ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খোদাঅন্বেষীর উদ্দেশে আটরশি পীরের উপদেশ

  • আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৪০৮ বার পড়া হয়েছে

রাজনীতিতে জাকের পার্টি

Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের জীবদ্দশায় বিভিন্ন জেলা থেকে দরবার শরীফ অভিমুখে শত শত বাসের কাফেলা আসতো। বর্ষার মৌসুমে শত শত লঞ্চের কাফেলা আসতো। এগুলো আসতো জেলাভিত্তিক কাফেলা। কখনও আসতো বিভাগীয় কাফেলা। তখন হতো হাজারে হাজারে বাস। কাফেলায় আগত হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ আশেকান – জাকেরান রাত ব্যাপী ইবাদত বন্দেগী, জেকের আজকার করে তরিকতের নিয়মপদ্ধতি শিক্ষা করে এবং নতুন যারা তারা বাইয়াত হয়ে সকাল বেলা বিদায় হয়ে যেতেন। অধিকাংশ দিনেই কেবলাজান হুজুর সকাল ৮:০০ থেকে ৯:০০টার মধ্যে আগত আশেকান, জাকেরানদের কিছু মুল্যবান উপদেশ দিয়ে বিদায় দিতেন। সেই উপদেশগুলোতে ছিল দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের এক চমৎকার দিক নির্দেশনা।

আজ তেমনি কিছু উপদেশ তুলে ধরছি। কোন এক বড় বাস কাফেলা বিদায় দেওয়ার সময় কেবলাজান হুজুর আগত লক্ষ খোদাঅন্বেষীর উদ্দেশে সেই উপদেশগুলো দিয়েছিলেন।

উপদেশ সমূহঃ

আল্লাহ আপনাদের মান সম্মান ইজ্জত হুরমত রক্ষা করুন। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে শান্তিতে রাখুন। আপনারা শান্তিতে থাকুন। আপনারা ছেলে পেলে নিয়ে সুখে থাকুন। আপনাদের জীবন শান্তিময় হোক-এই আমার দোয়া।

• আপনারা তরিকতের কাজ ঠিক ঠিক মত করবেন।

* নামাজ যেন কাজা করেন না। নামাজ এক অমূল্য নেয়ামত, আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ দান। এই নামাজের মধ্যেই আছে হুজুরে কালবের মারেফাত। নামাজের মধ্যে আছে মোমেনের জন্য মেরাজ। এমন নামাজ শিক্ষা করার জন্য কামেলও মোকাম্মেল পীরের সান্নিধ্যে থেকে দীর্ঘ সময় খেদমত করতে হয়।

* নবীজী (সাঃ) বলেন, ‘লা সালাতা ইল্লা বে হুজুরিল কালব। অর্থাৎ নামাজই নয় হুজুরে দেল ব্যতীত। কালব হলো আল্লাহতায়ালার ভেদের এক মহা সমূদ্র। কালব সমুদ্রে ডুব দিয়ে যদি আল্লাহকে সেজদা করতে পারেন- তাহলে সেটাই হবে হুজুরে কালবের নামাজ, কিন্তু কালবের পরিচয় লাভ পীর কামেলের তাওয়াজ্জুহ ছাড়া সম্ভব নয়।

* নিজেরা নামাজ পড়বেন। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের পড়াবেন।

* সংসারের দিকে দৃষ্টি রাখবেন।

* ছেলে-মেয়েদের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে, বাইরে যায় তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন।

* আর নিশীর শেষ ভাগে আল্লাহকে প্রাণ ভরে ডাকবেন-‘ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু ইয় রাহীম’ বলে, মাঝে মাঝে দয়াল নবীকে ডাকবেন ‘ইয়া রাহমাতাল্লিল আ’লামিন’ বলে। নিশির শেষ ভাগে আল্লাহ রহমতের দরজা খুলে দিয়ে বান্দাকে ডাকেন, বলেন- ‘হে আমার বান্দা সকল! আমার কাছে আস এবং তোমরা চাও। তোমাদের মনের কপাট খুলে বলো, দুঃখ-বেদনা, যাতনা, কামনা-বাসনা যা কিছু তোমাদের মনে আছে আপন পরওয়ারদিগারের নিকট পেশ কর। তোমাদের দরখাস্ত প্রত্যাক্ষাণ করা হবে না। এই জন্য যে তামাম পৃথিবীর ওলী-আল্লাহগণ নিশির শেষ ভাগে রহমতের দরজায় ধরনা দিয়া থাকেন। তাই তোমরাও আস।যার যা চাওয়ার আছে চাও।’

নিশির শেষভাগে খেচর-ভুচর, কীট পতঙ্গ এরা সবাই আল্লাহর জিকির কর। গাছের ডালে ডালে পাখিগুলি ডাকতে থাকে। ঘরের মোরগ গুলি খুব উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। সে সময় আমরা মানুষরাই কেবল ঘুমাই। অথচ সে সময় আল্লাহপাক আমাদেরকেই ডাকেন।

আল্লাহপাক তার হাবীবকে (সাঃ) ডাকতেন,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু আল আশেকু ওয়াল মাশেকু লা ইয়ালামু,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু তালেবুল মাওলা লাইলামু,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু ওয়াশ শামসু ওয়াল কামারু লা ইয়ালামু।

অর্থাৎ-আল্লাহ ডাকতেন, হে হাবিব! আপনি উঠেন, আশেক মাশুক এখন ঘুমায় না। হে হাবিব! আপনি এখন উঠেন যিনি আল্লাহকে চান তিনি এখন ঘুমায় না। হে হাবিব! আপনি এখন উঠেন। চন্দ্র সূর্য ঘুমায় না।

