ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামের দৃষ্টিতে সুফিবাদ

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪০৪ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইলমে তাসাউফ বা সুফিবাদের উদ্ভব যে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা থেকেই– এতে কোনো সন্দেহ নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এমন সব রহস্যপূর্ণ বাণীর অবতারণা করেছেন, যা দিগ্বিজয়ী সৈন্যদেরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধ্যানমগ্ন ও মরমি ভাবাপন্ন সুফিতে পরিণত করেছিল। তাছাড়া রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণী ও কর্মের মধ্যে তাসাউফের বীজ সম্ভাবনাময় মহিরুহরূপে নিহিত ছিল। তাসাউফের পথ-পরিক্রমা ও তরিকতের শাজরানামায় (পীর পরম্পরা তালিকা) প্রথম সুফি ও পীর (মুর্শিদ/শায়খ) হিসেবে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই উল্লেখ করা হয়। কাজেই সুফিতত্ত্বের উন্মেষ ইসলামের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই। ইসলামে এটা নতুন কোনো সংযোজন বা সংস্কার নয়। তাই যুগে যুগে মুসলিম মনীষী, ইমাম ও মুজতাহিদরা এই ইলমে তাসাউফের চর্চা ও অনুশীলন করে যান।

আত্মার উৎকর্ষ সাধন ও মানবীয় সত্তার পূর্ণ বিকাশে ইলমে তাসাউফ চর্চার আবির্ভাব। এ বিশ্বে সুফি আগমনের ধারাবাহিকতায় ইমাম আহমদ রেজা (রা.) ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ সুফি ছিলেন। তাই তিনি যেমন শরিয়তের ইমাম, তেমনি তরিকতেরও ইমাম। সব প্রসিদ্ধ তরিকার খেলাফত ও এজাজত তিনি অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু ইলমে তাসাউফ চর্চায় ব্যাপৃত রাখেননি, বরং তাসাউফ চর্চার নামে কিছু বিভ্রান্ত সুফি কর্তৃক সৃষ্ট যাবতীয় কুপ্রথা ও ভুল ধারণার সংশোধন এবং তরিকতকে সুশৃঙ্খল নিয়মে ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত কলমযুদ্ধও চালিয়ে যান।

সুফিবাদ কী ও কেন

আজকাল অনেকে এ বলে অনর্থক ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন, তরিকত ও শরিয়ত দুটি ভিন্ন জিনিস। ইমাম আহমদ রেজা (রা.) এ মতের ঘোর বিরোধিতা করেন। শরিয়তের বিধিবিধানকে উপেক্ষা করে যারা নিজেকে সুফি বা তরিকতপন্থি বলে বেড়ান, তিনি তাদের প্রবঞ্চনা থেকে দূরে থাকা উচিত বলে মনে করতেন। তাঁর মতে, শরিয়ত হলো তাসাউফের পথ-পরিক্রমায় প্রারম্ভিক স্তর। শরিয়তের যথার্থ চর্চা ও অনুশীলন ছাড়া মারিফাত (খোদা পরিচিতি ও প্রাপ্তি, যা সুফিদের পরম লক্ষ্য) অর্জন সম্ভব নয়। শরিয়ত মারিফাতের ভিত্তি।

তিনি লিখেছেন, ‘শরিয়ত হলো মূল আর তরিকত হলো শাখা। শরিয়ত হলো ঝরনার উৎসমূল আর তরিকত হলো এ থেকে সৃষ্ট দরিয়া। শরিয়ত থেকে তরিকতকে আলাদা করা অসম্ভব এবং সুকঠিন। শরিয়তের ওপর তরিকত নির্ভরশীল।’ ইমাম আহমদ রেজা (রা.) শরিয়তকে তাসাউফের পথে উন্নতি ও সফলতা লাভের একমাত্র মাপকঠি বলে মনে করতেন। এক স্থানে তিনি লিখেছেন, ‘তরিকতের মধ্যে যা কিছু রহস্য লুক্বায়িত আছে, তা শরিয়তের অনুসরণের কারণে। না হয় শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া বড় বড় পাদ্রী, যোগী ও সন্ন্যাসীদেরও কাশ্‌ফ অর্জিত হয়। তারপরও তারা জান্নাতি নয়।’

সূফি সাধনায় ফানা ও বাকা পরিচয়

সব মিলিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে তাসাউফ বা সুফিবাদের স্বরূপকে এভাবে তুলে ধরা যায়। সুফিবাদে শরিয়তে নববির কোনো খেলাপ নেই; পীর বা মুর্শিদকে তাজিমি সিজদা করার মতো হারাম কর্মকাণ্ড নেই; অশ্লীল গান-বাজনা, খেল-তামাশা, নেশা জাতীয় দ্রবাদি গ্রহণ-সেবন বা পান সম্পূর্ণরূপে হারাম; তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে ‘সামা’-‘কাউয়ালি’ করা জায়েজ। সুফিবাদে ধার্মিকতা আছে কিন্তু ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই; সংসারবিমুখতা তথা বৈরাগ্যবাদ চর্চার সুযোগ নেই, কিন্তু নির্জনে মোরাকাবা-মোশাহাদা করার বিধান আছে। সুফিবাদ হচ্ছে ইমান হিফাজত করা, কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা, রিপুতাড়িত মূর্খতা, শয়তানের ক্রীড়া-কৌতুক, কামনা-বাসনা, দুশ্চরিত্রের সঙ্গ পরিহার এবং সর্বসাধারণের সেবা করার নাম।

 

আরো পড়ুনঃ

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসলামের দৃষ্টিতে সুফিবাদ

আপডেট সময় : ০৩:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

ইলমে তাসাউফ বা সুফিবাদের উদ্ভব যে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা থেকেই– এতে কোনো সন্দেহ নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এমন সব রহস্যপূর্ণ বাণীর অবতারণা করেছেন, যা দিগ্বিজয়ী সৈন্যদেরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধ্যানমগ্ন ও মরমি ভাবাপন্ন সুফিতে পরিণত করেছিল। তাছাড়া রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণী ও কর্মের মধ্যে তাসাউফের বীজ সম্ভাবনাময় মহিরুহরূপে নিহিত ছিল। তাসাউফের পথ-পরিক্রমা ও তরিকতের শাজরানামায় (পীর পরম্পরা তালিকা) প্রথম সুফি ও পীর (মুর্শিদ/শায়খ) হিসেবে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই উল্লেখ করা হয়। কাজেই সুফিতত্ত্বের উন্মেষ ইসলামের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই। ইসলামে এটা নতুন কোনো সংযোজন বা সংস্কার নয়। তাই যুগে যুগে মুসলিম মনীষী, ইমাম ও মুজতাহিদরা এই ইলমে তাসাউফের চর্চা ও অনুশীলন করে যান।

আত্মার উৎকর্ষ সাধন ও মানবীয় সত্তার পূর্ণ বিকাশে ইলমে তাসাউফ চর্চার আবির্ভাব। এ বিশ্বে সুফি আগমনের ধারাবাহিকতায় ইমাম আহমদ রেজা (রা.) ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ সুফি ছিলেন। তাই তিনি যেমন শরিয়তের ইমাম, তেমনি তরিকতেরও ইমাম। সব প্রসিদ্ধ তরিকার খেলাফত ও এজাজত তিনি অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু ইলমে তাসাউফ চর্চায় ব্যাপৃত রাখেননি, বরং তাসাউফ চর্চার নামে কিছু বিভ্রান্ত সুফি কর্তৃক সৃষ্ট যাবতীয় কুপ্রথা ও ভুল ধারণার সংশোধন এবং তরিকতকে সুশৃঙ্খল নিয়মে ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত কলমযুদ্ধও চালিয়ে যান।

সুফিবাদ কী ও কেন

আজকাল অনেকে এ বলে অনর্থক ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন, তরিকত ও শরিয়ত দুটি ভিন্ন জিনিস। ইমাম আহমদ রেজা (রা.) এ মতের ঘোর বিরোধিতা করেন। শরিয়তের বিধিবিধানকে উপেক্ষা করে যারা নিজেকে সুফি বা তরিকতপন্থি বলে বেড়ান, তিনি তাদের প্রবঞ্চনা থেকে দূরে থাকা উচিত বলে মনে করতেন। তাঁর মতে, শরিয়ত হলো তাসাউফের পথ-পরিক্রমায় প্রারম্ভিক স্তর। শরিয়তের যথার্থ চর্চা ও অনুশীলন ছাড়া মারিফাত (খোদা পরিচিতি ও প্রাপ্তি, যা সুফিদের পরম লক্ষ্য) অর্জন সম্ভব নয়। শরিয়ত মারিফাতের ভিত্তি।

তিনি লিখেছেন, ‘শরিয়ত হলো মূল আর তরিকত হলো শাখা। শরিয়ত হলো ঝরনার উৎসমূল আর তরিকত হলো এ থেকে সৃষ্ট দরিয়া। শরিয়ত থেকে তরিকতকে আলাদা করা অসম্ভব এবং সুকঠিন। শরিয়তের ওপর তরিকত নির্ভরশীল।’ ইমাম আহমদ রেজা (রা.) শরিয়তকে তাসাউফের পথে উন্নতি ও সফলতা লাভের একমাত্র মাপকঠি বলে মনে করতেন। এক স্থানে তিনি লিখেছেন, ‘তরিকতের মধ্যে যা কিছু রহস্য লুক্বায়িত আছে, তা শরিয়তের অনুসরণের কারণে। না হয় শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া বড় বড় পাদ্রী, যোগী ও সন্ন্যাসীদেরও কাশ্‌ফ অর্জিত হয়। তারপরও তারা জান্নাতি নয়।’

সূফি সাধনায় ফানা ও বাকা পরিচয়

সব মিলিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে তাসাউফ বা সুফিবাদের স্বরূপকে এভাবে তুলে ধরা যায়। সুফিবাদে শরিয়তে নববির কোনো খেলাপ নেই; পীর বা মুর্শিদকে তাজিমি সিজদা করার মতো হারাম কর্মকাণ্ড নেই; অশ্লীল গান-বাজনা, খেল-তামাশা, নেশা জাতীয় দ্রবাদি গ্রহণ-সেবন বা পান সম্পূর্ণরূপে হারাম; তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে ‘সামা’-‘কাউয়ালি’ করা জায়েজ। সুফিবাদে ধার্মিকতা আছে কিন্তু ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই; সংসারবিমুখতা তথা বৈরাগ্যবাদ চর্চার সুযোগ নেই, কিন্তু নির্জনে মোরাকাবা-মোশাহাদা করার বিধান আছে। সুফিবাদ হচ্ছে ইমান হিফাজত করা, কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা, রিপুতাড়িত মূর্খতা, শয়তানের ক্রীড়া-কৌতুক, কামনা-বাসনা, দুশ্চরিত্রের সঙ্গ পরিহার এবং সর্বসাধারণের সেবা করার নাম।

 

আরো পড়ুনঃ