ঢাকা ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নফস বা আত্মা সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি

  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪০৮ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রায় সকল ধর্মেই আত্মা বা নফস সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। এটি মানুষের অস্তিত্বের গভীরতম অংশ যা নৈতিকতা, পাপ-পুণ্য, পুনর্জন্ম, আত্মশুদ্ধি এবং পরকালীন জীবনের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। ইসলাম, খ্রিস্টান ধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, ইহুদিধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসপ্রথায় নফস বা আত্মা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন ধর্মে আত্মার স্বরূপ, গন্তব্য এবং তার সংশোধন বা উন্নতির পথ সম্পর্কে আলোচনা করব।

 

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

১. ইসলাম ধর্মে নফস

 

নফসের প্রকৃতি ও স্তর

ইসলামে নফস হলো মানুষের সেই সত্তা, যা ভালো এবং মন্দ উভয় প্রবৃত্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব করে। কুরআন নফসকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছে:

 

১. নফস-এ-আম্মারা (প্রবৃত্তির দাস) – যা মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে।

২. নফস-এ-লাওয়ামা (আত্মসমালোচনাকারী নফস) – যা পাপের জন্য অনুশোচনা অনুভব করে।

৩. নফস-এ-মুতমাইন্না (শান্ত আত্মা) – যা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল।

 

 

পরকালীন বিচার ও আত্মার গন্তব্য

ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, মৃত্যুর পর আত্মাকে কবরের জীবনে (বারযাখ) রাখা হয় এবং কিয়ামতের দিনে বিচার হবে, তারপর জান্নাত বা জাহান্নামে তার স্থায়ী বাসস্থান নির্ধারিত হবে।

 

২. খ্রিস্টধর্মে আত্মার ধারণা

 

আত্মার প্রকৃতি

খ্রিস্টধর্মে আত্মাকে ঈশ্বরের দান হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, ঈশ্বর মানুষকে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্যে আত্মা (spirit) প্রদান করেছেন।

 

আত্মার পরকালীন গন্তব্য

খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, মৃত্যুর পর আত্মা ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হয় এবং ন্যায়বিচার অনুযায়ী স্বর্গ (Heaven) বা নরক (Hell)-এ স্থান পায়।

 

পবিত্র আত্মা ও আত্মশুদ্ধি

খ্রিস্টান ধর্মে পবিত্র আত্মা (Holy Spirit) হলো ঈশ্বরের এক রূপ, যা বিশ্বাসীদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং আত্মাকে শুদ্ধ করে। প্রার্থনা ও যীশুর ত্যাগের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি সম্ভব হয়।

 

আরো পড়ুন:শের, খফি ও আখফা: আত্মিক অবস্থার তিন স্তর

 

৩. হিন্দুধর্মে আত্মা (আত্মান) ও পুনর্জন্ম

 

আত্মার প্রকৃতি

হিন্দুধর্মে আত্মাকে আত্মান বলা হয়, যা অমর এবং অবিনশ্বর। এটি দেহত্যাগ করে পুনর্জন্ম লাভ করে, অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর এক চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, যাকে সংসার (Samsara) বলা হয়।

 

কর্ম ও পুনর্জন্ম

হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে, পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি নতুন জন্ম লাভ করে। যদি কেউ ভালো কর্ম করে, তবে সে উন্নত জীবন পায়, আর খারাপ কর্মের জন্য নিম্নস্তরের জন্ম লাভ করে।

 

মোক্ষ (Moksha) ও আত্মার মুক্তি

পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়াকে মোক্ষ বলা হয়, যা অর্জনের মাধ্যমে আত্মা পরমাত্মার (ঈশ্বরের) সঙ্গে মিলিত হয়। যোগ, ধ্যান, সৎকর্ম এবং ভক্তির মাধ্যমে আত্মার উন্নতি সম্ভব।

 

আরো পড়ুন:আশেকে রাসূল কাজী নজরুল ইসলাম

 

৪. বৌদ্ধধর্মে আত্মা ও নির্বাণ

 

আত্মার প্রকৃতি

বৌদ্ধধর্মে আনাত্মা (Anatta) নামে একটি ধারণা আছে, যা বলে যে, আত্মা কোনো নির্দিষ্ট বা স্থায়ী সত্তা নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনশীল সত্তা যা পাঁচটি স্কান্ধ (Panch Skandha) বা উপাদানে গঠিত।

 

কর্ম ও পুনর্জন্ম

বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে যে, মানুষের কর্ম বা কর্মফল পরবর্তী জীবনে তার অবস্থান নির্ধারণ করে।

 

নির্বাণ (Nirvana) ও আত্মার মুক্তি

পাপ ও মোহমুক্ত জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ নির্বাণ (পরম শান্তি) লাভ করতে পারে, যা পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তির পথ।

 

আরো পড়ুন:ইসলামের দৃষ্টিতে সুফিবাদ

 

৫. ইহুদিধর্মে নফশ ও আত্মার জীবন

 

আত্মার প্রকৃতি

ইহুদিধর্মে আত্মাকে নফেশ (Nefesh) বলা হয়, যা ঈশ্বরের দান এবং মৃত্যুর পরও বিদ্যমান থাকে। এটি ভালো-মন্দের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

পরকালীন জীবন

ইহুদিদের মধ্যে আত্মার গন্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবন রয়েছে, যেখানে ন্যায়পরায়ণরা পুরস্কৃত হবে এবং পাপীরা শাস্তি পাবে। অন্যরা মনে করে, আত্মা ঈশ্বরের কাছেই ফিরে যায়।

 

 

আরো পড়ুন:সৃষ্টিতত্ত্বঃ রহস্য জগৎ ১ম পর্ব

 

৬. অন্যান্য ধর্মে আত্মার ধারণা

সিকহধর্মে আত্মা

সিকহধর্মে আত্মাকে ঈশ্বরের সৃষ্টি বলা হয় এবং এটি পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে যায়। ঈশ্বরের স্মরণ (Naam Simran) এবং নৈতিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আত্মার মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

জৈনধর্মে আত্মা

জৈনধর্মে আত্মাকে জীবাত্মা বলা হয়, যা কার্মিক বন্ধন দ্বারা প্রভাবিত হয়। কঠোর আত্মসংযম ও ত্যাগের মাধ্যমে মুক্তি (মোক্ষ) লাভ করা যায়।

 

প্রাচীন মিশরীয় ও গ্রিক দর্শন

প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে বিশ্বাস করা হতো যে, আত্মা (Ka এবং Ba) মৃত্যুর পর বিচারিত হয় এবং স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি পায়। গ্রিক দর্শনে প্লেটো ও এরিস্টটলের মতে, আত্মা অবিনশ্বর এবং এটি মৃত্যুর পরও টিকে থাকে।

 

আরো পড়ুন:শের, খফি ও আখফা: আত্মিক অবস্থার তিন স্তর

 

প্রত্যেক ধর্মেই আত্মার ধারণা বিদ্যমান, যদিও এর প্রকৃতি, গন্তব্য ও উন্নতির পথ সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। ইসলামে নফস তিনটি স্তরে বিভক্ত, যেখানে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তি সম্ভব। খ্রিস্টধর্মে পাপমোচনের মাধ্যমে স্বর্গের পথ উন্মুক্ত হয়, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে পুনর্জন্ম ও কর্মফলের ওপর জোর দেওয়া হয়, আর ইহুদিধর্মে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরকালীন প্রতিদান নির্ধারিত হয়।

 

এই বৈচিত্র্যময় ধারণাগুলো প্রমাণ করে যে, মানুষ চিরকাল আত্মার প্রকৃতি ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল এবং আত্মার মুক্তি লাভের পথ খুঁজে এসেছে।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নফস বা আত্মা সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি

আপডেট সময় : ১২:০২:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

প্রায় সকল ধর্মেই আত্মা বা নফস সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। এটি মানুষের অস্তিত্বের গভীরতম অংশ যা নৈতিকতা, পাপ-পুণ্য, পুনর্জন্ম, আত্মশুদ্ধি এবং পরকালীন জীবনের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। ইসলাম, খ্রিস্টান ধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, ইহুদিধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসপ্রথায় নফস বা আত্মা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন ধর্মে আত্মার স্বরূপ, গন্তব্য এবং তার সংশোধন বা উন্নতির পথ সম্পর্কে আলোচনা করব।

 

 

আরো পড়ুন: নফস কী ও কেন? একটি বিশদ বিশ্লেষণ

 

১. ইসলাম ধর্মে নফস

 

নফসের প্রকৃতি ও স্তর

ইসলামে নফস হলো মানুষের সেই সত্তা, যা ভালো এবং মন্দ উভয় প্রবৃত্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব করে। কুরআন নফসকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছে:

 

১. নফস-এ-আম্মারা (প্রবৃত্তির দাস) – যা মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে।

২. নফস-এ-লাওয়ামা (আত্মসমালোচনাকারী নফস) – যা পাপের জন্য অনুশোচনা অনুভব করে।

৩. নফস-এ-মুতমাইন্না (শান্ত আত্মা) – যা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল।

 

 

পরকালীন বিচার ও আত্মার গন্তব্য

ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, মৃত্যুর পর আত্মাকে কবরের জীবনে (বারযাখ) রাখা হয় এবং কিয়ামতের দিনে বিচার হবে, তারপর জান্নাত বা জাহান্নামে তার স্থায়ী বাসস্থান নির্ধারিত হবে।

 

২. খ্রিস্টধর্মে আত্মার ধারণা

 

আত্মার প্রকৃতি

খ্রিস্টধর্মে আত্মাকে ঈশ্বরের দান হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, ঈশ্বর মানুষকে তার নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্যে আত্মা (spirit) প্রদান করেছেন।

 

আত্মার পরকালীন গন্তব্য

খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, মৃত্যুর পর আত্মা ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হয় এবং ন্যায়বিচার অনুযায়ী স্বর্গ (Heaven) বা নরক (Hell)-এ স্থান পায়।

 

পবিত্র আত্মা ও আত্মশুদ্ধি

খ্রিস্টান ধর্মে পবিত্র আত্মা (Holy Spirit) হলো ঈশ্বরের এক রূপ, যা বিশ্বাসীদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং আত্মাকে শুদ্ধ করে। প্রার্থনা ও যীশুর ত্যাগের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি সম্ভব হয়।

 

আরো পড়ুন:শের, খফি ও আখফা: আত্মিক অবস্থার তিন স্তর

 

৩. হিন্দুধর্মে আত্মা (আত্মান) ও পুনর্জন্ম

 

আত্মার প্রকৃতি

হিন্দুধর্মে আত্মাকে আত্মান বলা হয়, যা অমর এবং অবিনশ্বর। এটি দেহত্যাগ করে পুনর্জন্ম লাভ করে, অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর এক চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, যাকে সংসার (Samsara) বলা হয়।

 

কর্ম ও পুনর্জন্ম

হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে, পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি নতুন জন্ম লাভ করে। যদি কেউ ভালো কর্ম করে, তবে সে উন্নত জীবন পায়, আর খারাপ কর্মের জন্য নিম্নস্তরের জন্ম লাভ করে।

 

মোক্ষ (Moksha) ও আত্মার মুক্তি

পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়াকে মোক্ষ বলা হয়, যা অর্জনের মাধ্যমে আত্মা পরমাত্মার (ঈশ্বরের) সঙ্গে মিলিত হয়। যোগ, ধ্যান, সৎকর্ম এবং ভক্তির মাধ্যমে আত্মার উন্নতি সম্ভব।

 

আরো পড়ুন:আশেকে রাসূল কাজী নজরুল ইসলাম

 

৪. বৌদ্ধধর্মে আত্মা ও নির্বাণ

 

আত্মার প্রকৃতি

বৌদ্ধধর্মে আনাত্মা (Anatta) নামে একটি ধারণা আছে, যা বলে যে, আত্মা কোনো নির্দিষ্ট বা স্থায়ী সত্তা নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনশীল সত্তা যা পাঁচটি স্কান্ধ (Panch Skandha) বা উপাদানে গঠিত।

 

কর্ম ও পুনর্জন্ম

বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে যে, মানুষের কর্ম বা কর্মফল পরবর্তী জীবনে তার অবস্থান নির্ধারণ করে।

 

নির্বাণ (Nirvana) ও আত্মার মুক্তি

পাপ ও মোহমুক্ত জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ নির্বাণ (পরম শান্তি) লাভ করতে পারে, যা পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তির পথ।

 

আরো পড়ুন:ইসলামের দৃষ্টিতে সুফিবাদ

 

৫. ইহুদিধর্মে নফশ ও আত্মার জীবন

 

আত্মার প্রকৃতি

ইহুদিধর্মে আত্মাকে নফেশ (Nefesh) বলা হয়, যা ঈশ্বরের দান এবং মৃত্যুর পরও বিদ্যমান থাকে। এটি ভালো-মন্দের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

পরকালীন জীবন

ইহুদিদের মধ্যে আত্মার গন্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুপরবর্তী জীবন রয়েছে, যেখানে ন্যায়পরায়ণরা পুরস্কৃত হবে এবং পাপীরা শাস্তি পাবে। অন্যরা মনে করে, আত্মা ঈশ্বরের কাছেই ফিরে যায়।

 

 

আরো পড়ুন:সৃষ্টিতত্ত্বঃ রহস্য জগৎ ১ম পর্ব

 

৬. অন্যান্য ধর্মে আত্মার ধারণা

সিকহধর্মে আত্মা

সিকহধর্মে আত্মাকে ঈশ্বরের সৃষ্টি বলা হয় এবং এটি পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে যায়। ঈশ্বরের স্মরণ (Naam Simran) এবং নৈতিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আত্মার মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

জৈনধর্মে আত্মা

জৈনধর্মে আত্মাকে জীবাত্মা বলা হয়, যা কার্মিক বন্ধন দ্বারা প্রভাবিত হয়। কঠোর আত্মসংযম ও ত্যাগের মাধ্যমে মুক্তি (মোক্ষ) লাভ করা যায়।

 

প্রাচীন মিশরীয় ও গ্রিক দর্শন

প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে বিশ্বাস করা হতো যে, আত্মা (Ka এবং Ba) মৃত্যুর পর বিচারিত হয় এবং স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি পায়। গ্রিক দর্শনে প্লেটো ও এরিস্টটলের মতে, আত্মা অবিনশ্বর এবং এটি মৃত্যুর পরও টিকে থাকে।

 

আরো পড়ুন:শের, খফি ও আখফা: আত্মিক অবস্থার তিন স্তর

 

প্রত্যেক ধর্মেই আত্মার ধারণা বিদ্যমান, যদিও এর প্রকৃতি, গন্তব্য ও উন্নতির পথ সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। ইসলামে নফস তিনটি স্তরে বিভক্ত, যেখানে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তি সম্ভব। খ্রিস্টধর্মে পাপমোচনের মাধ্যমে স্বর্গের পথ উন্মুক্ত হয়, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে পুনর্জন্ম ও কর্মফলের ওপর জোর দেওয়া হয়, আর ইহুদিধর্মে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরকালীন প্রতিদান নির্ধারিত হয়।

 

এই বৈচিত্র্যময় ধারণাগুলো প্রমাণ করে যে, মানুষ চিরকাল আত্মার প্রকৃতি ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল এবং আত্মার মুক্তি লাভের পথ খুঁজে এসেছে।