কোন কোন সময় আদর করে ডাকতেন হে কম্বলওয়ালা! আপনি এখন উঠেন। এটা আদরের ডাক। এই ভাবে আল্লাহ ডেকে উঠাতেন নবীজীকে(সা:) নিশীর শেষভাগে। রাত দুই ভাগ চলে গেলে তৃতীয় প্রহরে। এখনও আল্লাহ বান্দাকে ডাকেন কিন্তু আমাদের জ্ঞান নাই। আল্লাহ বলেন- তোমাদের হৃদয় আছে বোঝ না, চক্ষু আছে দেখ না, কর্ণ আছে শোন না, তোমরা পশু, বরং পশু হইতে অধম। আমরা সেগুলি বুঝি না। তাই আপনারা নিশীর শেষ ভাগে আল্লাহকে ডাকবেন ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীম বলে। মাঝে মাঝে ডাকবেন দয়াল নবীকে(সাঃ) ‘ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন’ বলে।

* বাড়ীর ছেলেপেলেদের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। ছেলে মেয়ে সিয়ান হলে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। মেয়েদেরকে বাহিরে ঘুরাফেরা করতে দিবেন না। সিয়ান হলে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ছেলে সিয়ান হলে বিয়ে করাবেন। ছেলেমেয়েরা যেন কোন কুসংসর্গে মিশতে না পারে। মেয়েরা যেন রাস্তা ঘাটে হাটে বাজারে অনর্থক ঘুরাফেরা করতে না পারে। খেয়াল রাখবেন ন্যাকেট জামানা। যে জামানায় মেয়ে পুরুষ একাকার। এদিকে অতীব হুশিয়ার থাকবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই বিয়ে-শাদী উঠে গেছে। তাদের সন্তান হয় পশুর মত।কিন্তু আমাদের তা করলে চলবে না। আমরা ছেলে বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনবো। মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাই আনব। তাদের ঘরে যে সন্তান হবে আল্লাহর রহমতে তা হবে সুসন্তান। আমরা মুসলমান এ কথা যেন আমাদের ভুল না হয়। অতএব ছেলেমেয়েদের যথা সময়ে বিয়ে দিবেন।

* বিবির সংগে ঝগড়া করবেন না। বিবির সংগে কলহ করবেন না। যেহেতু বিবি আপনার চির দিনের সাথী। আপানার দুঃখ সুখের সাথী। আপনার বাড়ীর সমস্ত কর্ম তার হাত দিয়ে হয়। ধোপার কাজ, মেথরের কাজ, রান্না-বান্নার কাজ, বাবুর্চির কাজ, ঝাড়ুদারের কাজ সমস্ত কাজ আপনার বিবির হাতে। এমন বন্ধুর সংগে ঝগড়া করলে আপনাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব বিবিকে আদর করবেন। দেখবেন, আপনার সংসার সে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে এবং নিজে নামাজ পড়বেন, আপনার বিবিকেও নামাজ পড়াবেন। আপনি যদি নামাজ পড়েন কোন দিনই সংসার কলহময় হবে না। শান্তিময় জীবন-যাপন করতে থাকবেন। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত। তখন আপনার বিবির সাথে আপনার চমৎকার একটা সখ্যতা তৈরী হবে। জীবনে আর কেউ কাউকে ভুলতে পারবেন না। এমন রহমতের পর্দার ভীতরে থাকবেন যে বেহেশতী হাওয়া গায়ে লাগবে আপনাদের। কাজেই বিবির সংগে কখনই ঝগড়া করবেন না।

* প্রতিবেশীর সংগে ঝগড়া করবেন না। যদিও তাদের সংগে আপনাদের মতানৈক্য হয়, ঝগড়া ফাসাদ কিছু হয় শালিসের মাধ্যমে মিমাংসা করবেন। কোটে যাবেন না। আর কোটে যদি কারো মামলা থাকে তাহলে ভাল উকিল দিয়ে সেই মামলার তদবীর করে যাতে জয়ী হতে পারেন সেই চেষ্টা করবেন। পরাজিত যেন না হন। যেমনেই পারেন মামলার জয়ী হয়ে আসবেন। আর সহজে মামলায় যাবেন না।

 

* একটা পীর ভাই আরেকটা পীর ভাইকে ৭০টা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন। যদি কোন পীর ভাই আপনার বাড়ীতে যায় গায়ের জামা খুলে বসতে দিবেন। কেননা একটা পীর ভাই সত্তরটা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। একথা যেন আপনাদের ভুল হয় না। তবে আরেকটি কথা বলে দেই। যদিই একটা পীর ভাই ৭০টা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিন্তু এক ধরনের দাগাবাজ লোক যাবে যারা পীর ভাই সাজবে। যারা বলবে আমরা বিশ বছর হুজুরের খেদমত করি। এ সমস্ত জিনিস দরবারে লাগবে কাজেই কিছু টাকা দেন। কিন্ত জানবেন যে, আপনার পীর কারো কাছে হাত পাতে না।

 

* সমস্ত জাকেরান এক প্রান এক আত্মা। আপনারা আমার মুরীদ, রুহানী আওলাদ। মুরীদের সঙ্গেই পীরের কথা। পীরের কোন আওলাদ যদি হুজুরে কালবের মারেফাত শিখতে চায়- তবে তাকেও মুরীদ হয়ে পীরের খেদমত করতে হবে-নতুবা সম্ভব নয়।

 

* আপনারা সদা সর্বদা পীরকে মহব্বত করবেন, পীরকে ভালবাসবেন। পীরের মহব্বতের ভীতর দিয়েই খোদা প্রাপ্তির পথ পাওয়া যায়। আল্লাহকে ধরা যায়। তাই মাওলানা রুমী(রঃ) লেখছেন-

‘চুতো যাতে পীরেরা কারদি কবুল

হাম খোদাদর জাতাশ আমাদ হাম রসূল।’

