ঢাকা ০৩:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪০৮ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইতিকাফ: যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না

ইতিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বিশেষ করে রমজান মাসের শেষ দশকে অধিক পালন করা হয়। এটি মসজিদে অবস্থান করে পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার একটি পবিত্র আমল। তবে ইতিকাফ পালনের কিছু নিয়ম ও বিধিনিষেধ রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত।

 

ইতিকাফে যা করা যাবে

 

১. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত:

ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই কুরআন তিলাওয়াত, ফরজ ও নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য ইবাদত করা যাবে।

 

২. জিকির ও দোয়া:

আল্লাহকে স্মরণ করা, বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা, দরুদ শরিফ পড়া ও তাসবিহ-তাহলিল করা ইতিকাফের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

৩. ইসলামি জ্ঞানার্জন:

ইসলামি বই পড়া, হাদিস অধ্যয়ন করা, দ্বীন সম্পর্কে জানা ও শেখা যাবে।

 

৪. প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ:

নিজের ও অন্যদের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তবে এটি যেন ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যের ব্যাঘাত না ঘটায়।

 

৫. টয়লেটে যাওয়া ও ওজু করা:

শরীরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য টয়লেট ব্যবহার করা ও ওজু করা জায়েজ। তবে দ্রুত ফিরে আসা উচিত।

 

৬. সংক্ষেপে কারো সাথে কথা বলা:

অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলা যায়, তবে এটি যেন ইবাদতের মনোযোগ নষ্ট না করে।

 

 

ইতিকাফে যা করা যাবে না

 

১. মসজিদ থেকে বের হওয়া (অকারণে):

কোনো জরুরি কারণ ছাড়া মসজিদ ত্যাগ করা ইতিকাফ নষ্ট করে দেয়।

 

২. অপ্রয়োজনীয় কথা ও হাসি-ঠাট্টা:

ইতিকাফের সময় দুনিয়াবি আলোচনা, হাসি-ঠাট্টা, গীবত ও অনর্থক কথা বলা নিষেধ।

 

৩. মোবাইল বা সামাজিক মাধ্যমে সময় নষ্ট করা:

ইতিকাফের সময় মোবাইল ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এটি ইবাদতের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

 

৪. কেনাকাটা বা ব্যবসার আলোচনা:

যদি কেউ ইতিকাফ অবস্থায় ব্যবসা বা কেনাকাটার জন্য পরিকল্পনা করেন বা অর্থনৈতিক বিষয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে এটি ইতিকাফের উদ্দেশ্য পরিপন্থী।

 

৫. স্ত্রী সহবাস:

ইতিকাফরত ব্যক্তির জন্য স্ত্রী সহবাস হারাম। এমনকি এ ধরনের চিন্তা করা বা স্পর্শ করার মাধ্যমেও ইতিকাফ ভঙ্গ হতে পারে।

 

৬. মিথ্যা ও গীবত:

ইতিকাফ অবস্থায় মিথ্যা কথা বলা, গীবত করা বা কাউকে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

 

ইতিকাফ মূলত আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এটি পালনের মাধ্যমে একজন মুসলিম দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের ঈমানকে মজবুত করতে পারেন। তবে ইতিকাফের নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি, যাতে ইবাদত বিশুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইতিকাফ পালনের তাওফিক দান করুন, আমিন।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

ইতিকাফ: যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না

ইতিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বিশেষ করে রমজান মাসের শেষ দশকে অধিক পালন করা হয়। এটি মসজিদে অবস্থান করে পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার একটি পবিত্র আমল। তবে ইতিকাফ পালনের কিছু নিয়ম ও বিধিনিষেধ রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত।

 

ইতিকাফে যা করা যাবে

 

১. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত:

ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই কুরআন তিলাওয়াত, ফরজ ও নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য ইবাদত করা যাবে।

 

২. জিকির ও দোয়া:

আল্লাহকে স্মরণ করা, বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা, দরুদ শরিফ পড়া ও তাসবিহ-তাহলিল করা ইতিকাফের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

৩. ইসলামি জ্ঞানার্জন:

ইসলামি বই পড়া, হাদিস অধ্যয়ন করা, দ্বীন সম্পর্কে জানা ও শেখা যাবে।

 

৪. প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ:

নিজের ও অন্যদের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তবে এটি যেন ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যের ব্যাঘাত না ঘটায়।

 

৫. টয়লেটে যাওয়া ও ওজু করা:

শরীরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য টয়লেট ব্যবহার করা ও ওজু করা জায়েজ। তবে দ্রুত ফিরে আসা উচিত।

 

৬. সংক্ষেপে কারো সাথে কথা বলা:

অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলা যায়, তবে এটি যেন ইবাদতের মনোযোগ নষ্ট না করে।

 

 

ইতিকাফে যা করা যাবে না

 

১. মসজিদ থেকে বের হওয়া (অকারণে):

কোনো জরুরি কারণ ছাড়া মসজিদ ত্যাগ করা ইতিকাফ নষ্ট করে দেয়।

 

২. অপ্রয়োজনীয় কথা ও হাসি-ঠাট্টা:

ইতিকাফের সময় দুনিয়াবি আলোচনা, হাসি-ঠাট্টা, গীবত ও অনর্থক কথা বলা নিষেধ।

 

৩. মোবাইল বা সামাজিক মাধ্যমে সময় নষ্ট করা:

ইতিকাফের সময় মোবাইল ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এটি ইবাদতের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

 

৪. কেনাকাটা বা ব্যবসার আলোচনা:

যদি কেউ ইতিকাফ অবস্থায় ব্যবসা বা কেনাকাটার জন্য পরিকল্পনা করেন বা অর্থনৈতিক বিষয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে এটি ইতিকাফের উদ্দেশ্য পরিপন্থী।

 

৫. স্ত্রী সহবাস:

ইতিকাফরত ব্যক্তির জন্য স্ত্রী সহবাস হারাম। এমনকি এ ধরনের চিন্তা করা বা স্পর্শ করার মাধ্যমেও ইতিকাফ ভঙ্গ হতে পারে।

 

৬. মিথ্যা ও গীবত:

ইতিকাফ অবস্থায় মিথ্যা কথা বলা, গীবত করা বা কাউকে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

 

আরো পড়ুন: সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ

 

ইতিকাফ মূলত আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এটি পালনের মাধ্যমে একজন মুসলিম দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের ঈমানকে মজবুত করতে পারেন। তবে ইতিকাফের নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি, যাতে ইবাদত বিশুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইতিকাফ পালনের তাওফিক দান করুন, আমিন।