ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিতরা কী? ইসলামে ফিতরার গুরুত্ব

  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • / ২৪০৬ বার পড়া হয়েছে
Sufibad.com - সূফিবাদ.কম অনলাইনের সর্বশেষ লেখা পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা রমজানের শেষ সময়ে আদায় করা হয়। এটি মূলত ঈদুল ফিতরের আগেই গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা হয়, যাতে তারাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ফিতরা ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

ফিতরার সংজ্ঞা ও অর্থ

ফিতরা শব্দটি আরবি “ফিতর” থেকে এসেছে, যার অর্থ ইফতার করা বা রোজা ভাঙা। ফিতরা হচ্ছে সেই দান, যা রোজা রাখার পর শুদ্ধি অর্জনের জন্য এবং গরিবদের সহায়তার জন্য প্রদান করা হয়। এটি ওয়াজিব বা আবশ্যিক দান, যা ঈদের আগেই আদায় করা জরুরি।

 

হাদিসে এসেছে:

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,”রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতরার জাকাত ফরজ করেছেন; এটি রোজাদারের জন্য মিথ্যা ও অশ্লীল কথাবার্তার গুনাহ থেকে পবিত্রকারী এবং দরিদ্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা।”

(সুনান আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

 

আরো পড়ুন:ঈদুল ফিতরের নামাজের সঠিক পদ্ধতি ও গুরুত্ব

 

ফিতরার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

 

১. গরিবদের ঈদ উদযাপনের সুযোগ দেওয়া

ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।

 

২. রোজার শুদ্ধি

রোজা পালনের সময় মানুষ অনেক ভুল-ত্রুটি করে ফেলে। ফিতরা সেই ভুলগুলোর কাফফারা বা পরিশুদ্ধি হিসেবে কাজ করে।

 

৩. ইসলামের সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা

ইসলাম ধনীদের উপর গরিবদের অধিকার নির্ধারণ করেছে। ফিতরা আদায় করা ধনী-গরিবের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতার সম্পর্ক তৈরি করে।

 

৪. ইসলামের বাধ্যতামূলক দানের (সাদকাহ) বিধান পালন

যাদের উপর ফিতরা ফরজ, তারা এটি না দিলে গুনাহগার হবেন। তাই এটি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

আরো পড়ুন:রূপেও নয়, গুণেও নয় – মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার আচরণে

 

ফিতরা আদায়ের বিধান ও পরিমাণ

 

কে ফিতরা দিতে বাধ্য?

যে মুসলিমের কাছে নিজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তার জন্য ফিতরা দেওয়া আবশ্যক।

 

ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ

ফিতরার পরিমাণ সাধারণত এক সা’ (প্রায় ৩.২৫ কেজি) খাদ্যশস্যের মূল্যের সমপরিমাণ ধান, গম, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি হতে হবে।

 

বর্তমানে এটি নগদ অর্থ হিসেবেও আদায় করা হয়, যা প্রতি বছর নির্ধারিত হয়ে থাকে।

 

ফিতরা দেওয়ার সময়

ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই দিতে হয়। তবে উত্তম হলো রমজানের শেষ দশকে এটি প্রদান করা।

 

যাকে দেওয়া যাবে

  1. দরিদ্র ও অসহায় মানুষ
  2. এতিম ও বিধবা
  3. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  4. মিসকিন ও পথচারী

 

 

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

 

ফিতরা শুধুমাত্র একটি দান নয়; বরং এটি ইসলামের সামাজিক সুবিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি রোজার শুদ্ধি আনয়নের পাশাপাশি গরিবদের ঈদের আনন্দে শামিল করার এক সুন্দর উপায়। তাই ফিতরার বিধান মেনে যথাসময়ে আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ফিতরা আদায়ের তাওফিক দান করুন, আমিন।

Sufibad 24

ব্লগটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফিতরা কী? ইসলামে ফিতরার গুরুত্ব

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা রমজানের শেষ সময়ে আদায় করা হয়। এটি মূলত ঈদুল ফিতরের আগেই গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা হয়, যাতে তারাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ফিতরা ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

ফিতরার সংজ্ঞা ও অর্থ

ফিতরা শব্দটি আরবি “ফিতর” থেকে এসেছে, যার অর্থ ইফতার করা বা রোজা ভাঙা। ফিতরা হচ্ছে সেই দান, যা রোজা রাখার পর শুদ্ধি অর্জনের জন্য এবং গরিবদের সহায়তার জন্য প্রদান করা হয়। এটি ওয়াজিব বা আবশ্যিক দান, যা ঈদের আগেই আদায় করা জরুরি।

 

হাদিসে এসেছে:

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,”রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতরার জাকাত ফরজ করেছেন; এটি রোজাদারের জন্য মিথ্যা ও অশ্লীল কথাবার্তার গুনাহ থেকে পবিত্রকারী এবং দরিদ্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা।”

(সুনান আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

 

আরো পড়ুন:ঈদুল ফিতরের নামাজের সঠিক পদ্ধতি ও গুরুত্ব

 

ফিতরার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

 

১. গরিবদের ঈদ উদযাপনের সুযোগ দেওয়া

ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।

 

২. রোজার শুদ্ধি

রোজা পালনের সময় মানুষ অনেক ভুল-ত্রুটি করে ফেলে। ফিতরা সেই ভুলগুলোর কাফফারা বা পরিশুদ্ধি হিসেবে কাজ করে।

 

৩. ইসলামের সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা

ইসলাম ধনীদের উপর গরিবদের অধিকার নির্ধারণ করেছে। ফিতরা আদায় করা ধনী-গরিবের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতার সম্পর্ক তৈরি করে।

 

৪. ইসলামের বাধ্যতামূলক দানের (সাদকাহ) বিধান পালন

যাদের উপর ফিতরা ফরজ, তারা এটি না দিলে গুনাহগার হবেন। তাই এটি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

আরো পড়ুন:রূপেও নয়, গুণেও নয় – মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার আচরণে

 

ফিতরা আদায়ের বিধান ও পরিমাণ

 

কে ফিতরা দিতে বাধ্য?

যে মুসলিমের কাছে নিজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তার জন্য ফিতরা দেওয়া আবশ্যক।

 

ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ

ফিতরার পরিমাণ সাধারণত এক সা’ (প্রায় ৩.২৫ কেজি) খাদ্যশস্যের মূল্যের সমপরিমাণ ধান, গম, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি হতে হবে।

 

বর্তমানে এটি নগদ অর্থ হিসেবেও আদায় করা হয়, যা প্রতি বছর নির্ধারিত হয়ে থাকে।

 

ফিতরা দেওয়ার সময়

ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই দিতে হয়। তবে উত্তম হলো রমজানের শেষ দশকে এটি প্রদান করা।

 

যাকে দেওয়া যাবে

  1. দরিদ্র ও অসহায় মানুষ
  2. এতিম ও বিধবা
  3. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  4. মিসকিন ও পথচারী

 

 

 

আরো পড়ুন:ইতিকাফ: আত্মশুদ্ধির পথ ও পালনীয় বিধান

 

ফিতরা শুধুমাত্র একটি দান নয়; বরং এটি ইসলামের সামাজিক সুবিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি রোজার শুদ্ধি আনয়নের পাশাপাশি গরিবদের ঈদের আনন্দে শামিল করার এক সুন্দর উপায়। তাই ফিতরার বিধান মেনে যথাসময়ে আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ফিতরা আদায়ের তাওফিক দান করুন, আমিন।