অর্থাৎ-তুমি যেদিন পীরের জাতকে কবুল করলে, আল্লাহ তোমাকে সেদিন বান্দা বলে স্বীকার করলেন। তুমি যে দিন তোমার পীরের জাতকে কবুল করলে, রাসূল(সাঃ) তোমাকে সেদিন উম্মত বলে স্বীকার করলেন। তাই আল্লাহ ও রসূলের স্বীকৃতি তুমি পাইলে ঐ দিন যেই দিন তুমি তোমার পীরের তরফ থেকে স্বীকৃতি পেলে। তাই মহাকবি হাফেজ বলছেন,

‘আগারে আতাস তুরকে রাজি বদাস্ত আরা দেলে মারা,

বখালে হিন্দু আস বখশামদ সমরখন্দ বোখারারা।’

অর্থাৎ-ওগো দুনিয়াবাসী! তোমাদিগকে আমি বলতে চায়। তোমরা যদি কেউ আমার পীরকে বাধ্য করে দিতে পারো তবে সমরখন্দ বুখারার সিংহাসন আমি তাকে দিয়ে দিবো। তাই বুঝেন, পীর কি অমূল্য নেয়ামত মুরীদের জন্য। হযরত মুজাদ্দেদ আল্ফেছানী(রাঃ) ফরমান-তোমার পীরকে তুমি অধিক ভালোবাসো। যেহেতু হুজুরে কালবের মারেফাত তার দেল থেকে তোমার দেলে, তার আত্মা থেকে তোমার আত্মায় ঢুকবে। এ এক অমূল্য নেয়ামত যা পীরের তরফ থেকে পাওয়া যায়। কেবলমাত্র প্রশংসা করে বা খেদমত করে বা কোন মূল্য দিয়ে এ দেনা শোধ করা যাবে না। অতএব তোমার পীরের কদমে তুমি ধুলি হয়ে যাও।

কাজেই মাওলানা রুমি আরো লেখেন,

“গারতো খাহি হাম নিশিনি বাখোদা,

চু নিশিনি দর হুজুরে আউলীয়া।”

অর্থাৎ-তুমি যদি খোদা প্রাপ্তি জ্ঞান অর্জন করতে চাও, আল্লাহকে লাভ করতে চাও তাহলে তোমার পীরের কদমে তুমি নিয়োযিত থাকো। পীরের কাছে গিয়ে বসো এবং তার কদমে ধুলি হও।

“গারতো সংগে খারাও মরমরশোবি,

চুবো ছাহেব দেল রছিগো হরছোবি।”

অর্থাৎ- মরমর পাথরের মতো যদি তুমার দেল শক্ত হয়ে থাকে তথাপি কোন ভয় নাই। তোমার যামানায় যদি কোন কামেল থাকে তার কাছে বসো এবং তার দেলে দেল মিশাও।

“এক সা’য়াত ছহব্বতে দেলে ছুকতা

তুছকো কারদি মেছলে গুলে আফরুকতা।”

অর্থাৎ-এক মূহুর্তও যদি তুমি সেই দিলে দেল মিশাইতে পার তবে তোমার দেল গত্তহর হয়ে যাবে। গোলাপ ফুলের মতো ফুইটা উঠবে। মুর্দা দেল যিন্দা হয়ে তথায় আল্লাহ আল্লাহ জেকের জারি হয়ে যাবে। যেমন ইলেকট্রিক কারেন্ট মূল স্রোতের সংগে কালেকশন লাগাইয়া যেখানেই তুমি ভাল্ব ফিট করো না কেন, সুইচ টিবি দিলেই বাল্ব জ্বলে উঠবে। সেই একি কথা- পীরানে পীরদের পাক আত্মার যোগাযোগ যখন আপনার লাভ হয়ে যাবে, মুহূর্তেই বিশ্ব আত্মার সান্নিধ্য লাভ হবে, আল্লাহতায়ালা রেজাবন্দি হাছিল হবে। অমূল্য নেয়ামতের অধিকারী আপনি হয়ে যাবেন-যে নেয়ামতের সন্ধান একমাত্র আত্মাদর্শক ব্যতীত অন্য কেহ জানে না। তাই আল্লাহ বলেন আমাকে আসমানে পাবে না, যমিনে পাবে না, পাহাড়ে-পর্বতে, সাগরে-নগরে, গুহায়-গহবরে-কোথাও পাবে না। তোমাদের ক্বালবের ভিতরে আমাকে খুঁজো।

যেমন পাওয়ার হাউজ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাল্ব সে বিদ্যুৎ ধারন করে জ্বলে উঠে। আলো ছড়ায়। রুমের বাল্ব বিদ্যুৎ ধরে জ্বলে উঠে কিন্তু রুমের অন্য কোন কিছুই যেমন ওয়াল, জানালা বিদ্যুৎ ধরতে পারে না। মানুষের শরীরে এরকম ৭০ হাজার বাল্ব আছে। সেগুলো আল্লাহর তাজাল্লী দ্বারা রৌশন হয়ে উঠে। ৭০ হাজার বাল্বের মধ্যে প্রথম বাল্বই হলো কালব। এটা হলো আল্লাহতায়ালা ভেদের মহাসমুদ্র, মহা জ্ঞান ভান্ডার। ক্বালবের পরিচয় করলে আল্লাহর পরিচয় পাবেন, আল্লাহকে লাভ করতে পারবেন। সেই জন্য রাসূলে পাক(সাঃ) ফরমান-‘লা ছালাতা ইল্লাবি হুজুরিল ক্বালব’-হুজুরি ক্বলব ছাড়া নামাজ হবে না। খেয়াল ক্বলবে, ক্বালব আল্লাহর দিকে, আল্লাহ হাজির-নাজির, খেয়াল কালবে ডুবিয়ে, হুজুরি ক্বলবে আল্লাহকে সিজদা করো। মুমিনদের জন্য এটাই মেরাজ। এ এক অমূল্য নেয়ামত। এই অমূল্য নেয়ামতের ডালা নিয়ে আমি আপনাদের সম্মুখে এসেছি এবং এই নেয়ামতের ডালা আমি আপনাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। ৪০টি বছর যাবৎ কতো প্রতিকুলতার মধ্যে আমি এ সত্য প্রচার করে আসছি।

