নবিজীর গোলাম বলা যাবে কিনা?
- আপডেট সময় : ১০:৪৯:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৪১২ বার পড়া হয়েছে
“নবিজীর গোলাম” বলা যাবে কিনা?? এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা আছে কিনা!! আবার অনেক সময়ে দেখা যায় যে, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি (সাঃ) -এঁর গোলাম বললে কেউ কেউ তাতে কটাক্ষ করে,আবার কেউ নবিজীর গোলাম বলতে লজ্জাবোধও করেন!
“আজকে এ বিষয়ে দলিল ভিত্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করবো”
১. নুর নবীজির গোলাম হতে পারলেই জান্নাত-
عن حضرت ابي هريرة رضي الله تعال عنه ان رسول الله صلي الله عليه و سلام قال كل امتي يدخلون الجنة الا من ابي قالوا و من ابي قال من اطاعني دخل الجنة و من عصاني فقد ابي، رواه البخاري
অর্থ- হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্নিত, নবীজিপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- আঁমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে,তবে অস্বীকারকারীরা ছাড়া, জিঙ্গেস করা হলো! অস্বীকারকারী কারা? তিঁনি জবাব দিলেন- যারা আঁমার গোলামী করবে অর্থাৎ আঁমার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে,তারা জান্নাতি হবে আর যারা আঁমাকে অমান্য করবে অর্থাৎ আঁমার আদেশ নিষেধ মেনে চলবেনা, তারাই অস্বীকারকারী জাহান্নামী।
[সহীহুল বুখারী শরীফ,মুল কিতাব দেওবন্দী ছাপা জিলদে ছানি ১০৮১পৃষ্ঠা, হাদীস শরীফ নং- ৬৯৮৭, কিতাবুল ইতিছাম]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى-
অনুবাদ : ‘অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী ব্যক্তি (আবা) ব্যতীত আঁমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন,হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী কে? তিঁনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আঁমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল,আর যে আঁমার অবাধ্যতা করল সেই ‘আবা’ বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী’।
*(ক.) বুখারী: হা/৭২৮০
*(খ.) আহমাদ: হা/৮৫১১
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، حَدَّثَنَا هِلاَلُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى ”. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ ” مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى ”.
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আঁমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিঁনি বললেন,‘‘যে আঁমার অনুসরণ করবে,সে জান্নাতে যাবে এবং যে আঁমার অবাধ্যতা করবে,সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।
*(ক.) রিয়াযুস স্বা-লিহীন,অধ্যায়ঃ ১/হাঃ নং ১৬২
*(খ.) সহীহুল বুখারী: ৭২৮০
*(গ.) মুসলিম: ১৮৩৫
*(ঘ.) নাসায়ী: ৪১৯৩,৫৫১০
*(ঙ.) ইবনু মাজাহ: ৩
*(চ.) আহমাদ ৫৩১১
*(ছ.) আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১
*(জ.) ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩
[হাদিসের মানঃ সহিহ/বিশুদ্ধ]
হাদিসে এসেছে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনদের ভিতরে কিছু লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কিছু লোক বঞ্চিত হবে।সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রাসুল কে বঞ্চিত হবে ? তিঁনি বললেন,তাদের মধ্যে যারা আঁমাকে মান্য করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা করেনি তারা জান্নাতে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত হবে”।
[বুখারী শরীফ-৭২৮০]
২. গোলাম ( غلام ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, خادم (সেবক), عامل (কর্মচারী) প্রভৃতি। অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেই।যেমন,মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের كتاب الالفاظ من الادب -এ বর্ণিত হয়েছে যে-
لايقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عبيد الله وكل نساءكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي
অর্থাৎ, নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ عبدي (আঁমার বান্দাহ) বলোনা।তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী।কিন্তু আঁমার গোলাম আঁমার চাকরানী বলতে পার।
(মুসলিম শরীফ)
এবার দেখুন: সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার :৫৬৮১।ইফাঃ অনুবাদ থেকে।
