ইনসান ও বাশারের মধ্যে পার্থক্য
- আপডেট সময় : ০১:১৬:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৪১৬ বার পড়া হয়েছে
ইনসান ও বাশারের মধ্যে প্রভেদ ইনসানের সংজ্ঞা: যে নফসের মধ্যে খান্নাসরূপী শয়তান আছে তাকে ইনসান বলে। তাই ইনসান ক্ষতিগ্রস্ত। বাশারের সংজ্ঞা: যে নফসের মধ্যে রবের আদেশ আল্লাহর জাত রুহ উদ্ভাসিত তাকে বাশার বলে। তাই বাশাররূপী রাসুল সর্তককারী। ইনসান ও বাশারের মধ্যে পার্থক্য নফস তথা প্রাণ পবিত্র। নফস হলো সিফাতি নূর। নফস জাতি নূর নয়, নফস সৃষ্টি, নফস হাদেস, তাই নফসের বিবর্তন হয়। রুহ হলো রবের আদেশ, রব থেকে আলাদা নয়, রুহ স্বয়ং আল্লাহর জাতিসত্তা। তাই রুহের কোনো পরিবর্তন নেই।
এই নফসের সাথে যখন খান্নাসরূপী শয়তান যুক্ত হয় তখন নফস কলুষিত হয়। কলুষিত নফসের অধিকারীকে ইনসান বলা হয়। অর্থাৎ খান্নাসযুক্ত নফসকে ইনসান তথা মানুষ বলা হয়। নফস জম্ম মৃত্যুর অধীন। নফস জন্ম দেয় এবং নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে। নফস পানাহার করে, নফস নিদ্রায় যায়, নফস যৌনমিলন করে, নফস জান্নাতের সুখ ভোগ করে, জাহান্নামের দুঃখ ভোগ করে, নফসের প্রকারভেদ আছে, তাই নফস রূপান্তর হয়, নফস কবরের আজাব ভোগ করে, নফস অসুস্থ হয়, নফস জিনগ্রস্ত হয়, নফসের বিচার হয়, নফসের কর্মফল আছে।
নফস যখন খান্নাসরূপী শয়তান মুক্ত হয়, তখনই খান্নাসমুক্ত নফসের উপর রবের আদেশ রূহ উদ্ভাসিত হয়, আল কোরান পবিত্র নফসটিকে ইনসান তথা মানুষ না বলে বাশার বলে অভিহিত করেছেন। জিন এবং ইনসানের নফসের সূক্ষ্মবীজরূপে রূহ আছে, নফস শয়তান মুক্ত হলে নফসের উপর রুহুল আমিন জাগ্রত হয়। এই জাগ্রত রূহের অধিকারীকে ইনসান না বলে সম্মানজনক ভাষায় বাশার বলা হয়েছে, এই বাশার থেকে অহি হয়, রহুল আমিনের বানীকে অহি বলা হয়, খান্নাসের বচনকে কুমন্ত্রণা তথা ওয়াসওয়াসা বলা হয়। কিন্তু রুহ পানাহার করে না, রূহ ঘুমায় না, রুহ যৌনমিলন করে না, রুহের বিচার হয় না, রুহ কর্মফল ভোগ করে না, রুহ জান্নাতের সুখ ভোগ করে না, রুহ জাহান্নামের দুঃখ ভোগ করে না, রুহের কোনো ভাগ নেই, রুহ অসুস্থ হয় না, রূহ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে না, রুহ কবরের আজাব ভোগ করে না।
রুহ সৃষ্টি নয়, রুহ স্রষ্টা, রূহ সৃজনশীল, রূহ কাদিম, রুহ হাদেস নয়। রুহ অনাদি, রুহ অনন্ত, রুহ অব্যয়, রুহ অপরিবর্তনীয়। সুরা মরিয়মের ১৭ নং আয়াতে রুহুল্লাহকে ইনসান না বলে বাশার বলা হয়েছে। সুরা কাহাফেরও ইনসান না বলে বাশার বলা হয়েছে। বাশার ক্ষতিগ্রস্ত নয়, ইনসান ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু বাশার আর ইনসান দেখতে একই মনে হয়। কিন্তু বাশার থেকে অহি বের হয়, ইনসান থেকে কুমন্ত্রণা বের হয়। বাশারকে হাকিকতে রসুল বলা হয়, ইনসানকে হাকিকতে শয়তান বলা হয়। সুতরাং বাশারকে যারা জেনে শোনে ইনসান বলবে তারা কোরানের দর্শন অনুসারে কাফের। সুতরাং বাশার এবং ইনসানের মধ্যে কোরান প্রভেদ নির্ণয় করেছেন।
সকল লোগাতের মধ্যে পন্ডিতরা বাশার এবং ইনসানের অর্থ করেছেন বাংলা ভাষায় মানুষ। ইহা কোরানের বিপরীত ভাব প্রকাশ করে। কোরানিক দর্শনের অর্থ নিলে সমস্যা সমাধান হয়, অভিধানের অর্থ নিলে ফেরকা তৈরি হয়। রসুলগণ দেখতে আমাদের ন্যায় হলেও মোটেও আমাদের ন্যায় নয়। তার মধ্যে রুহুল আমিন জাগ্রত, আর আমার মধ্যে শয়তান জাগ্রত। সুতরাং রাসুল দেখতে অথবা রাসুলের বাশার দেখতে আমার মতো ইহাই সবচেয়ে বড় ধোকা। সমগ্র কোরানে একটি আয়াতেও রসুলকে সৃষ্টি বলা হয় নাই, একটি আয়াতেও নেই, রসুল জন্মগ্রহণ করে, আল কোরানে আসছে রসুল মনোনিত জয়, রসুল প্রেরিত হয়, রূহ বাশাররূপ ধারণ করে।
সুতরাং রসুল সৃষ্টি নয়, ইনসান সৃষ্টি , রসুল রবের আমর। আল্লাহর এবং রাসুল এক ও অভিন্ন সত্তা, আল্লাহ এবং রসুলকে আলাদা আলাদা মনে মনে চিন্তা করলেই কোরান তাকে কাফের বলে অভিহিত করেছেন।