আশা করি এখন সকলেই বুঝতে পারছেন। আমার খোদাপ্রাপ্তির যে সত্য পথ এখন বুঝতে পারছেন এবং দলে দলে, কাফেলা-কাফেলায় লোক আসতেছে। কাজে কাজেই আমারা যে নামাজ পড়ি, তজবিহ্ পড়ি, রুকু সেজদা দেই, আত্তাহিয়্যিতু পরে নামাজ শেষ করি এইতো। কিন্তু এটাতো নফছে আম্মারার নামাজ। নামাজ পড়ার আগে হলফ নিতেছেন-ইন্নি ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাহে ফাতারাস সামাওয়াতে ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়মা আনা মিনাল মুশরীকিন। হে খোদা! আমরা মোশরেক না, আমরা বহু খোদাবাদী না, অন্য খোদার উপাসনা করি না। ঐ খোদার উপাসনা করি যিনি আসমান ও যমিনের স্রষ্টা। আবার নিয়ত করতেছেন। আমি এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ পরার জন্য দাঁড়াইলাম, কানে ধরেই বলতেছেন, আল্লাহু আকবার। কিন্তু সেই মুহূর্তেই আপনার মন পাগলা হাতীর মতো ছুটাছুটি শুরু করলো। কত পুরাতন বন্ধুর স্মৃতি, কত মামলা মকদ্দমার কথা মনে এসে ভিড় করছে। মুখে বলছেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা অথচ অন্তরে দুনিয়াবী চিন্তা – এমন নামাজে কোন ফল নেই। একে লিপ-সিমপ্যাথি বলা হয়। নামাজ পড়তে হবে হুজুরে কালবে ডুব দিয়ে। নবীজী (সাঃ) বলেন, লা- সালাতা ইল্লা বেহুজুরে কালব। – নামাজ না, হুজুরে দেল ব্যতীত। যখন হুজুরে কালবিতে নামাজ পড়তে পারবেন তখনই নামাজের সত্যিকারের স্বাদ পাবেন। কিন্তু কামেল পীরের অসিলা ছাড়া কালবে ডুব দিয়ে হুজুরে কালবে নামাজ পড়তে পারবেন না। অসিলা নিয়ে কালবে ডুব দিয়ে যখন নামাজ পড়তে পারবেন তখন কালবের ভিতরেই আপনারা আরশ-কুরছি, লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ দেখতে পাবেন। মহাকবি হাফেজ বলেন-

“আরশ কুরছি দার দেলে উস্ত লওহ কলম,

হরকে দিল্রা ইয়াফতা আরা নিস্ত গোম।”

অর্থাৎ আরশ, কুরছি, লওহ কলম সবই তোমার দেলের ভিতরে পরিলক্ষিত হবে।

আমরা যে শরীয়ত পালন করি তাহলো শরীয়তের সুরত। শরীয়ত ও সুন্নতের আরোও ছয় ভাগ আছে যা আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত। পীরে কামেল ছাড়া তা শিক্ষা করা যায় না। এই অমূল্য নেয়ামত সত্য তরিকা আমি প্রচার করছি। সমগ্র বিশ্ব মুসলমানদের জন্য, সমস্ত বিশ্ব মানবের জন্য। এই অমূল্য নেয়ামত আল্লাহ তাঁর হাবীব (সাঃ) কে দান করেছেন। পরবর্তীতে মোজাদ্দেদ আলফেছানীকে(রাঃ) দান করেছেন, তারপর আমার পীর কেবলাজানকে দান করেছেন। পীর কেবলাজানের পক্ষ থেকে এ নেয়ামত আমি আপনাদের মধ্যে বিতরণ করছি।

কাজেই এই তরিকার দিকে আপনারা থাকেন। আর পীরের ভালোবাসা ভিতর দিয়া, পীরের মহব্বতের ভিতর দিয়া আল্লাহর উপর মহব্বত পয়দা হয়। সেই জন্য মাওলানা রুমী(রঃ) বলতেছেন-তোমার পীরকে এমনিভাবে ভালোবাসো যেমন আঠা আর কাগজ। টানলে খসে না-ছিড়ে যায়। এই ভাবে তোমার পীরকে ভালোবাসো। কাজেই এইদিকে আপনারা ঠিক থাকবেন।

* আর একটা উপদেশ আপনাদের দিতেছি- গোলাভরা ধান থাকলেও সকলেই কিছু না কিছু ব্যবসা করবেন। ব্যবসা হলো কাঠার মাছ। ব্যবসা ছাড়া নতুন পয়সার মুখ দেখা যায় না।

* অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার দেখাবেন। এই কথা যেন বলেন না আমি আটরশির মুরিদ-আমার কোন ডাক্তার লাগবে না। অসুখ হলেই ডাক্তার লাগবে।

 

কাজে কাজেই এই সমস্ত উপদেশগুলো ঠিকঠিক মতো পালন করবেন। আমি আশা করি আল্লাহ পাক ‘ফিদ দুনিয়া হাছানাতাও অফিল আখিরাতি হাছানাতাও’ দুনিয়া ও আখিরাতের হাছানাতাও আপনাদের দান করবেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। আপনাদেরকে আল্লাহর হাতে সপে বিদায় দিলাম। আল্লাহপাক আপনাদের মান-সম্মান, ইজ্জত-হুমত রক্ষা করুন। আমিন।(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের সংরক্ষিত অডিও)

আল্লাহপাক আমাদেরকে বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের উপদেশসমূহ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

Discover more from Sufibad.Com - সূফীবাদ.কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

খোদাঅন্বেষীর উদ্দেশে আটরশি পীরের উপদেশ

আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের জীবদ্দশায় বিভিন্ন জেলা থেকে দরবার শরীফ অভিমুখে শত শত বাসের কাফেলা আসতো। বর্ষার মৌসুমে শত শত লঞ্চের কাফেলা আসতো। এগুলো আসতো জেলাভিত্তিক কাফেলা। কখনও আসতো বিভাগীয় কাফেলা। তখন হতো হাজারে হাজারে বাস। কাফেলায় আগত হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ আশেকান – জাকেরান রাত ব্যাপী ইবাদত বন্দেগী, জেকের আজকার করে তরিকতের নিয়মপদ্ধতি শিক্ষা করে এবং নতুন যারা তারা বাইয়াত হয়ে সকাল বেলা বিদায় হয়ে যেতেন। অধিকাংশ দিনেই কেবলাজান হুজুর সকাল ৮:০০ থেকে ৯:০০টার মধ্যে আগত আশেকান, জাকেরানদের কিছু মুল্যবান উপদেশ দিয়ে বিদায় দিতেন। সেই উপদেশগুলোতে ছিল দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের এক চমৎকার দিক নির্দেশনা।

আজ তেমনি কিছু উপদেশ তুলে ধরছি। কোন এক বড় বাস কাফেলা বিদায় দেওয়ার সময় কেবলাজান হুজুর আগত লক্ষ খোদাঅন্বেষীর উদ্দেশে সেই উপদেশগুলো দিয়েছিলেন।

উপদেশ সমূহঃ

আল্লাহ আপনাদের মান সম্মান ইজ্জত হুরমত রক্ষা করুন। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে শান্তিতে রাখুন। আপনারা শান্তিতে থাকুন। আপনারা ছেলে পেলে নিয়ে সুখে থাকুন। আপনাদের জীবন শান্তিময় হোক-এই আমার দোয়া।

• আপনারা তরিকতের কাজ ঠিক ঠিক মত করবেন।

* নামাজ যেন কাজা করেন না। নামাজ এক অমূল্য নেয়ামত, আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ দান। এই নামাজের মধ্যেই আছে হুজুরে কালবের মারেফাত। নামাজের মধ্যে আছে মোমেনের জন্য মেরাজ। এমন নামাজ শিক্ষা করার জন্য কামেলও মোকাম্মেল পীরের সান্নিধ্যে থেকে দীর্ঘ সময় খেদমত করতে হয়।

* নবীজী (সাঃ) বলেন, ‘লা সালাতা ইল্লা বে হুজুরিল কালব। অর্থাৎ নামাজই নয় হুজুরে দেল ব্যতীত। কালব হলো আল্লাহতায়ালার ভেদের এক মহা সমূদ্র। কালব সমুদ্রে ডুব দিয়ে যদি আল্লাহকে সেজদা করতে পারেন- তাহলে সেটাই হবে হুজুরে কালবের নামাজ, কিন্তু কালবের পরিচয় লাভ পীর কামেলের তাওয়াজ্জুহ ছাড়া সম্ভব নয়।

* নিজেরা নামাজ পড়বেন। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের পড়াবেন।

* সংসারের দিকে দৃষ্টি রাখবেন।

* ছেলে-মেয়েদের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে, বাইরে যায় তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন।

* আর নিশীর শেষ ভাগে আল্লাহকে প্রাণ ভরে ডাকবেন-‘ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু ইয় রাহীম’ বলে, মাঝে মাঝে দয়াল নবীকে ডাকবেন ‘ইয়া রাহমাতাল্লিল আ’লামিন’ বলে। নিশির শেষ ভাগে আল্লাহ রহমতের দরজা খুলে দিয়ে বান্দাকে ডাকেন, বলেন- ‘হে আমার বান্দা সকল! আমার কাছে আস এবং তোমরা চাও। তোমাদের মনের কপাট খুলে বলো, দুঃখ-বেদনা, যাতনা, কামনা-বাসনা যা কিছু তোমাদের মনে আছে আপন পরওয়ারদিগারের নিকট পেশ কর। তোমাদের দরখাস্ত প্রত্যাক্ষাণ করা হবে না। এই জন্য যে তামাম পৃথিবীর ওলী-আল্লাহগণ নিশির শেষ ভাগে রহমতের দরজায় ধরনা দিয়া থাকেন। তাই তোমরাও আস।যার যা চাওয়ার আছে চাও।’

নিশির শেষভাগে খেচর-ভুচর, কীট পতঙ্গ এরা সবাই আল্লাহর জিকির কর। গাছের ডালে ডালে পাখিগুলি ডাকতে থাকে। ঘরের মোরগ গুলি খুব উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। সে সময় আমরা মানুষরাই কেবল ঘুমাই। অথচ সে সময় আল্লাহপাক আমাদেরকেই ডাকেন।

আল্লাহপাক তার হাবীবকে (সাঃ) ডাকতেন,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু আল আশেকু ওয়াল মাশেকু লা ইয়ালামু,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু তালেবুল মাওলা লাইলামু,

কুম কুম ইয়া হাবিবী কামতানামু ওয়াশ শামসু ওয়াল কামারু লা ইয়ালামু।

অর্থাৎ-আল্লাহ ডাকতেন, হে হাবিব! আপনি উঠেন, আশেক মাশুক এখন ঘুমায় না। হে হাবিব! আপনি এখন উঠেন যিনি আল্লাহকে চান তিনি এখন ঘুমায় না। হে হাবিব! আপনি এখন উঠেন। চন্দ্র সূর্য ঘুমায় না।

