গাজার বিজয় ও ইসরায়েলের পতন: কুরআন, হাদিস ও মানবদৃষ্টিতে বিশ্লেষণ

- আপডেট সময় : ০৮:৩২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
- / ২৪২৫ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিনের মাটি, বিশেষ করে গাজা, দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছে। বহুবার আগ্রাসন, নির্যাতন ও দখলের শিকার হলেও গাজার প্রতিরোধ কখনো স্তিমিত হয়নি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন করেন—গাজা কি সত্যিই বিজয়ী হবে? ইসরায়েলের পতন কি অবশ্যম্ভাবী? কুরআন, হাদিস ও মানবদৃষ্টিতে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
১. কুরআনের আলোকে গাজার বিজয় ও ইসরায়েলের পতন
ক. মজলুমের বিজয় ও জালিমের পতন
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَحْسَبَنَّ ٱللَّهَ غَٰفِلًۭا عَمَّا يَعْمَلُ ٱلظَّٰلِمُونَ ۚ
“আর জালিমরা যা করছে, আল্লাহ তা থেকে গাফিল নন…” (সূরা ইবরাহিম: ৪২)
ইসরায়েল রাষ্ট্রটি দখল, নির্যাতন, হত্যা ও জুলুমের মাধ্যমে টিকে আছে। ইতিহাস সাক্ষী, জালিমের শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তার পতন অবধারিত।
খ. ফিলিস্তিনের ভূমির বরকত
আল-কুরআনে বায়তুল মুকাদ্দাস ও আশপাশের ভূমিকে ‘মুবারক’ বলা হয়েছে:
سُبْحَانَ ٱلَّذِىٓ أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِۦ لَيْلًۭا مِّنَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ إِلَى ٱلْمَسْجِدِ ٱلْأَقْصَا ٱلَّذِى بَٰرَكْنَا حَوْلَهُۥ
“পরম পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে এক রজনী ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশ আমরা বরকতময় করেছি…” (সূরা আল-ইসরা: ১)
যে ভূমি আল্লাহ তাআলা বরকতময় করেছেন, সেখানে অন্যায় ও অবিচার চিরস্থায়ী হতে পারে না।
২. হাদিসের আলোকে ইসরায়েলের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী
রাসূলুল্লাহ ﷺ ভবিষ্যতে এক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেখানে মুসলমানরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করবে:
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ المُسْلِمُونَ اليَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ المُسْلِمُونَ، حَتَّى يَخْتَبِئَ اليَهُودِيُّ وَرَاءَ الحَجَرِ وَالشَّجَرِ، فَيَقُولُ الحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ: يَا مُسْلِمُ، يَا عَبْدَ اللَّهِ، هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ، إِلَّا الغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِن شَجَرِ اليَهُودِ
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯২২)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, এক সময় মুসলমানরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং ইসরায়েলের পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে।
৩. বর্তমান বাস্থায়ী হয় না
ইতিহাস সাক্ষী, পৃথিবীর প্রতিটি জালিম সাম্রাজ্য একসময় পতনের মুখে পড়েছে। রোমান সাম্রাজ্য, পারস্যের কিসরা, ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য—সবই ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের অস্ত্র ও কূটনীতি শক্তিশালী হলেও, এটি চিরস্থায়ী হতে পারবে না।
খ. ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ও মুসলিম উম্মাহর জাগরণ
গাজার জনগণ সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতেও দেখা গেছে, দীর্ঘ প্রতিরোধের পরপরই দখলদার শক্তির পতন ঘটে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর পরাজয়, ভিয়েতনামের বিজয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের পতন—এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েলও একদিন ধ্বংস হবে।
৪. গাজার বিজযশুদ্ধি ও তাকওয়া
মুসলমানদের বিজয় তখনই সম্ভব, যখন তারা ঈমানের ওপর অবিচল থাকবে। আল্লাহ বলেন:
إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
“যদি তোমরা আল্লাহর সাহায্য করো, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদচিহ্ন মজবুত করবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ৭)
খ. ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ
বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর উচিত ফিলিস্তিনের পক্ষে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমর্থন দেওয়া।
গ. দোয়া ও ইবাদত বৃদ্ধি
গাজার নির্যাতিত জনগণের জন্য সকল মুসলমানের দোয়া করা উচিত। মহানবী ﷺ বলেছেন:
إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ
“এই উম্মতকে আল্লাহ সাহায্য করেন তাদের দুর্বলদের দোয়া, সালাত ও একনিষ্ঠতার কারণে।” (সুনান আন-নাসাঈ: ৩১৭৮)
আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য
গাজার বিজয় ও ইসরায়েলের পতন অবশ্যম্ভাবী। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এটা স্পষ্ট যে, জালিমরা কখনো টিকে থাকতে পারে না। মুসলিম উম্মাহর উচিত গাজার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা বাড়ানো, ইসলামী শিক্ষা ও ঐক্যের দিকে ফিরে আসা এবং দোয়া ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।
এখন সময় এসেছে মুসলিম বিশ্বকে এক হতে হবে, প্রতিরোধকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগতভাবে এগিয়ে নিতে হবে এবং ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আসবেই!