শয়তান কত প্রকার ও কী কী?—একটি ইসলামি বিশ্লেষণ

- আপডেট সময় : ০৩:৩০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
- / ২৪১০ বার পড়া হয়েছে
শয়তান ইসলামে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মানুষের পথভ্রষ্টতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সাধারণত, শয়তান বলতে ইবলিসকে বোঝানো হলেও, ইসলামে শয়তান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে শয়তানের প্রকারভেদ ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুন:ইসলাম যিন্দাহ হোতা হায় হার কারবালা কে বা’দ
শয়তানের সংজ্ঞা ও ভূমিকা
শয়তান আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো “বিদ্রোহী” বা “দুর্জন”। ইসলামী পরিভাষায় শয়তান সেই সত্তাকে বোঝায়, যে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো।”
(সূরা ফাতির: ৬)
আরো পড়ুন:দরূদে নারিয়াহ ও ফযীলত
শয়তানের প্রকারভেদ
ইসলামী গ্রন্থ ও গবেষণায় সাধারণত শয়তানকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
১. জিন জাতির শয়তান (ইবলিস ও তার অনুসারী জিনরা)
ইবলিস ছিল একসময় আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত জিন। কিন্তু সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকার করায় আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাকে সময় দেন।
ইবলিসের নেতৃত্বে আরও অনেক জিন রয়েছে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজে নিয়োজিত।
তারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়, বিভিন্ন ধোঁকা ও লোভ দেখিয়ে পাপের দিকে নিয়ে যায়।
হাদিসে আছে, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে এক শয়তান নিয়োজিত থাকে, তবে নবী (সা.)-কে দেওয়া শয়তান ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
২. মানবজাতির শয়তান
শুধু জিন নয়, মানুষদের মধ্যেও অনেক শয়তান থাকে।
কুরআনে বলা হয়েছে:”এমনিভাবে আমি মানুষের ও জিনের শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি। তারা একে অপরকে ধোঁকাময় সুন্দর কথা শোনায়।”
(সূরা আন’আম: ১১২)
মানুষের শয়তানরা অন্যদের পাপের দিকে আহ্বান করে, অন্যায় ও অন্যায্য কাজের প্রচার করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে।
আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য
শয়তানের কার্যকলাপ
শয়তানের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে সরিয়ে ভুল পথে চালিত করা। সে বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়, যেমন:
১. ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা দেওয়া) – মানুষের মনে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
২. পাপকে আকর্ষণীয় করে তোলা – গুনাহের কাজকে সুন্দর ও উপভোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা।
৩. গাফিলতিতে ফেলা – নামাজ, রোজা, ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
৪. গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখা – মানুষের সময় নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত রাখা।
৫. হাসাদ ও বিদ্বেষ ছড়ানো – মানুষের মধ্যে হিংসা ও শত্রুতার আগুন লাগানো।
আরো পড়ুন:সুফিবাদ ও আত্মদর্শন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও আলোর পথ
শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে ইসলাম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে:
১. বিসমিল্লাহ বলা – যেকোনো কাজ শুরুর আগে আল্লাহর নাম নিলে শয়তানের প্রভাব কমে যায়।
২. আয়াতুল কুরসি ও সূরা নাস ও ফালাক পাঠ করা – এগুলো শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার শক্তিশালী দোয়া।
৩. নামাজ আদায় করা – নামাজ মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে দূরে রাখে।
৪. তওবা করা – পাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
৫. ধৈর্য ও সংযম অবলম্বন করা – রাগ ও প্রতিশোধের সময় সংযম ধরে রাখা।
৬. সৎ মানুষের সাহচর্যে থাকা – খারাপ বন্ধু ও পরিবেশ এড়িয়ে চলা।
আরো পড়ুন:ইসলামে ফেতরাত: একটি পর্যালোচনা
শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু, যা কুরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শুধু জিনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের মধ্যেও শয়তানের অস্তিত্ব রয়েছে। আমাদের উচিত, আল্লাহর পথ অনুসরণ করা, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সতর্ক থাকা এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করুন। আমিন!
সূত্রসমূহ:
আল-কুরআন
সহিহ বুখারি
সহিহ মুসলিম