কোন কোন সময় আদর করে ডাকতেন হে কম্বলওয়ালা! আপনি এখন উঠেন। এটা আদরের ডাক। এই ভাবে আল্লাহ ডেকে উঠাতেন নবীজীকে(সা:) নিশীর শেষভাগে। রাত দুই ভাগ চলে গেলে তৃতীয় প্রহরে। এখনও আল্লাহ বান্দাকে ডাকেন কিন্তু আমাদের জ্ঞান নাই। আল্লাহ বলেন- তোমাদের হৃদয় আছে বোঝ না, চক্ষু আছে দেখ না, কর্ণ আছে শোন না, তোমরা পশু, বরং পশু হইতে অধম। আমরা সেগুলি বুঝি না। তাই আপনারা নিশীর শেষ ভাগে আল্লাহকে ডাকবেন ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীম বলে। মাঝে মাঝে ডাকবেন দয়াল নবীকে(সাঃ) ‘ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন’ বলে।

* বাড়ীর ছেলেপেলেদের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। ছেলে মেয়ে সিয়ান হলে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। মেয়েদেরকে বাহিরে ঘুরাফেরা করতে দিবেন না। সিয়ান হলে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ছেলে সিয়ান হলে বিয়ে করাবেন। ছেলেমেয়েরা যেন কোন কুসংসর্গে মিশতে না পারে। মেয়েরা যেন রাস্তা ঘাটে হাটে বাজারে অনর্থক ঘুরাফেরা করতে না পারে। খেয়াল রাখবেন ন্যাকেট জামানা। যে জামানায় মেয়ে পুরুষ একাকার। এদিকে অতীব হুশিয়ার থাকবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই বিয়ে-শাদী উঠে গেছে। তাদের সন্তান হয় পশুর মত।কিন্তু আমাদের তা করলে চলবে না। আমরা ছেলে বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনবো। মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাই আনব। তাদের ঘরে যে সন্তান হবে আল্লাহর রহমতে তা হবে সুসন্তান। আমরা মুসলমান এ কথা যেন আমাদের ভুল না হয়। অতএব ছেলেমেয়েদের যথা সময়ে বিয়ে দিবেন।

* বিবির সংগে ঝগড়া করবেন না। বিবির সংগে কলহ করবেন না। যেহেতু বিবি আপনার চির দিনের সাথী। আপানার দুঃখ সুখের সাথী। আপনার বাড়ীর সমস্ত কর্ম তার হাত দিয়ে হয়। ধোপার কাজ, মেথরের কাজ, রান্না-বান্নার কাজ, বাবুর্চির কাজ, ঝাড়ুদারের কাজ সমস্ত কাজ আপনার বিবির হাতে। এমন বন্ধুর সংগে ঝগড়া করলে আপনাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব বিবিকে আদর করবেন। দেখবেন, আপনার সংসার সে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে এবং নিজে নামাজ পড়বেন, আপনার বিবিকেও নামাজ পড়াবেন। আপনি যদি নামাজ পড়েন কোন দিনই সংসার কলহময় হবে না। শান্তিময় জীবন-যাপন করতে থাকবেন। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত। তখন আপনার বিবির সাথে আপনার চমৎকার একটা সখ্যতা তৈরী হবে। জীবনে আর কেউ কাউকে ভুলতে পারবেন না। এমন রহমতের পর্দার ভীতরে থাকবেন যে বেহেশতী হাওয়া গায়ে লাগবে আপনাদের। কাজেই বিবির সংগে কখনই ঝগড়া করবেন না।

* প্রতিবেশীর সংগে ঝগড়া করবেন না। যদিও তাদের সংগে আপনাদের মতানৈক্য হয়, ঝগড়া ফাসাদ কিছু হয় শালিসের মাধ্যমে মিমাংসা করবেন। কোটে যাবেন না। আর কোটে যদি কারো মামলা থাকে তাহলে ভাল উকিল দিয়ে সেই মামলার তদবীর করে যাতে জয়ী হতে পারেন সেই চেষ্টা করবেন। পরাজিত যেন না হন। যেমনেই পারেন মামলার জয়ী হয়ে আসবেন। আর সহজে মামলায় যাবেন না।

 

* একটা পীর ভাই আরেকটা পীর ভাইকে ৭০টা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন। যদি কোন পীর ভাই আপনার বাড়ীতে যায় গায়ের জামা খুলে বসতে দিবেন। কেননা একটা পীর ভাই সত্তরটা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। একথা যেন আপনাদের ভুল হয় না। তবে আরেকটি কথা বলে দেই। যদিই একটা পীর ভাই ৭০টা সহোদর ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিন্তু এক ধরনের দাগাবাজ লোক যাবে যারা পীর ভাই সাজবে। যারা বলবে আমরা বিশ বছর হুজুরের খেদমত করি। এ সমস্ত জিনিস দরবারে লাগবে কাজেই কিছু টাকা দেন। কিন্ত জানবেন যে, আপনার পীর কারো কাছে হাত পাতে না।

 

* সমস্ত জাকেরান এক প্রান এক আত্মা। আপনারা আমার মুরীদ, রুহানী আওলাদ। মুরীদের সঙ্গেই পীরের কথা। পীরের কোন আওলাদ যদি হুজুরে কালবের মারেফাত শিখতে চায়- তবে তাকেও মুরীদ হয়ে পীরের খেদমত করতে হবে-নতুবা সম্ভব নয়।

 

* আপনারা সদা সর্বদা পীরকে মহব্বত করবেন, পীরকে ভালবাসবেন। পীরের মহব্বতের ভীতর দিয়েই খোদা প্রাপ্তির পথ পাওয়া যায়। আল্লাহকে ধরা যায়। তাই মাওলানা রুমী(রঃ) লেখছেন-

‘চুতো যাতে পীরেরা কারদি কবুল

হাম খোদাদর জাতাশ আমাদ হাম রসূল।’

