ঢাকা ০৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

  • আপডেট সময় : ০২:০১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪১২ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শবে কদর ইসলাম ধর্মের একটি মহিমান্বিত রাত, যা লাইলাতুল কদর নামেও পরিচিত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত ২৭তম রাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই রাতের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

 

শবে কদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা

১. কুরআনে শবে কদরের গুরুত্ব:

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে শবে কদরের মর্যাদা সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ সূরা নাজিল করেছেন, যা “সূরা কদর” নামে পরিচিত। এতে বলা হয়েছে:

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ

وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ

(সূরা কদর: ১-৩)

 

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

 

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শবে কদরের রাত এতটাই মূল্যবান যে এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের (প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াবের কারণ হয়।

 

২. হাদিসে শবে কদরের গুরুত্ব:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”

(বুখারি, মুসলিম)

 

অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন:

“তোমরা শবে কদরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।”

(বুখারি, মুসলিম)

 

শবে কদরের ফজিলত

১. এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: কুরআনের ভাষ্যমতে, এই রাতের ইবাদত ৮৩ বছরের ইবাদতের সমতুল্য। এটি একটি বিরল সুযোগ, যা আল্লাহ বান্দাদের বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে দিয়েছেন।

 

২. এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে: আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র রাতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম পথনির্দেশিকা।

 

৩. ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন:

“এই রাতে ফেরেশতারা এবং জিবরাইল (আ.) তাদের রবের আদেশ নিয়ে অবতরণ করেন।” (সূরা কদর: ৪)

 

এই রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে আসেন এবং মুমিনদের জন্য রহমত ও বরকতের দোয়া করেন।

 

৪. এই রাতে বিশেষ দোয়া কবুল হয়:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই রাতে যেকোনো বৈধ দোয়া কবুল হয়। তাই, মুমিনদের উচিত বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো চাওয়া।

 

৫. এই রাতে শান্তি নেমে আসে:

“এই রাত ফজরের আগ পর্যন্ত শান্তি ও কল্যাণময়।” (সূরা কদর: ৫)

 

এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন এবং সারারাত শান্তি ও কল্যাণ নেমে আসে।

 

আরো পড়ুন:গাজার বিজয় ও ইসরায়েলের পতন: কুরআন, হাদিস ও মানবদৃষ্টিতে বিশ্লেষণ

 

শবে কদরে করণীয় আমল

শবে কদরের রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এই রাতে বিশেষ ইবাদত করতেন।

 

১. নফল নামাজ: অন্তত ২ রাকাত করে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।

 

২. কুরআন তিলাওয়াত: এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।

 

৩. দোয়া ও ইস্তেগফার: রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন যে, শবে কদরের রাতে এই দোয়াটি বেশি পড়তে হবে—

 

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।

অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো।” (তিরমিজি)

 

৪. তাসবিহ ও জিকির:

সুবহানাল্লাহ

আলহামদুলিল্লাহ

আল্লাহু আকবার

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

 

৫. সদকা ও দান: এই রাতে দান-সদকা করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।

 

 

আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

 

শবে কদর হলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত। এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত এই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, জিকির ও তওবার মাধ্যমে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই রাতের বরকত দান করেন এবং আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আমিন।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

আপডেট সময় : ০২:০১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

শবে কদর ইসলাম ধর্মের একটি মহিমান্বিত রাত, যা লাইলাতুল কদর নামেও পরিচিত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত ২৭তম রাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই রাতের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

 

শবে কদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা

১. কুরআনে শবে কদরের গুরুত্ব:

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে শবে কদরের মর্যাদা সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ সূরা নাজিল করেছেন, যা “সূরা কদর” নামে পরিচিত। এতে বলা হয়েছে:

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ

وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ

(সূরা কদর: ১-৩)

 

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

 

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শবে কদরের রাত এতটাই মূল্যবান যে এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের (প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াবের কারণ হয়।

 

২. হাদিসে শবে কদরের গুরুত্ব:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”

(বুখারি, মুসলিম)

 

অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন:

“তোমরা শবে কদরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।”

(বুখারি, মুসলিম)

 

শবে কদরের ফজিলত

১. এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: কুরআনের ভাষ্যমতে, এই রাতের ইবাদত ৮৩ বছরের ইবাদতের সমতুল্য। এটি একটি বিরল সুযোগ, যা আল্লাহ বান্দাদের বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে দিয়েছেন।

 

২. এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে: আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র রাতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম পথনির্দেশিকা।

 

৩. ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন:

“এই রাতে ফেরেশতারা এবং জিবরাইল (আ.) তাদের রবের আদেশ নিয়ে অবতরণ করেন।” (সূরা কদর: ৪)

 

এই রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে আসেন এবং মুমিনদের জন্য রহমত ও বরকতের দোয়া করেন।

 

৪. এই রাতে বিশেষ দোয়া কবুল হয়:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই রাতে যেকোনো বৈধ দোয়া কবুল হয়। তাই, মুমিনদের উচিত বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো চাওয়া।

 

৫. এই রাতে শান্তি নেমে আসে:

“এই রাত ফজরের আগ পর্যন্ত শান্তি ও কল্যাণময়।” (সূরা কদর: ৫)

 

এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন এবং সারারাত শান্তি ও কল্যাণ নেমে আসে।

 

আরো পড়ুন:গাজার বিজয় ও ইসরায়েলের পতন: কুরআন, হাদিস ও মানবদৃষ্টিতে বিশ্লেষণ

 

শবে কদরে করণীয় আমল

শবে কদরের রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এই রাতে বিশেষ ইবাদত করতেন।

 

১. নফল নামাজ: অন্তত ২ রাকাত করে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।

 

২. কুরআন তিলাওয়াত: এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।

 

৩. দোয়া ও ইস্তেগফার: রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন যে, শবে কদরের রাতে এই দোয়াটি বেশি পড়তে হবে—

 

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।

অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো।” (তিরমিজি)

 

৪. তাসবিহ ও জিকির:

সুবহানাল্লাহ

আলহামদুলিল্লাহ

আল্লাহু আকবার

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

 

৫. সদকা ও দান: এই রাতে দান-সদকা করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।

 

 

আরো পড়ুন:“জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য

 

শবে কদর হলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত। এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত এই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, জিকির ও তওবার মাধ্যমে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই রাতের বরকত দান করেন এবং আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আমিন।