*মুহাম্মদ ইবনু রাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রা:) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদিস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রবকে পান করাও, তোমার রবকে খাবার দাও,তোমার রবকে উযু করাও। তিঁনি আরও বলেনঃ “তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব বলবেনা বরং বলবে আমার সায়্যিদ-সরদার বা নেতা,আমার মাওলা-মনিব।আর তোমাদের কেউ বলবে না,আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।”
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
- এখানে সরাসরি গোলাম শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে এবং তা ব্যবহারের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে খাদেম বা চাকর বা কর্মচারী অর্থে পীরের গোলাম বলে তা অবশ্যই জায়িয।প্রসংগত, হাদীস শরীফে عبدي (আমার বান্দাহ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
- কাজেই শরয়ী পরিভাষায় ইবাদাতকারী হিসেবে কেউ তার গোলামকে বা কর্মচারীকে বা খাদেমকে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে হক্কানী পীরের عبد (আবদ তথা বান্দাহ) বলতে পারবে না। কেননা ইবাদতের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাকই; এতে সন্দেহ নেই। অন্য যে কাউকেই হোক না কেন, ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য বা ইলাহ মনে করলে শিরক হবে; তবে এ অর্থ ছাড়া গোলাম অর্থে যদি عبد (বান্দাহ) শব্দটি কেউ তার কর্মচারী বা খাদেমকে বলে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে গোলাম অর্থে পীরের عبد (বান্দাহ) বলে এতে সমস্যা নেই। বরং তা হক্কানী পীরের প্রতি তা মুরীদের আদব ও ভক্তিরই বহিঃপ্রকাশ।
- আর কোন সহীহ মুসলমান যখন নিজেকে নবীর বা পীরের عبد (বান্দাহ) বা গোলাম বলে, নিশ্চয় সে কখনো এটা মনে করে না যে, নবীজি সাঃ বা হক্কানী পীর ইবাদাতের মালিক বা আল্লাহ হয়ে গেছেন।গোলাম অর্থে আব্দ এর ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে স্বয়ং কুরআন শরীফেই এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
قل ياعبادي الذين اسرفوا علي انفسهم لاتقنطوا من رحمة الله
অর্থাৎ, হে নবী!আঁপনি তাদেরকে সম্বোধন করুন,হে আঁমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ,আল্লাহ’র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।
এ আয়াতেقل ياعبادي (হে আঁমার বান্দাগণ) এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়।
*এক,আল্লাহ বলেন- ওহে আঁমার বান্দাহগণ;
*দুই,হুযুর পাক সাঃ কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,হে নবী আঁপনি বলুন,হে আঁমার (অর্থাৎ,আঁপনার) বান্দাহগণ।এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ’র বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত। - অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন। আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন –
بندہ خود خواند احمد در رشاد * جملہ عالم را بخوان قل یا عباد
অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন قل ياعبادي বলা হয়েছে।
- ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
قد كنت مع رسول الله صلي الله عليه وسلم فكنت عبده وخادمه
অর্থাৎ,আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ ও খাদেম ছিলাম।
- অতএব,প্রমাণিত হল যে, عبد (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়।
আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ‘মাওলা’ শব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।যেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন…
فَاِنَّ اللهُ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَا ئِكَةُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِيْر-
অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র] ‘মাওলা’।হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁর ‘মাওলা’ এবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁর ‘মাওলা’।এছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। হাদিস শরীফেও রয়েছে,রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ফযিলত বর্ণানা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন,আমি যার ‘মাওলা’ আলীও তার ‘মাওলা’। মাওলানা’ বা ‘মওলানা’ শব্দটি আরবি। এটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুটি শব্দে ঘটিত। ‘না’ একটি সর্বনাম। এর অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০টি অর্থ আছে। যেমন—প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, দাস, চাচাতো ভাই, প্রতিনিধি, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার, প্রেমিক, প্রতিবেশী, আনুগত্য, প্রার্থনা, নীরবতা, ইবাদত,দণ্ডায়মান ইত্যাদি।