অর্থাৎ-তুমি যেদিন পীরের জাতকে কবুল করলে, আল্লাহ তোমাকে সেদিন বান্দা বলে স্বীকার করলেন। তুমি যে দিন তোমার পীরের জাতকে কবুল করলে, রাসূল(সাঃ) তোমাকে সেদিন উম্মত বলে স্বীকার করলেন। তাই আল্লাহ ও রসূলের স্বীকৃতি তুমি পাইলে ঐ দিন যেই দিন তুমি তোমার পীরের তরফ থেকে স্বীকৃতি পেলে। তাই মহাকবি হাফেজ বলছেন,

‘আগারে আতাস তুরকে রাজি বদাস্ত আরা দেলে মারা,

বখালে হিন্দু আস বখশামদ সমরখন্দ বোখারারা।’

অর্থাৎ-ওগো দুনিয়াবাসী! তোমাদিগকে আমি বলতে চায়। তোমরা যদি কেউ আমার পীরকে বাধ্য করে দিতে পারো তবে সমরখন্দ বুখারার সিংহাসন আমি তাকে দিয়ে দিবো। তাই বুঝেন, পীর কি অমূল্য নেয়ামত মুরীদের জন্য। হযরত মুজাদ্দেদ আল্ফেছানী(রাঃ) ফরমান-তোমার পীরকে তুমি অধিক ভালোবাসো। যেহেতু হুজুরে কালবের মারেফাত তার দেল থেকে তোমার দেলে, তার আত্মা থেকে তোমার আত্মায় ঢুকবে। এ এক অমূল্য নেয়ামত যা পীরের তরফ থেকে পাওয়া যায়। কেবলমাত্র প্রশংসা করে বা খেদমত করে বা কোন মূল্য দিয়ে এ দেনা শোধ করা যাবে না। অতএব তোমার পীরের কদমে তুমি ধুলি হয়ে যাও।

কাজেই মাওলানা রুমি আরো লেখেন,

“গারতো খাহি হাম নিশিনি বাখোদা,

চু নিশিনি দর হুজুরে আউলীয়া।”

অর্থাৎ-তুমি যদি খোদা প্রাপ্তি জ্ঞান অর্জন করতে চাও, আল্লাহকে লাভ করতে চাও তাহলে তোমার পীরের কদমে তুমি নিয়োযিত থাকো। পীরের কাছে গিয়ে বসো এবং তার কদমে ধুলি হও।

“গারতো সংগে খারাও মরমরশোবি,

চুবো ছাহেব দেল রছিগো হরছোবি।”

অর্থাৎ- মরমর পাথরের মতো যদি তুমার দেল শক্ত হয়ে থাকে তথাপি কোন ভয় নাই। তোমার যামানায় যদি কোন কামেল থাকে তার কাছে বসো এবং তার দেলে দেল মিশাও।

“এক সা’য়াত ছহব্বতে দেলে ছুকতা

তুছকো কারদি মেছলে গুলে আফরুকতা।”

অর্থাৎ-এক মূহুর্তও যদি তুমি সেই দিলে দেল মিশাইতে পার তবে তোমার দেল গত্তহর হয়ে যাবে। গোলাপ ফুলের মতো ফুইটা উঠবে। মুর্দা দেল যিন্দা হয়ে তথায় আল্লাহ আল্লাহ জেকের জারি হয়ে যাবে। যেমন ইলেকট্রিক কারেন্ট মূল স্রোতের সংগে কালেকশন লাগাইয়া যেখানেই তুমি ভাল্ব ফিট করো না কেন, সুইচ টিবি দিলেই বাল্ব জ্বলে উঠবে। সেই একি কথা- পীরানে পীরদের পাক আত্মার যোগাযোগ যখন আপনার লাভ হয়ে যাবে, মুহূর্তেই বিশ্ব আত্মার সান্নিধ্য লাভ হবে, আল্লাহতায়ালা রেজাবন্দি হাছিল হবে। অমূল্য নেয়ামতের অধিকারী আপনি হয়ে যাবেন-যে নেয়ামতের সন্ধান একমাত্র আত্মাদর্শক ব্যতীত অন্য কেহ জানে না। তাই আল্লাহ বলেন আমাকে আসমানে পাবে না, যমিনে পাবে না, পাহাড়ে-পর্বতে, সাগরে-নগরে, গুহায়-গহবরে-কোথাও পাবে না। তোমাদের ক্বালবের ভিতরে আমাকে খুঁজো।

যেমন পাওয়ার হাউজ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাল্ব সে বিদ্যুৎ ধারন করে জ্বলে উঠে। আলো ছড়ায়। রুমের বাল্ব বিদ্যুৎ ধরে জ্বলে উঠে কিন্তু রুমের অন্য কোন কিছুই যেমন ওয়াল, জানালা বিদ্যুৎ ধরতে পারে না। মানুষের শরীরে এরকম ৭০ হাজার বাল্ব আছে। সেগুলো আল্লাহর তাজাল্লী দ্বারা রৌশন হয়ে উঠে। ৭০ হাজার বাল্বের মধ্যে প্রথম বাল্বই হলো কালব। এটা হলো আল্লাহতায়ালা ভেদের মহাসমুদ্র, মহা জ্ঞান ভান্ডার। ক্বালবের পরিচয় করলে আল্লাহর পরিচয় পাবেন, আল্লাহকে লাভ করতে পারবেন। সেই জন্য রাসূলে পাক(সাঃ) ফরমান-‘লা ছালাতা ইল্লাবি হুজুরিল ক্বালব’-হুজুরি ক্বলব ছাড়া নামাজ হবে না। খেয়াল ক্বলবে, ক্বালব আল্লাহর দিকে, আল্লাহ হাজির-নাজির, খেয়াল কালবে ডুবিয়ে, হুজুরি ক্বলবে আল্লাহকে সিজদা করো। মুমিনদের জন্য এটাই মেরাজ। এ এক অমূল্য নেয়ামত। এই অমূল্য নেয়ামতের ডালা নিয়ে আমি আপনাদের সম্মুখে এসেছি এবং এই নেয়ামতের ডালা আমি আপনাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। ৪০টি বছর যাবৎ কতো প্রতিকুলতার মধ্যে আমি এ সত্য প্রচার করে আসছি।

