হুজুরী দেল ব্যতীত।’ (বুখারী, শরহে বুখারী (ইমাম নবুবী) তীবরানী, তাফসিরে রুহুল মায়ানী, বায়হাকী।)‬‎

 

নামাজে আল্লাহ ভুল হওয়ার অর্থ উদাস মনে অথবা অন্য চিন্তামগ্ন অবস্থায় শুধুমাত্র রুকু- সেজদা করা। বস্তুত খেয়াল যে দিকে যাবে, সেজদা তো তাকেই করা হল। মন-মুখ বিপরীত হলে সে নামাজ ফলাফল শূণ্য। যার জন্য হুজুর বলেছেন- দেলকে হাজের করতে সক্ষম না হলে সে নামাজ তো নামাজই নয়।

 

‎‫إِلَّا بِحُضُورِ الْقَلْبِ শব্দটির দুটি অর্থ। এক. সকল খেয়ালকে পরিহার করে একমাত্র আল্লাহর হুজুরে হাজিরী দিয়ে নামাজ কায়েম করতে হবে। অন্য অর্থ, রাসূলে পাক যেভাবে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত হয়ে আল্লাহকে হাজের- নাজের জেনে নামাজ কায়েম করেছেন, অনুরূপ রাসূলে পাক এর হুজুরীতে নামাজ কায়েম করা।‬‎

 

সকল চিন্তামুক্ত হয়ে মুখ ও মনের ভাষা এক করে আল্লাহ তায়ালাকে হাজের-নাজের ওয়াহেদ জেনে হুজুরী ক্বলবে আল্লাহকে সেজদা করেন। এই হেকমত আকাবের আউলিয়াগণের হেকমত। ‘এই হেকমতে নামাজ কায়েম করতেন খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর। ‘এই হেকমত যেন নামাজ কাহারো কখনো ভুল না হয়।’

 

বর্ণিত কথাগুলো, যা খাজাবাবা বলেছেন, তা একটা শপথ বাক্যের অনুরুপ। মূলত তাই। এই ‘শপথ’ বাক্য কিন্তু আমরা সকলেই নামাজের প্রারম্ভিকায় করে থাকি। কিন্তু এমন করে তার সার-সংক্ষেপ ওয়াকেফহাল নই বিধায় কথাগুলো অনেকের কাছে নতুন বলে প্রতিয়মান হওয়া স্বাভাবিক।

নামাযের শুরুতে জায়নামাজে দাড়িয়ে পাঠ করে থাকি- لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ حَنِيفًا وَمَا أَنَا إِنِّي وَجَهْتُ وَجْهِي‎

 

‎‫مِنَ الْمُشْرِكِينَ -‬‎

 

উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াজ জাহতু অজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাছ সামাওয়াতে অল আরদা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন।

 

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি মুতাওয়াজ্জু হইতেছি আমার অবয়বসহ (দেহ, মন, মুখ মন্ডল) ঐ পরওয়ারদেগারে আলমের দিকে, যিনি আকাশমন্ডল ও ভূমণ্ডলের মালিক। একাগ্রচিত্তে। (আমি তারই দিকে মনোনিবেশ করছি) আমি মোশরেকাদের অন্তর্ভুক্ত নই।”

 

জায়নামাযের দোয়ার ভাবসম্প্রসারণ বর্ণিত শপথ বাক্য। এই শপথ বাক্য পাঠান্তে (কেউ বাংলায় কেউ আরবীতে) নামাজ শুরু করছি। কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে তা কি একবার ভেবে দেখছি? অথচ এই নামায আমার জীবনের শেষ নামাজ। আমি হয়তো জীবনে আর নামাজে দন্ডায়মান হতে পারব না। এই নামাজ যদি কবুল না হয়, তাহলে ইহকাল পরকালে কোন ফল দিবে না। এই ফল শূণ্য পরিশ্রমে প্রেম বা মহব্বত না আসাটাই বাস্তব।

 

যে কোন কাজের লাভ লোকসান পাশাপাশি থাকে। কথাটা সকলের মধ্য প্রচলিত আছে। নামাজ পাপের পথের অন্তরায়। নামাজ শান্তির প্রতীক। ‘রাসূলে পাক মে’রাজ থেকে এসে হযরত বেলাল (রাঃ) কে আযান দেয়ার জন্য বলার পরিবর্তে বললেন- ‘হে বেলাল, আমাকে শান্তি দাও।’ অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ আশানুরূপ শান্তি পাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন : اقم‎

 

‎‫الصَّلَوَةَ لِذِكْرِى )আকিমিছ ছালাতা লেযিকরী।) ‘আমার জিকিরের উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম কর।’ (সুরায় আয়াত নং ………..) নামাজের মধ্যেই আল্লাহর জিকির নিহিত। এই নামাজেই আল্লাহর দর্শন লাভ হয়। ‘নামাজ জান্নাতের কুঞ্জি’। যে নামাজে এত কল্যাণ নিহিত সে নামাজে কোন ফল হবে না, নামাজী যদি তার নামাজে উদাসীন হন। বরং তার জন্য শাস্তি অবধারিত। সে জন্যই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তবারক তায়ালা ঘোষণা করেছেন:‬‎

 

‎‫مَا هُونَ – الَّذِينَ هُم فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ। صَلَاتِهِمْ‬‎

 

‎‫يُرَاءُونَ – (الْمَاعُونَ ( ٤) উচ্চারণ : ফাওয়াইলুল্লিল মুছাল্লিনাল্লাজিনা হুম আর ছালাতিহিম সাহুন আল্লাযিনা হুম ইউরাউনা।

অর্থাৎ “অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজীর জন্য যারা তাদের নামাজের বেখবর উদাসীন। যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” অর্থাৎ নামাজীদের জন্য ওয়ায়েল দোযখ বা দুর্ভোগ। কারণ, তাদের নামাজ লোক দেখানোর নিমিত্তে। যাদের নামাজে খেয়াল বা প্রাণ নেই। শুধু উদাসীনভাবে মসজিদে আসে আর সামাজিকভাবে নামাজ আদায় করে থাকে। এই নামাজ দুনিয়াতে যেমন নামাজীকে খারাপ বা অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখবে না, অনুরূণ পরকালেও নাজাতের উসিলা হবে না। তাই শায়ের বলেছেন:

 

‎‫مُكُن سُجْتِي نَمَازِ بَنْجِكَانَهُ – فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ -‬‎

 

উচ্চারণ: মাকুন সুচতি নামাজে পাঞ্জেগানা, ফাওয়াই লুল্লিল মুসাল্লিন আল্লাজিনা।

 

“তোমরা নামাজে অবহেলা অমনোযোগী হয়ো না, তাহলে তোমাদের জন্য ওয়ালেল বা দুর্ভোগ।” যার জন্য খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর বলেছেন: ‘মন-মুখ এক করে, আল্লাহ তায়ালাকে হাজের-নাজের-ওয়াহেদ জেনে হুজুরী কূলবে আল্লাহকে সেজদা করেন।’ তবেই নামাজে ‘আল্লাহ’ দরশন নছীব হবে। অতএব লাভ যেখানে, সেখানে পূর্ণতা না থাকলে লোকসান তো হবেই। তদুপরি যেই নামাজে দুনিয়াতে আল্লাহর মে’রাজ হলনা, সেই নামাজ

 

বেহেশতের কুঞ্জি হবে কি করে? যা হাদীসের উদ্ধৃতি الصَّلَواةُ مِفْتَحُ‎

 

‎‫الجَنَّةَ )আচ্ছালাতু মেফতাহুল জান্নাত)। “নামায বেহেশতের চাবি।’‬‎

 

(মুয়াত্তায়মালেক, তিরমিজী, বায়হাকী ইত্যাদি) যে নামাজ বেহেশতের চাবি তা কবুল হতে হবে। নামায কবুল হলে তার ফলাফল প্রথম দুনিয়াতে অবশাই পাওয়া যাবে। দুনিয়াতে না পেলে পরকালে কিছুই পাওয়া যাবে না। তার অর্থ নামাজ কবুল হয়নি।‬‎

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নামাজ ৭ম পর্ব

খাজাবাবার প্রশিক্ষণমত এই নামাজ কায়েমের কাইফিয়াত

আপডেট সময় : ০৯:৫৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

এতক্ষণ পর্যন্ত থিউরী, বিধান, রীতি নীতি ও ফলাফল বলা হয়। এখন অবশ্যই জানতে ইচ্ছা হচ্ছে, এই নামাজ কায়েম করার বাহ্যিক বাস্তবতা ও কাইফিয়াত কি রকম। এই কাইফিয়াতের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর। খাজাবাবার নামাজের প্রারম্ভিকা নিম্নরূপ।

 

‘সকলেই কাতার সোজা করে দাঁড়ান। খেয়াল আপন আপন আপন জ্বলবে ডুবান”। অর্থাৎ কাতার বন্দি হয়ে নামাজে দন্ডায়মান হওয়ার সাথে সাথে দুনিয়ার সকল চিন্তার অবসান হতে হবে। একমাত্র আল্লাহর ধ্যান খেয়াল মনে আনয়ন করতে হবে। বাইরের কোন চিন্তা মনে আসতে পারবে না। কারণ খাজাবাবা বলেছেন: ‘খেয়াল জ্বলবে, কূলব আল্লাহর দিক। আল্লাহ দেখিতেছেন সকলের দিলের হাল। খেয়াল জ্বলবে ডুবাইয়া রাখিলেই নামাজে আল্লাহ মনে থাকে।’ অর্থাৎ বাইরের চিন্তা মুক্ত জ্বলবের মধ্যে আল্লাহ বিরাজ করেন। কারণ নামাজের মধ্যে অন্য খেয়াল আসলে যার উদ্দেশ্যে যাকে রাজীখশি করার জন্য ও যার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নামাজে দন্ডায়মান, সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। উদ্দেশ্যহীন আপন খেয়াল শূণ্য নামাজ কবুলিয়াতের যোগ্যতা রাখেনা। তাই উাজাবাবা বলছেনঃ ‘যেই মাত্র খেয়াল ক্বলব থেকে বাহির হইয়া যাইবে, তদাই খাজাজে আল্লাহ ভুল হইয়া যাইবে। নামাজে যদি আল্লাহ-ই ভুল হইয়া যায়, তাহা হইলে কাহাকে সেজদা করিবেন নিজেই মনে মনে চিন্তা করিয়া বুঝেন। মুখে আল্লাহর নাম আর দিলে দুরিয়ার জল্পনা-কল্পনা, এমন নামাজে কি ফলং তাই দয়াল নবী রাসূলে পাক এরশাদ ফরমান:

 

‎‫لَا صَلُوةَ إِلَّا بِحُضُورِ الْقَلْبِ ) नाছালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব)। অর্থাৎ, ‘নামাজ নয় হুজুরী দেল ব্যতীত।’ (বুখারী, শরহে বুখারী (ইমাম নবুবী) তীবরানী, তাফসিরে রুহুল মায়ানী, বায়হাকী।)‬‎

 

নামাজে আল্লাহ ভুল হওয়ার অর্থ উদাস মনে অথবা অন্য চিন্তামগ্ন অবস্থায় শুধুমাত্র রুকু- সেজদা করা। বস্তুত খেয়াল যে দিকে যাবে, সেজদা তো তাকেই করা হল। মন-মুখ বিপরীত হলে সে নামাজ ফলাফল শূণ্য। যার জন্য হুজুর বলেছেন- দেলকে হাজের করতে সক্ষম না হলে সে নামাজ তো নামাজই নয়।

 

‎‫إِلَّا بِحُضُورِ الْقَلْبِ শব্দটির দুটি অর্থ। এক. সকল খেয়ালকে পরিহার করে একমাত্র আল্লাহর হুজুরে হাজিরী দিয়ে নামাজ কায়েম করতে হবে। অন্য অর্থ, রাসূলে পাক যেভাবে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত হয়ে আল্লাহকে হাজের- নাজের জেনে নামাজ কায়েম করেছেন, অনুরূপ রাসূলে পাক এর হুজুরীতে নামাজ কায়েম করা।‬‎

 

সকল চিন্তামুক্ত হয়ে মুখ ও মনের ভাষা এক করে আল্লাহ তায়ালাকে হাজের-নাজের ওয়াহেদ জেনে হুজুরী ক্বলবে আল্লাহকে সেজদা করেন। এই হেকমত আকাবের আউলিয়াগণের হেকমত। ‘এই হেকমতে নামাজ কায়েম করতেন খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর। ‘এই হেকমত যেন নামাজ কাহারো কখনো ভুল না হয়।’

 

বর্ণিত কথাগুলো, যা খাজাবাবা বলেছেন, তা একটা শপথ বাক্যের অনুরুপ। মূলত তাই। এই ‘শপথ’ বাক্য কিন্তু আমরা সকলেই নামাজের প্রারম্ভিকায় করে থাকি। কিন্তু এমন করে তার সার-সংক্ষেপ ওয়াকেফহাল নই বিধায় কথাগুলো অনেকের কাছে নতুন বলে প্রতিয়মান হওয়া স্বাভাবিক।

নামাযের শুরুতে জায়নামাজে দাড়িয়ে পাঠ করে থাকি- لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ حَنِيفًا وَمَا أَنَا إِنِّي وَجَهْتُ وَجْهِي‎

 

‎‫مِنَ الْمُشْرِكِينَ -‬‎

 

উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াজ জাহতু অজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাছ সামাওয়াতে অল আরদা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন।

 

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি মুতাওয়াজ্জু হইতেছি আমার অবয়বসহ (দেহ, মন, মুখ মন্ডল) ঐ পরওয়ারদেগারে আলমের দিকে, যিনি আকাশমন্ডল ও ভূমণ্ডলের মালিক। একাগ্রচিত্তে। (আমি তারই দিকে মনোনিবেশ করছি) আমি মোশরেকাদের অন্তর্ভুক্ত নই।”

 

জায়নামাযের দোয়ার ভাবসম্প্রসারণ বর্ণিত শপথ বাক্য। এই শপথ বাক্য পাঠান্তে (কেউ বাংলায় কেউ আরবীতে) নামাজ শুরু করছি। কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে তা কি একবার ভেবে দেখছি? অথচ এই নামায আমার জীবনের শেষ নামাজ। আমি হয়তো জীবনে আর নামাজে দন্ডায়মান হতে পারব না। এই নামাজ যদি কবুল না হয়, তাহলে ইহকাল পরকালে কোন ফল দিবে না। এই ফল শূণ্য পরিশ্রমে প্রেম বা মহব্বত না আসাটাই বাস্তব।

 

যে কোন কাজের লাভ লোকসান পাশাপাশি থাকে। কথাটা সকলের মধ্য প্রচলিত আছে। নামাজ পাপের পথের অন্তরায়। নামাজ শান্তির প্রতীক। ‘রাসূলে পাক মে’রাজ থেকে এসে হযরত বেলাল (রাঃ) কে আযান দেয়ার জন্য বলার পরিবর্তে বললেন- ‘হে বেলাল, আমাকে শান্তি দাও।’ অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ আশানুরূপ শান্তি পাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন : اقم‎

 

‎‫الصَّلَوَةَ لِذِكْرِى )আকিমিছ ছালাতা লেযিকরী।) ‘আমার জিকিরের উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম কর।’ (সুরায় আয়াত নং ………..) নামাজের মধ্যেই আল্লাহর জিকির নিহিত। এই নামাজেই আল্লাহর দর্শন লাভ হয়। ‘নামাজ জান্নাতের কুঞ্জি’। যে নামাজে এত কল্যাণ নিহিত সে নামাজে কোন ফল হবে না, নামাজী যদি তার নামাজে উদাসীন হন। বরং তার জন্য শাস্তি অবধারিত। সে জন্যই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তবারক তায়ালা ঘোষণা করেছেন:‬‎

 

‎‫مَا هُونَ – الَّذِينَ هُم فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ। صَلَاتِهِمْ‬‎

 

‎‫يُرَاءُونَ – (الْمَاعُونَ ( ٤) উচ্চারণ : ফাওয়াইলুল্লিল মুছাল্লিনাল্লাজিনা হুম আর ছালাতিহিম সাহুন আল্লাযিনা হুম ইউরাউনা।

অর্থাৎ “অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজীর জন্য যারা তাদের নামাজের বেখবর উদাসীন। যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” অর্থাৎ নামাজীদের জন্য ওয়ায়েল দোযখ বা দুর্ভোগ। কারণ, তাদের নামাজ লোক দেখানোর নিমিত্তে। যাদের নামাজে খেয়াল বা প্রাণ নেই। শুধু উদাসীনভাবে মসজিদে আসে আর সামাজিকভাবে নামাজ আদায় করে থাকে। এই নামাজ দুনিয়াতে যেমন নামাজীকে খারাপ বা অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখবে না, অনুরূণ পরকালেও নাজাতের উসিলা হবে না। তাই শায়ের বলেছেন:

 

‎‫مُكُن سُجْتِي نَمَازِ بَنْجِكَانَهُ – فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ -‬‎

 

উচ্চারণ: মাকুন সুচতি নামাজে পাঞ্জেগানা, ফাওয়াই লুল্লিল মুসাল্লিন আল্লাজিনা।

 

“তোমরা নামাজে অবহেলা অমনোযোগী হয়ো না, তাহলে তোমাদের জন্য ওয়ালেল বা দুর্ভোগ।” যার জন্য খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুর বলেছেন: ‘মন-মুখ এক করে, আল্লাহ তায়ালাকে হাজের-নাজের-ওয়াহেদ জেনে হুজুরী কূলবে আল্লাহকে সেজদা করেন।’ তবেই নামাজে ‘আল্লাহ’ দরশন নছীব হবে। অতএব লাভ যেখানে, সেখানে পূর্ণতা না থাকলে লোকসান তো হবেই। তদুপরি যেই নামাজে দুনিয়াতে আল্লাহর মে’রাজ হলনা, সেই নামাজ

 

বেহেশতের কুঞ্জি হবে কি করে? যা হাদীসের উদ্ধৃতি الصَّلَواةُ مِفْتَحُ‎

 

‎‫الجَنَّةَ )আচ্ছালাতু মেফতাহুল জান্নাত)। “নামায বেহেশতের চাবি।’‬‎

 

(মুয়াত্তায়মালেক, তিরমিজী, বায়হাকী ইত্যাদি) যে নামাজ বেহেশতের চাবি তা কবুল হতে হবে। নামায কবুল হলে তার ফলাফল প্রথম দুনিয়াতে অবশাই পাওয়া যাবে। দুনিয়াতে না পেলে পরকালে কিছুই পাওয়া যাবে না। তার অর্থ নামাজ কবুল হয়নি।‬‎