(তথ্যসূত্র )
*১. বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ : ৪/৯৭৮ *২. ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া,পৃ: ৭০
*৩. উমদাতুর রিআয়াহ : ২/৩২৮
*৪. লিছানুল আরব : ৮/৪৫২
*৫. আল-মিসবাহুল মুনির,পৃ: ৫৯১
এখানে মাওলা বা মাওলানা শব্দটি কি শুধু মূল অর্থেই (আল্লাহকে বুঝাতে) বসে নাকি আরও অনেক অর্থে বসে আপনারাই ভাবুন।
- হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর একটা উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।খোলাফায়ে রাশেদিনে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যুগ চলছে।একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম হোসাইন ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে কোনো এক ইস্যু নিয়ে শিশুসুলভ তর্ক হয়েছে। তর্কের এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন ‘তুমি হচ্ছ আঁমার নানাজানের গোলামের বাচ্চা’।
এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হলেন এবং স্বীয় পিতা আমীরুল মো’মিনীন হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাষ্ট্রীয় বিচারের আয়োজন করলেন। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সবাই উপস্থিত।রাষ্ট্রীয় প্রধানের ছেলেকে এত বড় কথা বলে ফেললেন হযরত ইমাম হুছাইন (রাঃ)! এটা বিনা বিচারে ছাড়া যায়না। তাই তাঁর বিচার হতে হবে,কিন্তু এতে সবাই হতবম্ভ। ইমাম হুসাইন (রা:) বিচারের সম্মুখীন! এই বিচারে সবাই অবাক নয়নে থাকিয়ে রইলেন,কিযে হয় সেই অপেক্ষায়। হযরত ইমাম হুছাইন (রাঃ) বিচার- আদালতে হাজির।বিচারপতি স্বয়ং ওমর ফারুক (রাঃ)।
হযরত ওমর ফারুক (রা:),হয়রত ইমাম হুসাইন (রা:) কে জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি কি আমার ছেলে কে গোলামের বাচ্ছা গোলাম বলেছেন।দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ইমাম,হ্যাঁ আমি বলেছি, “।হযরত ওমর ফারুক (রা:) জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি এই কথা কেন বলেছেন,তখন হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন,আমি ভুল কি বললাম,আঁপনিতো,আঁমার নানাজানের গোলাম,তাই আপনার ছেলে,গোলামের বাচ্ছা গোলাম।এই উত্তর শুনে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বললেন,আঁপনি কি এইটা লিখে দিতে পারবেন? হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন, হাঁ পারবো।হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এ লিখা নিয়ে উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে বললেন,আপনারা সবাই স্বাক্ষী থাকুন রাসূলের নাতী, জান্নাতের যুবকগনের সর্দার আমাকে “রাসূলের গোলাম” বলেছেন।সুতরাং এটাই আমার নাজাতের উছিলা। অতএব
আপনারা আমার ইন্তিকালের পর কাফনের ভেতর এ লেখাটি দিয়ে দেবেন। এটাই আমার আরজী।
[আল কউলুল বদী -৮৬৫ ] - লক্ষ্য করুন: একই শব্দ উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হল।এখন কেন ব্যবহৃত হল? কোন কারনে ব্যবহৃত হল? তা আগে বুঝতে হবে? কোন কিছু না জেনে বুঝে শিরকের ফতোয়া দিলে হয় না।যেমন কেউ বললেন আমি এ জায়গার মালিক।এখন এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কি নাস্তিক হয়ে গেল বা শিরক করলো বা আল্লাহর সাথে নিজেকে মালিক বলে ঘোষনা দিল।আর এখানে মালিক কথাটি কোন অর্থে ব্যবহার হল? তা বুঝতে হবে? অথবা ঐ ব্যক্তির মনে আদৌ এ ধরনের খেয়াল ছিল কি না? তাও জানা দরকার।আর আমাদের আপত্তি টা এখানেই।
সুতরাং “নবিজীর গোলাম” বলা যাবে এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা নেই।
আমরা তো নিজেদের “নবিজীর গোলাম বলি ” নবিজীকে খোদা হিসেবে নয় বরং আমরা এটা মনে করি যে,বরং আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে,নবীপ্রেমই খোদা প্রাপ্তির পুর্বশর্ত ।কারন আল্লাহ পাক স্বয়ং কোরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন।আঁমাকে কেউ ভালবাসতে চাইলে কিংবা আঁমার ভালবাসা পেতে চাইলে,সে যেন আঁমার হাবীবের আনুগত্য করে,এক কথায় আঁমার নবীর গোলামী করে (অর্থাৎ,আল্লাহর বন্দেগী করা,এবং নবীর গোলামী করা)।আর এজন্য আল্লাহর হাবীব ইরশাদ করেছেন, ” ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ পরিপূর্ন ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আঁমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার মাতাপিতা,সন্তান-সন্তুতি,মানুষ ও সবকিছুর চেয়ে।
[বুখরী শরীফ ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা]