আল্লাহকে পেতে হলে দুনিয়া ও আখেরাত-দুটোই ত্যাগ করতে হবে
- আপডেট সময় : ০৮:২০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ২৪০৬ বার পড়া হয়েছে
বিষয়ঃ আল্লাহকে পেতে হলে দুনিয়া ও আখেরাত-দুটোই ত্যাগ করতে হবে।
কেউ যদি আল্লাহতায়ালাকে পেতে চায়, আল্লাহতায়ালার প্রেম-পিরিতি ভালবাসা লাভ করতে চায়, আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় তাকে অন্তর(দেল) থেকে দুনিয়ার কামনা-বাসনাকে ত্যাগ করতে হবে, একই সাথে পরকালের বাসনাও ত্যাগ করতে হবে। যখন সম্ভব হবে তখনই কেবল আল্লাহতায়ালার প্রেমের নুর ঐ ব্যাক্তির দেলের ভীতর আসতে থাকবে। দুনিয়া ও আখেরাতের বাসনা অন্তরে পোষন করে আল্লাহপ্রাপ্তির আশা বৃথা।
এ প্রসংগে বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেব বলেন,
যে দুনিয়া চায় তার জন্য আখেরাত হারাম,
যে আখেরাত চায় তার জন্য দুনিয়া হারাম,
যে আল্লাহকে চায় তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাত–দুটোই হারাম।
হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রা:) বলেন-‘দুনিয়া ও আখিরাতের প্রত্যাশী হয়ো না কারণ ইহাদের দিকে লক্ষ্য রাখলে আল্লাহ তায়ালা হতে লক্ষ্যচুত হতে হয়। আল্লাহ তায়ালার প্রেমকে দেলে স্থান দিতে হইলে দেলকে সকল প্রকার আকাঙ্ক্ষা ও অভিলাষ শূন্য করা আবশ্যক। দ্বীন ও দুনিয়া হতে মনকে ফিরাইয়া লইয়া আল্লাহ প্রেমের দিকে একাগ্র করাই ওলী-আল্লাহর চিহ্ন।
কাদেরিয়া তরিকার সম্রাট গাউসপাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) ছাহেব বলেন, হে বৎস! যদি তুমি পারলৌকিক মরতবা ও মরযাদার প্রত্যাশী হও, তাহলে তোমাকে ইহলৌকিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তি-আরামের বাসনাসমূহকে পরিত্যাগ করতে হবে। তবে যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য ও নৈকট্য প্রত্যাশী, তাকে দুনিয়ার সাথে সাথে আখেরাতের সুখ লাভের বাসনাকে বর্জন করতে হবে। মোটকথা আখেরাতের জন্য দুনিয়াকে এবং আল্লাহর জন্য আখেরাতকে পরিত্যাগ করতে হবে।
জেনে রাখবে, যতদিন কারও মনে দুনিয়ার স্বাদের কামনা থাকবে যেমন পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, সওয়ারী, বাসগৃহ, ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, সুযশ-সু্খ্যাতি, ক্ষমতা, রাজ্য-রাজত্ব, শান-শওকত ও জাকজমকের কামনা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাকে যাহেদ বা দুনিয়াত্যাগী বলা যাবে না। বরং যখন অন্তর থেকে এগুলোর মায়া ও মোহ সম্পূর্ণরূপে ছুড়ে ফেলা হয়, বিন্দুমাত্র আকর্ষণও বাকি না থাকে, তখনই তার প্রতি আল্লাহর করুণা নাযিল হবে।
হুযুরে পাক (সা:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি সংসারকে পুর্ণরূপে পরিত্যাগ করবে (ঐ ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ) তার দেহ-মনে এক অনাবিল সুখ ও শান্তি অনুভূত হয়। অতএব যতদিন পযন্ত ঐ অবস্থা সূষ্টি না হবে, ততদিন পযন্ত সে পুর্নরূপে দুনিয়া বর্জনকারীদের দলভুক্ত হয়েছে বলে বিশ্বাস কারা যাবে না। তবে কঠোর চেষ্টা ও সাধনা বলে যখন পার্থিক বিষয়-বস্তু থেকে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কচ্ছেদ সক্ষম হবে, তখন আখেরাতের বিষয়-বস্তু থেকে ত্যাগের সাধনা শুরু করবে। এ সময় আখেরাতের উচ্চ মরযাদা বেহেশতের বিভিন্ন আরামদায়ক নিয়ামত যথা হুর গেলমান, অনুপম বাস ভবন, উদ্যান, সুস্বাদু ও উপাদেয় আহারয দ্রব্য, চাকচিক্যময় পোশাক-পরিচ্ছদ, মনোহর ভুষণ ও অলংকারাদি এবং অন্যান্য নিয়ামতসূমূহ, যা আল্লাহ পাক তাঁর নেককার বান্দাদের জন্য বেহেশতে প্রস্তুত রেখেছেন, সেসব নিয়ামতের বাসনা অন্বেষণও পরিত্যাগ করবে।
এই পরযায়ে পৌঁছাতে পারলে বান্দা তখন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হবে: আল্লাহ পাক তখন ঐ বান্দার সাথে এরূপ আচরন প্রদর্শন করবেন, যেমন আচরণ, ব্যবহার ও অভ্যর্থনা তিনি নবী রাসূল ও অলী-আবদালদের সাথে করে থাকেন: অর্থাৎ আল্লাহ পাক বিশেষ অনুগ্রহের দ্বারা ঐ বান্দাকে আপ্যায়িত করবেন। তাকে স্বীয় নৈকট্য দানে ধন্য করবেন। তার প্রতি বিভিন্নরূপ নিয়ামতের ধারা ক্রমবর্ধিত হারে বর্ষিত হতে থাকবে। দুনিয়া থেকে আখেরাতে প্রস্থানের পর ঐ বান্দা এমন অপূর্ব ও অতুলনীয় নিয়ামত লাভ করবে, যা তার চোখ কোনদিন অবলোকন করেনি, কান কোনদিন শ্রবণ করেনি এবং দেল কোন দিন কল্পনাও করেনি। (তথ্যসূত্রঃ ফতুহুল গায়েব অমীয় বানী-৫৪)
আমরা নাদান, আমরা গোনাহগার। হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে আমাদের দেল থেকে দুনিয়া ও আখেরাতের বাসনাকে দূর করে পবিত্র করে দিন এবং আপনার পবিত্র দরবারের দিকে পথ দেখান। আমিন।