আশা করি এখন সকলেই বুঝতে পারছেন। আমার খোদাপ্রাপ্তির যে সত্য পথ এখন বুঝতে পারছেন এবং দলে দলে, কাফেলা-কাফেলায় লোক আসতেছে। কাজে কাজেই আমারা যে নামাজ পড়ি, তজবিহ্ পড়ি, রুকু সেজদা দেই, আত্তাহিয়্যিতু পরে নামাজ শেষ করি এইতো। কিন্তু এটাতো নফছে আম্মারার নামাজ। নামাজ পড়ার আগে হলফ নিতেছেন-ইন্নি ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাহে ফাতারাস সামাওয়াতে ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়মা আনা মিনাল মুশরীকিন। হে খোদা! আমরা মোশরেক না, আমরা বহু খোদাবাদী না, অন্য খোদার উপাসনা করি না। ঐ খোদার উপাসনা করি যিনি আসমান ও যমিনের স্রষ্টা। আবার নিয়ত করতেছেন। আমি এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ পরার জন্য দাঁড়াইলাম, কানে ধরেই বলতেছেন, আল্লাহু আকবার। কিন্তু সেই মুহূর্তেই আপনার মন পাগলা হাতীর মতো ছুটাছুটি শুরু করলো। কত পুরাতন বন্ধুর স্মৃতি, কত মামলা মকদ্দমার কথা মনে এসে ভিড় করছে। মুখে বলছেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা অথচ অন্তরে দুনিয়াবী চিন্তা – এমন নামাজে কোন ফল নেই। একে লিপ-সিমপ্যাথি বলা হয়। নামাজ পড়তে হবে হুজুরে কালবে ডুব দিয়ে। নবীজী (সাঃ) বলেন, লা- সালাতা ইল্লা বেহুজুরে কালব। – নামাজ না, হুজুরে দেল ব্যতীত। যখন হুজুরে কালবিতে নামাজ পড়তে পারবেন তখনই নামাজের সত্যিকারের স্বাদ পাবেন। কিন্তু কামেল পীরের অসিলা ছাড়া কালবে ডুব দিয়ে হুজুরে কালবে নামাজ পড়তে পারবেন না। অসিলা নিয়ে কালবে ডুব দিয়ে যখন নামাজ পড়তে পারবেন তখন কালবের ভিতরেই আপনারা আরশ-কুরছি, লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ দেখতে পাবেন। মহাকবি হাফেজ বলেন-

“আরশ কুরছি দার দেলে উস্ত লওহ কলম,

হরকে দিল্রা ইয়াফতা আরা নিস্ত গোম।”

অর্থাৎ আরশ, কুরছি, লওহ কলম সবই তোমার দেলের ভিতরে পরিলক্ষিত হবে।

আমরা যে শরীয়ত পালন করি তাহলো শরীয়তের সুরত। শরীয়ত ও সুন্নতের আরোও ছয় ভাগ আছে যা আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত। পীরে কামেল ছাড়া তা শিক্ষা করা যায় না। এই অমূল্য নেয়ামত সত্য তরিকা আমি প্রচার করছি। সমগ্র বিশ্ব মুসলমানদের জন্য, সমস্ত বিশ্ব মানবের জন্য। এই অমূল্য নেয়ামত আল্লাহ তাঁর হাবীব (সাঃ) কে দান করেছেন। পরবর্তীতে মোজাদ্দেদ আলফেছানীকে(রাঃ) দান করেছেন, তারপর আমার পীর কেবলাজানকে দান করেছেন। পীর কেবলাজানের পক্ষ থেকে এ নেয়ামত আমি আপনাদের মধ্যে বিতরণ করছি।

কাজেই এই তরিকার দিকে আপনারা থাকেন। আর পীরের ভালোবাসা ভিতর দিয়া, পীরের মহব্বতের ভিতর দিয়া আল্লাহর উপর মহব্বত পয়দা হয়। সেই জন্য মাওলানা রুমী(রঃ) বলতেছেন-তোমার পীরকে এমনিভাবে ভালোবাসো যেমন আঠা আর কাগজ। টানলে খসে না-ছিড়ে যায়। এই ভাবে তোমার পীরকে ভালোবাসো। কাজেই এইদিকে আপনারা ঠিক থাকবেন।

* আর একটা উপদেশ আপনাদের দিতেছি- গোলাভরা ধান থাকলেও সকলেই কিছু না কিছু ব্যবসা করবেন। ব্যবসা হলো কাঠার মাছ। ব্যবসা ছাড়া নতুন পয়সার মুখ দেখা যায় না।

* অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার দেখাবেন। এই কথা যেন বলেন না আমি আটরশির মুরিদ-আমার কোন ডাক্তার লাগবে না। অসুখ হলেই ডাক্তার লাগবে।

 

কাজে কাজেই এই সমস্ত উপদেশগুলো ঠিকঠিক মতো পালন করবেন। আমি আশা করি আল্লাহ পাক ‘ফিদ দুনিয়া হাছানাতাও অফিল আখিরাতি হাছানাতাও’ দুনিয়া ও আখিরাতের হাছানাতাও আপনাদের দান করবেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। আপনাদেরকে আল্লাহর হাতে সপে বিদায় দিলাম। আল্লাহপাক আপনাদের মান-সম্মান, ইজ্জত-হুমত রক্ষা করুন। আমিন।(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের সংরক্ষিত অডিও)

আল্লাহপাক আমাদেরকে বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের উপদেশসমূহ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।