রূপেও নয়, গুণেও নয় – মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার আচরণে

- আপডেট সময় : ০১:২১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
- / ২৪০৪ বার পড়া হয়েছে
মানুষকে চেনার প্রধান মাধ্যম কী? অনেকেই বলবেন, চেহারা বা বাহ্যিক রূপ। কেউ বলবেন গুণ বা প্রতিভা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, একজন মানুষের আসল পরিচয় তার আচরণ ও চরিত্রে। সৌন্দর্য সময়ের সঙ্গে ম্লান হয়ে যায়, গুণাবলি মানুষকে বিশেষ করে তুলতে পারে, কিন্তু একজন ব্যক্তির মানসিকতা, ব্যবহার ও মূল্যবোধ– এটাই তাকে সত্যিকারের পরিচিতি দেয়।
রূপের মোহ: ক্ষণস্থায়ী বিভ্রম
সৌন্দর্য মানুষের সহজাত আকর্ষণীয় গুণ। সুন্দর চেহারা প্রথম দেখায় মন কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা ফিকে হয়ে যায়। মানুষ চিরদিন সুন্দর থাকে না, বয়সের সঙ্গে সৌন্দর্য ম্লান হয়। তাই যদি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে মানুষের পরিচয় নির্ধারণ করা হয়, তবে তা একসময় মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
আমরা বাস্তবে প্রায়ই দেখি, অনেকে চমৎকার চেহারার হলেও তাদের ব্যবহার, কথাবার্তা বা মানসিকতা অত্যন্ত রূঢ় ও বিরক্তিকর। তখন তাদের সৌন্দর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনই, কারও চেহারা খুব আকর্ষণীয় নাও হতে পারে, কিন্তু তার ভালো ব্যবহার, কোমল হৃদয় ও উদার মনোভাব তাকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলতে পারে।
আরো পড়ুন:“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি”—ইসলাম ও সুফিবাদের আলোকে ব্যাখ্যা
গুণের মূল্য, কিন্তু একা যথেষ্ট নয়
একজন মানুষের গুণাবলি তার প্রতিভা ও দক্ষতাকে প্রকাশ করে। শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান বা ধনী হওয়া অবশ্যই ভালো বিষয়। তবে এগুলো মানুষের সত্যিকারের পরিচয় নির্ধারণ করে না।
অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে কাজ করেন, কিন্তু কিছু ব্যক্তি আবার অহংকারী হয়ে ওঠেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। একইভাবে, অর্থবিত্ত থাকলেই কেউ ভালো মানুষ হয়ে যান না। ধনীরা যদি অভদ্র ও অহংকারী হন, তবে মানুষ তাদের পছন্দ করবে না।
তাই কেবল গুণ থাকলেই একজন মানুষ শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠেন না। তার চরিত্র ও আচরণই বলে দেয়, তিনি কেমন মানুষ।
আরো পড়ুন:শের, খফি ও আখফা: আত্মিক অবস্থার তিন স্তর
আসল পরিচয় আচরণে
একজন মানুষ কেমন, তা বোঝার সহজতম উপায় হলো তার আচরণ। মানুষের ব্যবহার, কথা বলার ধরন, দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধই তার প্রকৃত পরিচয়।
কিছু উদাহরণ দেখা যাক:
১. সততা ও ন্যায়পরায়ণতা: একজন ব্যক্তি যদি সৎ হয়, তাহলে মানুষ তার প্রতি আস্থা রাখবে। তিনি বাহ্যিকভাবে যেমনই হোন, তার সততা তাকে সম্মান এনে দেবে।
২. বিনয় ও ভদ্রতা: অহংকারবশত কেউ যদি অন্যদের ছোট করে, তবে তার প্রতিভা ও সৌন্দর্য অর্থহীন হয়ে যায়। বিনয়ী ও ভদ্র মানুষ সবাইকে আপন করে নিতে পারে।
৩. সহমর্মিতা ও উদারতা: যারা অন্যদের কষ্ট বোঝে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তারা সমাজে বেশি সম্মানিত হয়।
৪. কথার ধরণ: একজন ব্যক্তির মুখের ভাষা ও কথার শৈলী তার মন-মানসিকতার প্রতিফলন। নম্রভাষী ও সৌজন্যমূলক কথা বলা মানুষ সহজেই সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।
আরো পড়ুন: “জাগ্রত পরাণ যার মরে না সে জন”— আধ্যাত্মিকতার চিরন্তন সত্য
একজন মানুষ দেখতে কেমন, কিংবা তার কী কী গুণ আছে – তা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এগুলোই তার আসল পরিচয় নয়। মানুষের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে তার ব্যবহার, আচরণ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে।
তাই আমরা যদি সত্যিকারের ভালো মানুষ হতে চাই, তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে না ছুটে নিজেদের আচরণ ও চরিত্র গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ মানুষকে সবাই মনে রাখে তার ভালো কাজ, সুন্দর ব্যবহার ও দৃষ্টান্তমূলক আচরণের জন্য – রূপ কিংবা প্রতিভার জন্য নয়।