রাসূল সাঃ নূরের তৈরীর বিষয়টি কি?
রাসূল সাঃ কিসের তৈরি
- আপডেট সময় : ০৬:০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
- / ২৪০৭ বার পড়া হয়েছে
সায়্যিদুল মুরছালিন, হযরত রাসূলে করিম (স) এর সৃষ্টি তত্ত্বটি আকিদার বিষয় কিনা এ সম্পর্কে সু-স্পষ্টভাবে কোন আকায়েদের কিতাবে আলোচনা খুজে পাওয়া যায়না। অর্থাৎ আমার জানা মতে, পূর্ব যুগের কোন ফকিহ- ইমাম এ বিষয়টিকে আকিদা হিসেবে আকায়েদের কিতাবে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি।’ বরং অনেক ফকিহ্ ও ইমামগণ এ বিষয়টিকে রাসূল (স) এর মর্যাদা হিসেবে তাঁদের স্ব স্ব শামায়েলের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে রাসূল (স) এর সৃষ্টি তথ্যের বিষয়টি সরাসরি আকিদার বিষয় না হলেও রাসূলে করিম (সাঃ) এর শান-মান ও মর্যাদা সম্পর্কীত বিষয়। তবে বর্তমান যুগে কোন কোন আলিম এ বিষয়টিকে আকিদা হিসেবে সমর্থন করে থাকেন। আমরা তাদের এই মতটিকে অমূলক মনে করিনা। কেননা বিষয়টি রাসূল পাক (১) এঁর সৃষ্টি সম্পর্কীত আকিদা ইহাই যুক্তিসঙ্গত কথা। যেহেতু বিষয়টি কোন আমল বা আহকামের বিষয় নয় বরং বিশ্বাসের সাথে জড়িত বিষয়। অতএব, ইহা রাসূলে পাক (স) এঁর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কীত আকিদা। উল্লেখ্য যে, আদিকা সাধারণ দুই রকম হয়। ১. আকিদায়ে উসূলী এবং ২. আকিদায়ে ফুরু’ঈ। প্রথম প্রকার আকিদা অস্বীকার করলে কুফর হবে ও ঈমান থেকে খারিজ হবে। আর দ্বিতীয় প্রকার আকিদা অস্বীকার করলে মু’দীল বা পথভ্রষ্ট হবে, তবে ঈমান থেকে খারিজ হবেনা। যেমন আকিদার কিতাবে আছে, পবিত্র মি’রাজ শরীফের মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত কেউ অস্বীকার করলে কুফর হবে আর মসজিদে আকসা থেকে ছিদরাতুল মুস্তাহা পর্যন্ত অস্বীকার করলে মু’দীল বা পথভ্রষ্ট হবে। অথচ এই দু’টি বিষয়ই আকিদার অন্তর্ভূক্ত। আকাইদের কিতাব সমূহের মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব হল ‘শারহু আকাইদিন নাছাফী’। উক্ত কিতাবে রাসূলে আকরাম (১) এঁর ছিদরাতুল মুস্তাহা এবং আরশ গমন কিংবা আরো উপরে আরোহন সম্পর্কে আল্লামা সাদ উদ্দিন তাফতাজানী (রাহ,) পরিস্কার করে বলেছেন, অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা যা চেয়েছেন’ এই কথার ব্যাখ্যা হল, পূর্ববর্তীগণের মাঝে এই ঈশারার মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন জান্নাত পর্যন্ত, কেউ বলেছেন আরশ পর্যন্ত, কেউ বলেছেন আরশের উপরে পর্যন্ত, কেউ বলেছেন জগতের শেষ পর্যন্ত। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত এই ইসরা হল কিতাবুল্লাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। জমীন থেকে আসমান পর্যন্ত মেরাজ হাদিসে মাশহুর দ্বারা প্রমাণিত। আর আসমান থেকে জান্নাত পর্যন্ত অথবা আরশ পর্যন্ত অথবা অন্যান্য স্থানে যাওয়ার বিষয়টি খবরে ওয়াহেদ দ্বারা প্রমাণিত।”২
সুতরাং শারহু আকাইদে নাছাফীর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কোন কোন আকিদা হল আকিদায়ে উসূলী এবং কোন কোন আকিদা হল আকিদায়ে ফুরুয়ী। তাই রাসূল পাক (স) নূরের তৈরীর বিষয়টি আকিদায়ে ফুরূয়ীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা ইহা বহু সংখ্যক হাদিস থেকে প্রমাণিত এবং পবিত্র কোরআনেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে।
যাই হোক আল্লাহর রাসূল (স) এর সৃষ্টি তথ্যটি আকিদার বিষয় হোক অথবা শান-মান ও মর্যাদার বিষয় হোক, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের জানতে হবে মূলত আল্লাহর রাসূল (স) মাটির তৈরী নাকি নূরের তৈরী।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর উলামায়ে কেরামের আকিদা হচ্ছে, হযরত রাসূল (স) আল্লাহ তা’য়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি ও আল্লাহর খাল্কী বা সৃষ্টি নূরের তৈরী। তিনি আল্লাহর জাতের অংশও নয় এবং সিফাতের অংশও নয়, বরং তিনি আল্লাহর খাল্কী নূর বা সৃষ্টি নূর। তবে আল্লাহর জাতী নূরের জ্যোতি বলা যায়। কারণ সূর্য থেকে আলোর উৎপত্তি, কিন্তু আলো সূর্যের অংশ নয়। ঠিক তেমনিভাবে প্রিয় নবীজি (র) আল্লাহর জাত কর্তৃক হেকমতে কামেলায় বিনা মাধ্যমে তাঁর নূরে সৃষ্টি কিন্তু আল্লাহর অংশ নয়। উল্লেখ্য যে, রাসূলে পাক (১) এর নূর কুল কায়েনাতে বে-মেছাল ও বে-নজির।